chattagram
division
.
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রাম, যাকে বলা হয় “প্রাচ্যের রাণী”, কেবল বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবেই নয়, সংস্কৃতি ও কারুশিল্পের ক্ষেত্রেও সমৃদ্ধ। পাহাড়, সমুদ্র আর উপত্যকায় ঘেরা এই বিভাগে রয়েছে কারুশিল্পের বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্য।
ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে সমুদ্রতটে জেলেরা জাল ফেলছে, আর একজন ঝিনুক কুড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তাতে আঁকা হবে রঙিন নকশা। সেই আলো ফোটার সাথে সাথে পাহাড়ি পথে হাঁটলে দেখা মেলবে উপজাতীয় নারীদের কোমর তাঁতে বুনন—তাদের হাতের ছোঁয়ায় জন্ম নিচ্ছে উজ্জ্বল রঙের কাপড়। চট্টগ্রাম বিভাগের প্রতিটি জেলা যেন এভাবেই আলাদা আলাদা গল্প শুনিয়ে যায়—যেখানে প্রকৃতির বৈচিত্র্যের সাথে মিশে আছে হস্ত ও কারুশিল্পের নিজস্ব রূপ।
কুমিল্লার জনপদে এখনো শোনা যায় খাদির গল্প—যে খাদি একসময় স্বদেশী আন্দোলনের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। রাঙ্গামাটির তুলা থেকে তৈরি সুতোয় তাঁতি যখন বসতেন, তখন তার হাতের টানে শুধু কাপড়ই জন্ম নিত না, জন্ম নিত এক জাতীয় চেতনার। আবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাঁশ-বেতের নিপুণ শিল্প, লক্ষ্মীপুরের শীতল পাটি কিংবা চট্টগ্রামের পাহাড়ি গ্রামগুলোতে উপজাতীয় কোমর তাঁত আজও সেই ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে আছে।
এই বিভাগ যেন পাহাড়, নদী আর সাগরের কোলঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে হাতে বানানো অসংখ্য কারুকাজ নিয়ে। প্রতিটি শিল্প, প্রতিটি হাতের কাজ আমাদের মনে করিয়ে দেয়—চট্টগ্রাম কেবল একটি ভৌগোলিক অঞ্চল নয়, এটি হলো সংস্কৃতি, কারুশিল্প আর মানুষের গল্পে ভরা এক অনন্য ভুবন।
চট্টগ্রাম বিভাগের
জেলা সমূহ
–
চট্টগ্রাম বিভাগে বর্তমানে মোট ১১ টি জেলা রয়েছে। এই জেলাগুলোর প্রতিটির রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য, যা খুলনা বিভাগের সামগ্রিক বৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করে। জেলাগুলো হলো:
চট্টগ্রাম জেলা
কক্সবাজার জেলা
বান্দরবান জেলা
খাগড়াছড়ি জেলা
রাঙামাটি জেলা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ফেনী জেলা
নোয়াখালী জেলা
কুমিল্লা জেলা
চাঁদপুর জেলা
লক্ষ্মীপুর জেলা
চট্টগ্রাম বিভাগের
উল্লেখযোগ্য হস্ত ও কারুশিল্প
–
ঝিনুক শিল্প
বাঁশ-বেত শিল্প
মৃৎশিল্প
কুমিল্লার খাদি
শীতল পাটি
কোমর তাঁত
চট্টগ্রাম বিভাগের
ঐতিহ্যময় হস্ত ও কারুশিল্প মানচিত্র
–
চট্টগ্রাম বিভাগের প্রতিটি জেলার ঐতিহ্যময় হস্ত ও কারুশিল্পকে মানচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই প্রচেষ্টার মূল লক্ষ্য হলো চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পের বৈচিত্র্য ও অনন্যতা সবার সামনে তুলে ধরা। মানচিত্রটি তৈরি করতে এবং সঠিক তথ্য নিশ্চিত করতে সবার সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি।
তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ত্রুটি বা অসম্পূর্ণতা থাকলে তা সঠিকভাবে সংশোধনের জন্য আপনাদের মূল্যবান মতামত ও সহযোগিতা কাম্য। মানচিত্রটি আরও সমৃদ্ধ করতে যেকোনো নতুন তথ্য, সংশোধনী বা সংযোজন যুক্ত করা যেতে পারে।
আপনারা যে কোনো ধরনের পরামর্শ, সংশোধনী বা তথ্য প্রদান করলে এই মানচিত্রটি আরও নির্ভুল ও তথ্যবহুল হয়ে উঠবে। এতে কেবলমাত্র মানচিত্রটির পূর্ণতা নিশ্চিত হবে না, আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও আরও স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হবে। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিভাগের হস্ত ও কারুশিল্পের গৌরবময় ইতিহাস এবং ঐতিহ্য আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
ঐতিহ্যময় হস্ত ও কারুশিল্প পূর্ণাঙ্গ মানচিত্র দেখতে ক্লিক করুন
আপনার একটি শেয়ারে জানবে বিশ্ব, আমাদের দেশ কতটা সমৃদ্ধ
চট্টগ্রাম বিভাগের
হস্ত ও কারুশিল্পের
বিস্তারিত
.
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন যেখানে আকাশের নীল আর সমুদ্রের নীল মিলেমিশে একাকার। খোলামেলা বালুকাময় সৈকত আর সমুদ্রের বিরামহীন গর্জন যেন নীল রঙের রাজ্যে পরিণত করেছে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে।এখানে যেন প্রকৃতি তার দুইহাত মেলে সব সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে।
Shell Craft of Bangladesh
এক সম্ভাবনাময় শিল্পের নাম—ঝিনুক শিল্প
বিশ্বব্যাপী হীরার পরই মুক্তার স্থান। আর এই মুক্তা জন্মায় ঝিনুকের ভেতরেই। এই শিল্প যদি পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা যায়, তাহলে বাংলাদেশ অর্জন করতে পারে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা এবং হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ।
এটি শুধু একটি শিল্প নয়, বরং খাদ্য, সৌন্দর্য, অলংকার ও রফতানির এক গৌরবময় সম্ভাবনার নাম। ঝিনুক শুধু খোলসে নয়, তার ভেতরে লুকিয়ে রাখে ‘মুক্তা’—বিশ্বের অন্যতম মূল্যবান রত্ন। তাইতো কক্সবাজার রেলস্টেশনের সামনের ঝিনুক-মুক্তা ভাস্কর্য আমাদের শিল্পের সম্ভাবনার আরও স্পষ্ট করে। যদিও আমাদের দেশের ৬৯,৯০০ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকায় ছড়িয়ে থাকা প্রায় ৩০০ প্রজাতির ঝিনুকের বেশিরভাগই এখনো অব্যবহৃত।
cane and bamboo Craft of Bangladesh
ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্প
অঙ্কে তৈলাক্ত বাঁশের ধাঁধা নয়,
জীবন অঙ্কের ধাঁধায় বাধা পড়ে আছে শিল্পীদের জীবনযাত্রা। আর বিভিন্ন সংকটে ধীরে ধীরে চাপা পড়ছে এ শিল্পের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারা। যেমন যান্ত্রিক যুগে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের অনুভূতি, তেমনি আমাদের শিল্প ও শিল্পকর্ম। দিন যতই যাচ্ছে সময়ের সাথে সাথে এ পুরনো ঐতিহ্য গুলো আজ বিলুপ্তির পথে। এমনি এক শিল্প, ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্প। যা আমাদের জনজীবন থেকে দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ছোট-বড় অনেক হস্তজাত বা কুটিরশিল্প। এর ভিতর যে কয়েকটি প্রাকৃতিক উপাদান লোকজীবনের সঙ্গে মিশে আছে, বাঁশ-বেত তাদের অন্যতম। সাধারণত গ্রামের লোকেরা এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত এবং বেশির ভাগ তারাই এসব ব্যবহার করে। বাংলাদেশের লোকজীবনের খুব কম দিকই আছে যেখানে বাঁশ ও বেতের তৈরি সামগ্রী ব্যবহারিত হয় না। বাঁশের তৈরি এই শিল্প দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ছাড়াও ক্ষুদ্র ও নৃ-গোষ্ঠীদের জীবনাচরণ ও অনুভূতির প্রতীক।
clay Craft of Bangladesh
কাদা মাটি থেকে শিল্প: মৃৎশিল্প বাংলাদেশের এক প্রাচীন ঐতিহ্য
‘মৃৎ’ শব্দটি অর্থে মৃত্তিকা বা মাটি বোঝায়, আর ‘শিল্প’ বলতে বোঝানো হয় সুন্দর ও সৃষ্টিশীল বস্তু। সেই অর্থে, মাটি দিয়ে তৈরি সব শিল্পকর্মকেই মৃৎশিল্প বলা হয়। ইংরেজিতে মৃৎশিল্পকে সাধারণত ‘পটারি’ বা ‘সিরামিক আর্ট’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। যারা মাটি দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করেন তাদেরকে কুম্ভকার বা চলিত বাংলায় কুমার এবং যে কর্মশালাতে তারা এগুলি তৈরি করেন তাকে কুম্ভশালা বা কুমারশালা বলা হয়।
মৃৎশিল্পের উৎপত্তি সর্বপ্রথম চীনের থাংশান শহরে। এ কারণে থাংশানকে মৃৎশিল্পের শহর বলা হয়। এই শহরটি চীনের পেইচিং শহর থেকে ১৫০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। থাংশানে মৃৎশিল্পের বিকাশ শুরু হয় মিং রাজবংশের ইয়ুং লে-এর শাসনামলে। এই শহরের মৃৎশিল্পের ইতিহাস প্রায় ৬০০ বছরের পুরোনো। থাংশানে তৈরি চীনামাটির মৃৎশিল্পের সংখ্যা ৫০০-এরও বেশি। এখানে বিভিন্ন প্রকার চীনামাটি পাওয়া যায়, যেমন প্রাচীন স্থাপত্য চীনামাটি, স্বাস্থ্যসম্মত চীনামাটি, শিল্পায়ন চীনামাটি, হাইটেক চীনামাটি, এবং শিল্পকলা চীনামাটি।
Khadi Weaving in Bangladesh
খাদি পুরাণ | কুমিল্লার খাদি
খুব বেশি চটকদার নয়, দেখতে যেন বাঙালির অন্দরমহলের মতোই। সিদেসাধা, আটপৌরে– তবু একটা মায়া লেগে আছে এর প্রতিটি কোণে। আর এ মায়া অতিক্রম করে যাওয়ার উপায় কারো নেই। গায়ে জড়িয়ে নেয়া এক টুকরো ওম, সকালের মুখ দিয়ে বের হওয়া ধোঁয়া কিংবা বিকেলের ঘুরতে যাওয়া; সবের সাথেই ভীষণ মানিয়ে যায় এই কাপড়টি। যার কথা কবিতা হয়ে উঠলো এই লেখার ভূমিকায়– অরূপ গোস্বামীর কবিতায়।
বলছিলাম আমাদের ঘরেরই আপন একজনার আলাপ, খাদি কাপড়ের কথা। ভারতীয় বস্ত্রশিল্পের অন্যতম স্তম্ভ হচ্ছে এই ‘আদ্যিকালের খাদি’। এর সাথে জড়িয়ে আছে একসময়ের যুগী বা দেবনাথ পরিবার, স্বরাজ আন্দোলন এবং ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ধ্বজাধারী মহাত্মা গান্ধীর নাম। একটি সাদামাটা কাপড় কীভাবে একটি জাতির মুক্তি ও স্বনির্ভরতার পথে অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে– কুমিল্লার খাদি তারই জ্বলজ্যান্ত এক দৃষ্টান্ত।
backstrap loom in Bangladesh
কোমর তাঁত: পার্বত্য অঞ্চলের গাঁথা ইতিহাস ও সংস্কৃতি
রঙে রঙে কথা বলে, সুতো বুনে গান,
কোমর তাঁতের নকশায়—আজ পাহাড়িদের অভিমান।
এই অভিমান নিছক ব্যক্তিগত নয়, বরং তা এক নীরব সামাজিক ভাষ্য—যেখানে যুগের পর যুগ ধরে পাহাড়ি নারীরা তাঁদের হাতের শিল্পকে বুনেছেন, অথচ সমতলের চোখে সেই শিল্প রয়ে গেছে কেবল ‘স্মারক’, ‘শোভা’র সামগ্রী।
আমরা হয়তো কোমর তাঁতের সুতোয় বোনা নকশা দেখে বলি, “কি চমৎকার!”, তারপর সেটি কিনতে গিয়ে দামের মুলামুলি করে হয়তো একটি স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে কিনেও নেই। কিন্তু সেই কাপড়ের পেছনে যে সময়, শ্রম, সংস্কৃতি আর শেকড় গাঁথা থাকে—তা আমাদের গ্রহণযোগ্যতার পরিধিতে খুব কমই জায়গা পায়। অভিমানটা সেখানেই। অভিমান এই যে, একসময়ের গৃহস্থালি প্রয়োজন, সামাজিক পরিচয়ের প্রতীক আজ রয়ে গেছে নিজেদের ব্যাবহার কিংবা হাটের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ; যা একান্ত নিজেদের উঠানে বন্দি।
SHITAL PATI in Bangladesh
শীতল পাটি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প ও লোকশিল্প।
শীতল পাটি প্রাকৃতিক গাছ থেকে তৈরি এক ধরনের মেঝেতে পাতা আসন। মুলত এটি এক ধরণের মাদুর যেখানে আবহমান গ্রাম বাংলার প্রকৃতি, রূপ এবং সৌন্দর্যকে কারুকাজের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়। শীতল পাটি কে নকঁশি পাটিও বলা হয়ে থাকে। নকঁশি পাটি মূলত সিলেটের ঐতিহ্যবাহী একটি শিল্প। সিলেটের বালাগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলা মূলত এ শিল্পের আদি স্থান। যা মুরতা নামে একধরনের ঝোপজাতীয় গাছের বেত দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে। এসব পাটি বুননের কাজে যারা জড়িত থাকেন তাদের মূলত ‘পাটিয়াল’ বা ‘পাটিকর’ নামে আখ্যায়িত করা হয়।
জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনেসকো ৬ ডিসেম্বর, ২০১৭ সালের সম্মেলনে সিলেটের শীতলপাটিকে ঘোষণা দেয় বিশ্বের ‘নির্বস্তুক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ বা ‘Intangible Cultural Heritage’ হিসেবে।
Content & Graphic by fayze hassan x BFA
powered by bangladesh fashion archive
any query please contact : 01818424133
আপনার একটি শেয়ারে জানবে বিশ্ব, আমাদের দেশ কতটা সমৃদ্ধ
আরও পড়ুন -
-
লালনের ছেউড়িয়া থেকে গ্রামবাংলার মেলা—বাংলাদেশের একতারা শিল্প
-
পাটশিল্পের পুনর্জাগরণ: গ্রামীণ কারুশিল্প থেকে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিং
-
বাংলাদেশের পাটশিল্প: ঐতিহ্য, বর্তমান অবস্থা ও সোনালি আঁশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
-
রাজশাহী সিল্ক: প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে আসা ঐতিহ্য
-
কোমর তাঁত: পার্বত্য অঞ্চলের গাঁথা ইতিহাস ও সংস্কৃতি