RANGPUR
division
.
“‘রঙ্গরসে ভরপুর, আমাদের এই রংপুর’—রঙ্গপুরের পরিবর্তিত রূপ রংপুর। প্রকৃতির রহস্যময়তা, শিক্ষা-সাহিত্য, সঙ্গীত, সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং বিশেষ করে লোকসংস্কৃতির এক অপূর্ব সমন্বয়ে রংপুর এক প্রাণোচ্ছল শক্তিতে ভরপুর। এটি বাংলাদেশের প্রাচীনতম অঞ্চল ‘বরেন্দ্র’ বা ‘বন্দ্রে’র একটি অংশ, যা সমতল ভূমিতে অবস্থিত। পরবর্তী সময়ে এই অঞ্চল ‘গৌড়’ নামে পরিচিতি লাভ করে। সময়ের সঙ্গে রংপুর তার রূপ বদলেছে, কিন্তু তার সাংস্কৃতিক গভীরতা ও ঐতিহ্যের প্রাণশক্তি অটুট রয়েছে।
রংপুরের ঐতিহ্যের একটি উজ্জ্বল নিদর্শন হলো ‘কান্তজীউ মন্দির’। এই মন্দির বাংলার স্থাপত্যশিল্পের একটি অনন্য উদাহরণ। এর দেয়ালে পোড়ামাটির টেরাকোটা শিল্পে পৌরাণিক কাহিনীসমূহ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যা বাংলাদেশের সর্বোৎকৃষ্ট টেরাকোটা শিল্পের নমুনা হিসেবে বিবেচিত হয়। এই শিল্পে বৈচিত্র্য এবং নৈপুণ্যের ছোঁয়া স্পষ্ট। শুধু মন্দিরই নয়, রংপুর বিভাগের প্রতিটি জেলায় হস্তশিল্প ও কারুশিল্পে রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্যগত বৈশিষ্ট্য, যা এ অঞ্চলের সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির পরিচয় বহন করে।
বাংলাদেশের লোক ও কারুশিল্পের ঐতিহ্যের আরেকটি প্রতীক হলো ‘নকশি পাখা’। গাইবান্ধার রসুলপুর গ্রাম এই নকশি পাখার জন্য বিখ্যাত। এছাড়া কুড়িগ্রামের কুমার সম্প্রদায়ের অবদানও উল্লেখযোগ্য, যারা তাদের হাতের কাজে ঐতিহ্যের ছোঁয়া রেখেছে। রংপুরের ‘শতরঞ্জি’ আরেকটি ঐতিহ্যবাহী বুননশিল্প, যা এ অঞ্চলের কারিগরদের দক্ষতা ও সৃজনশীলতার প্রতীক। এই শতরঞ্জি শুধু ব্যবহারিক নয়, বরং শিল্পকর্ম হিসেবেও সমাদৃত।
রংপুরের এই বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও কারুশিল্প পর্যটকদের আকর্ষণ করার পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রায় গভীর প্রভাব ফেলেছে। এটি শুধু একটি ভৌগোলিক অঞ্চল নয়, বরং একটি জীবন্ত ঐতিহ্যের সংগ্রহশালা, যেখানে প্রতিটি উপাদান মিলে তৈরি করেছে রংপুরের অনন্য পরিচয়।”
রংপুর বিভাগের
জেলা সমূহ
–
রংপুর বিভাগে বর্তমানে মোট 0৮ জেলা রয়েছে। এই জেলাগুলোর প্রতিটির রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য, যা রংপুর বিভাগের সামগ্রিক বৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করে। জেলাগুলো হলো:
দিনাজপুর জেলা
গাইবান্ধা জেলা
কুড়িগ্রাম জেলা
লালমনিরহাট জেলা
নিলফামারী জেলা
পঞ্চগড় জেলা
রংপুর জেলা
ঠাকুরগাঁও জেলা
রংপুর বিভাগের
উল্লেখযোগ্য হস্ত ও কারুশিল্প
–
বাঁশ শিল্প
নকশি পাখা
মৃৎ শিল্প  
পাটজাত শিল্পঃ শতরঞ্জি
রংপুর বিভাগের
ঐতিহ্যময় হস্ত ও কারুশিল্প মানচিত্র
–
রংপুর বিভাগের প্রতিটি জেলার ঐতিহ্যময় হস্ত ও কারুশিল্পকে মানচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই প্রচেষ্টার মূল লক্ষ্য হলো রংপুরের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পের বৈচিত্র্য ও অনন্যতা সবার সামনে তুলে ধরা। মানচিত্রটি তৈরি করতে এবং সঠিক তথ্য নিশ্চিত করতে সবার সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি।
তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ত্রুটি বা অসম্পূর্ণতা থাকলে তা সঠিকভাবে সংশোধনের জন্য আপনাদের মূল্যবান মতামত ও সহযোগিতা কাম্য। মানচিত্রটি আরও সমৃদ্ধ করতে যেকোনো নতুন তথ্য, সংশোধনী বা সংযোজন যুক্ত করা যেতে পারে।
আপনারা যে কোনো ধরনের পরামর্শ, সংশোধনী বা তথ্য প্রদান করলে এই মানচিত্রটি আরও নির্ভুল ও তথ্যবহুল হয়ে উঠবে। এতে কেবলমাত্র মানচিত্রটির পূর্ণতা নিশ্চিত হবে না, আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও আরও স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হবে। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে রংপুর বিভাগের হস্ত ও কারুশিল্পের গৌরবময় ইতিহাস এবং ঐতিহ্য আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
ঐতিহ্যময় হস্ত ও কারুশিল্প পূর্ণাঙ্গ মানচিত্র দেখতে ক্লিক করুন
রংপুর বিভাগের
হস্ত ও কারুশিল্পের
বিস্তারিত
.
কান্তজিউ মন্দির | অবিভক্ত ভারতের এগারতম আশ্চর্য সম্পর্কে পড়ুন এই লিংকে
BAMBOO CRAFT
ঐতিহ্যবাহী বাঁশ শিল্প
অঙ্কে তৈলাক্ত বাঁশের ধাঁধা নয়,
জীবন অঙ্কের ধাঁধায় বাধা পড়ে আছে শিল্পীদের জীবনযাত্রা। আর বিভিন্ন সংকটে ধীরে ধীরে চাপা পড়ছে এ শিল্পের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারা। 
বাঁশ শিল্প একটি জনপ্রিয় লোকশিল্প। বাংলাদেশের নিজস্ব শিল্প-সংস্কৃতির প্রতীক। দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং  কুড়িগ্রাম জেলা বাঁশ শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত। এই অঞ্চলে বাঁশের তৈরি জিনিস পত্রের মধ্যে ঢাকী, চাঙ্গারী, বাহুংকা বা বইংঘা, কুলা, ডুলি, চাটাই, ফুলের ডালা, ধামা, খৈ চালনী, পাখা, মাছ ধরার ডিহিরী, জালাঙ্গা, পোলোই, ছোট খাট, খাটিয়া ইত্যাদি।
NAKSHI PAKHA
নকশি পাখা: বাতাসে লুকানো ঐতিহ্যের গল্প
নকশি  পাখাও নকশি কাঁথার মতো সুপরিচিত এবং বাংলার সর্বত্র প্রচলিত আছে। তবে হাতপাখাকে আকর্ষণীয় করার জন্য বিভিন্ন অঞ্চল বিভিন্ন ভাবে নানা নকশায় শোভিত করে থাকে।
গাইবান্ধার  রসুলপুর ইউনিয়নের আরাজি ছান্দিয়াপুর এবং বুজরুক রসুলপুর গ্রাম নকশী পাখার জন্য খ্যাত। সুতা ও বাঁশের চাক (বাতি) দিয়ে নানা রং ও নকশার হাতপাখা তৈরি হয় এখানে। 
আপনার একটি শেয়ারে জানবে বিশ্ব, আমাদের দেশ কতটা সমৃদ্ধ
clay art
কাদা মাটি থেকে শিল্প: মৃৎশিল্প বাংলাদেশের এক প্রাচীন ঐতিহ্য
মৃৎ” শব্দের অর্থ মৃত্তিকা  আর “শিল্প” বলতে এখানে সুন্দর ও সৃষ্টিশীল বস্তুকে বোঝানো হয়েছে। মাটি দিয়ে দিয়ে তৈরি সব শিল্পকে কর্মকেই মৃৎ শিল্প বলা হয়। এই ঐতিহ্যের রূপকার হলেন কুমোর বা কুমার শ্রেণীর পেশাজীবীরা। 
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় কুমার সম্প্রাদায়ের বসবাস। তারা মাটির পাতিল, কুপি, হাড়ি, বাতি, গরুর খাবার পাত্র(টেগারি), মাটির ব্যাংক, কড়াই, শিশুদের খেলনা সামগ্রি তৈরি করেন।  
Sataranji
শতরঞ্জি, রংপুরের ঐতিহ্যবাহী বুননশিল্প
শতরঞ্জি বাংলাদেশের রংপুর অঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী কারুপণ্য। প্রায় ৭০০ বছরের প্রাচীন ইতিহাস রয়েছে এই কারুপণ্যের। জানা যায়, রংপুর জেলার তাঁতিরা ৭০০ বছর আগে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে একধরনের মোটা কাপড় তৈরি করতেন যা ওই সময়ে অভিজাত শ্রেণির গৃহে বা খাজাঞ্চিখানায় বিশেষ আসন হিসেবে ব্যবহৃত হতো যা বিবর্তনের মধ্যো দিয়ে আজ রংপুরের শতরঞ্জি নামে পরিচিত।
শতরঞ্জি  বয়ন কৌশলের দিক দিয়ে আধুনিক ট্যাপেস্ট্রির অনুরূপ একটি শিল্প। এখনও শতরঞ্জি উৎপাদন করতে যন্ত্রের দরকার হয়না। বাঁশ ও রশি ব্যাবহার করে মাটির উপর সুতা দিয়ে টানা তৈরি করা হয়।

 














