maymanshing
division
.
ময়মনসিংহ, যার পূর্ব নাম ছিল নাসিরাবাদ, একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ জনপদ। কথিত আছে, মোঘল আমলে মোমেনশাহ নামে একজন সাধকের নামানুসারে এ অঞ্চলের নাম হয়েছিল মোমেনশাহী, যা কালের বিবর্তনে ময়মনসিংহ নামে পরিচিতি লাভ করে। “হাওর, জঙ্গল, মইষের শিং—এ নিয়ে ময়মনসিংহ” বলে যে প্রবাদটি প্রচলিত, তা এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলে। এই শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ, যার অপরূপ সৌন্দর্য শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে মুগ্ধ করেছিল এবং তাঁর বহু চিত্রকর্মে ধরা পড়েছে। এছাড়া, এখানকার অনেক স্থাপনায় প্রাচীন নির্মাণশৈলীর ছোঁয়া লক্ষণীয়।
ময়মনসিংহ জেলা তার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বৈচিত্র্যপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য বিখ্যাত। লোকসংস্কৃতি, লোক উৎসব, লোকসংগীত ও লোকগাঁথার দিক থেকে এটি একটি তীর্থস্থান। ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেনের সংগৃহীত ও সম্পাদিত মৈমনসিংহ গীতিকা এ অঞ্চলের সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। এছাড়া, ঐতিহ্যবাহী “সূচি শিল্প” বা নকশি কাঁথার জন্য ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর ও শেরপুর জেলা বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ। সূঁই-সুতার মাধ্যমে বাংলার ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে মনের মাধুরী মিশিয়ে ফুটিয়ে তোলা এই শিল্প আজও ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে চলেছে।
ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের নকশি পাখা ও নকশি পিঠাও এ বিভাগের সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। প্রকৃতি, শিল্প, সাহিত্য ও ঐতিহ্যের এই মেলবন্ধন ময়মনসিংহকে এক অনন্য জনপদে পরিণত করেছে।
ময়মনসিংহ বিভাগের
জেলা সমূহ
–
ময়মনসিংহ বিভাগে বর্তমানে মোট 0৪ জেলা রয়েছে। এই জেলাগুলোর প্রতিটির রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য, যা রংপুর বিভাগের সামগ্রিক বৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করে। জেলাগুলো হলো:
ময়মনসিংহ জেলা
শেরপুর জেলা
জামালপুর জেলা
নেত্রকোনা জেলা
ময়মনসিংহ বিভাগের
উল্লেখযোগ্য হস্ত ও কারুশিল্প
–
নকশি কাঁথা
নকশি পাখা
নকশি পিঠা
ময়মনসিংহ বিভাগের
ঐতিহ্যময় হস্ত ও কারুশিল্প মানচিত্র
–
ময়মনসিংহ বিভাগের প্রতিটি জেলার ঐতিহ্যময় হস্ত ও কারুশিল্পকে মানচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই প্রচেষ্টার মূল লক্ষ্য হলো সিলেটের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পের বৈচিত্র্য ও অনন্যতা সবার সামনে তুলে ধরা। মানচিত্রটি তৈরি করতে এবং সঠিক তথ্য নিশ্চিত করতে সবার সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি।
তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ত্রুটি বা অসম্পূর্ণতা থাকলে তা সঠিকভাবে সংশোধনের জন্য আপনাদের মূল্যবান মতামত ও সহযোগিতা কাম্য। মানচিত্রটি আরও সমৃদ্ধ করতে যেকোনো নতুন তথ্য, সংশোধনী বা সংযোজন যুক্ত করা যেতে পারে।
আপনারা যে কোনো ধরনের পরামর্শ, সংশোধনী বা তথ্য প্রদান করলে এই মানচিত্রটি আরও নির্ভুল ও তথ্যবহুল হয়ে উঠবে। এতে কেবলমাত্র মানচিত্রটির পূর্ণতা নিশ্চিত হবে না, আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও আরও স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হবে। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সিলেট বিভাগের হস্ত ও কারুশিল্পের গৌরবময় ইতিহাস এবং ঐতিহ্য আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
ঐতিহ্যময় হস্ত ও কারুশিল্প পূর্ণাঙ্গ মানচিত্র দেখতে ক্লিক করুন
ময়মনসিংহ বিভাগের
হস্ত ও কারুশিল্পের
বিস্তারিত
.
নকশি কাঁথা: বাংলাদেশের লোকশিল্পের একটা অংশ, বিস্তারিত পড়ুন এই লিংকে
Nakshi kantha
নকশি কাঁথা: বাংলাদেশের লোকশিল্পের একটা অংশ
নকশি কাঁথা হলো, সাধারণ কাঁথার উপর নানা ধরনের নকশা করে বানানো বিশেষ প্রকারের কাঁথা। স্বভাবগতভাবেই বাংলার ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের দৃশ্যগুলোকে মনের মাধুরী মিশিয়ে সূঁই-সুতার মাধ্যমে কাপড়ের উপর তৈরী হয় বিভিন্ন গল্প।
জামালপুরের বকশীগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ, মাদারগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ এবং সদর উপজেলাতেই নকশি কাঁথা শিল্পের কম বেশী উৎপাদন হয়। তবে জামালপুর সদর উপজেলায় এ শিল্পের বেশীরভাগ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে জামালপুর শহরে সবচেয়ে বেশী লক্ষণীয়। এখানে নকশি কাঁথা ছাড়াও নকশি চাঁদর, পাঞ্জাবী, ফতুয়া, কটি, ওয়ালম্যাট, কুশন কভার, শাড়ির নকশি পাড়, থ্রী-পিস ওড়নাসহ নানা রকম নকশি সামগ্রীর সূচিকর্ম করে থাকে।
NAKSHI PAKHA
নকশি পাখা: বাতাসে লুকানো ঐতিহ্যের গল্প
বাংলাদেশের লোক ও কারুশিল্পের ঐতিহ্যের আরেক প্রতীক নকশি পাখা। নকশি পাখাও নকশি কাঁথার মতো সুপরিচিত এবং বাংলার সর্বত্র প্রচলিত আছে।
তবে হাতপাখাকে আকর্ষণীয় করার জন্য বিভিন্ন অঞ্চল বিভিন্ন ভাবে নানা নকশায় শোভিত করে থাকে। ময়মনসিংহের গফরগাঁও অঞ্চলে নকশি পাখার নকশার মূল আকর্ষণ হলো বর্ণের প্রয়োগ অর্থ্যাৎ পাখায় নকশার সাথে সাথে বিভিন্ন ছড়া কিংবা শ্লোক লিখে থাকে।
আপনার একটি শেয়ারে জানবে বিশ্ব, আমাদের দেশ কতটা সমৃদ্ধ
Nakshi Pitha
নকশী পিঠা এক প্রকার লোকশিল্প
পিঠার গায়ে বিভিন্ন ধরনের নকশা আঁকা হয় বা ছাঁচে ফেলে পিঠাকে চিত্রায়িত করা হয় বলে় একে নকশি পিঠা বলা হয়।
নকশী পিঠা শুধু খাবার নয়, এটি একটি লোকশিল্প। এটি মেয়েলি শিল্প নামেও পরিচিত। বাঙালি নারীদের হাতের এই শিল্পকর্ম আলপনার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত।
যেমন আলপনায় ফুল, লতা, পশু-পাখির ছবি আঁকা হয়, তেমনি নকশী পিঠার নকশাতেও এসব উঠে আসে। এটি তৈরির পেছনে যে ধৈর্য আর নিষ্ঠা লাগে, তা এই পিঠাকে আরও মূল্যবান করে তোলে। গ্রামে গ্রামে এটি মেয়েলি ব্রতের অংশ হিসেবেও দেখা যায়, যেখানে নারীরা তাদের সৃজনশীলতা প্রকাশের একটি মাধ্যম হিসেবে এটি বেছে নিয়েছেন।