ফ্যাশন মানেই শুধু কী পরছেন, কীভাবে সাজছেন– সেটি কিন্তু নয়, বা সেখানেই ফুরিয়ে যায় না সব আয়োজন। ফ্যাশনের পরিধিতে পোশাকের সাথে থাকা অন্যান্য অনুষঙ্গও সম্পৃক্ত থাকে বৈকি। নিজেকে একটু আলাদা করে দশের ভিড়ে তুলে ধরার জন্য এইসব অনুষঙ্গও হতে পারে দারুণ ফ্যাশনেবল। হাতের মুঠোয় ধরে থাকুন বা কাঁধে ঝুলিয়ে বেড়ান– জিনিসপত্র বহন করার ব্যাগটিও কিন্তু ব্যক্তির সাজসজ্জার সাথে মানানসই হওয়া দরকার। বিশেষ করে নারীদের বিভিন্ন পোশাকে পকেট না থাকার দরুণ ব্যাগ বহন করার ট্রেন্ড বেশি দেখা যায়। আর সেইসাথে ব্যাগের বাহারি রকমফেরও। কোন পোশাকের সাথে কেমন ব্যাগ নিলে ভালো দেখায়– হাল জমানার ঝুলিগুলো নিয়েই লেখাটি।
পার্টি পার্স
Party Parts
পার্টিতে কোন ধরনের পোশাক পরছেন, এবং কতটুকু জিনিসপত্র সাথে নিতে হচ্ছে– এই দুটি বিষয় ব্যাগ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্ব পাবে। লম্বা গাউনের সাথে চমৎকার একটি ক্লাচ ব্যাগ ধরে রাখা যায় হাতের মুঠোয়। এসব পার্সের মধ্যে রয়েছে বিড বা পুঁতিওয়ালা জমকালো পার্স, কিংবা আড়ং থেকে কেনা নান্দনিক ধাঁচের ব্যাগ। এই ব্যাগগুলো আবার ওয়েস্টার্ন পোশাকের চাইতে বেশি মানাবে খুঁত বা আড়ঙের ছিমছাম কিন্তু অভিজাত সুতি শাড়িগুলোর সাথে। একটুখানি জরি ও কাঠের বোতামের সাজে পরিপূর্ণ এই পার্সগুলো মানাবে কনট্রাস্ট রঙের পোশাকের সাথে। পোশাকের সাথে এসব পার্স নির্বাচনের রঙের বৈপরীত্য ধরে রাখাটা খুব জরুরি, নয়তো সাজে পূর্ণ মাত্রা আসে না। তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে একই রঙের পার্সও ভালো মানাবে। কোনো কোনো পার্সে কাঁধে ঝোলানোর জন্য চিকন হাতল থাকে, কোনোটা আবার হাতলবিহীন। ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুযায়ী হাতলবিহীন বা হাতলযুক্ত পার্স বাছাই করতে হবে।
টোটে ব্যাগ
𝐓𝐨𝐭𝐞 𝐁𝐚𝐠
বড়সড় থলে বললেই এই ব্যাগটিকে ঠিকভাবে বোঝানো সম্ভব। কর্মজীবী বা শিক্ষার্থীরা যারা সকালবেলাই ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন সারাদিনের জন্য, তাদের সর্বাগ্রে পছন্দ এই ব্যাগটি। টোটে ব্যাগ বর্তমানে ব্যাগ ফ্যাশনে এতটাই জায়গা নিয়ে নিয়েছে যে এতে নিত্যদিনই চলে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। হ্যান্ডপেইন্ট, ব্লক, এম্ব্রয়ডারি, জরি-বুটির কাজ কী নেই টোটে ব্যাগে? তবে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে আজকাল হ্যান্ডপেইন্ট ও এপ্লিকের টোটে ব্যাগগুলোই। কালো ব্যাগের মধ্যে ফুটিয়ে তোলা ভ্যান গগের স্টারি নাইট কিংবা বোহেমিয়ান কোনো সানগ্লাস পরা নারীর ছবি– এক কাঁধে ঝুলিয়ে চড়ে বেড়ানো শহুরে পথের শহুরে নারীর ফ্যাশনের সাথে যেন মিলে যায় খাপে খাপে। পানির বোতল থেকে শুরু করে অবসরে পড়ার গল্পের বই, এমনকি মোটামুটি আকারের ল্যাপটপ-চার্জার সবই এঁটে যায় এই ব্যাগে। প্রয়োজনের সাথে আপোস করতে হয় না ফ্যাশন সেন্সেরও। তাই টোটে ব্যাগ বোধহয় এত বেশি জনপ্রিয়। সিক্স ও ক্লক, হডকের মতো বিভিন্ন অনলাইন শপে মিলবে পছন্দসই টোটে ব্যাগ।
বটুয়া
Botua bag.
এই ব্যাগের নামের মাঝেই কেমন বেঁটে বেঁটে ভাব, তাই না? আকার দেখলেও নামের সার্থকতা টের পাওয়া যায়। জমকালো কোনো পার্টি হোক বা একটুখানি আশপাশ ঘুরে আসার মতো অনুষ্ঠানে, ছোটখাটো জিনিসপাতি পুরে নিয়ে হাতের মুঠোয় হ্যান্ডেল ধরে একখানা বটুয়া নিয়ে বের হয়ে যাওয়া কিন্তু বেশ মজার। হিন্দি সিরিয়ালের জনপ্রিয় চরিত্র কোকিলা মোদি কেমন ব্যাগ ব্যবহার করতেন মনে আছে কি? তার হাতে কিন্তু প্রায়ই দেখা যেত রঙচঙে সব বটুয়া। নিজের রঙিন ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতে সাজের একটি ভালো অনুষঙ্গ হতে পারে ছোট-বড় সব বটুয়ার দল। দেশী দশের অন্যতম একটি ব্র্যান্ড দেশালে আছে ভিন্ন মাত্রার ও ডিজাইনের বিভিন্ন বটুয়া।
কম্বো ব্যাগ
Combo Bag
আজকাল ব্যাগের একটা দারুণ কম্বো ঘুরে বেড়াচ্ছে সকলের অনলাইন শপের নিউজফিডে। এমনকি নিউমার্কেট-গাউসিয়ার দিকটায় ঘুরতে যাওয়া হোক বা ব্র্যান্ডেড শপিংমলগুলোতে, এই কম্বো চোখে না পড়া মুশকিল। এসেছে অনেক ভিন্নতা। কম্বো ব্যাগ মুলত একটা বড় কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ, সাথে একটা ছোট পাউচ। নারীদের কসমেটিকস সামগ্রী গুছিয়ে রাখতে পাউচগুলোর গুরুত্ব নতুন করে বলার কিছু নেই। অনেকের কাছেই আলাদা এক বা একাধিক পাউচ ব্যাগ থাকে, যাতে সাজগোজের বেসিক জিনিসগুলো রাখা হয়। কিন্তু তাতে ব্যাগের সাথে ব্যাগের মিল ঘটাতে একটু ঝক্কি পোহাতে হয়। সেই ঝক্কি-ঝামেলার বিষয়টি একেবারেই দূর করে দিয়েছে এই কম্বো ব্যাগের আগমন। দাম অনুযায়ী এই কম্বোগুলোতে তিন থেকে চারটি ব্যাগও থাকে। এক্ষেত্রে যোগ হয় মোটামুটি ছোট আকারের একটি ব্যাকপ্যাকও। পরিবেশ যেমনই হোক, ব্যাগের ফ্যাশনে যাতে একটুও আঁচ না আসে– সেক্ষেত্রে দারুণ পছন্দ হতে পারে এই কম্বো ব্যাগ।ম্যাটেরিয়াল অনুযায়ী কম্বো ব্যাগগুলো বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। আড়ং এর ডিজাইনে থাকবে ভিন্নতা। এটাই স্বাভাবিক। আড়ং এর শীতল পাটি দিয়ে তৈরী করা এই কম্বো ব্যাগটি যেমন ফ্যাশন স্টেটমেন্ট বহাল রাখছে সাথে দেশীয় ঐতিহ্য ও বহন করছে।
ইক্কত ব্যাগ
Ikkat Textail
প্রথমেই জেনে নিই, ইক্কত মানে কী। এটি মূলত একধরনের ডাইং পদ্ধতি, যাতে কাপড়ের মধ্যে প্যাটার্ন টেক্সটাইল ব্যবহার করা হয়। ইক্কতের মূল বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে প্যাটার্ন নকশা। ইক্কত ব্যাগগুলোতেও এধরনের নকশা থাকে। এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এই ইক্কত নকশার জন্মকথা। সুতি কাপড়ের আবরণে তৈরি ব্যাগগুলোতে বেশিরভাগ সময় উজ্জ্বল রঙ ব্যবহার করা হয়, এবং সাথে থাকে অ্যাডজাস্টেবল শোল্ডার স্ট্র্যাপ বা হাতল। ইক্কতের টেক্সটাইল ফেব্রিক্স না পাওয়া গেলেও ইক্কতের নকশার প্রিন্ট করা ব্যাগ পাওয়া যায় দেশীয় ব্রান্ড গুলোতে। প্রতিটি ব্যাগই হয় রঙিন প্যাটার্নের। একরঙা পোশাকের সাথে এ ধরনের ব্যাগ যোগ করবে ভিন্ন মাত্রার ফ্যাশন। দেখতে সুন্দর হওয়ার পাশাপাশি ইক্কত ব্যাগের আরেকটি বড় সুবিধা হলো, এটি ধুয়ে ব্যবহার করা যায়। তাই বেশি ময়লা হলেই ব্যাগটি ফেলে দিতে হবে না।
ম্যাসেঞ্জার ব্যাগ
Massanger Bag
কাঁধের এক পাশে কিংবা ক্রসবডি হিসেবে ঝুলিয়ে ঘোরাফেরার জন্য ব্যাগগুলো বেশ ভালো পছন্দ হতে পারে। এই ব্যাগগুলোর ইংরেজি পোশাকি নাম হচ্ছে ম্যাসেঞ্জার ব্যাগ। যারা আলসে আরামে বাঁচেন, তাদের জন্য এমন ব্যাগ যেমন মানানসই– তেমনি ভীষণ ব্যস্ততা আর তাড়াহুড়ায় যাদের বেশ এদিক-সেদিক যেতে হয়, তাদের জন্যও জিনিসপত্র বহনের ও ঝুলিয়ে রাখার সুবিধার জন্য এই ব্যাগগুলো ভালো। জিন্স, টি-শার্ট, পাঞ্জাবি, কুর্তি ইত্যাদি ক্যাজুয়াল লুকের সাথে ম্যাসেঞ্জার ব্যাগ সবচেয়ে সুন্দর মানায়। তবে ডিজাইনের ভিন্নতায় ফর্মাল লুকের সাথেও ম্যাসেঞ্জার ব্যাগ ব্যবহার করা যায়।
এই ব্যাগগুলোর একটা নান্দনিক চেহারাও আছে। আর সেই ধরনটাকে আমরা বাঙালিরা অনেকে কিন্তু কবি ব্যাগও বলি। কবি মানেই কাঁধের এক পাশে ঝুলে থাকবে লম্বা হাতলের একটা চৌকোণা ব্যাগ, আর তা থেকে উঁকি মারছে দুয়েকখানা বই। ব্যস! বাঙালি কবিত্বের চেহারাটা এতেই অনেকটা গতি পেয়ে যাবে। দোয়েল চত্বরের দোকানগুলো কিংবা দেশালের আউটলেটগুলো থেকে নান্দনিক ও বেশ বড়সড় কবি কিংবা ম্যাসেঞ্জার ব্যাগ কেনা যাবে।
দিনশেষে জীবন যেখানে যেমন, ব্যাগেরাও সেভাবে খাপ খাইয়ে নেওয়ার মতো হওয়া চাই। আপনার ক্যারি করা ব্যাগটি আপনাকে কতটা খাপে খাপ মানিয়ে তুলতে পারছে আপনার আশপাশ আর এগজিসটিং পরিবেশের সাথে, সেটা খুবই দরকারি একটা ব্যাপার বটে! ছেলেবেলায় পড়া কবিতার মতো মিলিয়ে বলতে পারেন- ব্যাগের আমি ব্যাগের তুমি, ব্যাগ দিয়ে যায় চেনা!