ঢাকার অন্যতম প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন আহসান মঞ্জিল। বাংলার গৌরবময় ইতিহাস ও নবাবি ঐতিহ্যের সংমিশ্রণে টিকে থাকা এক সমৃদ্ধশালা হলো আহসান মঞ্জিল। বলা হয় ঢাকা শহরের প্রথম ইট-পাথরের তৈরী প্রথম স্থাপনা আহসান মঞ্জিল। এবং তৎকালীন নবাবদের হাতেই প্রথম বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলে উঠে এই ভবনে। নওয়াব আবদুল গনি ১৩ বছর সময় নিয়ে এই প্রাসাদটি তৈরি করেন এবং তার প্রিয় পুত্র খাজা আহসানুল্লাহর নাম অনুসারে এর নামকরন করা হয় হয় ’ আহসান মঞ্জিল ‘। বর্তমানে আহসান মঞ্জিল বাংলাদেশ সরকারের জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষিত । ১৯৯২ সালে জনসাধারনের পরিদশের্নের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হয়।
স্থাপত্যশৈলী
পুরান ঢাকার ইসলামপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত আহসান-মঞ্জিল ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে নির্মান কাজ শুরু হয় এবং ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে সমাপ্ত হয়। প্রাসাদের ছাদের উপর একটি গম্বুজ আছে। আহসান মঞ্জিলের স্থাপত্যশৈলীর আকর্ষন হল, মঞ্জিলের দ্বীতিয় তলা থেকে একটি চওড়া সিড়ি সবুজ মাঠে নেমে এসেছে। আহসান-মঞ্জিলের প্রতিটি কক্ষ অষ্টকোণ বিশিষ্ট। ভবনের বারান্দা ও মেঝে তৈরী করা হয়েছে মাবের্ল পাথর দিয়ে । এবং ভবনের ছাদ কাঠের তৈরী।
আহসান মঞ্জিল দুটি অংশে বিভক্ত। পূর্বদিকের অংশটি দরবার বা রঙমহল যেখানে বৈঠকখানা ও পাঠাগার আছে এবং পশ্চিম দিকের অংশটি ছিল অন্দর মহল, যেখানে নাচঘর ও অন্যান্য আবাসিক কক্ষ আছে। আর এ দু,টি অংশে সংযোগ করা হয়েছে দোতলায়। নীচতলায় আছে দরবারগৃহ ও ভোজন কক্ষ।
আহসান মঞ্জিল জাদুঘর
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর নবাব পরিবাবের উত্তরসূরিরা নিলামে বিক্রি করে দেয়ার পরিকল্পনা করেন। সেই সময়কার প্রধানমন্ত্রি শেখ মুজিবুর রহমান ভবনটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব মাথায় রেখে নিলামে বিক্রির সিন্ধান্ত বাতিল করে দেয় এবং সেখানে জাদুঘর স্থাপনের নির্দেশ দেন।
এর সংস্কার, সৌন্দর্যবর্ধন করে ১৯৯২ সালে তখনকার মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আহসান মঞ্জিল জাদুঘর পরিদর্শনের জন্য উম্মুক্ত করে দেন।
আহসান-মঞ্জিল জাদুঘরে আছে বিশাল সংগ্রহশালা। মোট ২৩টি কক্ষে প্রায় ৪ হাজার ৭৭ টি নিদর্শন উম্মুক্ত করা আছে। নয়টি কক্ষ সেই নবাবী আমলের মতো করেই সাজানো আছে।
আছে নওয়াবদের ব্যবহৃত বড় বড় আয়না। লোহার সিন্দুক, কাচ ও চিনামাটির থালা-বাসন। কাঠের আলমারী, বিভিন্ন ধরনের অলংকার, সিংহাসন, ঢাল ও তরবারি, বিভিন্ন ধরনের তৈলচিত্র, ফুলদানি। আরো আছে সমসাময়িককালের বিখ্যাত ব্যাক্তিদের প্রতিকৃতি।
ইতিহাস
মোঘল আমলে ঢাকা, ফরিদপুর ও বরিশাল অঞ্চলের জমিদার শেখ এনায়েত উল্লাহ বর্তমান স্থানে একটি রংমহল নামে একটি প্রমোদভবন তৈরি করেন। । তার মৃত্যুর পর তার পুত্র মতিউল্লাহ এই ভবন ফরাসী বণিকদের কাছে বিক্রি করে। তারা এটাকে বাণিজ্য কুটির হিসাবে ব্যবহার করত।
১৮৩৫ সালে নবাব আব্দুল গণির পিতা খাজা আলীমুল্লা ফরাসীদের কাছ থেকে এই ভবনটি কিনে নেন । তিনি ভবনের আমূল পরিবর্তন করে পুননির্মাণ করেন এবং নওয়াববাড়ি হিসাবে এখানে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন। পিতার মৃত্যুর পর নওয়াব আব্দুল গণি ১৮৭২ সালে প্রাসাদের পুননির্মাণ করে বর্তমান আকারে আনেন এবং পুত্র আহসান উল্লাহর নামে প্রাসাদের নাম রাখেন আহসান মঞ্জিল ।
আহসান মঞ্জিল জাদুঘর খোলার সময়সূচী
বৃহস্পতিবার এবং অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন বাদে সপ্তাহে ৬দিন খোলা থাকে। প্রতিদিন সকাল ১০.৩০ মিনিট থেকে ৫.৩০ মিনিট পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। আর শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে রাট ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। আহসানমঞ্জিল জাদুঘরের টিকেট মূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা করে। শিশুদের ১০ টাকা করে হলেও প্রতিবন্ধী ও ছাত্র-ছাত্রীরা দেখতে পারবে বিনামূল্যে।
আহসান মঞ্জিল আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
প্লান করে আহসান মঞ্জিল ঘুরে দেখার সাথে কাছাকাছি ঘুরে দেখতে পারেন লালবাগ কেল্লা, হোসেনি দালান, তারা মসজিদ, বিনত বিবির মসজিদ, আর্মেনিয়ান চার্চ ও বাহাদুর শাহ পার্ক। সব শেষে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবার গুলো মিস করা ঠিক হবে না।