ঢাকাকে বলা হয় মসজিদের শহর। মূলত মুঘল আমল থেকেই মসজিদের শহরে পরিণত হয় ঢাকা। আর ঢাকার সবচেয়ে পুরাতন মসজিদ হিসেবে পরিচিত এই বিনত বিবির মসজিদ! মসজিদটির নাম এর নির্মাতা বিনত বিবির নাম অনুসারে রাখা হয়। পুরান ঢাকার নারিন্দায় এই মসজিদের অবস্থান। ১৪৫৭ সালে মারহামাতের মেয়ে মুসাম্মাত বখত বিনত বিবি এটি নির্মাণ করেন। বিনত বিবির মসজিদ ঢাকার একটি ল্যান্ডমার্ক। প্রত্ন-বিষয়ে আগ্রহী যে কাউকে এই প্রাচীন নিদর্শণ আকর্ষণ করবে ।
দুই গুম্বজ বিশিষ্ট এই মসজিদটি ঢাকার প্রথম মসজিদের মর্যাদা পেয়েছে ।
৮৬১ হিজরিতে নারিন্দা রোডস্থ এ মসজিদটির প্রথম সংস্করণ করা হয় এবং ৮৬৬ হিজরিতে বিনত বিবি ও আরাকান আলীর সমাধিস্থলে একটি মাজার স্থাপন করা হয়। মসজিদের দুটো গম্বুজের একটির গায়ে আদি ভবন প্রতিষ্ঠার সাল লেখা আছে। আরেকটি গম্বুজের লেখা অনুযায়ী ভবনটি প্রথম সংস্কারের মুখ দেখে ১৩৩৭ বঙ্গাব্দে (১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দ)।
মসজিদটির ইতিহাস
মসজিদটির প্রধান ফটকের দেয়ালে একটি কালো পাথরের শিলালিপি থেকেই এসব ইতিহাস জানা গিয়েছিল। ধারণা করা হয়, ঢাকায় এ পর্যন্ত যত প্রাচীন শিলালিপি পাওয়া গিয়েছে তার মধ্যে প্রথম মুসলিম শিলালিপি হচ্ছে এটি। ঢাকার প্রথম এই মসজিদটিই একমাত্র মসজিদ যেটি একজন নারীর নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
ইতিহাস ঘেঁটে আরও জানতে পারি মসজিদটি নির্মাণের কিছু দিন পরেই আরকান আলীর মেয়ে বিনত বিবির আকস্মাত মৃত্যু হয়। মসজিদের পাশেই তাকে সমাধিস্থ করা হয়। এর কিছু দিন পর আরকান আলীও ইন্তেকাল করেন। এবং তার ইচ্ছানুযায়ী তাকে তার মেয়ের কবরের পাশেই দাফন করা হয়। দাফন দেয়া সেই জায়গাটা বর্তমানে তাদের মাজার হিসেবে ব্যবহিত হচ্ছে।
মসজিদের দুটো গম্বুজের একটির গায়ে আদি ভবন প্রতিষ্ঠার সাল লেখা আছে। আরেকটি গম্বুজের লেখা অনুযায়ী ভবনটি প্রথম সংস্কারের মুখ দেখে ১৩৩৭ বঙ্গাব্দে (১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দ)। মসজিদটি যখন প্রথম নির্মিত হয় তখন তাতে একটি মাত্র গম্বুজ থাকলেও পরবর্তীতে বাংলা ১৩৩৭ সনে মসজিদটিতে পুনঃসংস্করণ করে দ্বিতীয় গম্বুজ নির্মাণ করা হয়। দুটি গম্বুজের গায়েই তাদের সংস্করণ-সাল লেখা রয়েছে। বর্তমানে মূলভবনের গা ঘেঁষে তিন তলা নতুন ভবনও তৈরি করা হয়েছে।
মসজিদটির গঠন
মসজিদটি বর্গাকৃতির এবং দুই গম্বুজবিশিষ্ট। এর অভ্যন্তরভাগের পরিমাপ প্রতিদিকে ৩.৬৬ মিটার। মসজিদটির ছাদ গোলাকার গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত এবং গম্বুজটি সরাসরি ছাদে স্থাপিত। মসজিদের দেওয়ালগুলি ১.৮৩ মিটার পুরু।
এর পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে মোট তিনটি প্রবেশপথ আছে। পশ্চিম দেওয়ালের পেছনের দিকে একমাত্র মিহরাবটি অভিক্ষিপ্ত। আদিতে চার কোণে প্লাস্টার বিহীন বক্রাকৃতির ‘ব্যাটেলমেন্ট’-যুক্ত চারটি অষ্টভুজাকৃতির বুরুজ ছিল। বারবার সংস্কার এবং পরবর্তী সময়ে সংযোজনের ফলে এর বাইরের প্রকৃত অবয়ব সম্পূণরুপে পাল্টে গেছে।
পূর্বের বক্রকে সোজা করা হয়েছে। মসজিদটির দক্ষিণ পার্শ্বে আর একটি এক গম্বুজবিশিষ্ট কক্ষ এবং পূর্ব ও দক্ষিণে একটি বারান্দা সংযুক্ত করা হয়েছে। বারবার পুরু আস্তরণের ফলে মসজিদের পোড়ামাটির অলঙ্করণ এখন আর পরিলক্ষিত হয় না। মসজিদটির সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হলেও এতে প্রাক-মুগল সালতানাতের বৈশিষ্ট্যসমূহ বেশ ভালভাবেই লক্ষ্য করা যায়। এলোমেলোভাবে পরিবর্তন সাধন করার কারণে সালতানাতের নিদর্শনগুলির পরিচয় ও সৌন্দর্য অনেকাংশে হারিয়ে গেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও, বখত বিনত মসজিদটি তার উৎকর্ষ ও মৌলিকত্বের জন্য টিকে গিয়েছিল।
এর স্বাতন্ত্র্যসূচক বৈশিষ্ট্যাবলি হলো অষ্টকোনা পার্শ্ব স্তম্ভ, বর্গাকার কক্ষের ওপর অর্ধ বৃত্তাকার গম্বুজ, উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বদিকে খিলানের ব্যবহার, সাদামাটা অলঙ্করণ, প্লাস্টারে ঢাকা, বাঁকানো কার্নিশ প্রভৃতি। এ মসজিদের উত্তর ও পশ্চিম ফাসাদ এবং প্রথম গম্বুজটি মসজিদটির সুলতানি যুগের বৈশিষ্ট্যের পরিচয় বহন করে।
সমৃদ্ধকরন
১. ঢাকাকে বলা হয় মসজিদের শহর
২. মসজিদটির নাম এর নির্মাতা বিনত বিবির নাম অনুসারে রাখা হয়।
৩. ঢাকার প্রথম এই মসজিদটিই একমাত্র মসজিদ যেটি একজন নারীর নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
৪. পুরান ঢাকার নারিন্দায় এই মসজিদের অবস্থান।
৫, ১৪৫৭ সালে মারহামাতের মেয়ে মুসাম্মাত বখত বিনত বিবি এটি নির্মাণ করেন।
তথ্যসূত্র :
https://fateh24.com/rajdhani-5/
https://www.ntvbd.com/religion-and-life/135235/
https://cadetcollegeblog.com/al-mamun-2/61656