খনার-বচন-Astrologer-in-Bengal-x-bfa-x-fxyz

খনার বচন | জ্যোতিষশাস্ত্রে সুদক্ষ এক নারী

কে এই খনা? তিনি সত্যি ছিলেন? না পুরোটা কল্পনা? সেই গল্পে ঢুকবো তবে খনার বচন বাংলা সাহিত্যের আদি কীর্তির মধ্যে পড়ে।

Khona’s origin story in Bangla folklore

খনা বা ক্ষণা ছিলেন জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী এক বিদুষী নারী; যিনি বচন রচনার জন্যেই বেশি সমাদৃত। মূলতঃ খনার ভবিষ্যতবাণীগুলোই ‘খনার বচন’ নামে বহুল পরিচিত। খনার বচন আজও বাঙালির মুখে মুখে। কে এই খনা? তিনি সত্যি ছিলেন? না পুরোটা কল্পনা? সেই গল্পে ঢুকবো তবে খনার বচন বাংলা সাহিত্যের আদি কীর্তির মধ্যে পড়ে। তাঁর বচন সাহিত্যের বেশি ভাগ জুড়ে চাষাবাদের তত্ত্বকথা। জ্যোতিষশাস্ত্রে গভীরজ্ঞানী তো ছিলেনই, সাথে আবহাওয়াদর্শন ও কৃষিবিদ্যারও নানা রহস্য সমাধান ছিলো তাঁর বচনে বচনে। এই আধুনিক যুগেও তার অনেক বচন সত্যই সত্য থেকে গেছে। ভাবনার খোরাক 

পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসতের দেউলি গ্রামে জন্ম নেয়া খনা জ্যোতিষ শাস্ত্রে পারদর্শী  ছিলেন। আনুমানিক ৮০০ থেকে ১২০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে খনা জন্মেছিলেন। তার বাবার নাম অটনাচার্য। এই প্রসঙ্গে খনার বচনে একটি উক্তি আছে- আমি অটনাচার্যের বেটি, গণতে গাঁথতে কারে বা আঁটি।”

প্রচলিত ধারনানুসারে, লীলাবতীর আরেক নাম ক্ষনা। শুভ সময়ে জন্মে ছিলেন বলে তার নাম রাখা হয়েছে ক্ষনা।  আবার অনেকে এও বলে থাকে যে, খোনার নাম এসেছে উড়িয়া থেকে , যার আসল নাম বোবা। লীলাবতীর জিব কেটে দেয়ার ফলে তিনি বোবা হয়ে যান। সেই জন্য তার নাম খোনা বা খনা হয়েছে।

তবে, জনশ্রুতি অনুযায়ী, এই অবস্থায় তাঁকে যাতে স্বচক্ষে মিহিরের অকাল মৃত্যু না দেখতে হয়, সেজন্যে তাকে একটি তামার পাত্রের মধ্যে রেখে, পাত্রটি সমুদ্রের জলে ভাসিয়ে দেন। দৈবযোগে সেই তামার পাত্রটি ভাসতে ভাসতে একসময় লঙ্কা দ্বীপের সমুদ্রতীরের কাছে গিয়ে পৌঁছায়। সেইসময় খনা তার রাক্ষসী সহচরীদের সঙ্গে সমুদ্রে স্নান করছিল, সে ওই তামার পাত্রের মধ্যে ওই সুন্দর শিশুটিকে দেখতে পায় এবং তাকে জল থেকে তুলে নেয়। সঙ্গে সঙ্গে খনা সেই শিশুটির আয়ু গণনা করে দেখে যে, তার আয়ু একশো বছর।

খনা এবং মিহির দুজনেই জ্যোতিষশাস্ত্রে দক্ষতা অর্জন করেন। মিহির একসময় বিক্রমাদিত্যের সভাসদ হন। একদিন পিতা বরাহ এবং পুত্র মিহির আকাশের তারা গণনায় সমস্যায় পড়লে, খনা এ সমস্যার সমাধান দিয়ে রাজা বিক্রমাদিত্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

গণনা করে খনার দেওয়া পূর্বাভাস রাজ্যের কৃষকরা উপকৃত হতো বলে রাজা বিক্রমাদিত্য খনাকে দশম রত্ন হিসেবে আখ্যা দেন। বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিষয় যেমন হাতগননা, শস্যগণনা , বন্যা , বৃষ্টি , কুয়াশা বার গনানা , জন্ম-মৃত্যু গননা , শুভ-অশুভ গননা , ইত্যাদি ক্ষেত্রে খনার বচন ছিল নির্ভুল। রাজসভায় প্রতিপত্তি হারানোর ভয়ে প্রতিহিংসায় বরাহের আদেশে মিহির লীলাবতীর জিহ্বা কেটে দেন। এর কিছুকাল পরে খনার মৃত্যু হয়। জিব কেটে নেয়ার আগে তিনি তার কথাগুলো লিখে রাখার চেষ্টা করেছিলো। সেগুলোই পরবর্তীতে খনার বচন হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

খনার বচন বাংলা সাহিত্যের আদি কীর্তির মধ্যে পড়ে। তাঁর বচন সাহিত্যের বেশি ভাগ জুড়ে চাষাবাদের তত্ত্বকথা। জ্যোতিষশাস্ত্রে গভীরজ্ঞানী তো ছিলেনই, সাথে আবহাওয়াদর্শন ও কৃষিবিদ্যারও নানা রহস্য সমাধান ছিলো তাঁর বচনে বচনে। এই আধুনিক যুগেও তার অনেক বচন সত্যই সত্য থেকে গেছে। তেমন কিছু নমুনা দেয়া হলো – 

“যদি বর্ষে মাঘের শেষ
ধন্যি রাজা পুণ্যি দেশ।”
“ব্যাঙ ডাকে ঘন ঘন
শীঘ্র হবে বৃষ্টি জানো।”
“গাছে গাছে আগুন জ্বলে
বৃষ্টি হবে খনায় বলে।”
“যদি হয় চৈতে বৃষ্টি
তবে হবে ধানের সৃষ্টি।”

নিম্নে কিছু খনার বচন ভাবার্থ সহ দেয়া হলো

খনা ডাকিয়া কন।
রোদে ধান ছায়ায় পান।

অর্থঃ ধানে রোদ পেলে ধান ভালো হবে ও পান ছায়াতে ভাল হয়। 

এক অঘ্রানে ধান।
তিন শাওনে পান।।

অর্থঃ অগ্রহায়ণে ধান ভাল হয়, আর পান গাছ তিন শাওন হইলে ভাল জন্মায়।

কার্তিকের উনো জলে
দুনো ধান খনা বলে।

অর্থঃ কার্তিক মাসে যদি অল্প বৃষ্টি হয় তাহলে ধান দ্বিগুন হয়।

অঘ্রানে পৌটি।
পৌষে ছেউটি।
মাঘে নাড়া।
ফাল্গুনে ফাড়া।

অর্থঃ অগ্রহায়ণ মাসে ধান কাটলে ষোল আনা লাভ করা যায়।  সেই ধান পৌষে ছয় আনা লাভ, মাঘে খড় মাত্র (নাড়া) এবং ফাল্গুনে সমস্ত ধান নষ্ট হয়।

শীষ দেখে বিষ দিন।
কাটতে মাড়তে দশ দিন।।

অর্থঃ যে দিন ধানের শীষ বের হবে তার থেকে ঠিক কুড়ি দিন পর ধান কাটতে হবে। মাড়তে ও ঝাড়তে হবে দশ দিনের মধ্যে এবং তারপর ধান গোলায় তুলবে।

শনি রাজা মঙল পাত্র।
চষ খোঁড় কেবলমাত্র।

অর্থঃ শনিতে রাজা ও মঙ্গলে মন্ত্রী হইলে, ভালোভাবে কৃষিকর্ম করলেও, সেই বছর ভাল ফসল জন্মায় না।

বাপে ব্যাটায় চাষ চাই।
তা অভাবে সহোদর ভাই।

অর্থঃ চাষ পরের উপর নির্ভর করবেন না। পিতা ও পুত্র একত্রে মিলে কৃষিকর্ম করাই ভাল। অন্যথায় সহোদর ভাই এর সাথে চাষ করা কর্তব্য।

আগে বেঁধে দিবে আলি।
তাতে রুইয়ে দিবে শালি।।
তাতে যদি না হয় শালি।
খনা বলে পারো গালি।

অর্থঃ ধান খেতে সর্বপ্রথম আইল বেঁধে, ধান রোপণ করতে হয়। তা হইলে ধান প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। খেতের আইল প্রতি বর্ষে উত্তমরূপে বন্ধন করা কর্তব্য।

আষাঢ়ের পঞ্চ দিনে রোপয়ে যদি ধান।
সুখে থাকে কৃষি বলে বাড়য়ে সন্মান।

অর্থঃ ধান রোপণ যদি আষাঢ়ের পঞ্চম দিবসের মধ্যে শেষ করা হয়, তাহলে ধান প্রচুর পরিমানে জন্মায়। সেই সাথে কৃষকগনও সুখী হয়ে থাকে। 

আউশ ধানের চাষ
লাগে তিন মাস।

অর্থঃ আউশ ধান রোপণ ও কাটার সময়ের মধ্যে তিন মাস ব্যবধান হয়ে থাকে। 

ভাদ্দরে চারি আশ্বিনে চারি।
কালাই রোপ যত পারি।

অর্থঃ কলাই রোপণের ভাল সময় ভাদ্র মাসের শেষ চার দিন ও আশ্বিন মাসের প্রথম চার দিন, মোট আট দিন।

সরিষা বুনে কালাই মুগ।
বুনে বেড়াও চাপড়ে বুক।

অর্থাৎঃ একই জমিতে সরিষা ও কলাই অথবা সরিষা ও মুগ রোপণ করিলে, দুইটি ফসলই পাওয়া যায়।

আশ্বিনের ঊনিশ কার্তিকের ঊনিশ।
বাদ দিয়ে যত পারিস মটর কালাই বুনিশ।।

অর্থাৎঃ আশ্বিনের শেষ ঊনিশ দিন ও কার্তিকের প্রথম উনিশ দিন বাদ দিয়া মটর বুনিবে।

ফাল্গুনে আট চৈত্রের আট।
সেই তিল দায়ে কাট।

অর্থাৎঃ ফাল্গুনের শেষ আট দিন ও চৈত্রের শেষ আট দিনের মধ্যে  তিল রোপণ করিতে হয়, তাহলেই তিল গাছ সতেজ হইয়া থাকে।

খনা বলে চাষার পো।
শরতের শেষে সরিষা রো।

অর্থাৎঃ শরৎ ঋতুর শেষভাগে সরিষা বপন করতে হয়।

সাত হাত তিন বিঘতে।
কলা লাগাবে মায়ে পুতে।
কলা লাগিয়ে না কাটবে পাত।
তাতেই কাপড় তাতেই ভাত।।

অর্থাৎঃ কলার একটি বড় গাছ ও একটি তেউর (ছোট গাছ) সাত হাত অন্তর দূরে একত্রে রোপণ করতে হয়, গর্তের গভীরতা হবে তিন বিঘৎ, এর পাতা কাটবে না, তা হইলে ভাত কাপড়ের অভাব হবে না।

যদি থাকে টাকা করিবার গো।
চৈত্র মাসে ভুট্টা গিয়ে রো।

অর্থাৎঃ চৈত্রমাসে ভুট্টা রোপণ করতে হয়, এতে প্রচুর পরিমাণে ভুট্টা উৎপন্ন হয়, তাহাতে প্রভূত অর্থাগম হইয়া থাকে।

দিনে রোদ রাত্রে জল।
তাতে বাড়ে ধানের ফল।

অর্থাৎঃ বর্ষাকালে যদি দিনের বেলায় রৌদ্র ও রাত্রে বৃষ্টি হয়, তাহলে ধানের গাছ সুন্দর হয়ে থাকে।

মানুষ মরে যাতে
গাছলা সারে তাতে।।
পচলা সরায় গাছলা সারে
গোধলা দিয়ে মানুষ মরে।

অর্থাৎঃ পচা গোবরের দুর্গন্ধে মানুষের রোগ জন্মায়, কিন্তু তার সাহায্যে উদ্ভিদ সকল বলবান ও সতেজ হয়ে থাকে।

বৈশাখের প্রথম জলে।
আশু দান দ্বিগুণ ফলে।
শুন ভাই খনা বলে।
কার্তিকের তুলা অধিক ফলে।

অর্থাৎঃ বৈশাখ মাসের প্রথমে বৃষ্টি হইলে আউস ধান ভালো জন্মায়। আর, কার্তিক মাসে বৃষ্টি হলে তুলার ভালো উৎপাদন হয়।

আউসের ভুই বেলে।
পাটের ভুই এঁটেলে।

অর্থাৎঃ বেলে মাটিতে আউশ ধান ভালো জন্মায়, আর এঁটেল মাটিতে ভালো পাট উৎপন্ন হইয়া থাকে।

কোদালে মান তিলে হাল।
কাতেন ফাকায় মাঘে কাল।
ছায়ে লাউ উঠানে ঝাল।
কর বাপু চাষার ছাওয়াল।

অর্থাৎঃ কোদাল দ্বারা জমি চাষ করে মানকচু রোপণ করতে হয়। তিল বপনের সময় লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করিতে হয়। ফাঁকা তিল (শ্বেত তিল) আশ্বিন ও কার্তিকে এবং কৃষ্ণতিল বপন করবার সময় মাঘ ও ফাল্গুনে।  ভস্মের উপর লাউ গাছ রোপণ করতে হয়। পরিষ্কৃত সুন্দর জমিতে লঙ্কা অথবা মরিচ গাছ  রোপণ করতে হইবে।

ঘন সরিষা পাতলা রাই
নেঙ্গে কাপাস যাই।
কাপাস বলে কোষ্টা ভাই।
জাতি পানি যেন না পাই।

অর্থাৎঃ সরিষা অপেক্ষা রাই পাতলা করে বোনা প্রয়োজন। কার্পাস ও পাট একসাথে বুনিবেন না, কারণ কার্পাস গাছে পাটের জল লাগিলে নিস্তেজ হইয়া যায়৷

খাটে খাটায় লাভের গাঁতি।
তাঁর অর্ধেক কাঁধে ছাতি।
ঘরে বসে পুছে বাত।
তাঁর ঘরে হা-ভাত।

অর্থাৎঃ যে ব্যক্তি কৃষকগণকে খাটাইতে ও স্বয়ং কৃষিতে পরিশ্রম করতে অভ্যস্ত, সে পূর্ণ ফল লাভ করে থাকে।  যে ব্যক্তি নিজে পরিশ্রম না করে সকল সময়ই ছাতা মাথায় দিয়া জমিতে অবস্থান ও তত্ত্বাবধান করে থাকে সে অর্ধেক লাভ প্রাপ্ত হয়। আর যে ব্যক্তি নিজেও পরিশ্রমে অপারগ ও তত্ত্বাবধান করিতেও অক্ষম তার ভাগ্যে অন্ন সংস্থান হওয়া দুরূহ।

যে বার গুটিকা পাত সাগর তীরেতে।
সর্বদা মঙ্গল হয় কহে জ্যোতিষেতে।।
নানা শস্যে পূর্ণ এই বসুন্ধরা হয়।
খনা কহে মিহিরকে নাহিক সংশয়।

অর্থাৎঃ যে বছর সমুদ্র তীরে  গুটিকাপাত হয়,সেই বছর ধরনী শস্যপূর্ণা হয়।

বুধ রাজা আর শুক্র মন্ত্রী যদি হয়।
শস্য হবে ক্ষেত্রভরা নাহিক শংসয়।

অর্থাৎঃ যে বছর বুধ রাজা ও শুক্র মন্ত্রী হয়, সেই বছর পৃথিবী শস্য পরিপূর্ণ হয় ।

লাউ গাছে মাছের জল
ধেনো মাটিতে বাড়ে ঝাল।

অর্থাৎঃ মাছের জল  যদি লাউ গাছে দেওয়া হয় ও ধান্য পচা মাটি যদি মরিচ গাছের মূলে দেওয়া হয়, তা হইলে গাছ খুবই সতেজ হয়।

বাঁশবোনের ধারে বুনলে আলু।
আলু হয় গাছ বেড়ালু।

অর্থাৎঃ বাঁশ বনের ধারে বড় আলু পোঁতা হইলে, গাছ সতেজ থাকে ও আলু বড় আকারের হইয়া থাকে।

চাল ভরা কুমড়া পাতা।
লক্ষী বলেন আমি তথা।

অর্থাৎঃ যে গৃহের চাল লাউ কুমড়া গাছে ভর্তি থাকে। সেই গৃহে লক্ষ্মী সর্বদা বিরাজ করে।

শাওনের পান রাবনে না খায়।

অর্থাৎঃ শ্রাবণ মাসে পান রোপণ করা হইলে, অধিক পরিমাণে পান জন্মায়।

উঠান ভরা লাউ শশা।
খনা বলে লক্ষীর দশা।

অর্থাৎঃ গৃহী মাত্রেরই নিজ নিজ বাড়িতে লাউ শশা রোপণ করা কর্তব্য। যাহাদের বাড়িতে তেমন জায়গা নাই, তাহাদের পক্ষে ইহা বাড়ির উঠানে রোপণ করা উচিত।

ছায়ার ওলে চুলকায় মুখ।
কিন্তু তাতে নাইকো দুখ।

অর্থাৎঃ ছায়ার মধ্যে যদি ওল জন্মায় তা হইলে মুখ চুলকায়।

পটল বুনলে ফাল্গুনে।
ফল বাড়ে দ্বিগুণে।

অর্থাৎঃ ফাল্গুন মাসে যদি পটল রোপণ করা হলে পটল প্রচুর পরিমানে জন্মায়।

নদীর ধারে পুতলে কচু।
কচু হয় সাত হাত নীচু।

অর্থাৎঃ কচু গাছ যদি নদীর ধারে রোপন করা হলে, তাতে অনেক পরিমান কচু হইয়া থাকে ।

ভাদ্র আশ্বিনে না রুয়ে ঝাল।
যে চাষা ঘুমায়ে কাটায় কাল।
পরেতে কার্তিক অঘ্রান মাসে।
বুড়ো গাছ ক্ষেতে পুতিয়ে আসে।
সে গাছ মরিবে ধরিয়া ওলা।
পুরতে হবে না ঝালের গোলা।

অর্থাৎঃ ভাদ্র বা আশ্বিনে জমিতে যদি লঙ্কা অথবা মরিচের চারা পুঁতলে অধিক পরিমান লঙ্কা বা মরিচ পাওয়া যায়, অগ্রহায়ণে পুঁতিলে তেমন ফল পাওয়া যায় না বরং গাছে ওলা ধরে।

ফাল্গুনে না রুলে ওল।
শেষে হয় গণ্ডগোল।

অর্থাৎঃ ফাল্গুন মাসে ওল রোপণ করা কর্তব্য, অন্য মাসে রোপণ করিলে ওলের আকার ডিমের মতো ছোট হয়।

কচু বনে যদি ছড়াস ছাই।
খনা বলে তাঁর সংখ্যা নাই।

অর্থাৎঃ কচুবনে ছাই ছড়াইয়া দিলে,পর্যাপ্ত পরিমাণে কচু জন্মিয়া থাকে।

মূলার ভূই তুলা।
ঈক্ষুর ভুই ধুলা।

অর্থাৎঃ যে জমিতে মূলা উৎপন্ন হইবে, সেখানে পাট করিবে তুলার ন্যায়, আর ইক্ষুর জমিতে পাট করা কর্তব্য ধূলার ন্যায়।

শোন রে মালী বলি তোরে
কলম রো শাওনের ধারে।

অর্থাৎঃ যদি শ্রাবন মাসের বৃষ্টিতে কলমের চারা রোপণ করা হয়,  তা হইলে সে চারার মরিবার সম্ভবনা কম থাকে।

বৈশাখ জৈষ্ঠ্যেতে হলুদ রো।
দাবা পাশা খেলা ফেলিয়া খো।।
আষাঢ় শ্রাবণে নিড়ায়ে মাটি।
ভাদরে নিড়ায়ে করহ খাটি।।
অন্য নিয়মে পুতিলে হলদি।
পৃথীবী বলেন তাতে কি ফল দি।

অর্থাৎঃ হলুদ যদি  বৈশাখ ও জ্যৈষ্ট মাসে রোপণ করে, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে বারবার জমি নিড়ান ও পরিষ্কার করা হয়, তাইলে প্রচুর পরমানে হলুদ জন্মায়।

ফাল্গুনে আগুন চৈত্রে মাটি।
বাঁশ বলে শীঘ্র শীঘ্র উঠি।।

অর্থাৎঃ ফাল্গুনে শুকনো বাঁশ পাতা গুলো পুড়ানোর পর, চৈত্র মাসে যদি বাঁশ গাছের মুলে মাটি দেয়া হয়, তা হইলে বাঁশ গাছের বৃদ্ধি ঘটে। 

শুন রে বাপু চাষার ব্যাটা।
বাঁশ ঝাড়ে দিও না ধানের চিটা।।
চিটা দিলে বাঁশের গোড়ে।
দুই কুড়া ভুই বেড়বে ঝাড়ে।।

অর্থাৎঃ বাঁশ ঝাড়ে যদি ধানের আগড়া দেয়া হয় তা হইলে বাঁশ বৃদ্ধি হইবে। 

শুনরে বাপু চাষার ব্যাটা।
মাটির মধ্যে বেলে যেটা।
তাতে যদি বুনিস পটল।
তাতেই তোর আশার সফল।

অর্থাৎঃ বেলে মাটিতে পটল রোপণ করা হইলে পটল প্রচুর পরিমানে উৎপন্ন হয়।

খনা বলে শুন শুন।
শরতের শেষে মূলা বুন।
তামাক বুনে গুড়িয়ে মাটি।
বীজ পুঁতো গুটি গুটি।।
ঘন রূপে পুঁতো না।
পৌষের অধিক রেখ না।

অর্থাৎঃ শরৎকালের শেষে মুলা বুনা ভালো। তামাক রোপণ করার জন্য মাটি গুড়া করে নিতে হবে। ঘন করিয়া তামাকের গাছ লাগানো ভালো না। আর পৌষ মাসের মধ্যে তামাক কাটিয়া নিতে হবে।

বলে গেছে বরাহের পো।
দশটি মাস বেগুন রো।।
চৈত্র বৈশাখ দিবে বাদ।
ইথে নাই কোন বিবাদ।।
পোকা ধরিলে দিবে ছাই।
এর চেয়ে ভাল উপায় নাই।
মাটি শুখাইলে দিবে জল।
সকল মাসে পাবে ফল।।

অর্থাৎঃ চৈত্র ও বৈশাখ ছাড়া বেগুনের চারা অন্যান্য সময়ে রোপণ করা যায়। বেগুন গাছে পোকা ধরলে ছাই দেয়া প্রয়োজন ও মাটি শুকিয়ে গেলে পানি দিতে হবে , এতে সারা বছর বেগুন পাওয়া যাবে।

যদি না হয় অঘ্রাণে বৃষ্টি।
তবে না হয় কাঠালের সৃষ্টি।।

অর্থাৎঃ অগ্রহায়ণ মাসে বৃষ্টি না হইলে ভালো কাঁঠাল জন্মায় না।

এক পুরুষে রোপে তাল।
অন্য পুরুষে করে পাল।।
অপর পুরুষে ভুঞ্জে তাল।।

অর্থাৎঃ তাল গাছের কাঠের সারের পরিপক্কতা আস্তে দেরি হয়, সেই কারনে এই কাঠ ব্যবহার করতে তিন পুরুষ গত লাগে। 

হাত বিশে করি ফাক।
আমা কাঠল পুতে রাখ।।
গাছ গাছালি ঘন সবে না।
গাছ হবে তাঁর ফল হবে না।

অর্থাৎঃ আম ও কাঁঠাল গাছ বিশ হাত অন্তর অন্তর রোপণ করতে হয় । ঘন ঘন ভাবে পুতলে ফল উত্তম হয় না।

বারো বছরে ফলে তাল।
যদি না লাগে গরুর নাল।।

অর্থাৎঃ তালের চারা গরু না খেয়ে থাকলে, তাহলে বার বৎসর পরে তাল গাছ ফলন দেয়।

নলে কান্তর গজেক বাই।
কলা রুয়ে খেয়ো তাই।।
কলা রুয়ে না কেটো পাত।
তাতেই কাপড় তাতেই ভাত।।

অর্থাৎঃ কদলী বৃক্ষ রোপণ করতে হয় আট হাত অথবা এক গজ ফাক ফাক করে । তার পাতা না কাটলে অন্ন বস্ত্রের উপায় হবে । কারণ গাছ বড় হয়ে পর্যাপ্ত পরিমান কদলী জন্মিবে।


তথ্যসূত্র- 

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

খনা

রয়াল বাংলা  


September 24, 2025
ektara craft বাংলাদেশের একতারা শিল্প x bfa x fyxz x AI

লালনের ছেউড়িয়া থেকে গ্রামবাংলার মেলা—বাংলাদেশের একতারা শিল্প

fayze hassan
মাত্র একটি তার থাকে বলে এই বাদ্যযন্ত্রের নাম হয়েছে ‘একতারা’। হাতের তর্জনী দিয়ে সেই তার…
September 24, 2025

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Instagram did not return a 200.
Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Your share and comment are an inspiration to us

X (Twitter)
Post on X
Pinterest
fb-share-icon
Instagram
FbMessenger
Copy link
URL has been copied successfully!