বিবি রাসেল:
একজন বাংলাদেশি
ফ্যাশন আইকন
বিবি রাসেল ১৯৫০ সালে চট্টগ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মো: মোখলেসুর রহমান এবং শামসুন নাহারের পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি তৃতীয়। ছোটবেলায় কামরুন্নেসা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। এরপর ঢাকার আজিমপুরে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে অধ্যয়ন করেন। বিবি ছোটবেলা থেকেই অন্যরকম ছিলেন। তার মা যখন তার জন্য জামা সেলাই করতেন, তখন সেগুলো নিয়ে বিবির নিজের মতো কিছু একটা দাড় করার চেষ্টা থাকত। বাবার কাছে আবদার করে দশ বছর বয়সে পাওয়া সেলাই মেশিন দিয়ে নিজের পছন্দমতো কাপড় সেলাই করতে শুরু করেন। রান্নাঘরের হলুদ দিয়ে রঙ করা বা পুরোনো কাপড় কাটাকাটি করে নতুন কিছু তৈরি করা ছিল তার নেশা। ১৬ বছর বয়সে একদিন তার বাবার আনা একটা ম্যাগাজিনের মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল ডিজাইনার কোকো শ্যানেলের সাথে পরিচয় হয়। তার কাজের সম্পর্কে জানতে পারে। আর সেখান থেকে অনুপ্রানিত হয়ে বিবি বাবাকে জানালেন তার স্বপ্নেন কথা – তিনি হতে চান ফ্যাশন ডিজাইনার।
১৯৭২ সাল, যখন ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের নাম শুনলেই অনেকেই বলত, “ওরে, এ আবার কোন পাগলামি?”, তখন বিবি ব্যাগ গুছিয়ে রওনা দিলেন লন্ডন। বাংলাদেশি মেয়ে, লন্ডন কলেজ অফ ফ্যাশনে। চারপাশের সবাই তখন অবাক। লন্ডন কলেজ অফ ফ্যাশনে ভর্তি হওয়ার ছ’মাস আগেই চলে যান, কিন্তু ইংরেজি পাঠ্যক্রমের সার্টিফিকেট না থাকায় তার ভর্তির সম্ভাবনা ছিল ক্ষীণ। প্রতিদিন কলেজ অফিসে ফোন দিয়ে নিজের আগ্রহ প্রকাশ করেন। অবশেষে মৌখিক পরীক্ষার সুযোগ পান। সেখানে বাংলাদেশের পোশাক ও ফ্যাশনের মৌলিক ধারণা উপস্থাপন করে নজর কাড়েন। তাকে অতিরিক্ত ক্লাসের শর্তে ভর্তি করা হয়।
লন্ডনে পড়ার দিনগুলো ছিল কঠিন। প্রতিদিন ভোর চারটায় উঠে ক্লাসের প্রস্তুতি নিতে হতো। পড়ালেখার পাশাপাশি অর্থনৈতিক চাপ সামলাতে চিঠি বিলির কাজ করতেন। এসব কষ্টের কথা কখনো দেশে বাবা-মাকে জানাননি। তার অধ্যবসায় তাকে শুধু লন্ডন কলেজে স্নাতক ডিগ্রিধারীই করেনি, বরং তার মডেলিং ক্যারিয়ারেও নিয়ে যায়।
১৯৭৫ সালে গ্র্যাজুয়েট হওয়ার পর বিখ্যাত মডেল এজেন্ট ল্যারেইন এশটনের মাধ্যমে মডেলিং শুরু করেন। প্রথম কাজ ছিল ইতালীয় ডিজাইনার ভ্যালেন্তিনোর সাথে, এবং তারপর হারপার’স বাজারের জন্য মডেলিং করেন। ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতা, তামাটে রঙ, লম্বা চুল, আর প্রাচ্যের সংস্কৃতির ছোঁয়া তাকে আলাদা করে তোলে। টয়োটা, জাগুয়ারের মতো ব্র্যান্ডের জন্যও কাজ করেন তিনি। ১৯৭৫ সালে, নিজের তৈরি পোশাকে যখন ক্যাটওয়াকে উঠলেন, দর্শকরা একবাক্যে বলল, “ব্রিলিয়ান্ট!” এরপর তো আর পেছনে তাকানো হয়নি। ভোগ, হারপার’স বাজার, কসমোপলিটন – এমন কোনো ম্যাগাজিন নেই, যেখানে বিবি রাসেলের নাম ওঠেনি। কোকো শ্যানেল, ইভস সেন্ট লরেন্ট থেকে শুরু করে বিএমডব্লিউ পর্যন্ত সবার সঙ্গেই কাজ করলেন তিনি। কাজের প্রতি আগ্রহ এবং নিজেকে নিত্যনতুনভাবে আবিষ্কার করার নেশা তাকে অনন্য করে তোলে। একবার একটি শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপনের জন্য উঁচু জাম্পবোর্ড থেকে লাফ দেওয়ার প্রয়োজন হলে, টানা ১০ দিন অনুশীলন করেন।

ছবি সূত্র: Bibi Russel facebook page
বিবি রাসেলের ঝুলিতে পুরস্কারের অভাব নেই। ইউনেসকো তাকে ‘ডিজাইনার ফর ডেভেলপমেন্ট’ খেতাব দিয়েছে। লন্ডনের এল ম্যাগাজিন তাকে ঘোষণা করেছে ‘উইমেন অব দ্য ইয়ার’। এমনকি তিনি জাতিসংঘের শান্তি পুরস্কারও পেয়েছেন।
তবে সব পুরস্কারের ওপরে তার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো বাংলাদেশি তাঁতিদের আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরা। আজ বিদেশিরা যখন খাদি আর গামছা কিনতে ব্যস্ত, তখন আমরা গর্ব করে বলি, “এই কাজটি বিবি আপার।”




তথ্যসূত্র: roar.media/bangla , উইকিপিডিয়া, jjdin

বিবি রাসেল: এক নারীর স্বপ্ন, একটি দেশের গর্ব
fayze hassan
আমি সারপ্রাইজ পছন্দ করি-ক্যালভিন ক্লেইন
Sami Al Mehedi
একক জুয়েলারী প্রদর্শনী
bdfashion archive
বেগম রোকেয়া পদক ২০১৫
bdfashion archiveবেগম রোকেয়া পদক নারী জাগরণের ক্ষেত্রে বেগম রোকেয়ার অবিস্মরণীয় অবদান স্বীকৃতি উল্লেখ করে বাংলাদেশ সরকারের একটি…
