Festive-dress-in-Bangladesh-বাঙালির-যত-উৎসবে-চাই-যত-নতুন-পোশাক-x-bfa-x-fxyz

বাঙালির উৎসবে চাই যত নতুন পোশাক

একুশে ফেব্রুয়ারীতে সাদা-কালোর প্রাধান্যতা পায়, তেমন স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে লাল-সবুজ। পূজোয় কিংবা বৈশাখে লাল-সাদার আধিক্য জানান দেয় নতুন দিনের ডামাডোল।

উৎসবের আমেজে যে বিষয়টি অনেকটাই জায়গা জুড়ে থাকে, তা হচ্ছে পোশাক। যেকোনো অনুষ্ঠান বা উপলক্ষই হোক না কেন, সবার আগে মাথায় থাকে কে কী পরবে, কার জামার সাথে কারটা ম্যাচ করতে হবে, কোন রঙের সাথে মিলিয়ে কোন অ্যাপারেল হলে কেমন ফুটবে। আর রঙ হলো আমাদের উৎসবগুলোর অন্যতম অনুষঙ্গ। মাঝে মাঝে রঙের মাধ্যমে আমরা একটি নির্দিষ্ট উৎসবকে বুঝিয়ে থাকি। এটাই আমাদের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে চলে আসা দীর্ঘদিনের ট্রেন্ড। এই যেমন একুশে ফেব্রুয়ারীতে সাদা-কালোর প্রাধান্যতা পায়, তেমন স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে লাল-সবুজ। পূজোয় কিংবা বৈশাখে লাল-সাদার আধিক্য জানান দেয় নতুন দিনের ডামাডোল। তাই তো বাঙালির উৎসবে চাই যত নতুন পোশাক। আর এ উৎসবের আলটিমেট গোল হলো পোশাকটি পরার পর আপনাকে কেমন লাগছে। আর কতটা স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে পোশাকটি ক্যারি করছেন।

Featured image by Aarong

falgun utsav

ফাগুনি বসন্তবরণে

“বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আইলো রে, বসন্ত বাতাসে/ সই গো বসন্ত বাতাসে।”


শাহ আব্দুল করিমের এই গানটির মতোই বাতাসে ফুলের গন্ধ, পাখির কলকাকলি আর ডালে ডালে রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া যখন জানান দিয়ে যায়, ‘বসন্ত এসে গেছে’, তখন রঙ লাগে ফ্যাশনের দুনিয়াতেও। রঙের সমারোহ বসে পরনের পোশাকে, মননের ফ্যাশনে। বাসন্তী হলুদ রঙে সেজে ওঠে কুর্তি-পাঞ্জাবি-ফতুয়া-শাড়ি-শার্ট সকলেই। ডিজাইনে বাড়তে থাকে ফুল, লতাপাতার মিশেল। প্রকৃতির সাজের সাথেই পাল্লা দিয়ে চলতে থাকে বাঙালির সাজও। শীতের পরপরই বসন্তের আগমন বলে মাঝে মাঝে শীতের স্পর্শ রয়ে যায় ঋতুরাজের মাঝেও। তাইতো নিত্যকার পোশাকের সঙ্গে যোগ দেয় হালকা শাল। একটুখানি গায়ে জড়িয়ে নেয়া ওমের মাঝেও মেখে থাকে রঙিন বসন্ত।


পহেলা ফাল্গুন বসন্তের শুরু। ফাল্গুনস্য পয়লা দিনে বেলা কিছুটা বাড়তে না বাড়তেই বিভিন্ন জায়গায় ফুলের সমারোহের সাথে মানুষের আনাগোনা শুরু হয়। যে যার প্রিয়জনের সাথে বসন্ত উৎসবে যোগ হয়ে যান, বসন্তের চনমনে সাজ গায়ে মেখে। কেউ কেউ মাথায় পরেন হলুদ গাঁদাফুলের মুকুট। শাড়ি-ব্লাউজে আঁকা থাকে ফুলেল শোভা। এভাবেই ফ্যাশনে মেতে ওঠে বাঙালির বসন্তবরণের প্রহর।

ekushey february

একুশের পদযাত্রায়

‘একুশ’- এই সংখ্যাশব্দটা দেখেই নিশ্চয় বুঝে গেছেন, কথা হচ্ছে একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে। তাতে আবার এক পক্ষ নাক কুঁচকে বলতেই পারেন, শোকও কি তবে ফ্যাশনের মতো একটা বিষয় হলো? সেক্ষেত্রে আরেকটু আগ বাড়িয়ে বলতে হচ্ছে, হ্যাঁ ফ্যাশনে অন্যান্য সকল অনুভূতির মতো শোকেরও বিশেষ একটি জায়গা রয়েছে। আর তাইতো পোশাকের দুনিয়ায় রয়েছে ‘গ্রিফ ক্লথ’ বা ‘মোর্নিং ক্লথ’। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় সংস্কৃতিভেদে পরা হয় কালো কিংবা সাদা রঙ, আর একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে গিয়ে অনেকেই নিজের পোশাকেও সে ছাপ রাখতে চান বলে পরেন সাদাকালো। ফেব্রুয়ারি মাস আসলেই তাই বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজ নিয়ে আসে একুশের থিমে শাড়ি, পাঞ্জাবি। ছোট-বড় সকলের জন্যই তৈরি করা হয় সাদা-কালো পোশাক, যা পরে মানুষজন ভোরবেলা প্রভাতফেরিতে যান। কিন্তু এ তো উৎসবের তালিকা হচ্ছিল, এতে শোকের পোশাক কেন? ভুলে গেলে চলবে না, একুশে ফেব্রুয়ারি পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতিও। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের গৌরব সাথে করে ফ্যাশন জগত তাই বিভিন্ন বাংলা অক্ষরের (ক্ষেত্রবিশেষে অন্য ভাষার হরফ) প্রিন্ট, এমব্রয়ডারি, ব্লক ছাপ ইত্যাদি মাধ্যমে পোশাক নিয়ে আসে। ছোট থেকে বড় সকলেই সাজে একুশের সাজে। বিশ্বরঙ প্রায় সববারই নিয়ে আসে একুশের ভিন্ন সাজ। শীতের শেষ বেলায় একুশের ফ্যাশন থাকে বসন্তকে মাথায় রেখে- আরামদায়ক সুতি কাপড়ে ব্লকের ছাপ বা সুতার কাজ বেশি প্রাধান্য পায় এক্ষেত্রে।

Featured image by Jatra

boishakhi saj

বৈশাখী সাজে

বাঙালির জন্য নববর্ষ এক অন্য রকম আমেজের। সকালের পান্তাভাত, ইলিশ আর রমনা বটমূলের সঙ্গীতায়োজন তো আছেই। সেইসাথে নিজেকে সাজিয়ে তোলার ইচ্ছেটাও কম নয় বৈশাখের আদিতে। প্রতি বছরই বৈশাখ ঘুরেফিরে আসে, আর সেইসাথে ফ্যাশনটাও এক চক্কর লাগায়। নতুনত্ব এলেও বৈশাখী ফ্যাশনে কিছু বিষয় রয়ে যায় একেবারে অপরিবর্তনীয়, চিরাচরিত। বাংলা নববর্ষে লাল-সাদা শাড়ি না পরে বাঙালি নারীর নাকি বর্ষবরণ সম্পন্ন হয় না। আর পুরুষের গায়ে জড়ানো লাগে রঙমিলান্তি পাঞ্জাবি। তাতে থাকে ফুল, নকশি, পাখি-হাতি ইত্যাদি বিভিন্ন মোটিফ। অনেকেই এখন ব্লকপ্রিন্টের বা হ্যান্ডপেইন্টিংয়ের পাঞ্জাবি বেশি পছন্দ করছেন। শাড়ির আঁচলে যেমন করে তুলিতে আঁকা হয় বাঙালি শিল্প-সংস্কৃতির ছবি, তেমনি ফতুয়া বা পাঞ্জাবি গায়ে চড়িয়ে পুরুষেরাও সকলকে জানিয়ে দেন তাদের বাঙালি নিজস্বতার পরিচয়। অনেকে আবার এই সময়টাতে গ্রাম-বাংলার পোশাকের দিকেও ঝোঁকেন; কেউ পরে ফেলেন লুঙ্গি, তো কেউ নিজের করে নেন বিলুপ্তপ্রায় ধুতিকে। যে ঐতিহ্যের চর্চা সারা বছর ধরে খুব একটা করা হয় না, তাই যেন ফিরে আসে ফ্যাশনের ছুতোয়, এইসব বিশেষ দিনে– বাঙালির উৎসবের পোশাকে। এই উপলক্ষগুলো ছাড়াও বিশেষ কিছু অনুষ্ঠানে বাঙালিরা নির্দিষ্ট রঙ ও ঢঙের পোশাক বেছে নিয়ে থাকেন। আর এভাবেই চাঙা থাক উৎসবের ফ্যাশন।


আপনার একটি শেয়ার আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা


Featured image by Le Reve

Eid ul fitar

রমজানের ওই রোজার শেষে

চলে এসেছে রমজান মাস। এক মাস সিয়াম-সাধনার শেষে বহুল আকাঙ্ক্ষিত ঈদের আমেজ। তবে ফ্যাশন দুনিয়ায় কিন্তু অতদিন অপেক্ষা করতে হয় না, এক-দেড়মাস আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় ঈদের প্রস্তুতি। বাড়ির ছোট থেকে বড় সকলে মিলে শপিং করতে যাওয়া, ফেরার সময় বাইরে ইফতারি; এগুলো তো আমাদের সংস্কৃতিরই অংশ হয়ে গেছে। বেশিদিন আগের কথা নয়, লা রিভের অফিশিয়াল ঈদ ফ্যাশন শো হয়ে গেল কয়েকদিন আগে। এবারে লা রিভের থিম হচ্ছে ‘ইন্ডালজেন্স’ বা মগ্নতা। জীবনের ছোট ছোট আনন্দকে উদযাপনের বিষয়টিই তাদের পোশাকে ফুটিয়ে তুলেছে। এছাড়া নতুন সংযোজন হচ্ছে সিল্ক এবং মসলিনের যুগলবন্দী। এবারের ঈদে ভীষণ গরম পড়বে বলে আবহাওয়ার সাথে খাপ খাওয়াতে তারা নিয়ে এসেছে সিল্ক-ভিসকোস ব্লেন্ড, যা তাদের এক্সক্লুসিভ হিসেবে থাকবে ২০২৪ সালের ঈদ ফ্যাশনে। 

পোশাকে স্বাধীনতা

victory day of bangladesh

বিজয় কিংবা স্বাধীনতায়

১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস আর ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস– এই দুটি বিশেষ দিন, এমনকি মাসও সমগ্র জাতির জন্য খুবই তাৎপর্যবহ। আর তাইতো ডিসেম্বর আর মার্চ শুরু হবার সাথে সাথে সাড়া পড়ে যায় দেশের ফ্যাশন জগতেও। ফ্যাশন হাউসগুলো লাল-সবুজের থিমে নিয়ে আসেন হরেক রকম বাহারি পোশাক-আশাক। তাতে থাকে সব বয়স ও মানুষের জন্যই বিশেষভাবে নকশা করা পোশাক। দিনদিন এতে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের মানচিত্র, পতাকা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান-কবিতা, মুক্তিযোদ্ধা মোটিফের নকশা ইত্যাদি অনেক কিছুই। তবে সবকিছুর মধ্যেই পতাকার রঙ তথা লাল-সবুজ থেকেছে অনেকটাই স্থির। ঠিক যেমন লাল-সবুজ মানেই বাংলাদেশ, তেমনি লাল-সবুজ মানেই বিজয়ের ফ্যাশনও। ফ্যাশন সচেতন লোকজনের প্রবণতা থাকে এই সময়টা এলেই বিভিন্নভাবে পোশাকের মাধ্যমে উপলক্ষগুলো উদযাপন করা এবং নিজেদের সন্তানকেও সেইভাবে প্রস্তুত করা। স্কুল-কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা বিজয় কিংবা স্বাধীনতা দিবসের সকালগুলোতে পুষ্পার্পণের সময়টাতে এই কথার সত্যতা বোঝা যায়। ছোট ছোট পায়ের দল হেঁটে চলেছে, গায়ে জড়ানো লাল সবুজ পাঞ্জাবি-কুর্তি-জামা, মাথায় আঁকা পতাকার ট্যাটু। খুব বেশি কিছু না বুঝলেও দেশটাকে তারা রঙ আর পোশাক দিয়েও অনেকটা আপন করতে চাইছে। বড়দের জন্য ফ্যাশন যেন হয়ে উঠেছে দেশপ্রেম প্রদর্শনের আরেকটি মাধ্যম।

PUJA COLLECTION-2017
Featured image by Aarong

PUJA

পূজা-পার্বণ

বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। আর এ পূজা এলেও ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে হিড়িক পড়ে যায় নতুন সব ফ্যাশন ট্রেন্ড নিয়ে আসার। উপলক্ষ মানেই তো নতুন কিছু। অবশ্য পুরনো ধাঁচের নতুন পোশাকের আবেদনও কমে যায় না। বৈশাখের মতো লাল পাড় সাদা শাড়ি বা পূজার থিমে করা পাঞ্জাবিগুলো পূজার ক্লাসিক ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। মণ্ডপে মণ্ডপে বহুধা সাজে ঘোরা মানুষজন পূজার বেশ কিছুদিন আগে থেকেই নিজেদেরকে প্রস্তুত করে রাখেন- কোন দিন কী পরবেন, অষ্টমীর সাজটা যেন নবমীর চেয়ে একটু আলাদা হয় এবং এমন আরো বহু বিষয়েই। শঙ্খ, ওঁ, ত্রিনয়নী দুর্গার মুখচ্ছবি, গণেশ ইত্যাদি বিভিন্ন মোটিফের রমরমা থাকে পূজার ফ্যাশনে।

যেকোনো উৎসবের আনন্দেই পোশাক হয় অন্যতম সঙ্গী। তাই উৎসবের পোশাক বেছে নিতে নিজের পছন্দের সাথে সাথে খেয়াল রাখুন স্বাচ্ছন্দ্যের দিকেও। কখন কেমন আবহাওয়া থাকবে, কোথায় কোথায় যাবেন- এই সব বিষয় মাথায় রেখেই নির্বাচন করুন আপনার উৎসবের পোশাকটি। নয়তো হয়তো পারে হিতে বিপরীত!


আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম লিংক


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Instagram did not return a 200.
Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Your share and comment are an inspiration to us

X (Twitter)
Post on X
Pinterest
fb-share-icon
Instagram
FbMessenger
Copy link
URL has been copied successfully!