Kazi Nazrul Islam Died
কাজী নজরুল ইসলাম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি
আজ জাতীয় কাজী নজরুল ইসলাম -এর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৬ সালে ২৭ আগস্ট তৎকালীন পিজি হাসপাতালে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
নজরুল যখন ৪৩ বছর বয়সে একটি অজ্ঞাত রোগে ভুগছিলেন এবং ১৯৪২ সালে তিনি তার কণ্ঠস্বর এবং স্মৃতিশক্তি হারাতে শুরু করেন। ভিয়েনার একটি মেডিক্যাল টিম বলে তার রোগটি ছিল ‘পিকস ডিজিজ’। একটি বিরল ও মারাত্মক নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ।
১৯৭৬ সালের ২৭ আগস্ট ( উইকিপিডিয়া তথ্য অনুযায়ী ) বিদ্রোহী কবি ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের একটি মসজিদের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
Kazi Nazrul Islam
কাজী নজরুল ইসলাম
কাজী নজরুল ইসলাম এর জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে। ২৪ মে ১৮৯৯ – ২৭ আগস্ট ১৯৭৬; ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ – ১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ । বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহেদা খাতুন। দরিদ্র পরিবারে জন্মের পর দুঃখ-দারিদ্র্য ছিল তার নিত্যসঙ্গী। তার ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া। বাবার অকালমৃত্যুতে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তিনি শিশু বয়সেই মক্তবে শিক্ষকতা, হাজি পালোয়ানের মাজারে খাদেম, মসজিদে মুয়াজ্জিনের কাজ করেন। তবে নিজের দুঃখ নিয়ে নয়, তিনি জাতির দুঃখ-ক্লেশ, দৈন্য-লজ্জা ঘোচানোর জন্য ভাবতেন সব সময় ।
১৯৭১ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে তার সামরিক চাকরি শুরু করার কয়েক বছরের মধ্যে নজরুল তার সাহিত্যিক জীবন শুরু করেন। তিনি ১৯২১ সালে তার কালজয়ী কবিতা ‘বিদ্রোহী’ (দ্য রিবেল) লেখেন এবং ১৯২২ সালে ‘ধূমকেতু’ (দ্য ধূমকেতু) একটি মাসিক পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেন।
কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে সমধিক পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সঙ্গীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।
কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, নজরুলের ২১ বছরের সাহিত্যিক জীবনে তিনি ২ হাজার ৬০০টি গান, ৬০০টি কবিতা, ৩টি বই এবং ৪৩টি প্রবন্ধ তৈরি করেছিলেন।
Nazrul Jayanti
১২৫তম নজরুল জন্মজয়ন্তী
১১ জ্যৈষ্ঠ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী। সারা দেশে নানা আয়োজনে উদযাপিত হবে এবারের ‘নজরুলজয়ন্তী’। জানা যায়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উদযাপন করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, রচনা ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে বিশ্বকবি ও জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন করতে হবে।
Acknowledgment of Kazi Nazrul Islam
কবি কাজী নজরুল ইসলামকে স্বীকৃতি
কবি কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া হয়। তার রচিত “চল্চল্চল্, ঊর্ধগগনে বাজে মাদল” বাংলাদেশের রণসংগীত হিসাবে গৃহীত।
নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত ত্রিশালে (বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায়) ২০০৫ সালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় নামক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় কবির স্মৃতিতে নজরুল একাডেমি, বুলবুল ললিতকলা একাডেমী ও শিশু সংগঠন বাংলাদেশ নজরুল সেনা স্থাপিত হয়।
১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারিতে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। একুশে পদক বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্মানসূচক পদক হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
ঢাকা শহরের একটি প্রধান সড়কের নাম রাখা হয়েছে কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ।
বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে তার বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে।
কবি তার কবিতায় বলেছেন ‘দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার/লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে, যাত্রীরা হুঁশিয়ার’ তেমনি প্রেমের পরশ বুলিয়ে লিখেছেন ‘আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন, দিল ওহি মেরা ফাস গেয়ি।’ তিনিই লিখেছেন ‘গাহি সাম্যের গান-/যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান/যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-ক্রীশ্চান/গাহি সাম্যের গান।’
ধর্ম, সমাজ, মানুষ, প্রেম, ভালবাসা, নারী, বিদ্রোহ, সহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক এবং উপমহাদেশিক বিষয় নিয়ে কাজী নজরুল ইসলামের উক্তিগুলো দেয়া হল –
আপনার একটি শেয়ার আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা
মানুষ, মানবিক মূল্যবোধ, সমাজ নিয়ে কাজী নজরুল ইসলামের উক্তি
“পশুর মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে আমাদের লাভ কী, যদি আমাদের গৌরব করার মতো কিছু না-ই থাকে”
কাজী নজরুল ইসলামে
মানুষ ও সমাজ নিয়ে কাজী নজরুল ইসলামের উক্তি
বিদ্রোহ নিয়ে কাজী নজরুল ইসলামের উক্তি
নারী নিয়ে কাজী নজরুল ইসলামের উক্তি
প্রেম নিয়ে কাজী নজরুল ইসলামের উক্তি
ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং ধর্ম নিয়ে কাজী নজরুল ইসলামের উক্তি
“পুঁথির বিধান যাক পুড়ে তোর বিধির বিধান সত্য হোক।”
কাজী নজরুল ইসলামের এই উক্তিটি ‘সত্যমন্ত্র’ কবিতা থেকে সংগ্রহকরা হয়েছে।
“আজ বুঝি-কেন বলিয়াছিলেন শেষ পয়গম্বর- ‘মোর পরে যদি নবী হত কেউ, হত সে এক উমর!”
“ মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই। ”
“দূর আজানের মধুর ধ্বনি, বাজে, বাজে মসজিদের-ই মিনারে।
মনেতে জাগে, হাজার বছর আগে, হজরত বেলালের অনুরাগে।
তার খাস এলাহান, মাতাইতো প্রাণ।
ভাঙ্গাইতো পাষান, জাগাইতো মহিমারে।
দূর আজানের মধুর ধ্বনি, বাজে, বাজে মসজিদের-ই মিনারে”
মৌ-লোভী যত মৌলবি আর মোল-লা’রা কন হাত নেড়ে দেব-দেবী নাম মুখে আনে সবে দাও পাজিটার জাত মেরে ফতোয়া দিলাম কাফের কাজী ও যদিও শহীদ হইতে রাজি ও আমপারা পড়া হামবড়া মোরা এখনও বেড়াই ভাত মেরে হিন্দুরা ভাবে পার্শী শব্দে কবিতা লেখে ও পা’ত নেড়ে।”
“মওলানা মৌলবি সাহেবকে সওয়া যায়, মোল্লাও চক্ষুকর্ণ বুজিয়া সহিতে পারি, কিন্তু কাঠমোল্লার অত্যাচার অসহ্য হইয়া উঠিয়াছে। ইসলামের কল্যাণের নামে ইহারা যে কওমের জাতির ধর্মের কি অনিষ্ট করিতেছেন তাহা বুঝিবার মত জ্ঞান নাই বলিয়াই ইহাদের ক্ষমা করা যায় না। ইহারা প্রায় প্রত্যেকেই ‘মনে মনে শাহ ফরীদ, বগল মে ইট’। ইহাদের নীতি ‘মুর্দা দোজখ মে যায় আওর বেহেশত মে যায়, মেরা হালুয়া রুটি সে কাম’। ”
“নামাজ পড়, রোজা রাখ, কলমা পড় ভাই, তোর আখেরের কাজ করে নে সময় যে আর নাই।”
“খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে বিরাট শিশু আনমনে।
প্রলয় সৃষ্টি তব পুতুল খেলা নিরজনে প্রভু নিরজনে।। ”
”শুণ্যে মহা আকাশে তুমি মগ্ন লীলা বিলাসে ভাঙ্গিছো গড়িছো নীতি ক্ষণে ক্ষণে নির্জনে প্রভু নির্জনে খেলিছো।”
খোদার কি আশ্চর্য মহিমা । রাজা–যার অত ধন মালামাত্তা, অত প্রতাপ, সেও মরে মাটি হয় ।আর যে ভিখারি খেতে না পেয়ে তালপাতার কুঁড়েতে কুঁকড়ে মরে পড়ে থাকে, সেও মাটি হয়।”
“বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে,
আমরা তখনও বসে- বিবি তালাকের ফতোয়া খুঁজেছি, ফিকাহ ও হাদিস চষে”
“কাণ্ডারী এ তরীর পাকা মাঝি মাল্লাদাঁড়ি মুখে সারিগান- লা শরীক আল্লাহ।”
কাজী নজরুল ইসলামের ‘খেয়াপারের তরণী’ শীর্ষক কবিতা থেকে সংগ্রহীত উক্তি।
“জানিস নাকি ধর্ম সে যে বর্মসম সহনশীলতাই কি ভাই ভাঙতে পারে ছোঁওয়া ছুঁয়ির ছোট্ট ঢিল?
যে জাত-ধর্ম ঠুনকো এত আজ না হয় কাল ভাঙবে সে ত।
যাক না সে জাত জাহান্নামে রইবে মানুষ নাই পরোয়া।”
‘জাতের বজ্জাতি’ শীর্ষক কবিতা থেকে এই বাণীটি সংগ্রহ করা হয়েছে।
“ হিন্দু না ওরা মুসলিম এই জিজ্ঞাসে কোন জন হে, কাণ্ডারি বল ডুবিছে মানুষ
“যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে,অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে বুঝবে সেদিন বুঝবে!”
উক্তিটি কাজী নজরুল ইসলামের ‘অভিশাপ’ কবিতা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
“হাসি দিয়ে যদি লুকালে তোমার সারা জীবনের বেদনা আজো তবে শুধু হেসে যাও, আজ বিদায়ের দিনে কেঁদোনা
কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদায় বেলায়’ কবিতা থেকে সংগ্রহীত বাণী।
“ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ।
তোর সোনা-দানা, বালাখানা সব রাহে লিল্লাহদে যাকাত,
মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিঁদও মন
রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।
কাজী নজরুল ইসলাম
আপনার একটি শেয়ার আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা
এছাড়া ধর্ম, সমাজ, মানুষ, প্রেম, ভালবাসা, নারী, বিদ্রোহ, সহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক এবং উপমহাদেশিক বিষয় নিয়ে আরও যেসব কাজী নজরুল ইসলামের উক্তিগুলো পাওয়া যায় তা এখানে দেয়া হল। তিনিই রবীন্দ্র-উত্তর বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার পথিকৃৎ। নজরুল তার কবিতা, গান ও উপন্যাসে পরাধীন ভারতে বিশেষ করে অবিভক্ত বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা, সামন্তবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। –
“মোর ফুলবনে ছিল যত ফুল
ভরি ডালি দিনূ ঢালি দেবতা মোর ।
হায় নিলে না সে ফুল ছি ছি বেভুল
নিলে তুলি খোপা খুলি কুসুম ডোর”
“ভালোবাসা দিয়ে ভালোবাসা না পেলে তার জীবন দুঃখের ও জরতার।”
“তোমারে যে চাহিয়াছে ভুলে একদিন,
সে জানে তোমারে ভোলা কি কঠিন।”
“ভালবাসার কোন অর্থ বা পরিমাণ নেই ”
“মৃত্যুর যন্ত্রণার চেয়ে বিরহের যন্ত্রণা যে কতো কঠিন, কতো ভয়ানক তা একমাত্র ভুক্তভুগিই অনুভব করতে পারে”
“মিথ্যা শুনিনি ভাই, এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দীর-কাবা নাই।”
“স্বপন ভেঙে নিশুত্ রাতে জাগবে হঠাৎ চমকে,
কাহার যেন চেনা-ছোঁওয়ায় উঠবে ও-বুকে ছমকে,-জাগবে হঠাৎ চমকে!
ভাববে বুঝি আমিই এসেব’ সনু বুকের কোলটি ঘেঁষে,
ধরতে গিয়ে দেখবে যখনশূন্য শয্যা! মিথ্যা স্বপন!
বেদনাতে চোখ বুঁজবে-বুঝবে সেদিন বুঝবে! ”
“ তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়, সে কি মোর অপরাধ?
চাঁদেরে হেরিয়া কাঁদে চকোরিনী বলে না তো কিছু চাঁদ।”
“আমার যাবার সময় হল দাও বিদায়, মোছ আঁখি দুয়ার খোল দাও বিদায় ”
“এই অসুন্দরের শ্রদ্ধা নিবেদনের শ্রাদ্ধ দিনে বন্ধু, তুমি যেন যেওনা”
“আমি নিজেই নিজের ব্যথা করি সৃজন শেষে সেই আমারে কাঁদায়, যারে করি আপনারি জন।”
উক্তিটি নজরুল ইসলামের ‘লক্ষ্মীছাড়া’ কবিতা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
“আমার বুকের যে কাটা ঘা, তোমায় ব্যাথা হানত সেই আঘাতই যাচবে আবার হয়তো হয়ে শ্রান্ত আসব তখন পান্থ,
হয়তো তখন আমার কোলে সোহাগ লোভে পড়বে ঢোলে
আপনি সেদিন সেধে-কেদে চাপবে বুকে বাহুয় বেধে চরন চুমে পূজবে বুঝবে সেদিন বুঝবে।”
“আসবে ঝড়ি, নাচবে তুফান টুটবে সকল বন্ধন কাপবে কুটির সেদিন ত্রাসে,
জাগবে বুকে ক্রন্দন টুটবে যবে বন্ধন,
পড়বে মনে নেই সে সাথে বাধতে বুকে দুঃখ রাতে-
আপনি গালে যাচবে চুমা চাইবে আদর মাগবে ছোওয়া আপনি যেচে চুমবে বুঝবে সেদিন বুঝবে।”
“সে দেশে যবে বাদল ঝরে কাঁদে না কি প্রাণ একেলা ঘরে, বিরহ ব্যথা নাহি কি সেথা বাজে না বাঁশি নদীর তীরে।”
“তোমার সখার আসবে যেদিন এমনি কারা বন্ধ আমার মত কেদে কেদে হয়তো হবে অন্ধ সখার কারা বন্ধ,
বন্ধু তোমার হানবে হেলা ভাঙ্গবে তোমার সুখের খেলা দীর্ঘ লো কাটবে না আর বইতে প্রাণ শ্রান্ত এ ভার সরন মনে
যুঝবে বুঝবে সেদিন বুঝবে।”
“কামনা আর প্রেম দুটি হচ্ছে সম্পুর্ণ আলাদা। কামনা একটা প্রবল সাময়িক উত্তেজনা মাত্র আর প্রেম হচ্ছে ধীর প্রশান্ত ও চিরন্তন।”
“হেথা সবে সম পাপী, আপন পাপের বাটখারা দিয়ে অন্যের পাপ মাপি!”
“যুগের ধর্ম এই- পীড়ন করিলে সে পীড়ন এসে পীড়া দেবে তোমাকেই!”
সঞ্চিতা কাব্যগ্রন্থের পাপ কবিতা থেকে এই বানীটি সংগ্রহ করা হয়েছে।
রাখাল বলিয়া কারে করো হেলা, ও-হেলা কাহারে বাজে!
হয়তো গোপনে ব্রজের গোপাল এসেছে রাখাল সাজে !
কাজী নজরুল ইসলামের জনপ্রিয় “মানুষ” কবিতা থেকে এই উক্তি চয়ণ করা হয়েছে।
“অসতী মাতার পুত্র সে যদি জারজ-পুত্র হয়,
অসৎ পিতার সন্তানও তবে জারজ সুনিশ্চয় !”
সঞ্চিতা কাব্যগ্রন্থের ‘বারাঙ্গনা’ কাব্য থেকে এই বানীটি চয়ণ করা হয়েছে।
“অন্ধের মতো কিছু না বুঝিয়া, না শুনিয়া, ভেড়ার মতো পেছন ধরিয়া চলিও না । নিজের বুদ্ধি, নিজের কার্যশক্তিকে জাগাইয়া তোলে ।”
“বহু যুবককে দেখিয়াছি যাহাদের যৌবনের উর্দির নিচে বার্ধকের কঙ্গাল মূর্তি।”
“আমি এই দেশে, এই সমাজে জন্মেছি বলেই শুধু এই দেশের, এই সমাজেরই নই, আমি সকল দেশের সকল
মানুষের।”
“আমায় অভিনন্দিত আপনারা সেই দিনই করেছেন যেদিন আমার লেখা আপনাদের ভালো লেগেছে।”
“আসে বসন্ত ফুল বনে সাজে বনভূমি সুন্দরী;
চরণে পায়েলা রুমুঝুমু মধুপ উঠিছে গুঞ্জরি ”
“ বসন্ত মুখর আজি দক্ষিণ সমীরণে মর্মর গুঞ্জনে বনে বনে বিহ্বল বাণী ওঠে বাজি”
“সত্য যদি হয় ধ্রুব তোর কর্মে যদি না রয় ছল,
ধর্ম দুগ্ধে না রয় জলসত্যের জয় হবেই হবে
আজ নয় কাল মিলবেই ফল।”
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই উক্তিটি ‘সত্যমন্ত্র’ কবিতা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
“চাঁদ হেরিছে চাঁদমুখ তার সরসীর আরশিতে ছোটে তরঙ্গ বাসনা ভঙ্গ সে অঙ্গ পরশিতে। ”
“ফোটে যে ফুল আঁধার রাতে ঝরে ধুলায় ভোর বেলাতে আমায় তারা ডাকে সাথী আয়রে আয় সজল করুণ নয়ন তোলো দাও বিদায়। ”
“সত্য যদি লক্ষ্য হয়, সুন্দর ও মঙ্গলের সৃষ্টি সাধনা ব্রত হয়, তবে তাহার লেখা সম্মান লাভ করিবেই করিবে।”
“বাহিরের স্বাধীনতা গিয়াছে বলিয়া অন্তরের স্বাধীনতাকেও আমরা যেন বিসর্জন না দিই।
”“আর কেউ হবে না আপন যখন সব হারিয়ে চলতে হবে।
পথটি আমার নির্জন,আমি নিজেই নিজের ব্যথা করি সৃজন।
‘লক্ষ্মীছাড়া’ নজরুল রচনাবলী থেকে এই বাণীটি সংগ্রহ করা হয়েছে।
“রক্ত ঝরাতে পারি না তো একা, তাই লিখে যাই এ রক্ত লেখা।”
‘‘আজি হতে শত বর্ষে আগে, কে কবি, স্মরণ তুমি করেছিলে আমাদের শত অনুরাগে’
“নুড়ি হাজার বছর ঝরণায় ডুবে থেকেও রস পায় না।”
“অর্থ দিয়ে মাড়োয়ারিকে, জমিদার, মহাজনকে বা ভিখারিকে হয়তো খুশি করা যায়, কিন্তু কবিকে খুশি করা যায় না ।”
“গাহি সাম্যের গান – মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই , নহে মহীয়ান।” –
কাজী নজরুল ইসলামের ‘মানুষ’ কবিতা থেকে সংগ্রহীত বাণী।
“যার ভিত্তি পচে গেছে, তাকে একদম উপড়ে ফেলে নতুন করে ভিত্তি না গাঁথলে তার ওপর ইমারত যতবার খাঁড়া করা যাবে, ততবার তা পড়ে যাবে ।”
“শোন মর্ত্যের জীব অন্যের যত করিবে পীড়ন নিজে হবে তত ক্লীব।”
“তিনিই আর্টিস্ট, যিনি আর্ট ফুটাইয়া তুলিতে পারেন । আর্টের অর্থ সত্য প্রকাশ এবং সত্য মানেই সুন্দর; সত্য চিরমঙ্গলময়।”
“অসুন্দর পৃথিবীকে সুন্দর করতে; সর্বনির্যাতন থেকে মুক্ত করতেই মানুষের জন্ম।”
“ব্যর্থ না হওয়ার সব চাইতে নিশ্চিন্ত পথ হলো সাফল্য অর্জনে দৃঢ় সঙ্কল্প হওয়া।”
আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান- বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন।”
“বল বীর-বল উন্নত মম শির! শির নেহারী’ আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রীর”
“আমি বেদুইন, আমি চেঙ্গিস, আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কূর্ণিশ।”
বিদ্রোহী কবির বিদ্রোহী এই বানীটি ‘সঞ্চিতা’ কাব্য গ্রন্থ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
“মহা – বিদ্রোহী রণক্লান্ত আমি সেই দিন হব শান্ত। যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়ুগ কৃপাণ ভীম রণ, ভূমে রণিবে না-বিদ্রোহী রণক্লান্ত আমি সেই দিন হব শান্ত।”
“ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান আসি’ অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন বলিদান?”
কাজী নজরুল ইসলামের ‘কাণ্ডারী হুশিয়ার’ কবিতা থেকে সংগ্রহীত উক্তি।
“ আমি বন্ধনহারা কুমারীর বেনী, তন্বী নয়নে বহ্নি, আমি ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম উদ্দাম, আমি ধন্যি।”
“কারার ঐ লৌহকপাট, ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট, রক্ত-জমাট শিকল পূজার পাষাণ-বেদী।”
বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ-তাপ বেদনা অশ্রুবারি অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।
কাজী নজরুল ইসলামের ‘নারী’ কবিতা থেকে উক্তিটি সংগ্রহ করা হয়েছে।
“নারীর বিরহে নারীর মিলনে নর পেলো কবি প্রাণযত কথা তার হইল কবিতা শব্দ হইল গান।”
“কোন কালে একা হয়নিকো জয়ী, পূরুষের তরবারী; প্রেরনা দিয়েছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়ালক্ষী নারী।”
“কান্না হাসির খেলার মোহে অনেক আমার কাটল বেলা কখন তুমি ডাক দেবে মা, কখন আমি ভাঙব খেলা ?”
কাজী নজরুল ইসলামের ‘উপেক্ষিত’ কবিতা থেকে এই উক্তিটি সংগ্রহ করা হয়েছে।
“খেলে চঞ্চলা বরষা-বালিকা মেঘের এলোকেশে ওড়ে পুবালি বায়দোলে গলায় বলাকার মালিকা। ”
“গিন্নির চেয়ে শালী ভালো ”
কেয়া পাতার তরী ভাসায় কমল -ঝিলেতরু-লতার শাখা সাজায় হরিৎ নীলে।ছিটিয়ে মেঠো জল খেলে সে অবিরল কাজলা দীঘির জলে ঢেউ তোলে আনমনে ভাসায় পদ্ম-পাতার থালিকা।”
“বেদনার যুগ, মানুষের যুগ, সাম্যের যুগ আজি, কেহ রহিবে না বন্দী কাহারও, উঠিছে ডঙ্কা বাজি।”
“আপনারে আজ প্রকাশের তব নাই সেই ব্যাকুলতা আজ তুমি ভীরু আড়ালে থাকিয়া নেপথ্যে কও কথা!চোখে চোখে আজ চাহিতে পার না; হাতে রুলি, পায়ে মল,মাথায় ঘোমটা, ছিঁড়ে ফেল নারী, ভেঙে ফেল ও শিকল! যে-ঘোমটা তোমায় করিয়াছে ভীরু ওড়াও সে আবরণ! দূর করে দাও দাসীর চিহ্ন ঐ যতো আবরণ।”
“নর-ভাবে আমি বড় নারী ঘেঁষা! নারী ভাবে, নারী বিদ্বেষী!’
উক্তিটি (আমার কৈফিয়ত; সর্বহারা) কাব্য থেকে সংগ্রহীত।
“শিরী লায়লীর খোঁজে ফরহাদ খোঁজে কায়েস …খুঁজে ফেরে হেথা যুবা সেলিম নূরজাহানের দূর সাকিম চাঁদ বাজারে এই নওরোজের দোকান বসেছে মোমতাজের, সওদা করিতে এসেছে ফেরশাহ জাহান হেথা রূপ পাগল!”
“হে মোর রাণী! তোমার কাছে হার মানি আজ শেষে। আমার বিজয়-কেতন লুটায় তোমার চরণ-তলে এসে।আজ বিদ্রোহীর এই রক্ত-রথের চূড়ে,বিজয়িনী! নীলাম্বরীর আঁচল তোমার উড়ে।”
“আমার বাণী জয়মাল্য, রাণী! তোমার সবি। তুমি আমায় ভালোবাসো, তাইতো আমি কবি। আমার এ রূপ,— সে যে তোমার ভালোবাসার ছবি।”
কাজী নজরুল ইসলামের (কবি-রাণী, দোলন-চাঁপা) কাব্য থেকে সংগ্রহীত বাণী
“বেলা গেলো বধূ’ ভাসে ননদী, চলে জল নিতে যাবি লো যদি।”
“প্রিয় রূপ ধরে এতদিনে এলে আমার কবিতা তুমি, আঁখির পলকে মরুভূমি যেনো হয়ে গেলো বনভূমি।”“সর্বসহা কন্যা মোর! সর্বহারা মাতা!শূন্য নাহি রহে কভূ মাতা ও বিধাতা!’ (মা, সর্বহারা)
“তোমার মমতা-মানিক আলোকে চিনিনু …মাতা তুমি লাঞ্ছিতা বিশ্ব-জননী। তোমার আঁচল পাতা নিখিল দুঃখী-নিপীড়িত তবে, বিষ শুধু তোমা দহে যথা তব মাগো পীড়িত নিখিল ধরণীর ভার বহে।’
“ভগবান! তুমি চাহিতে পার কি ঐ দুটি নারীর পানে? জানি না, তোমায় বাঁচাবে কে যদি ওরা অভিশাপ হানে!”
আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম লিংক
facebook link : BFA