বর্তমান ঢাকা “বিশ্বের রিকশা রাজধানী” নামে পরিচিত হলেও এর আছে এক দীর্ঘ ইতিহাস । মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে এই শহর জাহাঙ্গীর নগর নামে পরিচিত ছিলো। ঢাকাতে বিশ্বের সেরা মসলিন কাপড় উৎপাদিত হতো। বিশ্বব্যাপী মসলিন বাণিজ্যের একটি কেন্দ্র ছিলো ঢাকা এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীগণ এখানে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে আসতেন। বিশ্ব বাণিজ্য শিল্পের কারনে আস্তে আস্তে আমাদের গড়ে উঠে নিজস্ব একটা সংস্কৃতি, যা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্পে পরিনত হয় । কারুশিল্পীদের মনের মাধুরী মেশানো কারুকাজে এবং নিজস্ব স্বকীয়তায় যা বাংলাদেশের ঐতিহ্যে রূপ নেয় । এই হস্ত ও কারুশিল্প মানচিত্র ঢাকা বিভাগ -এর মাধ্যমে উপলদ্ধি করা যাবে ঢাকা বিভাগের প্রতিটি জেলার প্রতিটি কোণ কতটা বৈচিত্র্যময় এবং ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ ।
ঢাকা বিভাগ
প্রতিটি জেলা তাদের বিশেষ এবং উল্লেখযোগ্য ঐতিহ্যে ভরপুর । একান্তভাবে দেশীয় যন্ত্রপাতি ও কাঁচামালের ব্যবহারে শিল্পীদের মৌলিক শিল্পবোধ ও ধ্যান ধারনায় সৃষ্টি “ঢাকাই জামদানি”। আজ পর্যন্ত পৃথিবীর আর কোন দেশের কারিগরদের পক্ষে জামদানি তৈরি সম্ভব হয়নি। আদিকাল থেকেই ঢাকা বিভাগের নারায়ণগঞ্জ জেলাধীন রূপগঞ্জ উপজেলার তারাবো ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রাম, সোনারগাঁ ও সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার কিছু এলাকায় জামদানি কারুশিল্পীদের বংশানুক্রমিক বসবাস। ‘প্রাচ্যের ম্যানচেষ্টার’ বলে খ্যাত শেখেরচর (নরসিংদী জেলার বাবুরহাট) এই বিভাগেই অবস্থিত। বাংলাদেশের বিশেষ এবং উল্লেখযোগ্য ঐতিহ্য হচ্ছে তাঁত শিল্প। বাংলাদেশের তাঁত বস্ত্রের চাহিদার প্রায় সিংহভাগ পূরণ করছে এ জেলার তাঁত শিল্প। ‘চমচম, টমটম ও শাড়ি, এই তিনে টাঙ্গাইলের বাড়ি।’ প্রবাদ প্রবচনের ছড়াটি যে টাঙ্গাইলকে ঘিরে, তাও ঢাকা বিভাগে অন্তর্ভুক্ত । এছাড়া মিরপুরের বেনারসি পল্লি , ফরিদপুর জেলা নকশি কাঁথা , শরীয়তপুর জেলার মৃৎ শিল্প ও ধামরাই এর কাঁসা-পিতল শিল্পে সমৃদ্ধ ঢাকা বিভাগ ।
ঢাকা বিভাগের ঐতিহ্যময় হস্ত ও কারুশিল্প মানচিত্র -কে দুই (২) টি পর্বে ভাগ করা হয়েছে ।
প্রথম পর্ব>>>
ঢাকা বিভাগের ঐতিহ্যময় হস্ত ও কারুশিল্প মানচিত্র
জেলারগুলোর ঐতিহ্যময় হস্ত ও কারুশিল্প মানচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা চেষ্টা করা হয়েছে । তথ্য বিষয়ক ভুল থাকলে সবার সহযোগিতা কামনা করছি । যে কোন ধরনের সংযোজন, বিয়োজন এবং সংযুক্ত করার জন্য প্রস্তুত। আপনার সহযোগিতায় আসতে পারে মানচিত্রের পূর্নতা ।
ঐতিহ্যময় হস্ত ও কারুশিল্প পূর্ণাঙ্গ মানচিত্র দেখতে ক্লিক করুন
ঢাকা বিভাগের উল্লেখযোগ্য হস্ত ও কারুশিল্প
প্রথম পর্ব
মিরপুর বেনারসি
জামদানি শাড়ী
টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি
শীতল পাটি
লুঙ্গি
গামছা
নকশি কাঁথা
বাঁশ-বেত শিল্প
দ্বিতীয় পর্ব
গয়নাশিল্প
কাঁসা-পিতল শিল্প
শোলাশিল্প
দারুশিল্প
বাংলার পট ও পটের গান
সরা চিত্র
কাঠের খেলনা
নৌকা
মৃৎ শিল্প
ঢাকা বিভাগের হস্ত ও কারুশিল্পের বিস্তারিত

মিরপুর বেনারসি | MIRPUR BENAROSHI
মিরপুর ১০ ও ১১ নম্বরের বিশাল একটা অংশ জুড়ে অবস্থান বেনারসি পল্লীর
বেনারসি শাড়ির মূল উৎপত্তিস্থল হিসেবে ভারতের বেনারস শহরের নাম শোনা যায়। কিন্তু ঠিক কবে থেকে তারা বেনারশী শাড়ি তৈরি করে আসছেন তা জানা যায় নি।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ভারতের বেনারসের প্রায় ৩৭০টি মুসলমান তাঁতি পরিবার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসে।
তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। তবে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরে স্থানীয়রা এ পেশায় ব্যাপকভাবে জড়িত হবার পরই বেনারসি শিল্পের অগ্রগতির সূচনা ঘটে।

জামদানি শাড়ি | JAMDANI SAREE
বলা হয় প্রাচীনকালের মসলিন কাপড়ের উত্তরাধিকারী হালের জামদানি শাড়ি । যা বাংলাদেশের অনন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য । কার্পাস তুলা দিয়ে প্রস্তুত একধরনের পরিধেয় বস্ত্র যা বুননকালে তৃতীয় একটি সুতা দিয়ে নকশা ফুটিয়ে তোলা হয় ।
‘জামদানি’ কে স্রেফ কাপড়/শাড়ি বা পণ্য ভাবলে ভুল হবে।
‘জামদানি’ হচ্ছে বিশেষ ভূগোল ও পরিবেশে শিল্প চর্চার বিশেষ একটি ধরণ যার মাধ্যমে একজন তাঁতি সুতা , রং , মাকু এবং তাঁত এর মাধ্যমে নান্দনিক শিল্প তৈরী করেন ।
ঐতিহ্যবাহী নকশা ও বুননের কারণে ২০১৬ সালে জামদানিকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো।

টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি | TANGAIL TATER SAREE
তাঁতশিল্প বাংলাদেশের অন্যতম পুরোনো কুটিরশিল্প। টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি তারই ঐতিহ্য বহন করে । জেলার নামেই এর নামকরণ করা হয়েছে । টাঙ্গাইলের একটি প্রবাদ বেশ পরিচিত।
‘নদী চর খাল বিল গজারীর বন
টাঙ্গাইল শাড়ি তার গরবের ধন।’
বাজিতপুর ও করটিয়া-য় সপ্তাহে দুই দিন শাড়ির হাট বসে । এখানে তাঁতিরা টি পিট তাঁত, চিত্তরঞ্জন তাঁত এবং পাওয়ার তাঁতে শাড়ি বুনে থাকেন ।
বিস্তারিত : টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়ি | TANGAIL SAREE
আরও পড়ুন : বাংলাদেশি সেরা দশ শাড়ি

শীতল পাটি | SHITOL PATI
শীতল পাটি প্রাকৃতিক গাছ থেকে তৈরি এক ধরনের মেঝেতে পাতা আসন। মুলত এটি এক ধরণের মাদুর যেখানে আবহমান গ্রাম বাংলার প্রকৃতি, রূপ এবং সৌন্দর্যকে কারুকাজের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়। শীতল পাটিকে নকশি পাটিও বলা হয়। মুরতা নামে একধরনের ঝোপজাতীয় গাছের বেত দিয়ে পাটি তৈরি হয়। পাটি বুননের কাজে যারা জড়িত থাকেন তাদের মূলত ‘পাটিয়াল’ বা ‘পাটিকর’ নামে আখ্যায়িত করা হয়।
ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল জেলা-র দেলদুয়ার উপজেলার হিঙ্গানগর, গজিয়াবাড়ি, আটিয়া ও নাল্লাপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম শীতল পাটির জন্য সমৃদ্ধ। হিঙ্গানগর গ্রামে সপ্তাহে দুইদিন শুক্রবার ও শনিবার শীতল পাটির হাট বসে।
বিস্তারিত : শীতল পাটি | SHITAL PATI

লুঙ্গির এবং গামছা | LUNGI & GAMCHA
দেশ ভাগের পর পূর্ববাংলায় হিন্দুদের থেকে মুসলমানরা যে আলাদা তা প্রমান করতে কাকাকে চাচা, জলকে পানি বলা কিংবা হাত জোড় করে নমস্কার পরিহার করার মতই ধুতির জায়গা দখল করে নেয় লুঙ্গি। বলা যায় বাংলায় লুঙ্গির প্রচলন মুসলমানদের হাত ধরেই।
টাঙ্গাইল জেলা কালিহাতীর বল্লা এবং নরসিংদী জেলার ‘প্রাচ্যের ম্যানচেষ্টার’ বলে খ্যাত শেখেরচর (বাবুরহাট) লুঙ্গির তৈরির জন্য বিখ্যাত । বাংলাদেশের তাঁত বস্ত্রের চাহিদার প্রায় সিংহভাগ পূরণ করছে এ জেলার তাঁত শিল্প।

ফরিদপুরের নকশি কাঁথা | NAKSHI KANTHA
নকশি কাঁথা হলো সাধারণ কাঁথার উপর নানা ধরণের নকশা করে বানানো বিশেষ প্রকারের কাঁথা। নকশি কাঁথা বাংলাদেশের লোকশিল্পের একটা অংশ। ফরিদপুরের কাঁথায় লোকগল্প দেখা যায় । তেমনই একটি কাঁথায় চণ্ডী মঙ্গলের একটি দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। দৃশ্যের শিরোনাম লিখিত হয়েছে: বৈমল কামিনী।

বাঁশ-বেত শিল্প | bamboo and cane
কিশোরগঞ্জের ভৈরবের ভৈরব উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের মানিকদী, পূবেরকান্দা, চাতালচর সহ বিভিন্ন গ্রামে সুপ্রাচীনকালে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ-বেত শিল্পের প্রসার ঘটে। তৈরী হয় শীতলপাটি, চাটাই, ডুল, জাবার, হাতপাখা, ডুলা, খলই, ওড়া, পাইছা, ঝুঁড়ি, চালনা, কুলা, মুড়া, চাই ইত্যাদি নানা বাহারি জিনিস।
ঢাকা বিভাগের জেলা সমূহ
অন্যান্য ৮ বিভাগের ঐতিহ্যময় হস্ত ও কারুশিল্প মানচিত্র
Graphic : FXYZ
powered by bangladesh fashion archive | BFA
image and information Source: internet
1 thought on “হস্ত ও কারুশিল্প মানচিত্র | ঢাকা বিভাগ”