এই বছর সমাজসেবায় পেয়েছেন একুশে পদক
একজন মো: জিয়াউল হক
পেশায় একজন দই বিক্রেতা ! এই বছর সমাজসেবায় অবদানের জন্য একুশে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার সুপরিচিত দই ব্যবসায়ী যাঁর স্লোগান ছিলো ‘বেঁচি দই, কিনি বই’। পাঠাগার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সমাজসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন প্রতিনিয়ত। তার কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ সরকার তাঁর নাম “একুশে পদক ২০২৪-সমাজসেবায়” অন্তর্ভুক্ত করেছেন। যেকোন মহৎ কাজ আমাদের অনুপ্রাণিত করে, আশা জাগায়। এই সাদা মনের মানুষ জিয়াউল হক নিজের সাথে সাথে জাতিকে গর্বিত করলেন
জিয়াউল হকের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার মশুরিভুজা গ্রামে। তিনি ১৯৬০ সাল থেকে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবই, গরীব অসহায়দের কাপড়, বাড়িঘর নির্মাণ সামগ্রী সহ তাঁর সমস্ত কিছু বিলিয়ে চলেছেন। তাঁর বাড়িতে সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত প্রায় ১৫০০০ বইয়ের একটা লাইব্রেরি রয়েছে।
যখন সমাজসেবায় একুশে পদক পাওয়ার সংবাদ পান জিয়াউল হক, তখনও তিনি ফেরি করে দই বিক্রি করছিলেন। নিজের হাতে বানানো দই। এরপর গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে সেই দই বিক্রির টাকায় চলে সংসার।
মাত্র পঞ্চম শ্রেণি পাশ জিয়াউল। দেড় টাকার জন্যে ক্লাস সিক্সে ভর্তি হতে পারেন নি। এরপর বাবার সঙ্গে নেমে যান দই তৈরিতে। শুরু করেন গ্রামে ঘুরে দই বিক্রি। কিন্তু মনের মধ্যে সুপ্ত ছিল একটা অমিমাংসিত অভিমান, নিজের উপর ক্ষোভ। টাকার জন্যে পড়াশোনা করতে না পারার আক্ষেপ।
সেই আক্ষেপ পরিণত করেন উদাহরণে। দই বিক্রির টাকা দেদার ঢালতে থাকেন ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের বই কিনতে। স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের গরীব শিক্ষার্থীদেরও বই কিনে দেন জিয়াউল। বিধবা, তালাকপ্রাপ্তা অসহায় নারীদের পাশে দাঁড়ান বাবার মতো ঢাল হয়ে। বাড়ি করে দেওয়ার পাশাপাশি ছোট কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন। বিশুদ্ধ পানির জন্যে স্থাপন করেছেন অসংখ্য গভীর নলকূপ। ঈদ, পূজা-পার্বণে অসহায় পরিবারের জন্যে রাতের আধাঁরে নিয়ে যান নতুন পোশাক।
নিভৃত পাড়াগাঁয়ে ১৯৬৯ সালে নিজের বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘জিয়াউল হক সাধারণ পাঠাগার’। এ পাঠাগারে এখন বইয়ের সংখ্যা ১৪ হাজার।
লেখা Sanaul Haque Sunny ফেসবুক পোষ্ট থেকে নেয়া