jamdani জামদানি

খানদানি জামদানি | TRADITIONAL ART OF WEAVING

ফারিনের গায়ে জড়িয়ে থাকা সূক্ষ্ম কারুকাজে সমৃদ্ধ যে জামদানিটি- নাম তার রক্তাম্বরী। একই ঘরানায় এর সঙ্গী হিসেবে আরো আছে নীলাম্বরী, পীতাম্বরী, শ্বেতাম্বরীরাও।

বাংলাদেশের অনন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য

লাল গালিচায় সোনালি কারুকাজের একটি জামদানি শাড়িটি গায়ে জড়িয়ে আছেন যিনি, তিনি বাংলাদেশের অভিনয় অঙ্গনের বেশ প্রিয় মুখ। চতুর্থবারের মতো ‘ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস বাংলা’র পুরস্কার জিতলেন বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। বাংলাদেশের আরও একজন অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ এই মঞ্চ থেকে প্রথমবারের মতো ফিল্মফেয়ার জিতেছেন। কিছুদিন আগে অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিনের বিয়ের সাজ নিয়ে বেশ ভালোই তোলপাড় ঘটেছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তার মিনিমাল সাজের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছিল গায়ে জড়ানো লাল জামদানি শাড়িটি। আমাদের জামদানি শাড়ি। বাংলাদেশের অনন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।

ছবিসূত্র: Jaya Ahsan অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকে।

রক্তাম্বরী

ফারিনের গায়ে জড়িয়ে থাকা সূক্ষ্ম কারুকাজে সমৃদ্ধ যে জামদানিটি- নাম তার রক্তাম্বরী। একই ঘরানায় এর সঙ্গী হিসেবে আরো আছে নীলাম্বরী, পীতাম্বরী, শ্বেতাম্বরীরাও। সুতার রঙের উপর নির্ভর করেই নামের বাহার। আদতে হাই কাউন্ট কটন জামদানির সর্বোচ্চ গাঁথুনির এই শাড়িগুলোর মূল রঙের ভিত্তি করেই এসব নাম। জামদানি শাড়ি র সবচেয়ে মানসম্মত শাড়িগুলোর মধ্যে পড়ে এই ‘হাই কাউন্ট কটন’, তার উপর ভিত্তি করে দামটাও বেশ চড়া হয়। জামদানির ক্ষেত্রে যত নিখুঁত কারুকাজ আর যত বেশি কাউন্ট, ততই বেশি টাকা গুণতে হবে।

ছবিসূত্র: Tasnia Farin অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকে।

Jamdani sharee

নকশাকারী জামদানি শাড়ি

মোটাদাগে জামদানি মূলত দুই প্রকার– হাফসিল্ক ও সুতি। হাফসিল্কের বুননে আড়াআড়ি সুতোগুলো থাকে রেশমের তৈরি আর উল্লম্ব সুতোগুলো তুলো দিয়ে বানানো হয়। আবার সুতি জামদানির পুরোটাই তুলো বা কটন সুতো দিয়ে তৈরি। জামদানির মান নির্ধারিত হয় এর ‘কাউন্ট’ অনুযায়ী। কাউন্ট যত বেশি, জামদানির দামও তত বেশি। যেমন একটি ৮৪ কাউন্ট সুতার জামদানির মূল্য ৪০ থেকে ৮০ হাজার টাকার মধ্যে হতে পারে। দামের ক্ষেত্রে শাড়ির নকশার ধরন ও পরিমাণও এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কল্কাপাড়, বটপাতা, জলপাড়, দুবলাজাল, ময়ূরপাখা, বলিহার, পানসি, কটিহার, পান্না হাজার, ঝালর, ফুলওয়ার– ইত্যাদি বিভিন্ন মোটিফেই জামদানির নকশা করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে দামি নকশা ধরা হয় পান্না হাজারকে। এছাড়া, যে জামদানিতে ছোট ছোট ফুল-লতাপাতার নকশা আঁকা থাকে এবং নকশার প্যাটার্ন তীর্যক বা ‘তেরছা’ হয়, সেটিকে তেরছা জামদানি বলা হয়। আর জমিনে ছোট ফুল-লতাপাতার বুটি জালের মতো বেছানো থাকলে সেই নকশার নাম হয় ‘ঝালর’। এর উপর ভিত্তি করে সেই জামদানিকে ঝালর জামদানিও বলে থাকেন অনেকে।

জামদানি jamdani

জামদানির মূল বিষয় হচ্ছে এর সুতা। সুতা যত বেশি চিকন, ততই সূক্ষ্ম হবে জামদানির কারুকাজ। এতে অবশ্য তাঁতীর মুন্সিয়ানাও থাকতে হবে। কেননা চিকন সুতায় জামদানি বুনতে সময় বেশি লাগে, সেই হিসাবে দামটাও চড়া হাঁকা হয়। এখন মেশিনেও জামদানি বোনা হয়, সেগুলোর দামও হাতে বোনা জামদানির চেয়ে অনেকটা কম হওয়ায় অনেকে জামদানি শাড়ি পরার খায়েশ সেভাবেই মিটিয়ে নেন।

পরিধানের ভূষণ-বসনের শুরুটা নেহায়েত প্রয়োজন থেকেই হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে সে প্রয়োজন রূপ নিয়ে শখ– কখনো বিলাসিতায়। আমরা এর নাম দিয়েছি ফ্যাশন। জামদানিও এই ফ্যাশনেরই ডালপালা, যার মূলটা গেঁথে আছে আমাদের ঐতিহ্যের গভীরে। একে আমরা বয়ে নিয়ে চলেছি অধুনা জীবনের নিত্যদিনের সাধ-আহ্লাদের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়ে।

জামদানি সম্পর্কে বিস্তারিত

আলাদা আলাদা করে বর্ণনা দেয়া আছে। জানতে ক্লিক করুন –

জামদানি নকশার উৎস

JAMDANI | SOURCE OF THE DESIGN

কারও কারও মতে, জামদানির নকশায় ইরান, ইরাক ও তুর্কি কার্পেট ও লৌকিক নকশার ছাপ রয়েছে। কারও কারও মতে, জামদানির নকশা একান্তভাবে বাংলার তাঁতিদের সৃজনশীলতা পরিচায়ক। 

জামদানি বুনন এর কৌশল ও প্রক্রিয়া

জামদানি বুনন এর কৌশল ও প্রক্রিয়া

ওস্তাদ ভরনার সুতা মাকুর সাহায্যে সাগরেদ এর দিকে চালান দেয় এরপর ‘দোপ্তি ’ টেনে কান্ডুর দয়ে  নিখুঁত ভাবে ঘুরিয়ে জামদানির মুল নকশা তোলা হয় ।

tools of jamdani weaving

জামদানি তৈরিতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম

‘জামদানি’ হচ্ছে বিশেষ ভূগোল ও পরিবেশে শিল্প চর্চার বিশেষ একটি ধরণ যার মাধ্যমে একজন তাঁতি  সুতা , রং , মাকু , কান্ডুর এবং তাঁত এর মাধ্যমে নৈপুণ্য শিল্প তৈরী করে

জামদানি তৈরির বিভিন্ন স্তর

জামদানি তৈরির বিভিন্ন স্তর

এই শিল্প উৎপাদনের সাথে শুধু তাঁতিই নয়, জামদানি তৈরির প্রতিটি স্তরে যুক্ত আছে বিভিন্ন ঘরাণার মানুষ।

জামদানি শাড়ি বিভিন্ন ধরণ

জামদানি শাড়ি বিভিন্ন ধরণ

কাউন্ট দিয়ে সুতার মান বোঝানো হয়ে থাকে । যে সুতার কাউন্ট যত বেশি, সেই সুতা তত চিকন হয়ে থাকে ।জামদানি শাড়ির সুতার কাউন্ট সাধারনত ৩২ থেকে ২৫০ কাউন্টের হয়ে থাকে । 

how to recognize jamdani

আসল জামদানি শাড়ি চেনার উপায়

জামদানি বুননে মুলত  প্রতিটি নকশার  সুতা  ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নকশা তোলা হয় । যার ফলে  সুতার কোন অংশ বের হয়ে থাকে না। এ কারণে জামদানি নকশায় দুই দিকেই ফুটে উঠে ।

jamdani tate bosar dua

তাঁতে বসার দোয়া

এ কালের শ্রেষ্ঠ জামদানি ওস্তাদ হিসাবে স্বীকৃত হাজি কফিল উদ্দিন ভূঁইয়া ভাষ্যমতে, বালক বয়সে তাঁতে বসার আগে তিনি যে দোয়াটি পাঠ করতেন, তা হিন্দু দেবতা বিশ্বকর্মার উদ্দেশ্যে , দেবতা হিসাবে নয় বরং গুরু ধার্যে ।

জামদানি শাড়ি কাটা করা

জামদানি বানানোর সময় তাঁতিরা সুতাতে মাড় ব্যবহার করে। শাড়ি কয়েকবার পরার পর সেই মাড় গুলো নষ্ট হয়ে যায় বলে শাড়িটা নরম হয়ে যায়।

jamdani markteplace

জামদানি শাড়ি -র হাট

তাতিঁরা হাত উচিয়ে যখন  শাড়ি  ধরেন তখনই জানান দেয় জামদানি শাড়ির অবস্থান কতটা উঁচুতে।

jamdani motif preservation

জামদানি নকশা সংরক্ষণ

ঐতিহ্যবাহী নকশা ও বুননের কারণে ২০১৬ সালে জামদানিকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো।

জামদানি শাড়ি গ্যালারি

PICTURE OF JAMDANI SAREE

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

আপনার একটি শেয়ার আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা

X (Twitter)
Post on X
Pinterest
fb-share-icon
Instagram
FbMessenger
Copy link