হীরে-জহরত-ছাপিয়ে-নতুন-দিনের-গয়না-Mughal-Empire-Jewellery-to-modern-jewellery-x-bfa-x-fxyz

হীরে জহরত ছাপিয়ে নতুন দিনের গয়না

ফ্যাশনের স্বভাবই বয়ে চলা, নতুন থেকে আরো নতুনতর হওয়া। একসময়ের রাজরাজড়া ভাব থেকে বেরিয়ে গয়নার দুনিয়াও এখন সর্বসাধারণের আওতায়।

একসময় গয়না বলতেই মনে করা হতো সোনায়-রূপায়, হীরে-জহরতে মোড়ানো শরীর। গল্পকথা থেকে শুরু করে বাস্তব জীবন, উৎসব আমেজে বিশেষত নারীদের ভূষণে স্বর্ণ-রৌপ্যের আভিজাত্যকে যে কখনো অন্য কোনো ‘নিম্ন’ পর্যায়ের উপাদান জায়গা করে নেবে, সেকথা অন্তত আমাদের আগের জমানার কেউ ভাবেনি। কিন্তু অধুনা ফ্যাশনে গয়নার জগতে যেন আক্ষরিক অর্থেই এসে গেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সেইসাথে গয়না -র যে চিরাচরিত বাক্স বলুন বা রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা, তাতেও বদল এসেছে সহজাতভাবেই। কাঠ মাটি বা বিভিন্ন ধরনের মেটাল এলিমেন্ট কিন্তু এখন গয়নার বাক্সের ঠিকানা হয়ে উঠেছে।

কাঠের গয়না

কাঠের গয়নার সবচে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর সময়োপযোগী প্রকৃতি। সাধারণত  কাঠের পুঁতি দিয়ে মালা, চোকার, পায়েল, ব্রেসলেট বা কাঠের পেন্ডেন্ট, দুলের বেস ইত্যাদি তৈরি করা হয়। যেকোনো সময়, যেকোনো উপলক্ষ এবং পোশাকের সাথেই এটি খুব সুন্দর মানিয়ে যায়। আর ওজনে বেশ হালকা হওয়ায় বহনেও কোনো সমস্যা হয় না। যারা ভারি গয়নার জাঁকজমক ভাব ও ওজন দুটোই এড়াতে চান, তাদের জন্য নকশাদার হোক বা ছিমছাম– দুই ধরনের কাঠের গয়নাই খুব মানানসই।

ঐতিহ্যবাহী শাড়ি-সালোয়ার কামিজ বা অধুনা পোশাকে টপ-জিনস, টি-শার্ট সবকিছুর সাথেই নারীদের প্রতিদিনের ব্যবহারে কাঠের গয়না পেয়েছে এক বিশেষ স্থান। কাঠের পেন্ডেন্টের উপর রঙ-তুলি চালিয়ে শিল্পীরা ফুটিয়ে তোলেন বিভিন্ন থিম, ছবি, এমনকি বার্তাও। সবসময় অবশ্য বেশি রঙচঙেও হয় না কাঠের গয়না। অনেকে একে কাঠের মূল রঙেই ব্যবহার করেন, একটা মিনিমালিস্ট ডিজাইন রেখে। উপলক্ষ হোক বা দৈনন্দিন জীবনে অফিস বা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার সময়কার সাধারণ সাজেও এই গয়নায় নিজেকে আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরা যায়। অনলাইন শপের জনপ্রিয়তার সাথে সাথে অনেক উদ্যোক্তা ও শিল্পীই এখন তাদের পছন্দের পণ্য হিসেবে বেছে নিচ্ছেন কাঠের গয়নার সেটকে।

কাঠের গয়না ব্যবহারে বেশ সহজ হলেও এরও অন্যান্য গয়নার মতো যত্ন নেয়া জরুরি। মাঝে মাঝেই গয়না একটু রোদে দিলে ভালো থাকে। এছাড়া রাখার সময় নরম প্লাস্টিকের ব্যাগে মুড়িয়ে রাখতে হবে, তাতে কাঠের উপর থাকা নকশার রঙ বেশিদিন টিকে থাকে। তবে কোনোভাবেই গয়না ভেজানো বা টিস্যু দিয়ে মোড়ানো যাবে না, নয়তো টিস্যুতে চটচটেভাবে রঙ লেগে যেতে পারে। পারফিউম স্প্রে করার সময় কাঠের গয়না ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে।

প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই গয়না তৈরিতে কাঠ ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রারম্ভিক মানুষ হাড়, পাথর এবং কাঠের মতো সহজলভ্য উপকরণ থেকে অলঙ্কার তৈরি করত। বিভিন্ন সংস্কৃতি তার অ্যাক্সেস যোগ্যতা এবং বহুমুখীতার জন্য কাঠ ব্যবহার করেছে

বকুল ফুল, বকুল ফুল, সোনা দিয়া হাত কান বান্ধাইলি!

Clay jewelry

মাটির গয়না

কাঠের মতো মাটিও বহুদিন ধরেই ব্যবহৃত হচ্ছে বাঙালির উৎসবের সাজে। পহেলা বৈশাখ, বসন্তবরণ, স্বাধীনতা বা বিজয়ের আমেজে পালিত অনুষ্ঠানগুলোতে নারীরা মাটির হার, কানের দুল এমনকি চুড়ি-বালাও পরে যান। মাটির রঙে গয়না তো মেলেই, সেইসাথে কাঠের গয়নার মতো এতেও রঙ চড়িয়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে জন্ম দেয়া হয় মনোমুগ্ধকর সব নকশার। মাটির পুঁতি বানিয়ে সেই পুঁতি গেঁথে লম্বা মালাও তৈরি হয়। এসব গয়না বেশিরভাগ সময় মেলাপ্রাঙ্গনের অন্যতম পণ্য হয়ে দাঁড়ায়, অনলাইন দোকান বা দোয়েল চত্বরের মতো শৈল্পিক দ্রব্যের ভাণ্ডার থেকেও মোটামুটি কম দামেই কিনতে পাওয়া যায় সুন্দর সব মাটির গয়না – লাল-পাড় সাদা শাড়ি কিংবা বাসন্তী রঙের সাথে তা দারুণভাবে মানিয়ে যাবে। আজকাল মাটির গয়নার সাম্রাজ্যে নতুন যোগ হয়েছে পলিমার ক্লে দিয়ে তৈরি বিভিন্ন গয়নাও। দেখতে একেবারেই মাটির মতো হলেও প্রাকৃতিক মাটি নয় এটি। বিশেষভাবে কারখানায় তৈরি করা হয় এই কৃত্রিম মাটি। নির্মাণে মাটির চেয়ে বেশি সহজ বলে সমসাময়িক ফ্যাশনে ধীরে ধীরে ভালোই স্থান কেড়ে নিচ্ছে পলিমার ক্লের রঙিন সব ভূষণ।

Metal jewelery

অন্যান্য মেটালের গয়না

সোনা-রূপার বাইরে অন্যান্য কম জনপ্রিয় ধাতুও এখন গয়নার কদর কুড়াচ্ছে। ব্যবহৃত হচ্ছে তামা, লোহা, পেতলের মতো মেটাল। বেশিরভাগ সময় কালো কর্ডে ঝোলানো বিভিন্ন আকৃতি ও থিমের মেটাল পেন্ডেন্ট আধুনিক ফ্যাশনের একটি বড় অংশ। পাশ্চাত্য বা প্রাচ্য, যে ঢঙেই পোশাক পরা হোক না কেন, বুকের কাছে ঝুলতে থাকা একটি তামাটে রঙের পাখি বা পছন্দের হ্যারি পটার থিমের পেঁচা সাজকে করে তুলবে আরো পরিপূর্ণ– আরো স্বতন্ত্র।

VAKURTA-TRADITIONAL-JEWELRY-MAKING-VILLAGE-IN-BANGLADESH-ভাকুর্তার-গয়নাশিল্প-x-bfa-x-fxyz

আরও পড়ুন

এই গ্রামকে এখন সবাই গয়নার গ্রাম নামেই চিনে। তবে ঐ গ্রামের গল্পটা বেশ পুরনো। সেখানকার কারিগররা প্রায় ৩০০ বছর ধরে বংশ পরম্পরায় গয়না তৈরির পেশায় যুক্ত। 

The jewels of the Mughals মুঘলদের রত্ন ভান্ডার x bfa x al mahin x fxyz

আরও পড়ুন

মুঘলদের রত্ন ভান্ডার

এই রত্নগুলি যেমন সাম্রাজ্যের ঐশ্বর্য এবং মর্যাদার প্রতীক ছিল, তেমনি সেগুলি সুরক্ষামূলক তাবিজ হিসেবেও


গয়নায় শস্যের শুকনো বীজ এবং মাধুরী সঞ্চিতা

স্বর্ণ, রূপা, তামা বা পাথর পুঁতির গহনার প্রচলন থাকলেও, চা বা কফির বীজ দিয়ে তৈরি গহনার কথা কি শুনেছেন? এমন ব্যতিক্রমী গয়নাই তৈরি করছেন ডিজাইনার ও মাধুরী সঞ্চিতা।
তার গহনার মুল উপাদান প্রকৃতি থেকে পাওয়া শস্যের শুকনো বীজ।

তার নামের মতই তা তিনি মনের মাধুরী মিশিয়ে গহনা ডিজাইন করেন এবং প্রাকৃতিক রংয়ের ব্যবহার করে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেন। লাল চন্দনবীজ থেকে শুরু করে কৃষ্ণচূড়ার বীজ, প্রায় ৫০ ধরনের বীজ নিয়ে কাজ করছেন এই উদ্যোক্তা।

মাধুরী সঞ্চিতার ‘ঋ’ নামে অনলাইনশপ আছে। রঞ্জনা (লাল চন্দনবীজ), তুলসির বীজ, হরিতকি, পিন্দুক, লাটারা, রুদ্রাক্ষ, তেঁতুলের বীজ, গিলা, করলার বীজ, কুচ, রেড়ির বীজ, কৃষ্ণচূড়ার বীজ, বুনো শিমের বীজ, আলকুশির বীজ, রিঠার বীজ, কুমড়ার বীজ, আটমোরা—দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে এ রকম নানান ধরনের বীজ সংগ্রহ করে কাজ করছে ঋ। 

গয়নায় বীজের সঙ্গে সুতা, কাঠ, মাটি, শঙ্খ, মুক্তা, সোনা, রুপা, তামাও ব্যবহার করে ‘ঋ’

একজন মাধুরী সঞ্চিতা –

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে ২০০৮ সাল থেকে ডিজাইনার হিসেবে কাজ শুরু করেন সঞ্চিতা। এক দশক কাজ করেছেন রঙ, যাত্রা, আড়ং, অরণ্য, ফ্রেন্ডশিপের মতো প্রতিষ্ঠানে। নিজের সৃজনশীল ভাবনাগুলো প্রকাশ করতেই ২০১৮ সালে ‘ঋ’–এর সৃষ্টি।


SHOP ONLINE : RHEE
ছোট্ট একটি বীজ,ভালবাসায় গড়ে ওঠে গয়না। সাথে থাকে ঋতু বদলের ঘ্রাণ আর রঙের খেলা।

ফ্যাশনের স্বভাবই বয়ে চলা

ফ্যাশনের স্বভাবই বয়ে চলা, নতুন থেকে আরো নতুনতর হওয়া। একসময়ের রাজরাজড়া ভাব থেকে বেরিয়ে গয়নার দুনিয়াও এখন সর্বসাধারণের আওতায়। নিজেদের নিত্য ব্যবহার্য সাজেই যোগ হচ্ছে সাশ্রয়ী ও বিশেষ ধরনের, একটু অন্যরকম সব গয়না। সাজ পরিপূর্ণ হচ্ছে নিজের মতো করে।


শত বছরের ঐতিহ্য ভাকুর্তার গয়নাশিল্প



৩০০ বছর ধরে বংশ পরম্পরায় তৈরি করা গয়না কেন বৈশ্বিক হতে পারছে না? ভাকুর্তা কবে বিদেশ যাবে!


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

আপনার একটি শেয়ার আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা

X (Twitter)
Post on X
Pinterest
fb-share-icon
Instagram
FbMessenger
Copy link
URL has been copied successfully!