different types of footwear ফুটওয়্যারের গল্প shoes story x bfa x fxyz final

জুতার সাতকাহন

কুকুরের স্বভাবই না-কি এই, রাজতক্তে বসালেও সে জুতা চাটবেই। আর এই জুতা ৪০ হাজার বছর আগে বানানো হলেও ডান-বাম পায়ের জন্য আলাদা জুতা

প্রাচীন এক লেখক বিষ্ণুশর্মাই জুতাকে বেশ লাঞ্চিত করেই লিখেছিলেন, কুকুরের স্বভাবই না-কি এই, রাজতক্তে বসালেও সে জুতা চাটবেই। কেউ কেউ জুতাকে অমূল্য সম্পদ বলতেও দ্বিধা করেনি। কবিগুরুর মতে, কোনো রাজা ধুলা হতে পা মুক্ত রাখার জন্য নানারূপ কৌশল অবলম্বন করেন-অবশেষে বিরক্ত হয়ে তাঁকে যে বস্তুটির শরণাপন্ন হতে হয় তা-ই পরে জুতা নামে বিখ্যাত হয়ে উঠে।
মূলত জুতা আবিষ্কার হয়েছিল পায়ের নিরাপত্তার জন্য। যা আজ নিরাপত্তার সাথে সাথে অপরিহার্য ফ্যাশনের অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। নিজেকে পরিপাটি করে উপাস্থাপন করতে জুতার তুলনা নেই। ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানী ‘এরিক ট্রিঙ্কাউস’ গবেষণা করে বলেছেন, ‘মানুষ জুতা পড়তে শুরু করেছিল প্রায় ৪০ হাজার বছর আগে।’ গবেষকেরা ধারণা করেন যে, পৃথিবীর প্রথম জুতা আবিষ্কার করা হয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যে। কোনো কোনো গবেষক বলছেন, ইরানের সীমান্তবর্তী পাহাড়ে বসবাসকারী বাসিন্দাদের পায়ের নিরাপত্তার কারণে প্রথম জুতা তৈরি করা হয়। সেইসব জুতা শুধু প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি করা হয়েছিল। তা সহজেই পচন ধরতে পারে এবং ছিঁড়ে যেতে পারে তাই এরপর জুতা তৈরির উপকরণ বদলে গেছে। তখন জুতা তৈরি হতো চামড়া, কাঠ, ক্যানভাস ইত্যাদি ব্যবহার করে। এর মধ্যে চামড়ার তৈরি জুতার প্রথম খোঁজ পাওয়া যায় আর্মেনিয়ায়, যেগুলো ব্যবহার করা হয় খ্রিষ্টপূর্ব সাড়ে তিন হাজার বছর আগে। বলা হয়, জুতা আবিষ্কারের প্রথম দিকে দুই পায়ের জুতা এবং ছেলে-মেয়ের জুতা এক ছিল। পৃথিবীতে অক্ষত একমাত্র চামড়ার জুতা পাওয়া যায় যা প্রায় ৫,৫০০ বছরের পুরনো। ৪০ হাজার বছর আগে জুতা বানানো হলেও ডান-বাম পায়ের জন্য আলাদা জুতা তৈরি করা হয় মাত্র এক হাজার ৮৫০ বছর আগে।

এ উপমহাদেশে ১৭০০ শতকে ‘কাঠের খড়ম’ নামে এক রকমের জুতা খুব বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। সে জুতা তৈরি করা হতো কাঠ দিয়ে। আর ব্রিটিশ শাসন আমল থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে তেমন কোন বৃহৎ জুতার কারখানা ছিল না। তখন মূলত কলকাতা থেকে জুতা আমদানি করা হতো। কিন্তু ১৯৬২ সালের দিকে প্রথমত পূর্ব বাংলায় বাণিজ্যিকভাবে জুতা উৎপাদন শুরু হয়, যার একটি ব্রান্ড নাম ছিল ‘বাটা’এবং প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল ‘বাটা স্যু কোম্পানি’। পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে ইপ্সি জুতা উৎপাদন ও রপ্তানি আরম্ভ করে।

আমাদের দেশে সেই ১৯৬২ সালে বাটা শু কোম্পানির জুতা তৈরি শুরু হওয়া থেকে আজ অব্দি দেশী বিদেশী অনেক কোম্পানি আজ নাম লিখিয়েছে এই ফুটওয়্যার শিল্পে। এক সমিক্ষায় দেখা গেছে বাংলাদেশের ফুটওয়্যারে মার্কেটের আকার ২০২৮ সালের ভিতর ৫ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। ( স্ট্যাস্টিকার রিসার্চ অনুযায়ী। )

Different types of shoes

জানেন কি আপনার পায়ের জুতা জোড়ার পোশাকি নাম?
.

ক্লাস, ইন্টারভিউ, কোথাও ঘুরতে যাওয়া বা প্রতিদিনের অফিসে পোশাক যেমন ভিন্ন তেমনই পায়ের জুতা হয়ে থাকে ভিন্ন রকমের। যা আপনার রুচি আর আধুনিকতার প্রমাণ পাওয়া যায় জুতার ব্যবহার দেখে। এজন্য যে খুব দামি জুতা কিনে পরতে হবে, তা কিন্তু নয়। পোশাকের সঙ্গে এবং অবস্থান বুঝে মানানসই জুতা পরিধান করা। যা ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।

একসময় ছিলো অবস্থান বুঝে, পোশাকের সাথে মিলিয়ে মেয়েরা বেশ গুছিয়ে জুতো পড়লেও ছেলেরা ফরমাল শু ছাড়া অন্যন্য সময় কখন কি পরছে তা নিয়ে খুব একটা সচেতন ছিলো না। ‍যুগ পাল্টেছে। দুই-দলই সমান তালে ফ্যাশন সচেতন। মেয়েরা যেমন শাড়ি, সালোয়ার কামিজ পরলে সেক্ষেত্রে হিল জুতা, আবার শার্ট-প্যান্ট কিংবা ফতুয়া পরলে স্যান্ডেল সু, বা দুই ফিতার জুতা তেমন হাইহিলের সঙ্গে ওয়েস্টার্ন পোশাক পড়ে থাকে। ছেলেরা ক্যাজুয়ালি জিনস এবং টি-শার্টের সাথে মানানসই স্পোর্টস স্নিকার্স, সেমি ফরমাল এর সাথে লোফারস কিংবা ফরমাল কোনো প্রোগ্রামে ফরমাল শু পড়ে থাকে। আমরা সাধারন ভাবে এক জোড়া জুতাকে হিল, কিংবা ফ্লাট শু অথবা ছেলেদের বেলায় লোফার কিংবা স্নিকার পড়েছি বেলেই শেষ করে দেই। তবে এসব জুতার আছে বিভিন্ন পোশাকি নাম। এখানে কিছু জুতার পোশাকি নাম দেয়া হলো।

মেয়ে এবং ছেলেদের জুতার বিভিন্ন নাম

ওয়েজেস শু
প্রিটি পাম্প শু
পয়েন্টি ওপেন ব্যাক
স্টাকচারড লাগ শু
স্লিংব্যাক
ফ্লাট ও ব্যালে পাম্প শু
মিউল শু
হ্যান্ডক্রাফটেড জুত্তি
থিহ হাই বুটস
নি হাই বুটস
ওয়েলিংটন বুটস
অ্যাঙ্কল স্ট্র্যাপ
টি-স্ট্র্যাপ
স্টিলেটো
কিটেন হিল
প্ল্যাটফর্ম
পিপ টো
সিঙ্গল ব্যাকস
স্লিপ অন
ওপেন টো
চাংকি হিল
স্কারপিন
ম্যারিজেনস
ফ্লিপ ফ্লপস
স্যান্ডেল
স্নিকার্স
কনভার্স
মোকাসিন
পেনি লোফার
ট্যাসেল লোফার
নাগরা শু
কাউবয় বুটস
উগ বুটস
ড. মার্টিনস
চেলসি বুটস
ক্রোকস
লিটা
মংক
অক্সফোর্ড
টিম্বারল্যান্ড বুটস
গ্ল্যাডিয়েটর বুটস
বন্ডেজ বুটস
ক্লোগস
ডকসাইড

পায়ের জুতার বিভিন্ন নাম এবং ধরন


আপনার একটি শেয়ার আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা


history of shoes

জুতার আধুনিকায়ন

জুতোর ধরন ও ডিজাইন সময়ের সাথে সাথে বদলায়: যেমন জুতোয় উঁচু হিল থাকতে পারে, আবার নাও পারে। সমসাময়িক জুতা স্টাইল, সুবিধা এবং দামের দিক থেকে হরেক রকমের হয়।

জুতা প্রধানত চামড়া, কাঠ, ক্যানভাস ইত্যাদি এবং অন্যান্য পেট্রোকেমিক্যাল জাত পদার্থ থেকে তৈরি হয়। সভ্যতা যত বিকশিত হচ্ছিল, বস্তুটি তত আধুনিকতা লাভ করে। একেক সময় একেক ধরনের কাঠের জুতা তৈরি করে তার নতুন নতুন নামকরণও করা হয়েছে। পাদুকার প্রথম আধুনিকায়নে হাত দেয় ইউরোপীয়রা। ক্রমে পৃথিবীর অন্যান্য দেশও এতে অংশগ্রহণ করে। ১৮০০ শতকের দিকে জাপানিরা কাঠ দিয়ে তৈরি করে ‘ওকোবো’ নামে এক ধরনের জুতা, যার পরিমাপ ছিল ১৪ সেন্টিমিটার। সাধারণত বৃষ্টির দিনে কাদা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এ জুতা পায়ে দিত জাপানের নারীরা। জুতাটির ফিতা হতো লাল।

নারী-পুরুষ উভয়ের কথা মাথায় রেখেই ১৭০০ শতকের দিকে ইউরোপীয়রা তৈরি করে এক ধরনের উঁচু জুতা, যা ‘হাই হিল’ নামে পরিচিত। এ জুতা প্রথম ব্যবহার শুরু করেন ফ্রান্সের সম্রাট পঞ্চদশ লুই। খ্রিস্টীয় চতুর্দশ থেকে সপ্তদশ শতক পর্যন্ত লেবানিজরা ব্যবহার করত ‘কাবকাবস’ নামে এক ধরনের কাঠের জুতা। মূলত এটি মধ্যযুগে ব্যবহৃত জুতা দেখে নকশা করা হয়েছে। কর্দমাক্ত রাস্তা এবং গোসলখানায় ব্যবহার করার জন্য এটিই উত্তম বস্তু। বেশ উঁচু হওয়ায় কাদাপানি লাগার সম্ভাবনা একেবারেই কম।

বিংশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ফিনল্যান্ড গাছের ছাল দিয়ে তৈরি করে এক ধরনের পাদুকা। বৃষ্টি, কাদা এবং বরফ আচ্ছাদিত পথ পাড়ি দেওয়ার জন্যই মূলত এ জুতা তৈরি করা হয়। পরে অবশ্য নরওয়ে, সুইডেন এবং রাশিয়া এটি আধুনিকায়ন করে। পঞ্চদশ শতকের শেষদিকে ইতালিও কাঠ দিয়ে তৈরি করে ‘চোপিনস’ নামে এক ধরনের ক্ষুদ্রাকৃতির জুতা। নারীদের ব্যবহারের জন্য এ জুতার পরিমাপ ৫ ইঞ্চি। ভারতবর্ষে ১৭০০ শতকের দিকে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল কাঠের খড়ম। উনিশ শতকের দিকে ফ্রান্সে একবার কাঠ দিয়ে তৈরি হয়েছিল বিয়ের জুতা। তারা এ জুতার ধারণা পেয়েছিল নবম শতকের দিকে প্রাচীন আফ্রিকার মরিসাসের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষের ব্যবহৃত জুতা দেখে।


তথ্যসূত্র:

রাইজিংবিডি.কম : জুতা আবিষ্কারের যত কথা

অনন্যা ডেস্ক : নানান পোশাকে নানান জুতা


August 6, 2024
different types of footwear ফুটওয়্যারের গল্প shoes story x bfa x fxyz final

জুতার সাতকাহন

fayze hassan
কুকুরের স্বভাবই না-কি এই, রাজতক্তে বসালেও সে জুতা চাটবেই। আর এই জুতা ৪০ হাজার বছর…
August 6, 2024

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

আপনার একটি শেয়ার আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা

X (Twitter)
Post on X
Pinterest
fb-share-icon
Instagram
FbMessenger
Copy link