টাঙ্গাইলের শাড়ি tangail saree GI product of bangladesh x bfa x fxyz web

চুরি হওয়া কোনো শাড়ির নাম, টাঙ্গাইল শাড়ি

টাঙ্গাইলের শাড়ি, টাঙ্গাইলেই হবে, ব্যস। আলাপ খতম।

আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেল শেষে,
হেথায় খুজি হোথায় খুজি সারা বাংলাদেশে

সেই ছোটবেলায় পড়া কবিতা। বিষয়বস্তু ভিন্ন। তবে চিরকাল ধরেই একের কাছে যা পরম আদরে বোনা সম্পদ, অন্যের তাকে সম্পত্তি বানানোর শ্যেন দৃষ্টির আপনি যখন তখনই আবহমান কালের ইতিহাসে জারি থেকে যাওয়া দেখবেন। সম্প্রতি টাঙ্গাইল শাড়ি জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেল, তবে কায়দামতো তার স্বত্ব বাগিয়ে নিলো আমাদের প্রতিবেশী দেশ। দাবী, এর উৎপত্তি নাকি বাংলাদেশের মুলুকেই নয়। এহেন চুরির পর নড়েচড়ে বসেছে আমাদের দেশের কর্তৃপক্ষ। টাঙ্গাইলের শাড়ির অবশ্য তাতে কি বা যায় আসে? শিল্পীর হাতে যে কর্ম, তার অবস্থান বা অধিকারে তো দিনশেষে কেউ বাধ সাধতে পারবে না। টাঙ্গাইলের শাড়ি, টাঙ্গাইলেই হবে, ব্যস। আলাপ খতম।

আশপাশের অন্য অনেক তাবড় তাবড় শাড়ির চেয়েও নিজগুণে টাঙ্গাইলের শাড়ি ঢের সিনিয়র। আলতো করে জড়িয়ে ধরে পুতুল বানানোর চকমকিতে নয়, নিজ ইতিহাসে আর প্রয়োগেই এই শাড়ি ‘স্ট্রিট স্মার্ট’ বটে! ইতিহাসের খেরোখাতা বা হালকার ওপর ঝাপসা ‘গুগল’ করলেই জানবেন, সেই ব্রিটিশ আমল থেকে এই শাড়ি বাংলাদেশে বোনা হয়।

১৯০৬ সালে গান্ধীজীর স্বদেশি আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল ইংল্যান্ডের তৈরি কাপড় ও পণ্য খারিজ করে দেওয়া। সেই ডাকে আপামর জনসাধারণ সাড়া দিয়েছিল। মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নেওয়ার লক্ষ্যে সেই সময়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে তাঁত শিল্প প্রসার লাভ করেছিল। স্বাধীনতার পর থেকে আবার দেশীয় পণ্যের প্রতি আহবানের যে পে-অফ লাইন, তাতে সামনের দিক দিয়ে লিড দেওয়া পোশাকটি টাঙ্গাইলের শাড়ি। দামে আকাশছোঁয়া নয় কিন্তু তাতে মধ্যবিত্তের মাথা উঁচু করে রাস্তায় হেঁটে চলার দাপট। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নারীরা শ্রেণিকক্ষে ক্যান্টিনে রাজপথের আন্দোলনে অথবা ক্যাফেটেরিয়ায় দুই কাপ চা কয়েকটা বিস্কিটের যে গল্পগুলো গড়েছেন, তার বুননের আষ্টেপৃষ্ঠে দেখবেন টাঙ্গাইল শাড়ি জড়ানো রয়েছে।

টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়ি

টাঙ্গাইল শাড়ি

.

প্রায় ২০০ বছরের প্রাচীন করটিয়া হাট টাঙ্গাইল শাড়ি বিক্রির প্রধান কেন্দ্র। আছে বাজিতপুরের হাট। ঈদ মৌসুমে এই হাটগুলোতে কয়েকশ কোটি টাকার শাড়ি বেচাকেনা হয়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা এসে এখান থেকে শাড়ি কিনে থাকেন। হাটে শাড়ির দাম কম পড়ে বলে অনেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগেও এখানে গিয়ে বেশি করে শাড়ি কিনে আনেন। টাঙ্গাইল শাড়ির এই সুদীর্ঘ ঐতিহ্য ও ইতিহাস ছড়িয়েছে বিবিধ নিরীখের বাণিজ্যিকায়নে। বহু জায়গায় এর চাহিদা। বহু সময়ে ফ্যাশনের যে বিবর্তন, তাতে সঙ্গত জুটিয়ে যাওয়ায় এর জুড়ি কমই পাওয়া যায়। টাঙ্গাইলের শাড়ি বাংলাদেশের অন্যতম পুরনো একটি কুটির শিল্প। আর তার গল্প বলতে গেলে মনিরা এমদাদের টাঙ্গাইল শাড়িকুটির একটা অবশ্যপাঠ্য টেক্সট বটে! সেই আর্লি এইটিজে তার ছোট্ট দোকানটি সম্প্রসারিত হতে হতে আস্ত বেইলি রোডের শাড়ির জমজমাট মহল্লা, যেখানে ‘অথেনটিক’ শাড়িটির জন্য মধ্যবিত্ত বাড়ির উঠতি তরুণীটি থেকে শুরু করে ভিনদেশী প্রবাদপ্রতীম সেলিব্রিটি, কে না ভিড় জমাননি!

টাঙ্গাইল বয়ন শিল্পের কাব্যকথ

টাঙ্গাইল বয়ন শিল্পের কাব্যকথা ২০১৪

টাঙ্গাইলের তাঁতশিল্পকে আরও বড় পরিসরে তুলে ধরতে ‘ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিল অব বাংলাদেশ’ ও ‘বেঙ্গল আর্ট লাউঞ্জ’ আয়োজনে করেছিলেন ‘ An Ode to Tangail Weaves ‘ বা ‘ টাঙ্গাইল বয়ন শিল্পের কাব্যকথা ‘ শীর্ষক প্রদর্শনী ।

ভারতের জিআই বাগিয়ে নেওয়ার পর আমাদের দেশে সংশ্লিষ্টরা নড়েচড়ে বসেছেন। বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন পেটেন্টস, ডিজাইন এবং ট্রেডমার্ক বিভাগ (ডিপিডিটি) টাঙ্গাইল শাড়িকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে একটি জার্নাল প্রকাশ করে। এখন এইখানে প্রশ্ন হচ্ছে, দুটো দেশ একইসাথে একই পণ্যের জিআই আবেদন করতে পারে কী না, আবার পরে প্রতিবেশী দেশ থেকে এ  নিয়ে আপত্তি তোলা হবে কী না, বা তুললেও পরবর্তীতে আরও কী কী হতে পারে ইত্যাদি। এগুলো আইনী প্রক্রিয়া এবং দীর্ঘ আলাপের বিষয়। তবে এখান থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট, নিজের কোনো কিছুকে যত্নে আর মনোযোগে না রাখলে সেটির দিকে অন্যের শ্যেনদৃষ্টি তো আসতেই পারে, এমনকী সেটি দখল হয়ে যাওয়াও এমনই একটি ঘটনা মাত্র।

ঠিক যেভাবে টাঙ্গাইলের শাড়ি হঠাৎ করে চুরি হয়ে গেল
আমাদের সামনে থেকে, বেশ দেখা গেল!


আপনার একটি শেয়ার আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Your share and comment are an inspiration to us

X (Twitter)
Post on X
Pinterest
fb-share-icon
Instagram
FbMessenger
Copy link
URL has been copied successfully!