
বিশ্ববাজারে ধামরাইয়ের পিতলশিল্প
বর্তমানে বিশ্ববাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকার পরও সঠিক প্রচারণা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বাজার পাচ্ছে না এই শিল্প। শুধু নাম হলেই কি চলে? বেচা বিক্রি লাগবে না? সেটা হচ্ছে না। কারন এগুলোর মুল ক্রেতা বিদেশীরা অথচ বিদেশ নেয়া অনেক ঝামেলার। প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের পারমিশন নিতে কালঘাম ছুটে যায়। আর তাই বিদেশীরা ওপথ মাড়ান না। ভারত থেকে কিনে নেন। লোকাল বায়ারও কমে গেছে অনেক। পুরো ধামরাইতে ১০০ এরও বেশী কারখানা ছিলো। প্রায় সবই বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু ধুকে ধুকে টিকে আছে ৩ টি কারখানা পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে হারিয়ে যেতে বসা এই শিল্প বিদেশে রপ্তানীর গলার কাটা তামা কাসার পণ্যকে এন্টিক ঘোষণা করা। পুরাতাত্ত্বিক বস্তু ভেবে এর নান্দনিক মুর্তিসমুহ কাস্টমসে বাজেয়াপ্ত হবার ঘটনাও রয়েছে।
পিতল শিল্পের বর্তমান খুটিনাটি
বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, “বর্তমান সময়ে কাসা-পিতলের তৈরি জিনিসপত্রের ব্যবহার দেশে একেবারে নেই বললেই চলে। শুধুমাত্র উপমহাদেশের সনাতন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে ও কিছু কিছু অঞ্চলের মানুষদের কাছেই বেঁচে আছে পণ্যগুলো। যে কারণে ভারত এই ঐতিহ্যকে ধরে রেখে সুনাম কুড়ালেও পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। কেননা ঐতিহ্যগত জিনিসপত্র যে কোন দেশের সুনাম বাড়ায়।দেশের কাঁসা-পিতল শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, কাঁসা-পিতল শিল্প বাংলাদেশ একটি রুগ্ন শিল্প না এটি একটি মৃত শিল্প।
বাংলাদেশের যেখানে যারা এই কাজগুলো করছে তারা সাধারণত অন্য কোন কাজ করতে পারছে না বলেই কোনোরকমভাবে কাজ করছে। আবার কোন তরুণরাও এ কাজে আগ্রহী হচ্ছে না। কারণ বাংলাদেশের একজন রিকশাওয়ালা দিনে যে পরিমাণ টাকা উপার্জন করে কাঁসা-পিতলের পণ্য বানিয়ে বাজারে বিক্রি করে দিনে তার অর্ধেক পরিমাণ টাকাও উপার্জন করা সম্ভব নয়। সেখানে কারিগররা তো আরো কম টাকা পায়। আমাদের এখানে ২২ জন কারিগর ছিল। তার থেকে কমতে কমতে এখন মাত্র ৫ জন আছে। এবং এই যে ৫ জন কাজ করছে তাদের অবস্থাও খুব খারাপ। কেননা আমাদের প্রতিদিন কোন কাজ থাকেনা। মাঝে মাঝে অল্প বিস্তর কাজের অর্ডার থাকে।“
আবারও স্বপ্ন দেখি
ধামরাইয়ের আশেপাশের গ্রামে প্রচলিত ধাতব শিল্পের প্রাচীন ঐতিহ্যটি পাল রাজবংশে ফিরে আসে (৮০০-১০০০ খ্রিস্টাব্দ) যখন এই অঞ্চলে বৌদ্ধ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বিকাশ ঘটে। এই সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ইতিহাস এখনও বাংলাদেশের এই মনোরম অঞ্চলে দক্ষ এবং নিবেদিত কারিগরদের দ্বারা উৎপাদিত ধাতব কারুশিল্পে প্রতিফলিত হয়। কাঁসা পিতল দিয়ে পাল রাজাদের আমলের ঐতিহাসিক মূর্তি নতুন করে নিজ উদ্যোগে তৈরি করছেন সুকান্ত বণিক। সাভারের ধামরাইয়ের দুই’শ বছরের পুরনো কারখানায় প্রায় ৪০ থেকে ৫০ টি মূর্তি বানানো হচ্ছে। যা বানাতে সময় লাগবে প্রায় এক বছরের বেশি।
এতোকিছুর পরও সুকান্ত আশাবাদী অদুর ভবিষ্যতে সব ঠিক হবে, নিজের শেকড় সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতন হবে মানুষ। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা থাকবে, আমদানী রপ্তানী প্রক্রিয়া হবে নিরঙ্কুশ, এই তার আশা। আশাবাদী পথচলা।





























আপনার একটি শেয়ার আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা
সুকান্ত বনিক এর ফেসবুক লিঙ্ক : Sukanta Banik
সুকান্ত বনিকের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ : ধামরাই মেটাল ক্রাফটস