বিশ্ব সমুদ্র দিবস এবং ফ্যাশনবিশ্ব যখন টেকসই ধারায়

জলবায়ু পরিবর্তনের যে প্রভাব পড়বে তার তিন ভাগের এক ভাগেরও বেশি দায় হবে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির।

সাসটেইনেবল মুভমেন্ট

সাগর-মহাসাগরকে বলা হয় পৃথিবীর ফুসফুস। আমাদের অক্সিজেনের সবচেয়ে বড় জোগানদাতা হলো এসব সাগর আর মহাসাগর। সমুদ্রের এই অবদান, আবেদন, প্রয়োজনীয়তা আর উপকারীতাকে বিশ্বের সবার সামনে তুলে ধরতে প্রতি বছর ৮ জুন পালন করা হয় বিশ্ব সমুদ্র দিবস। মূল উদেশ্য যখন অবদান, আবেদন, প্রয়োজনীয়তা আর উপকারীতা তখনই ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি দায়বদ্ধতা হিসেবে ঝুকছে সাসটেইনেবল এবং ইকো ফ্রেন্ডলি ফ্যাশনের দিকে। দ্রুতগতিতে জনপ্রিয়তা বাড়ছে সাসটেইনেবল মুভমেন্টগুলোর। তেমনই একটা সাসটেইনেবল মুভমেন্ট হলো ব্লু বিউটি মুভমেন্ট। এ ভাবনার মূল কেন্দ্রে রয়েছে সমুদ্র ও প্রাণিকুল।

জোর দেয়া হয় প্লাস্টিকমুক্ত টেকসই মোড়কের ওপর। প্রতিবছর সৌন্দর্যশিল্প ১২০ বিলিয়নের মতো মোড়ক তৈরি করে। যেহেতু বেশিরভাগ সৌন্দর্যপণ্য তরল, তাই সেগুলোকে নির্ভর করতে হয় প্লাস্টিকের ওপর।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিবছর ৯৮ মিলিয়ন টন প্লাস্টিকের শেষ আবাসস্থল হয় সমুদ্র। এর ভেতর বিউটি প্যাকেজিংও আছে। এভাবে চলতে থাকলে, ২০৫০ সালের ভেতর সাগরে মাছের চেয়ে প্লাস্টিকের সংখ্যা বেশি হবে।

প্রতি বছর ১৩ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক সমুদ্রের মধ্যে জমা হয়, যা প্রতি মিনিটে একটি আবর্জনাপূর্ণ ট্রাকবোঝাইয়ের সমতুল্য। সামুদ্রিক মাছ, পাখি, কচ্ছপ এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীরা প্লাস্টিকের ধ্বংসাবশেষে জড়িয়ে পড়ে বা আক্রান্ত হতে পারে; যার ফলে তাদের দমবন্ধ হয়ে যায় এবং অনাহারে থেকে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুমুখে পতিত হয়। সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুযায়ী, সামুদ্রিক পাখিদের প্রায় ৯০ শতাংশ সরাসরি প্লাস্টিক দূষণের শিকার।

অন্যদিকে শুধুমাত্র একটি পরিবার মেশিনে একবার কাপড় পরিষ্কার করার পর সত্তর হাজার কাপড়ের ডাস্ট পানির সাথে পরিবেশে মিশে যাচ্ছে। যা এক পর্যায়ে সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে। সমুদ্রের মাছ সেই সব কৃত্রিম কাপড় খাচ্ছে।

একটা জিনসের প্যান্টের কথা বলা যাক। একটি জিনসের প্যান্ট যতদিন টেকে ততদিন সেটি পরিষ্কার করতে প্রায় চার হাজার লিটার পানি দরকার হয়। মাত্র একটি জিনস পরিষ্কার করতে যদি এত পানি লাগে তাহলে আমি, আপনি সারা বছর জিনস সহ যত কাপড়, তা পরিষ্কার করতে কত পানি লাগে চিন্তা করুন তো।

ব্রিটেনের কোন এক সমিক্ষায় বলা হয় ২০৫০ সাল নাগাদ জলবায়ু পরিবর্তনের যে প্রভাব পড়বে তার তিন ভাগের এক ভাগেরও বেশি দায় হবে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির। তাহলে?

করনিয় কি?

পরিবেশের উপর যে খারাপ প্রভাব পড়ছে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিকে সরাসরি তার দায়ভার নিতে হবে। দূষণ রোধে তাদের সরাসরি কাজ করতে হবে।

ব্যক্তি পর্যায়েি এগিয়ে আসতে হবে। যেমন ব্যাবহারীত পোশাক ফেলে না দিয়ে দান করে পারেন। এতে কাপড় রিসাইক্লিং হবে। শুধু দান করা নয় নিজেও যাতে রিসাইক্লিং করা কাপড় কিনতে পারি সেই মনোভাব তৈরি করতে হবে।

ব্লু বিউটি প্রজেক্ট এর মত মুভমেন্টগুলোতে সামিল হতে হবে। এসব প্রজেক্ট গুলো সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যের কথা চিন্তা করে সব সৌন্দর্যপণ্য বানিয়ে থাকে। এর পাশাপাশি জোর দেওয়া হয় জিরো-ওয়েস্ট প্যাকেজিংয়ের ওপর। ব্লু বিউটি পণ্য মোড়কজাত করতে প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, পুনর্ব্যবহারযোগ্য গ্লাস, অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল, বাঁশ, পোস্ট-কনজুমার রেজিন (যা সমুদ্র থেকে পাওয়া প্লাস্টিক ওয়েস্ট থেকে বানানো হয়), কাগজ ইত্যাদি।

উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণ কমানোর লক্ষ্যে ২০০২ সাল থেকে পলিথিন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিভিন্ন পণ্যে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করে পাটের ব্যাগের (সোনালি ব্যাগ) মতো পচনশীল পণ্যের ব্যবহারকে উৎসাহিত করছে। কিন্তু আইন করেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করা যাচ্ছে না। আমাদরে সচেতন নাগরিকের মত রোল প্লে করতে হবে।


আপনার একটি শেয়ার আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা



তথ্যসূত্র এবং ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

আপনার একটি শেয়ার আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা

X (Twitter)
Post on X
Pinterest
fb-share-icon
Instagram
FbMessenger
Copy link
URL has been copied successfully!