wall graffiti গ্রাফিতি july 2024 bangladesh 2nd independence day 5 august x fxyz x bfa +

গ্রাফিতি | GRAFFITI

গ্রাফিতিতে রাঙিয়ে তোলা হচ্ছে বদলে যাওয়া নতুন বাংলাদেশের গল্প ও আন্দোলন অভ্যুত্থানের নানা ঘটনা। তুলে ধরা হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সমাজ বা রাষ্ট্রের কী চাওয়া তাও।

দূষণে শীর্ষে কিংবা বাসযোগ্যহীনতায় পরিচিত প্রানের ঢাকা শহর, তুলির আচঁড়ে বদলে যাচ্ছিল প্রানের ঢাকা। মূলত পোস্টার-ব্যানারের দূষণ থেকে মুক্ত রাখতে এবং শহরকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করতে পিলার গুলোতে আকাঁ হচ্ছিল নান্দনিক গ্রাফিতি। বলছি ২০২৩ এর নভেম্বর-ডিসেম্বর এর কথা। পুরো কাজটাই হচ্ছিল কর্মাশিয়াল ভাবে। উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। তা ছিলো পুরোটাই অনাকাঙ্ক্ষিত পোস্টার লাগানো ও বিভিন্ন বিজ্ঞাপন সংবলিত লেখা বন্ধ করতে সাথে নান্দনিকতা মাথায় রেখে।

চিত্রকর্মে প্রাধান্য পেয়েছে বাংলার নিজস্ব মৌলিক ধারার চিত্রকলা এবং যৌক্তিক ও প্রাসঙ্গিক কিছু চাওয়া। যেমন: ‘হর্ন না বাজাই’, ‘গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান’, ‘পোস্টার লাগাবেন না’ তিন দিনে একদিন জমা পানি ফেলে দিন, আসুন দেশকে ভালোবাসি।’


তবে ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট যেন গ্রাফিতি আন্দোলনের এক নতুন অধ্যায় হয়ে উঠল। এই সময়, শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশের দেয়ালে দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি। শিক্ষার্থীদের ত্যাগ, সংগ্রাম, আর একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন ফুটে উঠল রঙের মাধ্যমে। দেয়ালের গ্রাফিতিগুলোতে একদিকে যেমন উঠে এসেছে আন্দোলনের দৃশ্যপট, তেমনি উঠে এসেছে একটি বদলে যাওয়া সমাজের আশা-আকাঙ্ক্ষা।


গ্রাফিতির ভাষা হয়েছে বহুমুখী। বাংলায় স্লোগানের পাশাপাশি জায়গা পেয়েছে ইংরেজি উক্তি, ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি, বিদ্রোহের গান, এবং সম্প্রীতির বার্তা। নজরুলের গানের পঙক্তির পাশে দেখা মিলেছে জালালউদ্দীন রুমীর উক্তি, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের স্মৃতির পাশে স্থান পেয়েছে ২০২৪ সালের আন্দোলনের গল্প। জেনারেশন জেডের প্রশংসা আর ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণ—সবই যেন এই গ্রাফিতির মাধ্যমে একটি নতুন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি আঁকছে।


এই গ্রাফিতি শুধু রঙের খেলা নয়, এটি সময়ের প্রতিধ্বনি। দেয়ালের রঙ আর তুলির আঁচড়ে ফুটে উঠছে বাংলাদেশের সমকালীন বাস্তবতা এবং ভবিষ্যতের স্বপ্ন। এটি আমাদের সমাজের প্রতিবাদ, সম্প্রীতি এবং পরিবর্তনের এক মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠেছে।

গ্রাফিতি-GRAFFITI-click-by-fxyz-x-rajon-x-bfa-Bangladesh


গ্রাফিতি GRAFFITI click by fxyz x bfa Bangladesh (178)


গ্রাফিতি GRAFFITI click by fxyz x bfa Bangladesh (67)
গ্রাফিতি GRAFFITI click by fxyz x bfa Bangladesh (185)
টিএসসির সামনের দেয়ালে গ্রাফিতিতে আঁকা লেখা হয়েছে ‘৩৬ জুলাই’।


গ্রাফিতির মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি

‘আমরা স্বাধীন’

’পাহারায় থাকতে হবে,
দুর্নীতিকে রুখতে হবে’

’সন্ত্রাস, মাদক, সিন্ডিকেট, সুদ, ঘুষ, হয়রানি ,জুলুমমুক্ত বাংলা চাই’

’স্বাধীন হয়েছি, সময় এখন সভ্য হওয়ার’

’এসেছে ফাগুন আমরা হয়েছি শত গুণ’

’২৪ এর গল্প’, ’আমি নয় আমরা’,

’পানি লাগবে পানি’,

’একজন ভিআইপির জন্য পৃথিবী থেমে থাকতে পারে না’,

’হিন্দু মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, উই আর ওয়ান’

‘মনে হয় রক্তই সমাধান বারুদই অন্তিম তৃপ্তি,

‘দুর্নীতির গদি নয়, নতুন আলো দেখতে চাই’

‘ন্যায়ের সাথে জনতা অন্যায় হলেই একতা’

‘স্বাধীনতা এনেছি সংস্কারও আনব’।

‘দেশের কোনো ধর্ম নেই/দেশের কোনো বর্ণ নেই/দেশ আমার দেশ তোমার’

‘শোনো মহাজন আমি নই তো একজন/ শোনো মহাজন আমরা অনেকজন’

‘এসো ১ হই’, ‘রুখে দাঁড়াও স্বৈরাচার’

‘ধর্ম যার যার দেশ সবার’

‘দেশ গড়ব করছি পণ/ ক্ষমতায় আজ জনগণ’

‘বিকল্প কে? আমি, তুমি, আমরা’।

‘ঘুষ চাইলে ঘুষি’,

‘নতুন দিনের নতুন সূর্য/ জাগ্রত হোক বাংলাদেশ’,

‘শিক্ষক রাজনীতি নিপাত যাক, মেধা পাচার থেমে যাক’,

‘ছাত্ররাজনীতি নিপাত যাক, শিক্ষাঙ্গন মুক্তি পাক’।

‘চলো রাষ্ট্র সংস্কার করি’,

‘অরুণ প্রাতের তরুণ দল’

টেলিভিশনের পর্দায় লেখা দাবি, ‘বাক স্বাধীনতা’, পাশে লেখা, ‘নতুন বাংলাদেশ গড়ব মোরা, জেন-জেড’।

কোনো গ্রাফিতিতে আঁকা দৃঢ় মুষ্টিবদ্ধ হাত, উদ্যত তর্জনী, কোনোটিতে ছিন্ন করা শিকল

একটি গ্রাফিতিতে দিনপঞ্জিকার মত করে গণ-অভ্যুত্থানের দিনগুলো নিউজ পেপার কাটিং কোলাজ আকারে লাগানো হয়েছে। যা স্মরণীয় হয়ে থাকবে ইতিহাসে, গণমানুষের স্মৃতিতে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শক্তি, সাহস ও প্রেরণা হয়ে।

দেয়ালে দেয়ালে দেখা যায় সবুজ আইডি কার্ডের ফিতা ঝুলানো আন্দোলনে শহীদ মুগ্ধের হাসিমাখা মুখটা। যার শিরোনাম পানি লাগবে? কারো, পানি?

CALENDAR 2025

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি নিয়ে
ক্যালেন্ডার ২০২৫
.

“একটি আন্দোলন, একটি ইতিহাস।
২০২৪ জুলাই মাস যেন বাঙালির সংগ্রামী চেতনাকে জাগ্রত করার প্রতীক হয়ে থাকলো।

এই ক্যালেন্ডারটি শুধুমাত্র একটি তারিখবিন্যাস নয়;
এটি আমাদের অতীতের সাক্ষী, যা বর্তমান ও ভবিষ্যতের পথে আলোকবর্তিকা।
আসুন, ঐতিহাসিক এই ঘটনাকে নতুনভাবে স্মরণ করি। ছড়িয়ে দেই সবার ভিতর।

এখানে ১২টি স্লোগানের মাধ্যমে ১২ মাসের ক্যালেন্ডার সাজানো হয়েছে।
স্লোগান গুলো নিচে দেয়া হলো।

গণমানুষের জাগরণে ইতিহাস সৃষ্টি হয়।
“স্বাধীনতার স্বপ্নে জাগ্রত প্রজন্ম।”
অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যই শক্তি।
যেখানে অধিকার নেই, সেখানে প্রতিবাদ।
“জীবন দিয়ে হলেও আমরা লড়বো।”
গণআন্দোলনই গণতন্ত্রের ভিত্তি।
একতাই আমাদের অস্ত্র।
প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম—অধিকারের লড়াই।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহসী হও।
“শক্তি-ঐক্য-জয়”।
স্বাধীনতার সংগ্রামে ঐতিহ্য রক্ষা।
“আমরা পারবোই!”

“ইতিহাসের পাতায় নতুন অধ্যায়: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের তিন দিবস”

ঢাকার মেট্রোরেলের পিলারগুলোতে গ্রাফিতি ফিরে দেখা ফ্যাসিস্ট রেজিম x bfa x rajon (13)
ঢাকার মেট্রোরেলের পিলারগুলোতে গ্রাফিতি ফিরে দেখা ফ্যাসিস্ট রেজিম x bfa x rajon (41)

‘ফিরে দেখা ফ্যাসিস্ট রেজিম’

ফিরে দেখা শাসনকাল: মেট্রোরেলের পিলারে গ্রাফিতি

সম্প্রতি ঢাকার মেট্রোরেলের পিলারগুলোতেও ধরা দিয়েছে গ্রাফিতির এক সাহসী রূপ। কারওয়ান বাজার থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত পিলারগুলোতে ফুটে উঠেছে একটি শাসনামলের রাজনৈতিক প্রতিচ্ছবি। ‘ফিরে দেখা ফ্যাসিস্ট রেজিম’ শিরোনামে এসব গ্রাফিতির আইডিয়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এই কাজটি একটি শিল্প-আন্দোলন, যা সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসের দেড় দশকের ঘটনাপ্রবাহকে তুলে ধরছে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর ভঙ্গিতে। শিল্পের ভাষায় কথোপকথন তৈরি হচ্ছে রাস্তায়, জনমানসে।


এই উদ্যোগটি নিছক শিল্প নয়—এ এক রাজনৈতিক স্মৃতিচারণ, প্রতিরোধের প্রতীক। বাংলাদেশের গ্রাফিতি চর্চার ধারায় এই কাজ এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যেখানে শহরের ব্যস্ততম রাস্তাও হয়ে উঠেছে প্রতিবাদের প্রাচীর।

wall graffiti গ্রাফিতি আর্ট বাংলাদেশ রিকসা পেইন্ট riksha paint x fxyz x bfa web

জুলাইয়ের আগের গ্রাফিতি

পোস্টারের জঞ্জাল সরিয়ে সেখানে শোভা পাচ্ছে বর্ণীল গ্রাফিতি। কিছুটা রিকসা আর্ট আদলে। এসব নান্দনিক গ্রাফিতি শহরের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে কয়েকগুন।

অনাকাঙ্ক্ষিত পোস্টার লাগানো ও বিভিন্ন বিজ্ঞাপন সংবলিত লেখা বন্ধ করতে ঢাকায় নান্দনিকতার জায়গা থেকে শিল্পীর হাতের ছোঁয়া লেগেছিল প্রথমে রাজধানীর মগবাজার উড়াল সেতুতে। ফ্লাইওভারের খুটিগুলোতে চিত্রকর্ম আঁকার উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। প্রথমে মগবাজার ফ্লাইওভারে এ কাজ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ফ্লাইওভার ও মেট্রো রেলের খুটিতেও চিত্রকর্ম করা হবে বলে জানিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র আতিকুল ইসলাম।

এর ধারাবাহিকতায় ঢাকার মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচের অংশে দৃষ্টিনন্দন চিত্রকর্ম বা গ্রাফিতি আঁকা শুরু হয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উদ্যোগে বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের সহযোগিতায় বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে ২০২৩ -এ মহাখালী ফ্লাইওভারে নান্দনিক গ্রাফিতি শুরু হয়। বলা হয় ২০২৪ এর স্বাধীনতার মাস মার্চের মধ্যে পুরো মহাখালী ফ্লাইওভারের গ্রাফিতি সম্পন্ন করা হবে। শহরকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করতেই এই উদ্যোগ।



what is Graffiti

গ্রাফিতি কি

সহজ ভাষায় গ্রাফিতি বলতে দেয়ালে আঁকা ছবিকে বোঝায়। সেটা অনেকটা সাধারণ চিত্রকর্ম থেকে সাধারন মানুষের ভিতর প্রতিবাদের বোধ জাগ্রত করা। সারা বিশ্বে গ্রাফিতি মূলত প্রতিবাদের নিরব ভাষা হিসেবে পরিচিত।

মুক্ত বিশ্বকোষ, উইকিপিডিয়া দেয়া তথ্য অনুযায়ী,

গ্রাফিতি হল বিনা অনুমতিতে জনসাধারণের অভিমতে শৈল্পীয় উপায়ে দেয়ালের উপরে লেখনী কিংবা অঙ্কনের মাধ্যমে তুলে ধরা।

গ্রাফিতি কি শুধুই প্রতিবাদের ভাষা? শুরুর দিকে এমনটাই ছিলো। দেয়ালচিত্রের মাধ্যমে দেশের সামাজিক অবিচার, সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বা যুদ্ধের বিরুদ্ধে বার্তা সর্বসাধারনের কাছে পৌঁছে দেবার মাধ্যম ছিলো গ্রাফিতি। মানব সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে গ্রাফিতিও বিকশিত হয়েছে, পেয়েছে শৈল্পিক মাত্রা।


প্রাচীন গুহাচিত্র থেকে শুরু করে বাংলাদেশের দেয়ালে দেয়ালে আঁকা ‘সুবোধ সিরিজ ’ এবং বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বর্তমানের অবস্থান ফ্লাইওভারের নিচের অংশে কিংবা পিলারগুলোর দৃষ্টিনন্দন চিত্রকর্ম গ্রাফিতির আধুনিক রুপ।

গ্রাফিতি হচ্ছে দেয়ালে বা যেকোনো পাবলিক সারফেসে আঁকা কোন চিত্র বা সাধারন কোনো বক্তব্য , কিন্তু পেছনের বোধটা থাকবে খুব গভীর। সহজ ভাষায় এটাই গ্রাফিতি।

history of graffiti

গ্রাফিতি ইতিহাস

সমসাময়িক গ্রাফিতির জন্ম বলা হয় হিপহপ দ্বারা প্রভাবিত। এমন অসংখ্য গ্রাফিতির উদ্ভব ফিলাডেলফিয়া এবং নিউ ইয়র্ক শহরের সুড়ঙ্গে আঁকা গ্রাফিতি থেকে। আমাদের কথাই যদি বলি, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সে সময়ে দেশের অলিগলি থেকে প্রধান প্রধান শহরের ফটকজুড়ে পোস্টারসহ নানা গ্রাফিতি ছিল। পোস্টার, গ্রাফিতি, প্ল্যাকার্ড—এই সবই যেন একটি অপরটির অংশ। শিল্পের একটি ভাষা বলা হয় গ্রাফিতিকে। শিল্পীরা বলেন, দেয়ালে যা কিছু উপস্থাপিত হয়, তা মানুষকে আকর্ষণ করে বেশি। ফলে সমাজের জন্য তা উপযোগী।

সব সময় যে গ্রাফিতি রাজনৈতিক ইস্যু, বিপ্লবী ভাবনা নিয়ে আঁকা হয় এমনটি নয়। তবে গ্রাফিতির মূল উপজীব্য সমসাময়িক বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়কে ঘিরেই। ১৯৭১-এর নির্মমতার প্রতিবাদের ভাষায় যুক্ত হয়েছিল গ্রাফিতি, পোস্টার।  শিল্পী কামরুল হাসানের সে সময়ে আঁকা বেশ কিছু পোস্টার যেগুলোতে আঁকা ছিল জেনারেল ইয়াহিয়ার মুখের সেই বিখ্যাত ঐতিহাসিক ছবি এবং সঙ্গে লেখা ‘এই রক্তখেকো জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে’। সে সময়ের এমন সব পোস্টার নজর কেড়েছিল জন সাধারণের। পাশাপাশি তার আঁকা বেশ কিছু দেয়ালচিত্র বা গ্রাফিতিও তৈরি করেছিল হট্টগোল। যে সবাইকে জানান দিচ্ছিল হটাতে হবে এ রক্তখেকোদের। স্বাধীন করতে হবে বাংলাকে। এর মধ্যে কেবল শিল্পী কামরুল হাসান না, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান থেকেই অনেক শিল্পী এঁকেছেন, প্রতিবাদ করেছেন। গ্রাফিতি বা এ দেয়ালচিত্রের বিশেষত্ব হচ্ছে বড় পরিসরে কাজ করা যায়। খুব করে তুলে ধরা যায় সমাজের নানান বিষয়।

গ্রাফিতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যাঙ্কসি। বিশ্বজুড়ে এই ধারার গ্রাফিতি রীতিমতো গ্রাফিতিকে প্রতিবাদের হাতিয়ার করে তুলেছিল। এই কয়েক বছর আগে আমাদের দেশে ‘সুবোধ’ শিরোনামে সিরিজ গ্রাফিতি আঁকা হয়েছিল। এরপর কোটা সংস্কার, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন থেকে শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও ভূমিকা রাখছে গ্রাফিতি।

বাংলাদেশের দেয়ালে দেয়ালে
আঁকা ‘সুবোধ সিরিজ’

সুবোধ তুই পালিয়ে যা, এখন সময় পক্ষে না’, ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা তোর ভাগ্যে কিছু নেই’ কিংবা ‘সুবোধ এখন জেলে! পাপবোধ নিশ্চিন্তে করছে বাস মানুষের হৃদয়ে’ ২০১৭ সালে এই লেখা গুলো দেখা যায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের দেওয়ালে।


কে এই সুবোধ? কেন তাকে পালিয়ে যেতে বলা হচ্ছে? এই শহর থেকে নাকি সময় থেকে তাকে পালাতে বলা হচ্ছে? কিংবা কারাই বা এসব বলছে সুবোধকে? এসব কোনো প্রশ্নেরই অবশ্য উত্তর মেলেনি এখনো। “হবে কি” ছদ্ম নাম নিয়ে অজ্ঞাত শিল্পি একের পর এক সুবোধ সিরিজের জন্ম দিতে শুরু করে। কে বা কারা এসব আঁকছেন, কী তাদের উদ্দেশ্য, এর মাধ্যমে কী প্রচার করতে চেয়েছিল সেসব রহস্য এখনো অধরা। তবে ২০২৪ জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পর নিশ্চই আমাদের ভিতর সুবোধের উদয় হবে।

শহরের বিভিন্ন দেয়ালে দেয়ালে আঁকা এসব গ্রাফিতিতে দেখা যাচ্ছে, কখনো একজন লোক ছুটে যাচ্ছে,
কখনো সে বন্দি আছে, কখনো দাঁড়িয়ে আছে খাঁচা হাতে, সেই খাঁচার ভেতর টকটকে লাল সূর্য।
আর এই লোকটির নামই সুবোধ। গ্রাফিতিতে সুবোধের ছবির পাশে লেখা থাকে দু-একটি লাইন। 


সুবোধের এই গ্রাফিতিগুলো আঁকা হয়েছে স্টেনসিল ব্যবহার করে।
এই পদ্ধতিতে স্প্রে করে দ্রুত আঁকার কাজ করা যায়।


বিভিন্ন সুবোধ গ্রাফিতিতে যেসব কথা বলা হয়েছে:
.

সুবোধ তুই পালিয়ে যা, তোর ভাগ্যে কিছু নেই
( খাঁচাবন্দী সূর্য নিয়ে কপালে হাত রেখে বসে পড়েছে সুবোধ)


সুবোধ তুই পালিয়ে যা, এখন সময় পক্ষে না
(হলুদ সূর্য খাঁচায় বন্দি করে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়াচ্ছে সুবোধ)


সুবোধ তুই পালিয়ে যা, ভুলেও ফিরে আসিস না!
(খাঁচাবন্দী সূর্যটাকে তুলে ওঠানোর ভঙ্গিতে সুবোধ)


সুবোধ, কবে হবে ভোর?
(একটা বাচ্চা মেয়ে জিজ্ঞেস করছে সুবোধকে)


সুবোধ এখন জেলে! পাপবোধ নিশ্চিন্তে করছে বাস মানুষের হৃদয়ে
(জেলের গরাদ ধরে দাঁড়িয়ে সুবোধ)


সুবোধ তুই ঘুরে দাঁড়া
(খাঁচায় লাল সূর্য নিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে সুবোধ)


সুবোধ তুই পালিয়ে যা, এখন সময় পক্ষে না, মানুষ ভালবাসতে ভুলে গেছে!
(খাঁচাবন্দী সূর্য নিয়ে কোথাও চলেছে সুবোধ, ক্ষণিকের তরে মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়েছে)




তথ্যসূত্র:

ntvbd.com

somewhereinblog.net

উইকিপিডিয়া, একটি মুক্ত বিশ্বকোষ


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Instagram did not return a 200.
Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Your share and comment are an inspiration to us

X (Twitter)
Post on X
Pinterest
fb-share-icon
Instagram
FbMessenger
Copy link
URL has been copied successfully!