The jewels of the Mughals মুঘলদের রত্ন ভান্ডার x bfa x al mahin x fxyz

মুঘলদের রত্ন ভান্ডার

এই রত্নগুলি যেমন সাম্রাজ্যের ঐশ্বর্য এবং মর্যাদার প্রতীক ছিল, তেমনি সেগুলি সুরক্ষামূলক তাবিজ হিসেবেও

মুঘল সাম্রাজ্যের সূচনা হয় ১৫২৬ সালে প্রথম পানিপথ-এর যুদ্ধের মাধ্যমে। বাবর ইব্রাহিম লোদিকে পরাজিত করে ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের সূচনা করেন। মুঘল শাসন ভারতবর্ষকে করেছিল মহীয়ান। ১৫২৬ সালে শুরু হয়ে ১৮৫৮ সালে সমাপ্ত সাড়ে তিন-শ বছরের সুদীর্ঘ শাসনকালে মুঘলরা ভারতবর্ষে এক গৌরবোজ্জ্বল আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সূচনা ঘটিয়েছিলেন। নির্মাণ করেছিলেন বিশ্বসেরা অসংখ্য স্থাপত্য। এমনকি খাদ্যেও সেই রাজকীয়তার ছাপ ছিলো সুস্পষ্ট। মুঘলদের স্থাপত্য শিল্পে যেমন রুচি, সৌন্দর্য, আভিজাত্যের পরিচয় পাওয়া যায় তেমনি তাদের সংগ্রহীত মুল্যবান পাথরের প্রতি ছিলো দৃঢ় সাংস্কৃতিক বিশ্বাস। এবং এসব মূল্যবান পাথর দিয়ে তৈরি গহনা কিংবা জিনিপত্রের নামডাক ছিলো বিশ্বজুড়ে।

মর্যাদার প্রতীক

তিমুরীরা, মুঘলদের পূর্বপুরুষরা, অসাধারণ মানের পাথরের উপর পদবী এবং নাম খোদাই করার প্রথা শুরু করেছিলেন এবং হীরক ও পান্নার পাশাপাশি বড় স্পিনেল বিডগুলিও তাদের প্রিয় ছিল। এই রত্নগুলি যেমন সাম্রাজ্যের ঐশ্বর্য এবং মর্যাদার প্রতীক ছিল, তেমনি সেগুলি সুরক্ষামূলক তাবিজ হিসেবেও মূল্যবান ছিল।

প্রথম খন্ড

এই আর্টিকেলে থাকবে মোঘলদের রত্নভান্ডারের কিছু নমুনা যা তাদের পরম্পরা ও ঐতিহ্যের মূল একটি অংশ এবং তাদের নিজস্ব অবদান। মোঘলদের রত্নভান্ডার ৪ টি খন্ডে ভাগ করা হয়েছে। আজকে প্রথম খন্ড। এই পর্বে থাকছে গেট অফ প্যারাডাইস, হ্যালো অফ লাইট, শাহ জাহান এমারল্ড, তাজমহল পান্না, কোহিনুর, দি মোগুল মুঘল

Koh-i-Noor Diamond

কোহিনুর
.

মোঘলদের রত্ন নিয়ে কথা বললে সবার প্রথমে যে রত্নের নাম আসে তা হলো কোহিনূর। কোহিনূর হীরা, যার অর্থ ফার্সিতে “আলোক পর্বত”, একটি প্রাচীন ভারতীয় হীরা। কয়েক শতাব্দী ধরে এই হীরাটি আকাঙ্ক্ষা, রহস্য এবং জয়ের বিষয় হয়ে উঠেছে। বহুল ভ্রমণ করা এই রত্নটি মুঘল সম্রাট, পারস্যের শাহ, আফগানিস্তানের আমির এবং পাঞ্জাবের মহারাজাদের হাত দিয়ে গেছে।

কোহিনূর হীরা ময়ূর সিংহাসনে বসানো ছিল, যা বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল রত্নখচিত সিংহাসন। ময়ূর সিংহাসনের শীর্ষে স্থাপিত, কোহিনূর অনেক মুঘল সম্রাটের শাসন দেখেছে – শাহজাহান (যিনি ১৬২৮ সালে ময়ূর সিংহাসনের আদেশ দেন), আওরঙ্গজেব, বাহাদুর শাহ I, জাহান্দার শাহ, ফাররুখসিয়ার, রফি উল-দারজাত, রফি উদ-দৌলত, নিকুসিয়ার, মুহাম্মদ ইব্রাহিম এবং মুহাম্মদ শাহ ‘রঙ্গিলা’। অবশেষে ১৭৩৯ সালে পারস্যের নাদির শাহের আক্রমণ-লুটের সময় ময়ূর সিংহাসন এবং কোহিনূর হীরা হারিয়ে যায়।

১৮৪৯ সালে, ইংরেজরা যখন দশ বছর বয়সী মহারাজা দুলীপ সিংকে যখন পাঞ্জাব অঞ্চলটি অধিকার করা হয়, তখন তাকে কোহিনূর রানী ভিক্টোরিয়াকে হস্তান্তর করতে বাধ্য করা হয়। সেই থেকে, কোহিনূর ব্রিটিশ ক্রাউন জুয়েলসের অংশ হয়ে আছে, যা অনেকের কাছে ঔপনিবেশিক অতীত, বিজয় এবং ব্রিটিশ রাজের অপমান ও বেদনার প্রতীক হয়ে উঠেছে।

The legendary Koh-i-Noor Diamond – a gemstone that witnessed Mughal history

মুঘল সম্রাট শাহজাহানের চিত্র রত্নখচিত ময়ূর সিংহাসনে। ১৯ শতক।
ছবি: মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্ট ( কোহ-ই-নূরের ছবি রীনা আহলুওয়ালিয়া ব্লগের জন্য সংযোজন করেছেন। )

১৬২৮ সালে, মুঘল শাসক শাহজাহান এই মহিমান্বিত, রত্নখচিত সিংহাসনটি নির্মাণের আদেশ দেন। সিংহাসনে সজ্জিত অসংখ্য মূল্যবান পাথরের মধ্যে দুটি বিশেষভাবে বিশাল রত্ন ছিল, যা সময়ের সাথে সবচেয়ে মূল্যবান হয়ে উঠেছিল: তিমুর রুবি—মুঘলদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান ছিল কারণ তারা রঙিন পাথর পছন্দ করত—এবং কোহ-ই-নূর হীরা। ১৭৩৯ সালে নাদের শাহের দ্বারা উত্তর ভারতের আক্রমণের প্রত্যক্ষদর্শী পার্সিয়ান ইতিহাসবিদ মুহাম্মদ কাজিম মারভির বর্ণনা অনুযায়ী, মারভি উল্লেখ করেন: “এর উপরে এমারেল্ড এবং রুবি দিয়ে তৈরি একটি ময়ূর স্থাপন করা হয়েছিল; তার মাথায় একটি হীরার সাথে যুক্ত ছিল যা মুরগির ডিমের আকারের ছিল, যা কোহ-ই-নূর – আলো পর্বত নামে পরিচিত।”

One of the most treasured jewel in Indian history: The Taj Mahal Emerald. Circa 1630-1650. A hexagonal-cut emerald,

তাজমহল পান্না

ভারতের ইতিহাসে অন্যতম দর্শনীয় রত্ন হলো তাজ মহল পান্না। পান্নাটি আনুমানিক ১৬৩০-১৬৫০ সালের। এটি একটি ষড়ভুজ-আকৃতির পান্না, যার ওজন প্রায় ১৪১.১৩ ক্যারেট, এতে অ্যাসিমেট্রিক্যাল পাতার মধ্যে স্টাইলাইজড চন্দ্রমল্লিকা, পদ্ম, এবং পপি ফুল খোদাই করা রয়েছে, এবং বিপরীত দিকে একটি সাধারণ এবং বেভেলড সীমানা রয়েছে। এই জটিলভাবে খোদাই করা পাথরটি সম্ভবত সম্রাট শাহজাহানের শাসনকালে। পান্নাটির ডিজাইন তাজমহলের অলংকরণকে প্রতিফলন করে, এবং একারণেই পান্নাটির নাম দেওয়া হয়েছে তাজমহল পান্না। ১৯২৫ সালে অনুষ্ঠিত প্যারিস প্রদর্শনীতে, ‘দ্য তাজ মহল পান্না’ কার্টিয়েরের প্রদর্শিত তিনটি বড় মুঘল পান্নার মধ্যে একটি ছিল।

The rectangular-cut emerald known as ‘The Mogul Mughal’

দি মোগুল মুঘল

রেক্ট্যাঙ্গুলার কাট ইমারল্ড যা ‘দি মোগুল মুঘল’ নামে পরিচিত, বিশ্বের সবচেয়ে বড় সিঙ্গেল কাট এমারেল্ড। এই চতুর্ভুজ কাট ইমারল্ডে লেখা আছে “জাহাঙ্গীর শাহ-ই আকবর শাহ” এবং বছর উল্লেখ করা আছে ১০১৮ ইসলামি সন (১৬০৯-১৬১০ খ্রিস্টাব্দ)। এমারেল্ডটি ইসলামিক ডিজাইন বিশিষ্ট। এধরণের রত্নে সাধারণত কোরানের আয়াত, মিষ্টিক উক্তি, বা ধার্মিক বার্তা দিয়ে সাজানো হয়।

এমারেল্ডটিতে একটি শিয়া ইনভোকেশন কার্ভ করা রয়েছে। এর পেছনের দিকে ফুলেল ডিজাইন কার্ভ করা, মাঝের গোলাপটি দুটি বড় পপি ফুল দ্বারা এবং তিনটি আরও ক্ষুদ্র পপি ফুলের লাইন, এবং দুটি প্রান্তে, ক্রস প্যাটার্ন অঙ্কিত এবং হেরিংবোন সাজানো। এমারেল্ডটি প্রাথমিকভাবে কলম্বিয়াতে খনন করা হয়, এবং পরে এটি ভারতে বিক্রি হয়, যেখানে মুঘল সাম্রাজ্যের শাসকদের মধ্যে রত্নের চাহিদা ছিল।

The Shah Jahan Emerald.

শাহ জাহান এমারল্ড

মোঘল ভারতের রত্নভান্ডারের আরেকটি ইউনিক নিদর্শন হলো শাহ জাহান এমারেল্ড আংটি। এটি একটি বিশাল এমারল্ড খোদাই করে তৈরী করা একটি আংটি। এবং এতে পরে সোনার হাতা যোগ করা হয়েছে। সবুজ কোলোম্বিয়ান এমারল্ডগুলি মুঘল সম্রাটদের দ্বারা সমাদৃত ছিলো। এই ক্যাবোশোন-কাট এমারল্ডটির বিশেষত্ব হলো এতে শাহ জাহানের নাম খোদিত রয়েছে। আজ, এমন একটি বিশাল আকার এবং মানের এমারল্ড খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন হবে যা একক আংটি হিসাবে খোদাই করা যায়। এটি রত্নবিজ্ঞান এবং মুঘল ইতিহাসের একটি মহাকাব্যিক নিদর্শন।


আপনার একটি শেয়ার আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা


Gate of Paradise

গেট অফ প্যারাডাইস

মুঘল সাম্রাজ্যের রত্নের অনুরাগের একটি উল্লেকখযোগ্য নিদর্শন হলো গেট অফ প্যারাডাইস চশমা এটি একটি ১৭শ শতাব্দীর রত্নখচিত চশমা, যার লেন্স কাঁচের পরিবর্তে হীরা এবং পান্না দিয়ে তৈরি। বিশ্বাস করা হয় যে এগুলি প্রাথমিকভাবে ভারতীয় উপমহাদেশ অধিপতি মুঘল সাম্রাজ্যের রাজাদের অধীনে ছিল।  এগুলি কোলোম্বিয়ান ইমারল্ড থেকে তৈরি, যা ৩০০ ক্যারেটের বেশি ওজনের ছিল। এর মতো যেকোনো মূল্যবান এমরল্ড আকার, মাত্রা বা মূল্যতে মুঘল দরবারে সরাসরি আনা হত।

এই চশমা নিয়ে একটি গল্প রয়েছে। গল্প অনুসারে জানা যায় যে, স্ত্রী মমতাজ মহলের মৃত্যুর পর মুঘল সম্রাট শাহ জাহান দিনের পর দিন কাঁদতেন। ফলে তার চোখে সমস্যা হতো। তার চোখকে প্রশান্তি দিতে শাহ জাহান এই এমারেল্ড চশমা ব্যা্বহার করতেন বলে গল্প থেকে জানা যায়।

The Halqeh-e Nur or the “Halo of Light”

হ্যালো অফ লাইট

মুগঘলদের রত্নভান্ডারে ছিলো আরেকজোড়া চশমা, যা “হালো অফ লাইট” নামে পরিচিত। তার লেন্সগুলি গোলকোন্ডা থেকে পাওয়া একক ২০০ ক্যারেটের হীরা থেকে তৈরি বলে বিশ্বাস করা হয়, যা বর্তমানে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ এবং তেলেঙ্গানা রাজ্যের অংশ।

হালকেহ-ই-নূর বা “হালো অফ লাইট” চশমা, ১৭শ শতাব্দীতে গোলকোন্ডা থেকে পাওয়া একক ২০০ ক্যারেটের হীরা থেকে তৈরি বলে বিশ্বাস করা হয়। এর ফ্রেমটি ১৯শ শতাব্দীতে তৈরি হয়েছিল। এই আকার, পরিমাণ বা মূল্যের যে কোনও রত্ন সরাসরি মুঘল দরবারে নিয়ে আসা হত।

content writer


অনুলিখন : মোহাইমিনুল আল মাহীন

ছবি এবং তথ্যসূত্র: রীনা আহলুওয়ালিয়া ব্লগ থেকে


August 6, 2024
different types of footwear ফুটওয়্যারের গল্প shoes story x bfa x fxyz final

জুতার সাতকাহন

fayze hassan
কুকুরের স্বভাবই না-কি এই, রাজতক্তে বসালেও সে জুতা চাটবেই। আর এই জুতা ৪০ হাজার বছর…
August 6, 2024

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

আপনার একটি শেয়ার আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা

X (Twitter)
Post on X
Pinterest
fb-share-icon
Instagram
FbMessenger
Copy link