ব্যবহার করা জিনিসপত্র কে বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরন করে তা আবার পুনরায় ব্যবহার করার উপযোগী করে তোলাই হলো রিসাইক্লিং। এটাই রিসাইক্লিং এর সহজ সমীকরন। আর এ সমীকরন আধুনিক ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি থেকে শুরু করে সব খানেই কি-পয়েন্ট হিসেবে কাজ করছে। রিসাকেলিং এর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত আরেকটি শব্দ হলো আপসাক্লিং। পুরোনো জিনিসপত্র এমন ভাবে দ্বিতীয় জীবন দেয়া যা আগের তুলনায় আরও বেশ ব্যাবহারিক, সুন্দর এবং মূল্যবান হয়ে উঠে। আর এই পুরো বিষয়টি সাসটেইনেবল ফ্যাশন আন্দলনেরই একটি অংশ। ভাবুন তো, এই সাসটেইনেবল, রিসাইক্লিং, আপসাইক্লিং এর সাথে আমাদের চিরোচেনা শতবর্ষের পুরনো ঐতিহ্য নকশি কাঁথা -র কোনো মিল পাওয়া যায় কিনা! যা শত শত বছর আগে গ্রামের মহিলারা প্রকৃতিবান্ধব এই শিল্প আধুনিক শিল্প আন্দলেনের সাথে যুক্ত হয়ে গেছেন।
পুরো বাংলাদেশেই নকশি কাঁথা তৈরি হয়, ময়মনসিংহকে নকশি কাঁথার শহর ধরা হয়। এছাড়াও রাজশাহী, যশোর, ফরিদপুর নকশি কাঁথার জন্য বিখ্যাত। যদিও ২০০৮ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নকশি কাঁথার ভৌগোলিক স্বীকৃতি পায়।
কাথাঁ এবং নকশী কাথাঁ
Nakshi kantha
কাথাঁ হলো পুরনো শাড়ি বা ছোট ছোট কাপড়ের টুকরো জোড়াতালি দিয়ে সাধারন সোজা ফোঁড় দিয়ে তৈরী একটি আচ্ছাদন বস্ত্র। যা কম্বলের তুলনায় পাতলা। বর্ষা মৌসুমে এবং হালকা শীতের সময় গায়ে জড়ানোর জন্য ব্যাবহার করা হয়। এসব কাথাঁ সেলাই করার জন্য যে সুতা ব্যাবহার করা হতো তা পুরনো শাড়ির নকশা পাড় থেকে খুলে নেয়ার চেষ্টা করা হতো।
নকশি কাঁথা হলো সাধারন কাথাঁর উপর মনের মাধুরী মিশিয়ে নানা ধরনের নকশা ফুটিয়ৈ তুলে যে কাথাঁ তৈরী করা হয়। একটি নকশী কাথাঁ সেলাইয়ের পিছনে থাকে আনেক হাসি-কান্নার কাহিনী। জীবনের গল্প। বিচ্ছেদের গল্প।
নকশি কাঁথার নকশা শুধু কাঁথার জমিনে সুঁইয়ের ফোঁড়ে ফুটিয়ে তোলা নকশাই নয়, একেকটি নকশী কাঁথার জমিনে লুকিয়ে থাকে গল্প, কখনো ভালোবাসার, কখনো দুঃখের। বাংলার পথে প্রান্তরে হারিয়ে যাওয়া গল্পকে বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে একেকটি নকশী কাঁথা।
যদিও শুরুর দিকে নিদৃষ্ট কোন নকশা ছিলো না। সূচিশিল্পী তার জীবন অভিজ্ঞতা, তার আশপাশে দেখা ফুল লতাপাতা, পাখি , মাছ, ময়ূরসহ বিভিন্ন নকশা ফুটিয়ে তুলতো। পরবর্তীতে নকশার একটা ফরমেট বা সূত্র তৈরী হয়ে যায়। এ বিষয় আরো বিস্তারিত থাকবে দ্বীতিয় অধ্যায়ে।
নকশি কাঁথা: বাংলাদেশের লোকশিল্পের একটা অংশ
A part of Bangladeshi folk art
লোকশিল্প কি? যদি প্রশ্ন করা হয় তবে সহজ এবং সাধারন উত্তর হলো। লোকশিল্প হলো সাধারন লোকের জন্য, সাধারন লোক দ্বারা সৃষ্ট সেই শিল্প যা সমাজের একটি বড় অংশের কাছে গ্রহনযোগ্য একটি নান্দনিক ভাবনা এবং তা ঐতিহ্যগত ভাবে বংশ পরম্পরায় ধরে রাখে।
এই শিল্প সমাজের মৌলিক সংস্কৃতিকে তুলে ধরে।
বাংলার লোকশিল্পকলার মধ্যে – বয়ন ও বুননশিল্প, মৃৎশিল্প, দারুশিল্প, সূচিশিল্প, পটশিল্প, শঙ্খশিল্প, পাটশিল্প ও অন্যান্য আরো লোকশিল্প দিয়ে সমৃদ্ধ আমাদের বাংলাদেশ। নকশি কাঁথা হলো লোকশিল্পের সূচিশিল্পর একটা অংশ।
কাঁথার আদি কথা
History of nakshi kantha
কাথাঁ শব্দটির উৎপত্তির স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও ধারনা করা হয়, সংস্কৃত শব্দ কন্থা থেকে কাথাঁ শব্দের উৎপত্তি। নকশি কাঁথা ভারত এবং বাংলাদেশের লোকশিল্পের একটা অংশ। ঐতিহ্যগিত এবং অবস্থানগত যে সীমারেখা, তার মধ্যে দিয়েই ধীরে ধীরে তৈরী হয়েছেল নিজস্ব একটি কারুশিল্প। গ্রামীন জীবনযাপনে গৃহিণীরা ব্যাবহারীত তাঁতের শাড়িগুলো পরতে পরতে যখন নরম হয়ে যেতো কিংবা ছিড়ে যেতো তখন তারা কাথাঁ তেরী করার্ জন্য তা রেখে দিতো। পরবর্ততীতে তা দিয়ে সাধারন কাঁথা কিংবা নকশী কাঁথা তৈরী করতো।
বহুপ্রাচিন কাল থেকে কাথাঁর ব্যাবহার শুরু হলেও কাথাঁর গায়ে নকশার ব্যাবহার ১৮ দশকের দিকে বলেই ধারনা করা হয়। সাধারনত গ্রামের মহিলারা তাদের অবসর সময় কাথাঁ সেলাই করতেন। বিকেল বেলা বা রাতের খাবারের পর মহিলারা এক সাথে বসে গল্প করতেন আর সেলাই করতেন। তাদের গল্পের সাথে সাথে কাথাঁয় ফোড়ে ফোড়ে গল্পগুলো প্রতিফলিত হতো। জীবনের গল্প। বিচ্ছেদের গল্প। আশেপাশে দেখা সুন্দর জিনিস পত্র তাদের নিজস্ব শৈল্পিক মন দিয়ে একেঁ তার উপর সেলাই করতেন। যা হয়ে উঠতো এক একটা শিল্প।
কাথাঁ যে ভাবে তৈরী হয় এবং তার উপকরণ
Kantha Making
এখন বাণিজ্যিক ভাবে নতুন কাপড়, সুতা দিয়ে কাঁথা তৈরি করা হলেও, আগে কি ভাবে টুকড়ো কাপড় বা পুরানো শাড়ি দিয়ে একটা কাঁথা তৈরি করা হতো, এখানে তার বর্ননা করা হবে।
কাথাঁ তৈরিতে উপকরন
১. পুরনো শাড়ি, ধুতি কিংবা লুঙ্গি
২. সূচ
৩. সেলাই করবার সুতা
৪. কাচি ( সুতা কাটার জন্য)
৫. পেরেক কিংবা খেজুর কাটা
৬. পাটি
৭. নকশা তোলার জন্য পেনছিল বা ট্রেসিং পেপার
একটা স্টার্ডাড সাইজের কাঁথা তৈরি করতে ৫ থেকে ৭টা শাড়ি দরকার হয়। শাড়ির কমবেশি নির্ভর করে কাঁথার পুরুত্বের উপর। মাটির উপর একটা পাটি বিছিয়ে তার উপর পুরনো শাড়ি গুলো স্তরে স্তরে সাজিয়ে নিতে হবে। তারপর চার কর্নারে পেরেক বা খেজুর কাটা দিয়ে গেঁথে টানটান করে বিছিয়ে নিয়ে তার উপর সুতা দিয়ে বড়ো বড়ো ফোঁড় দিয়ে শাড়ির সবগুলো স্তর সেলাইয়ের মাধ্যমে আটকাতে হবে। যেটাকে টাক দেয়া বলে।
টাক দেয়া হলে বড়ো বড়ো ফোঁড় দিয়ে চারপাশে মুড়ি ভেঙ্গে দেয়া হয়। যাবে মুল কাঁথা সেলাই করার সময় সুতা উঠে না যায়।
আগের দিনে যে শাড়ি গুলো দিয়ে কাঁথা বানানো হতো, সেই শাড়ির পাড় থেকে সুতা বের করে সেই সুতা ব্যাবহার করা হতো সেলাই করবার জন্য। কারন হিসেবে পুরাতন কাপড়ের উপর নতুন সুতার কাজ করলে পুরাতন শাড়ির জমিন কেটে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। এছাড়া শাড়ি গুলোর সর্বোচ্চ ব্যাবহার হতো।
এরপর কাঁথার মুল আদল তৈরি হলে চার কর্নারের কাটা বা পেরেক সড়িয়ে নিয়ে একজন সূচি শিল্পী তার ইচ্ছা মত হাতে নিয়ে ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে সেলাই শুরু করে দেয়। প্রয়োজন অনুযায়ী একটি কাঁথা চারদিক থেকে অনেক জন একসাথে সেলাই করে থাকে।
যদি নকশি কাঁথা হয়, সে ক্ষেত্রে বড় বড় ফোড় দিয়ে মুল কাঁথার আদল তৈরি হবার পর টান টান অবস্থায় নিজস্ব মাধুরী মিশিয়ে বিভিন্ন নকশা অঙ্কন করে নেয়। আগে পেনছিল দিয়ে নিজেদের ইচ্ছা মতো নকশা আঁকতেন। তারপর আসে কাঠের ব্লক দিয়ে নকশার ছাপ দেয়া, বর্তমানে ট্রেসিং পেপার দিয়ে বা স্ক্রিন প্রিন্ট করে মুল নকশা ছাপ দিয়ে তার উপর দিয়ে নৈপুণ্যতার সাথে সেলাই করে একটি শিল্প তৈরী করে একজন সূচি শিল্পী। যা আমাদের লোকঐতিহ্য নকশী কাঁথা।
কাঁথা সেলাই এর সময়কাল
Duration of Kantha stitch
একটা কাঁথা সেলাই করতে কতটা সময় সাপেক্ষ তা নির্ভর করে কাঁথার সাইজ কিংবা কাঁথার নকশার উপর। তবে একটা সাধারন কাঁথা সেলাই করতে৭ থেকে ১০ দিন সময় লাগে।
আর নকশী কাঁথার ক্ষেত্রে কাঁথার নকশা, কাঁথার সাইজ, কতজন সূচিশিল্পী এক সাথে সেলাই করছে তার উপর নির্ভর করে। কোনো কোনো কাঁথা এক বছর এর বেশি সময় লেগে যায়।
নকশি কাঁথার ধরন বা নামকরন
Types of Nakshi Kantha
সাধারন কাঁথার উপর নকশা করা থাকলেই আমরা সাধারন ভাবে নকশি কাঁথা বলে আক্ষ্যায়িত করতে পারি। তবে এসব নকশি কাঁথার ব্যাবহার ভেদে কিংবা স্থান ভেদে বিভিন্ন নাম রয়েছে।
গায়ের দেয়ার নকশি কাঁথা, বিছানার সৌন্দর্য বর্ধনের কাঁথা, সুজনী কাঁথা, বর্তনী রুমাল কাথা, পালিকির কাঁথা, বালিশের ঢাকনি, দস্তরথানা, পান পেঁচানী, আরশীলতা ইত্যাদি।
নকশি কাঁথা সংগ্রহশালা
Nakshi Kantha gallery
Click Here https://pin.it/3VdLD7h
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
সেলাইয়ের ধরন অনুযায়ী কাঁথার নামকরন
লহরী কাঁথা : সাধারণত রাজশাহীতে এই কাঁথা বিখ্যাত। এই কাঁথার নামকরন করা হযেছে সেলাইয়ের ঢং এর উপর নির্ভর করে। পারস্য শব্দ লহর থেকে লহরী কাঁথা নামের উদ্ভব। লহর মানে হলো ঢেউ। এই কাঁথার সেলাই গুলো সরল সোজা ভাবে আগালেও, সেলাই শেষ হলে পুরো কাঁথার নকশায় ঢেউ এর মত দেখায়। লহরী কাঁথা আরো দুই ধরনের নকশা দেখা যায়। কৈতর খুপি ( কবুতরের বাসার মত বা ত্রিভুজ টাইপ ) অন্যটি হলো বরফি যা হীরে আকৃতির।
আনারসি: আনরসি কাঁথা চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও যশোরে পাওয়া যায়। আনারস টান, আনারস টাইল, আনারস ঝুমকা ও আনারস লহরী এর বিভিন্ন প্রকারভেদে পাওয়া যায়।
সুজনি কাঁথা: এটি শুধু রাজশাহী এলাকায় পাওয়া যায়। সাধারণত এই কাঁথায় ঢেউ খেলানো ফুল ও লতাপাতার নকশা থাকে।
স্থানের নাম অনুযায়ী কাথাঁর নামকরন । শেলাবুনিয়ার নকশিকাঁথা
দক্ষিণবঙ্গের সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাট জেলার মংলা উপজেলার শেলাবুনিয়া গ্রাম, যেখানে একটি সেলাইকেন্দ্রের নামে “শেলাবুনিয়ার নকশিকাঁথা” র নামকরন করা হয়েছে।
অসহায়, দুস্থ, স্বামী পরিত্যক্তা কিংবা বিধবা এরকম প্রায় শতাধিক নারী কর্মী নিয়ে এ সেলাইকেন্দ্রটি গড়ে ওঠে ১৯৮২ সালে। মংলার সেন্ট পলস গির্জার পুরোহিত, ইতালিয়ান ফাদার মারিনো রিগন গির্জার আঙিনায় এই সেলাইকেন্দ্রটি গড়ে তুলেন।
এখানকার নকশিকাঁথায় ফুটিয়ে তোলা হয় আমাদের আবহমান সবুজ-শ্যামল গ্রামবাংলার ফুল, ফল, পাখি, কবিতা, পালকি, গ্রামের বধূ, কিষান-কিষানি কিংবা কাঁচা-পাকা ধানখেত, হাতি, ঘোড়া, বাঘসহ বিভিন্ন পশুপাখি, রাখাল-গরু, নদী, নদীর ঘাট, পালতোলা নৌকা, নৌকা পারাপার, গ্রামীণ নারীদের ধান ভানা, ধান শুকানো, আয়না দেখা, চুল বাঁধা, ঢেঁকি, ঢেঁকিতে পাড় দেওয়া, বধূসাজে পালকি, কনে দেখা, বিয়েতে হলদি বাটা, মেহেদি বাটা, বিয়ের কনে বরণ, দইওয়ালা, নাগরদোলা, বৈশাখী মেলা অথবা বাংলাদেশের রূপবৈচিত্র্য কিংবা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে।
কোন কোন জেলায় নকশী কাঁথা পাওয়া যায় তার একটি ম্যাপ
NAKSHI KANTHA MAP OF BANGALDESH
কাঁথার ফোঁড় বা নকশি সেলাইয়ের নাম
কাঁথা সেলাইয়ের ফোঁড়ই প্রধান। একটা কাঁথা কতটা সুন্দর তা নির্ভর করে নিখুঁত ফোড়ের উপর। আর নকশী কাঁথার সৌন্দর্যর প্রধান হলো ফোড়েঁ বৈচিত্রতা।
রান ফোঁড়
ডবল রান ফোঁড়
ডারনিং ফোঁড়
বেকিঁ ফোঁড়
বখেয়া ফোঁড়
ক্রস ফোঁড়
শেডওয়ার্ক ফোঁড়
বোতামঘড় সেলাই
ডাল ফোঁড়
চেন ফোঁড়
স্যাটিন ভরাট
নরমাল ভরাট
হলবিন ফোঁড়
ডবল হেরিংবোন ফোড়
লিক ফোঁড়
জালি ফোঁড়
পাটি ফোঁড়
দোরোখা ফোঁড়
নকশি কাঁথার পাড়
পাড় হলো কাঁথার চারপাশে সীমানা বরাবর যে অংশ। নকশী কাঁথার চেনার আরেকটি উপকরন হলো চারপাশে নকশা সেলাই করে কাঁথার ফিনিসিং দেয়া হয়। এই সেলাই এর নাম হলো নকশী পাড়। এই পাড়ের নকশা অনুযায়ী নামকরনও করা হয়েছে যাতে বিভিন্ন অঞ্চলের শিল্পিরা নাম দিয়ে নকশাগুলো ফোঁড় দিয়ে উঠাতে পারে।
শামুক পাড়
চোক পাড়
ঢেউ পাড়
নক্ষত্র পাড়
ধানের শীষ
বিছে পাড়
আনাজ পাড়
বেকি পাড়
বরফি পাড়
তাবিজ পাড়
মালা পাড়
মই পাড়
কলম পাড়
অনিয়ত পাড়
গাট পাড়
চিক পাড়
নোলক পাড়
মাছের কাটা পাড়
পাছ পাড়
বাইশা পাড়
ফ্যাশন হাউস আড়ং “স্টোরি অফ স্টিচস” | STORY OF STITCHES শীর্ষক একটি নকশি কাঁথা প্রদর্শনীর থেকে সংগৃহীত
নকশি কাঁথার নকশা
Motifs
যদিও নকশী কাথাঁর নকশা গুলো একজন সূচি শিল্পী তার নিজের জীবনের গল্প, বিচ্ছেদের গল্প কিংবা আশেপাশে দেখা সুন্দর জিনিস পত্র তাদের নিজস্ব শৈল্পিক মন দিয়ে একেঁ তার উপর সেলাই করতেন। যা হয়ে উঠতো এক একটা শিল্প। তবুও কোথাও কোথাও একটা মিলবন্ধন পাওয়া যেতো। নকশার ভিতর দিয়ে গ্রামীন নারীরা রুপকথার গল্প, ধর্মের উপাখ্যান, পৌরাণিক কাহিনী কিংবা নিজের সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনের কথকতা; তাদের স্বপ্ন, আশা এবং প্রতিদিনের গ্রামীণ জীবন ফুটিয়ে তুলেছেন এক একটা সেলাইয়ের ফোঁড়ের ভিতর দিয়ে। নকশায় পাওয়া যায় ধর্মীয় বিশ্বাস ও নিজস্ব সংস্কৃতির প্রভাব। যদিও কোনো ধরা বাধা নিয়মের মধ্যে না থাকলেও সবার নকশায় সামঞ্জস্যতা দেখা যেতো।
যেহেতেু কাথাঁ মুলত স্কয়ার সেইপ এর তাই মোটামুটি কাথাগুলোতে মাঝখানে একটা কেন্দ্র ধরেই নকশা গুলো এগিয়ে যেতো। বেশিরভাগ কাঁথার কেন্দ্রে থাকতো পদ্ম ফুল বা সূর্য নকশা এবং পদ্ম ফুলের আশে পাশে নানা রকম আকাঁবাকাঁ লতার নকশা থাকতো। এছাড়া ফুল, পাতা পাখি, মাছ, প্রানির নিজস্ব অঙ্কনে নকশা গুলো তোলা হতো।
উল্লেখযোগ্য নকশা গুলো হলো
পদ্ম নকশা
সূর্য নকশা
চন্দ্র নকশা
স্বস্তিকা নকশা
জীবনবৃক্ষ নকশা
মৎস নকশা
কলকা নকশা
রথ নকশা
মসজিদ নকশা
পাঞ্জা নকশা
সাম্পান বা নৌকা নকশা
পালকি নকশা
সাহিত্যে কাঁথা
Kantha in literature
বাংলায় “ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখা” এমন বাগধারা যেমন আছে ঠিক তেমনি আছে পল্লীকবি জসীম উদদীনের আখ্যানকাব্য ‘নকশী কাঁথার মাঠ’। এই কাহিনী কাব্য দিয়েই বাংলা সাহিত্যে উঠে এসেছে কীভাবে কাঁথায় সূচের প্রতিটি পরতে পরতে ফুটে উঠতে পারে ভালোবাসা আর বেদনার গল্প। প্রেমিক রুপাই আর প্রেমিকা সাজুর ভালোবাসার অমর আখ্যান এই কাব্য।
“বিয়ের পরে রুপাই আর সাজুর ভালোবাসায় আখ্যান বেশি দূর যেতে পারেনি। ফেরারি হয়ে যায় রুপাই। স্বামীর অপেক্ষায় স্ত্রী সাজু বাকি জীবন নকশী কাঁথা বুনতে শুরু করে, দিন-মাস-বছর যায়। সাজু নকশী কাঁথায় সুঁইয়ের আচড় দিয়ে যায়, কাঁথায় লেখে কত গল্প, রুপাই ফিরে আসে না। সারা জীবন সাজুর এভাবেই কেটে যায়। সাজুর নকশী কাঁথা বোনা যেদিন শেষ হয়ে যায় সেদিন সে মাকে অনুরোধ করে, তার মৃত্যুর পর যেন তার কবরের উপরে নকশী কাঁথাটি বিছিয়ে দেওয়া হয়।”
–নকশী কাঁথার মাঠ
মূলত বাংলাদেশে নকশি কাঁথা শব্দটির বহুল ব্যবহার শুরু হয় জসীমউদ্দীনের “নক্সী কাঁথার মাঠ” (১৯২৯) কাব্য গ্রন্থ থেকে।
নকশি কাঁথার বিভিন্ন মাত্রা
বাংলাদেশ ডাকটিকিটে নকশি কাঁথা
ফ্যাশন জগতে নকশি কাঁথার ব্যাবহার
নকশিকাঁথার প্রদর্শনী
NAKSHI KANTHA EXHIBITION
২০০৮ সালে ফ্যাশন হাউস আড়ং “স্টোরি অফ স্টিচস” | STORY OF STITCHES
শীর্ষক একটি নকশি কাঁথা প্রদর্শনীর আয়োজন করে
বিস্তারিত : An EXHIBITION OF NAKSHI KANTHA BY AARONG
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সংগ্রীহত নকশিকাঁথার প্রদর্শনী
আরও পডুন : শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সংগ্রীহত নকশিকাঁথার প্রদর্শনী
ফ্যাশন হাইজ বিবিয়ানা ২০১৫ সালে কাঁথা স্টিচ এর বিচিত্রতায় একটি প্রদর্শনী করেন
EXHIBITION SYMPHONY OF NEEDLEWORK 2015
তথ্যসূত্র
শিলা বসাক; নকশি কাঁথা অফ বেঙ্গল
বাংলাপিডিয়ায় নকশি কাঁথা
আড়ং
The Art of Kantha Embroidery by Niaz Zaman
সামহোয়্যার ইন ব্লগ
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :