আরজ আলী মাতুব্বর AROJ ALI MATUBBAR

আরজ আলী মাতুব্বর | Aroj Ali Matubbar

তাঁর চেহারাটা অনেকটাই মঙ্গোলীয় এবং তাঁর চোখ দু’টো বেশ ভেতর-বসানো, কিন্তু তার দৃষ্টি অন্তর্ভেদী। ‘ইনি একজন দার্শনিক’।

ছোটবেলায় মুগ্ধ ছিলাম একজনার দ্বারা – তাঁর নাম আরজ আলী। আমরা ডাকতাম ‘আরজ আলী ভাই’। তাবৎ বি. এম. কলেজ – মানে কলেজ ভবনের সুরম্য হর্ম্যরাজি থেকে শুরু করে ছাত্রাবাসগুলোর বিজলী, বিজলীবাতি এবং সব রকমের বৈদ্যুতিক কর্মকান্ডের একচ্ছত্র দায়িত্বে ছিলেন তিনি। কিন্তু দায়িত্ব তাঁর সেখানেই শেষ নয়। কলেজের অধ্যাপকবৃন্দের বাসভবনের বিজলীসংক্রান্ত সকল বিষয় থেকে তাঁদের গৃহস্হালীর সকল বৈদ্যুতিক উপকরণ ও সরঞ্জাম সচল রাখার দায়িত্বও তাঁর ওপরে বর্তাত।

আবলুস কাঠের মতো সুঠাম দেহ, শক্ত বাহুযুগল, বিস্তৃত হস্ততালু, গালভরা পান, কর্মকষ্টে মুখমন্ডলে স্বেদবিন্দু এই তো দেখে এসেছি আরজ আলী ভাইকে ঘিরে। ভীষন শান্ত মানুষটির ঠোঁটে সবসময়েই লেগে থাকত ভারী মিষ্টি একটি হাসি। দেখতে পেতাম চর্কির মতো ঘুরছেন তিনি এখান থেকে ওখানে। পদার্থবিদ্যা ভবনের পেছনে একতলায় তাঁর একটি কর্মশালা ছিল।সেখানে প্রায় গিয়ে উপস্হিত হতাম, কারন বাড়ীর কোন না কোন একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্র কোন না কোন দিন বিগড়াতোই।

সে বয়সে আরজ আলী ভাইকে আমার কাছে স্বপ্নের নায়কের মতোই মনে হতো।কোন একটি বৈদ্যুতিক সমস্যা হয়েছে, তিনি সেটার সমাধান করতে পারেন নি, কিংবা কোন একটি বিকল যন্ত্র তিনি সারাতে ব্যর্থ হয়েছেন, স্মরনকালের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে মনে পড়ে না। তাঁর এই পারঙ্গমতা দিয়ে তিনি এই কিশোর আমাকে মুগ্ধ করেছিলেন ষাটের দশকে। ‘আরজ আলী’ নামটি ‘অসম্ভবসম্ভবপটয়ন’একজন মানুষ হিসেবে আমার মনে গেঁথে গিয়েছিল আমার কিশোর কালেই।

বাংলাদেশী দার্শনিক, চিন্তাবিদ এবং লেখক।
তার প্রকৃত নাম ছিলো “আরজ আলী”। আঞ্চলিক ভূস্বামী হওয়ার সুবাধে তিনি “মাতুব্বর” নাম ধারণ করেন।

জন্ম
১৭ ডিসেম্বর, ১৯০১

মৃত্যু
১৯৮৫ সালের ১৫ মার্চ বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

সম্মাননা
বাংলা একাডেমীর আজীবন সদস্যপদ (১৯৮৫)
বাংলাদেশ লেখক শিবিরের ‘হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার’ (১৯৭৮)
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর বরণীয় মনীষী হিসেবে সম্মাননা (১৯৮২)

তারপর সময় গড়িয়েছে। কলেজ ছাড়িয়ে আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ছুটি-ছাঁটায় মাঝে মাঝেই বরিশালে যাই মা-বাবার কাছে। আমার শৈশব-কৈশোরের পথ ধরে হাঁটি, দেখা পাই আমার ছোটবেলার মানুষগুলোর। যৌবনে যা হয় – আড্ডা দেই পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে, কবিতার লাইন ফেরে আমাদের মুখে মুখে, বিপ্লব গাথার তুবড়ি ছোটাই। অর্থনীতির ছাত্র হলেও প্রচন্ড আগ্রহ সাহিত্য ও দর্শনে।

শেষ বিষয়টির সূত্র ধরেই প্রায়শ:ই উপস্হিত হই বাবার নিকটতম বন্ধু দর্শনের অধ্যাপক প্রয়াত কাজী গোলাম কাদের সাহেবের বাসায়। এতদিন ‘খালু’ বলে ডাকলেও, এখন তাঁকে ‘স্যার’ সম্বোধন করি। পুলকিত হই যখন অবাক বিস্ময়ে দেখি যে তিনি আর আমাকে ‘তুই’ বলছেন না, ‘তুমিতে’ পদোন্নতি হয়েছে আমার। স্যার দর্শন বিষয়ে আমার প্রবল আগ্রহের কথা বুঝতে পারেন, ধরতে পারেন যে এ বিষয়ে হাতের কাছে ভালো-মন্দ যা কিছু পেয়েছি, সবই আমি পড়েছি। ভালো লাগে যখন দেখি যে প্রায় সমান-সমানে তিনি আমার সঙ্গে নানান বিষয়ে আলোচনা করছেন।


এমনি একদিনে আমাকে ডেকে পাঠালেন স্যার। সে বাড়ীতে পৌঁছে দেখি, একতলার মাঝের বড় ঘরটায় খালাম্মা কুটনো কুটছেন। আমাকে দেখেই বললেন, ‘কিরে, চা খাবি’? মাথা নাড়লাম। একটু হেসে বললেন, ‘ওপরে যা, পাঠিয়ে দিচ্ছি’।

স্যারের তিনতলার চিলেকোঠা ঘরে ঢুকতেই তিনি বললেন তাঁর সামনে বসা মানুষটিকে, ‘এই ছেলেটির কথাই আপনাকে বলছিলাম।’ তাকিয়ে দেখি স্যারের বিছানার কিনার ঘেঁসে এক ভদ্রলোক বসা – খুব সাধারন পোশাক। হাতাগুটোনো পাঞ্জাবী, তাঁর পকেটে কিছু কাগজ আর একটি কলম শোভা পাচ্ছে।বেশ ভালো করে তেলমাখা চুল মাঝখানে সিঁথি করা, একটু ময়ূরের পেখমের মতো দাড়ি। একটু জড়োসড়ো হয়ে বসেছেন, তাঁর হাতে ধরা এক বান্ডিল কাগজ। তাঁর দিকে তাকিয়ে দু’টো কথা মনে হল আমার – তাঁর চেহারাটা অনেকটাই মঙ্গোলীয় এবং তাঁর চোখ দু’টো বেশ ভেতর-বসানো, কিন্তু তার দৃষ্টি অন্তর্ভেদী।

আমি কিছু বলার আগেই তিনি খুব মোলায়েম স্বরে আমাকে ডাকলেন, ‘আসেন বাবা, বসেন আমার পাশে’। হাত ধরে তিনি আমাকে বসার জায়গা করে দেন তাঁর পাশে নিজে একটু সরে গিয়ে। স্যার এই অচেনা ভদ্রলোকটির পরিচয় করিয়ে দেন আমার সঙ্গে। বেশ শ্রদ্ধামিশ্রিত গলায় বলেন, ‘এঁর নাম আরজ আলী মাতুব্বর’। বলেই কৌতুকের স্বরে বলেন, ‘কি, চেনা নাম?’ আরজ আলী ভাইযের কথা মনে পড়ে যায়। আমি হেসে বলি, ‘নামের প্রথম অংশ ‘। স্যারও মুখে মৃদু হাসিয়ে ফুটিয়ে তাঁর বাক্য শেষ করেন, ‘ইনি একজন দার্শনিক’।

আমি হতচকিত হয়ে যাই – স্যার কি আমার সঙ্গে ঠাট্টা করছেন। ।আমি কান্ট, হেগেল, রাসেল, রাধাকৃঞ্চন পড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির ছাত্র। আর আমাকে বিশ্বাস করতে হবে যে আমার পাশে বসা এই অতি সাধারন মানুষটি একজন দার্শনিক? স্যার বোধ হয় আমার মনোভাব টের পান, ‘ইনি তাঁর দার্শনিক চিন্তা-চেতনা নিয়ে আলাপ করতে আসেন মাঝে মধ্যে। তোমার তো দর্শন বিষযে আগ্রহ আছে। তাই ভাবলাম, এঁর সঙ্গে কথা বলতে তোমার হয়তো ভালো লাগবে’।

‘খুব ভুল ভেবেছেন স্যার। এই মানুষটির সাথে দর্শন বিষয়ে আলোচনার কোন ইচ্ছেই আমার নেই’, মনে মনে জোরালো ভাবে বলি আমি। ‘আমি একজন লেখা-পড়া জানা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সেরা বিভাগের ছাত্র’ – আমার ঠুনকো অহংবোধ প্রবল হয়ে ওঠে। কিন্তু আমার পাশে বসা ভদ্রলোকটির কোন ভাবান্তর হয় না। একটি শিশুর ঔৎসুক্য নিয়ে আমার হাতে ধরা জিনিসটির দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘ওটি কি আপনার হাতে?’ ‘একটা খাতা’, আমি দু’নম্বরী খাতাটি তাঁর সামনে মেলে ধরি। ‘কেন এনেছেন?’, একরাশ বিস্ময় আরজ আলী মাতুব্বর সাহেবের কণ্ঠে। আমি তাঁকে বোঝাই যে স্যারের সঙ্গে আমি যখন আলাপ করি, তখন স্যার যা যা বলেন, তার অনেক কিছুই আমি টুকে রাখি।

‘আমার তো তা করা দরকার। আমি তো এখন পর্যন্ত তা করি নি’, ভারী চিন্তিত দেখায় তাঁকে। ‘কত দাম নিলে খাতাটার?’, আবারো প্রশ্ন তাঁর। দাম বলি। ‘কিনে নেবো একটা’, মৃদুস্বরে বলেন তিনি। ততক্ষনে আমি এ সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেছি যে, স্যার যাই বলুন না কেন, দর্শনের ‘দ’ও নেই এই ভদ্রলোকের মাঝে। নিতান্ত সাদামাটা একজন মানুষ ইনি।

কিন্তু তাঁর প্রশ্ন শেষ হয় না। আমার পিঠে হাত রেখে ভারী মমতাময় স্বরে প্রশ্ন করেন তিনি, ‘কি বিষয় পড়েন আপনি?’ ‘অর্থনীতি’, যতটা এড়ানো যায়, ততটাই নীরস সুরে বলি আমি। ‘কি পড়তে হয়?’, শিশুর সারল্যে জিজ্ঞেস করেন তিনি।এইবার আমাকে পায় কে – বিদ্যা ফলানোর এ সুযোগ কি আমি ছাড়ি? যা জানি, এবং যা জানি না, সবকিছুর জগাখিচুড়ি মিশিয়ে মাতুব্বর সাহেবকে চমকিত করার চেষ্টা করি।

তিনি কিন্তু চমকিত বা চমৎকৃত – কোনটাই হন না। ভারী উৎসুক হয়ে গভীর মনোযোগে আমার প্রলাপ শোনেন। তারপর খুব নরম স্বরে আমাকে বলেন, ‘আসলে কি জানেন বাবা? এই বিরাট জগত সংসারের তুলনায় আমরা বড় ক্ষুদ্র। এই বিশাল বিশ্ব-ব্রক্ষ্মান্ডে এই যে লক্ষ লক্ষ বছর পেরিয়ে গেছে তার স্রোতধারায় মানুষ কত তুচ্ছ! মানুষ তা বোঝে না’। তাঁর কথাগুলো আমার পছন্দ হয় না। নিজেকে কি শক্তিমান মনে করি আমি, বিপ্লব করব, স্বপ্ন দেখি পৃথিবী খোল-নলচে বদলে দেব! আর ইনি কিনা বলছেন, আমি খুব ক্ষুদ্র!

ভালো লাগে না আমার। উঠে পড়ার জন্য উশখুশ করি। আমাকে বাঁচিয়ে দেন তিনি। তাঁর কোথাও কাজ আছে – উঠে যেতে হবে তাঁকে এক্ষুনি। রাস্তায় নেমে হাঁপ ছেড়ে বাঁচি। উফ্, কার পাল্লায় গিয়ে যে পড়েছিলাম। একটা গেঁয়ো লোককে দার্শনিক বললেই হলো? স্যারের যা কান্ড! ইনি তো আমাদের আরজ আলী ভাই যা জানেন, তার এক শতাংশও জানে না। চিত্ত খুব হৃষ্ট হয়ে গেল এ কথাটা ভেবেই।

পরে শুনেছি আরজ আলী মাতুব্বর সাহেব নিজে আবার আমার কথা জিজ্ঞেস করেছিলেন অধ্যাপক কাজী গোলাম কাদেরের কাছে – কবে আমি আবার ছুটিতে বরিশাল আসবো। হানিফ ভাইয়ের (প্রয়াত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হানিফ – আমার অগ্রজসম) কাছে খোঁজ করেছিলেন আমার। পুত্রপ্রতিম আমাকে হয়তো তাঁর ভালো লেগেছিল।

পরবর্তী সময়ে তাঁর লেখা, মতধারা আর চিন্তা-চেতনা নিয়ে যখন সাড়া পড়ে গিয়েছে, তখন উচ্চশিক্ষার্থে আমি বিদেশে। আমি দেশে ফেরার এক বছরের মধ্যেই আরজ আলী মাতুব্বর লোকান্তরিত হন। আমার জন্যে শুধু রয়ে যায় দু:খ, লজ্জা, বেদনা আর অনুশোচনার আখ্যান। বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডের তুলনা বাদ দেয়া যাক, তাঁর তুলনায় আমি যে কত ক্ষুদ্র আমি আর আমার আচরনই তা নির্মমভাবে প্রমান করেছে।

তবু একটা গর্বের জায়গা আমি সবসময়েই ধরে রাখবো।আমি কান্ট, হেগেল, রাসেল বা রাধাকৃঞ্চনকে দেখি নি, দেখবোও না কোন দিন। তাতে কি আসে যায়? আমি যে আরজ আলী মাতুব্বরকে দেখেছি, তাঁর সাথে কথা বলেছি। তাঁর স্নেহাস্পর্শ পড়েছে আমার পিঠে। আর চুপি চুপি বলে রাখি, আবোল তাবোল হলেও অর্থনীতি বিষয়ে আমার কথনের প্রথম শ্রোতা তো তিনিই। গর্বটা তো আমার সেখানেই!

আরজ আলী মাতুব্বর AROJ ALI MATUBBAR


AROJ ALI
MATUBBAR

One Of The Greatest Rationalist Philosopher 

আরজ আলী মাতুব্বর (১৯০১ – ১৯৮৬) (১৩০৭-১৩৯২ বাংলা) ছিলেন স্ব-শিক্ষিত দার্শনিক, চিন্তাবিদ এবং লেখক। জগত ও জীবন সম্পর্কে নানামুখী জিজ্ঞাসা তাঁর লেখায় উঠে এসেছে যা থেকে তাঁর প্রজ্ঞা, মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায়। শৈশবে তার মায়ের মৃত্যুর পর মায়ের ছবি তোলার দায়ে গ্রামের মানুষ তার মায়ের জানাজা পড়তে রাজি হয় নি। শেষে বাড়ির কয়েকজন লোক মিলে তার মায়ের সৎকার করেন। এই ঘটনা আরজ আলীর ধর্মীয় গোঁড়ামী ও কুসংস্কার বিরোধিতার এবং সত্যানুসন্ধিৎসু হয়ে উঠার পেছনে কাজ করেছিলো।

আরজ আলী মাতুব্বরকে আজীবন বিশেষভাবে ভাবিত করেছে মানুষের দৈনন্দিন দুর্ভোগ এবং সে সম্পর্কে মানুষের নিজস্ব ব্যাখ্যা, সমাজে অধিপতি-চিন্তায় সেসব দুর্ভোগ আর অপমান যুক্তিযুক্ত করবার চেষ্টা। এসব বিষয় অনুসন্ধান করতে গিয়েই তিনি ক্রমেই আরও গভীর দার্শনিক-বৈজ্ঞানিক প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন।

আজ ১৭ ডিসেম্বর আরজ আলীর ১২৩তম জন্মবার্ষিকী।

প্রারম্ভিক এবং ব্যাক্তিগত জীবন

তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতে বরিশাল জেলার অন্তর্গত চরবাড়িয়া ইউনিয়নের লামছড়ি গ্রামে এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। যা ছিলো বরিশাল শহর থেকে ৭/৮ কিলোমিটার দূরে। বাংলা ১৩০৭ সনের ৩রা পৌষ (১৯০০ সালের ১৭ই ডিসেম্বর ) এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে আরজ আলী মাতুব্বর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম এন্তাজ আলী মাতুব্বর। তার মা অত্যন্ত পরহেজগার ছিলেন। পরিবারে তারা ছিলেন পাঁচ ভাইবোন। আরজ আলী মাতুব্বরের প্রকৃত নাম ছিলো ‘আরজ আলী’। আঞ্চলিক ভূস্বামী হওয়ার সুবাদে তিনি ‘মাতুব্বর’ নাম ধারণ করেন। মাত্র চার বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে পরিবারটি দেনার দায়ে বসতবাটি ও জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়।

মুক্তচিন্তা ও জ্ঞানচর্চা

মানুষ ও জীবন সম্পর্কে প্রশ্ন জাগলে তিনি এই বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। লাইব্রেরি ছিল তাঁর জীবনের প্রধান আনন্দক্ষেত্র। বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি থেকে বই এনে পড়েছেন এবং একপর্যায়ে নিজের অর্জিত সম্পদ দিয়ে ‘আরজ মঞ্জিল পাবলিক লাইব্রেরি’ প্রতিষ্ঠা করেন। লাইব্রেরি নির্মাণের খরচ কমানোর জন্য তিনি নিজেও কাজ করেছেন।

সমাজ ও দর্শন নিয়ে চিন্তাধারা

আরজ আলী মাতুব্বরের চিন্তাগুলোর মধ্যে নারীর অধিকার, বিবাহ, সন্তানের বৈধতা ইত্যাদি বিষয় উঠে এসেছে। তিনি ধর্ম, সমাজ এবং জীবনের নানা অসংগতির উপর প্রশ্ন উত্থাপন করেন। তাঁর প্রশ্ন এবং চিন্তাধারা সমাজের রক্ষণশীল শ্রেণির কাছে ভীতিকর ছিল।
সক্রেটিসের মতো তিনিও বিশ্বাস করতেন, ‘An unquestioned life is not worth living.’ তাঁর চিন্তাধারা সামাজিক কর্তৃত্ব এবং মতাদর্শিক আধিপত্যকে অস্বীকার করবার এক ধারাবাহিক লড়াই ছিল।

প্রকাশিত গ্রন্থ

আরজ আলীর রচিত পাণ্ডুলিপির সংখ্যা মোট ১৫টি। এর মধ্যে তার জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়েছিলো ৪টি। এই বইগুলো হলো- ‘সত্যের সন্ধান’ (১৯৭৩), ‘সৃষ্টি রহস্য’ (১৯৭৭), ‘অনুমান’ (১৯৮৩), ও ‘স্মরণিকা’ (১৯৮৮)। আরজ আলী মাতুব্বর তার প্রথম বইয়ের প্রচ্ছদও আঁকেন। বইটি লিখেছিলেন ১৯৫২ সালে। প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালে ‘সত্যের সন্ধানে’ শিরোনামে। মরণোত্তর কতিপয় কিছু অপ্রকাশিত পান্ডুলিপি আরজ আলী মাতুব্বরের রচনাবলী শিরোনামে প্রকাশিত হয়।

সম্মাননা

বাংলা একাডেমীর আজীবন সদস্য পদ
হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার
উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর বরণীয় মনীষী সম্মাননা

মৃত্যু

আরজ আলী মাতুব্বর ১৯৮৫ সালের ১৫ই মার্চ ৮৪ বছর বয়সে বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মেডিকেলের ছাত্রদের শিক্ষার উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য তিনি নিজের দেহ বরিশাল মেডিকেল কলেজে দান করেন এবং চোখ দুটি চক্ষু ব্যাংকে দান করেন। তাঁর অবদান এবং চিন্তাধারা তাঁকে একজন সত্যিকারের দার্শনিক হিসেবে স্মরণীয় করে রেখেছে।




লেখা লেখকের ফেসবুক প্রফাইল থেকে নেয়া , Facebook profile link : Selim Jahan

বিস্তারিত তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

আপনার একটি শেয়ার আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা

X (Twitter)
Post on X
Pinterest
fb-share-icon
Instagram
FbMessenger
Copy link
URL has been copied successfully!
Skip to content