Oxford Mission Epiphany Cathedral Church অক্সফোর্ড মিশন কমপ্লেক্স x bfa x fxyz V2

লাল গির্জার গল্প: বরিশালের অক্সফোর্ড মিশন কমপ্লেক্স

১১৩ বছর পুরনো দৃষ্টিনন্দন এ গির্জাটি ‘লাল গির্জা’ নামেও পরিচিত। এছাড়া এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘণ্টা এই গির্জায় যা দিনে সাতবার বেজে ওঠে।

অক্সফোর্ড মিশন গির্জা: বরিশালের ঐতিহ্যের এক লাল ঠিকানা

Oxford Mission
Epiphany Cathedral
Church

এপিফ্যানি গির্জা বা অক্সফোর্ড মিশন চার্চ দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এবং শৈল্পিক গির্জা। এর মুল নাম এপিফানী গির্জা হলেও স্থানীয় সাধারনের কাছে অক্সফোর্ড মিশন চার্চ নামেই বেশি পরিচিত। বরিশাল সদরের প্রানকেন্দ্রে বগুড়া রোডের ধারে কবি জীবনানন্দ দাস স্ট্রিটে এর অবস্থান। ১১৩ বছর পুরনো দৃষ্টিনন্দন এ গির্জাটি ‘লাল গির্জা’ নামেও পরিচিত। এছাড়া এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘণ্টা এই গির্জায় যা দিনে সাতবার বেজে ওঠে। তাছাড়াও প্যালেস্টাইনের বেথেলহেম থেকে সংগৃহিত বড় একটি ক্রশ যা এখানকার প্রধান আকর্ষণ।

অক্সফোর্ড মিশন কমপ্লেক্স শুধুমাত্র একটি স্থাপনা নয়, এটি একটি সময়ের আয়না। ব্রিটিশ উপনিবেশিক আমলে ১৮৯৫ সালে এ্যাংলিক্যান মিশনারী সংস্থার উদ্যোগে এই জায়গায় শুরু হয়েছিল এক নতুন অধ্যায়। ৩৫ একর জমির উপর বিস্তৃত এই কমপ্লেক্স আজও আমাদের ইতিহাসের অংশ হিসেবে টিকে আছে। এটি একসময়কার বরিশাল শহরের ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ার সঙ্গে সংযোগের প্রতীক। একবার গেলে আপনি বুঝতে পারবেন, ইতিহাস কিভাবে স্থাপত্যের মধ্যে জীবন্ত থাকে।

ডগলাস বোর্ডিং: এক ঐতিহাসিক অধ্যায়

নামটি এসেছে প্রকৌশলী ফ্রেডেরিক ডগলাসের নাম থেকে। ইংল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ, অক্সফোর্ড থেকে পড়াশোনা করা এই মহান ব্যক্তি তাঁর জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছিলেন সাহস ও মানবিকতার মেলবন্ধন।

১৯০৩ সালে ক্ষেত্রমণি দত্তের দেওয়া ২৫ হাজার টাকা এবং বিদেশি বন্ধুদের আর্থিক সহায়তায় এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রকৌশলী ফ্রেডেরিক ডগলাসের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ হলেও সিস্টার এডিথের স্কেচ ও ফাদার স্ট্রং-এর নকশা চূড়ান্ত রূপ পায়। গির্জার নির্মাণ শেষ হয় দুই ধাপে—প্রথম ধাপ ১৯০৩ সালে এবং দ্বিতীয় ধাপ ১৯০৭ সালে।

একবার সন্ত্রাসী হামলায় মারাত্মকভাবে আহত এক পুলিশ সদস্যকে তিনি বাঁচিয়েছিলেন। তা আজও স্মরণীয়। তাঁর এই মহৎ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পুলিশ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ক্রুশবিদ্ধ যিশুর প্রতিকৃতি উপহার পেয়েছিলেন তিনি। সারা জীবন উপহারটি সঙ্গে রেখেছিলেন।

এপিফানি গির্জার
স্থাপত্যশৈলী

গির্জার মূল আকর্ষণ এর বিশাল প্রার্থনা কক্ষ, যা ৪০টি খিলানের উপর দাঁড়িয়ে আছে। একতলা গির্জার মূল প্রার্থনাকক্ষটির উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট। যা প্রায় পাচতলার সমান উচ্চতার বিশাল স্থাপনা। তিন দিক দিয়েই একাধিক দরজা আছে। চারদিকে বারান্দা এবং চলাচলের পথ । মূল বেদীর উপর একটি বড়ো ক্রশ স্থাপিত আছে যেটি প্যালেস্টাইনের বেথেলহেম থেকে সংগৃহিত।

কাঠের ছাদ এবং মার্বেল টাইলসে সজ্জিত মেঝে এর ভেতরের সৌন্দর্যকে অনন্য করে তুলেছে। গির্জার সব নির্মাণসামগ্রীই বাংলাদেশের স্থানীয় মাটি দিয়ে তৈরি। শুধু ভেতরের চারটি বেদির মার্বেল পাথর ছাড়া, যা আনা হয়েছিল ভারতের কলকাতা থেকে। পূর্ব দিকে কালো গম্বুজ এবং মূল বেদির উপর বড় ক্রসটি গির্জার ঐতিহাসিক গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

কমপ্লেক্সের ৩৫ একর জমিতে রয়েছে তেরটি ছোট-বড় পুকুর। সবুজে মোড়ানো এই জায়গাটি শুধু ধর্মীয় উপাসনার জন্য নয়, বরং প্রকৃতির সান্নিধ্যে শান্তি খুঁজে পাওয়ার স্থানও বটে।

merry Christmas শুভ বড়দিন

Merry Christmas

বড়দিনের শুভেচ্ছা

দুই হাজার বছর আগে এই দিনেই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেন খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট। খ্রিষ্ট ধর্মানুসারীর বিশ্বাস করেন, বেথেলহেমের এক গোয়াল ঘরে কুমারী মাতা মেরির কোলে জন্ম নেওয়া যিশু ছিলেন ঈশ্বরের পুত্র। সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার এবং মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতেই এ পৃথিবীতে আগমন ঘটে যিশুর।

অক্সফোর্ড মিশন গির্জা Oxford Mission Epiphany Cathedral Church (2)

আমাদের দায়িত্ব

এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি ব্রিটিশ অর্থায়নে পরিচালিত হলেও এটি আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি সংরক্ষণ করা শুধুমাত্র একটি দায়িত্ব নয়, বরং আমাদের ইতিহাস এবং সংস্কৃতিকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জীবিত রাখার অঙ্গীকার।

এই কমপ্লেক্সে শুধু ধর্মীয় কার্যক্রমই নয়, বরং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আবাসিক হোস্টেল, পাঠাগার, শিশু সদন, এবং সেন্ট এনস মেডিকেল সেন্টারের মাধ্যমে সমাজের সেবা করা হয়। এপিফানি ব্রাদারহুড এবং সিস্টারহুড সংগঠন এখানে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে।

অক্সফোর্ড মিশন গির্জায়
কিভাবে যাবেন?

বরিশাল সদর থেকে অক্সফোর্ড মিশন গির্জায় যাওয়া খুবই সহজ। স্থানীয় যানবাহন ব্যবহার করে সহজেই গির্জার প্রবেশপথে পৌঁছানো যায়। যারা দূর থেকে আসছেন, তারা প্রথমে বরিশাল শহরে এসে রিকশা বা অটো রিকশায় গির্জায় যেতে পারেন। গির্জার আশেপাশে থাকার জন্য বেশ কিছু হোটেল রয়েছে, যেখানে স্বল্প খরচে থাকার ব্যবস্থা করা যায়।


(লেখাটি পড়ে যদি মনে হয়, “এটা তো শুধু ইতিহাসের ক্লাস নয়, বরং এক কৌতুকময় ভ্রমণ,” তাহলে বলবো, লেখকের লক্ষ্য পূরণ হয়েছে!)





Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Instagram did not return a 200.
Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Your share and comment are an inspiration to us

X (Twitter)
Post on X
Pinterest
fb-share-icon
Instagram
FbMessenger
Copy link
URL has been copied successfully!