শৈশব ও শিক্ষা: স্বপ্নবুননের শুরু
১৯৩৫ সালের ১০ ডিসেম্বর ফরিদপুরে জন্ম হলেও আইসিএস বাবা এ এফ মুজিবুর রহমানের চাকরির সুবাদে কলকাতায় কেটেছে তাঁর স্কুলজীবন। পড়েছেন লরেটো স্কুলে। যা ছিল তাঁর সৃজনশীল বিকাশের ভিত্তি। দেশভাগের পর পরিবারসহ বাংলাদেশে ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে অর্থনীতিতে অনার্স এবং মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর শিক্ষাজীবন তাঁকে কারুশিল্পের অর্থনৈতিক দিকগুলো নিয়ে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে। কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায়ের কাজ দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হন এবং বাংলাদেশের কারুশিল্প উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত করার প্রতিজ্ঞা করেন।
অরণ্য ক্র্যাফট’ প্রতিষ্ঠা
রুবি গজনবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবদান প্রাকৃতিক রঙের পুনরুজ্জীবন। ১৯৮২ সালে তিনি এই প্রকল্প শুরু করেন এবং মাত্র ছয়টি রঙ নিয়ে কাজ শুরু করলেও, পরে তা আরও প্রসারিত হয়। প্রাকৃতিক রঙের ব্যবহার নিয়ে তাঁর কাজের সবচেয়ে বড় মাইলফলক ছিল ১৯৯০ সালে ‘অরণ্য ক্র্যাফট’ প্রতিষ্ঠা। এই প্রতিষ্ঠান ভেজিটেবল ডাই ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব পোশাক তৈরির জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। তাঁর প্রচেষ্টায় প্রাকৃতিক রঙের ব্যবহার শুধু টেকসই শিল্পের দিকেই নয়, বরং বাংলাদেশি কারুশিল্পের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। এরই মাঝে ১৯৮৫ সালে পটুয়া কামরুল হাসানসহ সমমনা ব্যক্তিরা বাংলাদেশের কারুশিল্প ও কারুশিল্পীদের উন্নয়নে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ।
কারুশিল্পের উন্নয়ন ও সাংগঠনিক নেতৃত্ব
বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে রুবি গজনবী কারুশিল্পের উন্নয়নে অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে পরিষদের প্রেসিডেন্ট ও নির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর সংগঠকসুলভ দক্ষতার ফলে ২০১৮ সালের জামদানি উৎসবটি স্মরণীয় হয়ে ওঠে। এই উৎসবের মাধ্যমে জামদানিকে সোনারগাঁওয়ে ওয়ার্ল্ড ক্র্যাফট সিটির স্বীকৃতি এনে দেন। ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে জামদানির অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
রুবি গজনবী ছিলেন ওয়ার্ল্ড ক্র্যাফটস কাউন্সিলের সদস্য এবং এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের রঞ্জক কর্মসূচির চেয়ারপারসন। তাঁর আন্তর্জাতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের কারুশিল্পের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তিনি দুটি উল্লেখযোগ্য বই, নকশা এবং রঙিন, রচনা করেন। বইগুলোতে তিনি কারুশিল্পের প্রাচীন ঐতিহ্য, বিশেষত জামদানি নকশার বিষয়ে আলোকপাত করেন। এছাড়া, তিনি জামদানি নকশা নিয়ে বিভিন্ন সম্পাদনা প্রকল্পে কাজ করেছেন।
কারুশিল্পের বাইরেও রুবি গজনবী বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ট্রাস্টি ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সদস্য ছিলেন। তাঁর সামাজিক কর্মকাণ্ড ও নেতৃত্ব সমাজে স্বচ্ছতা ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের বার্তা বহন করেছে।
আপনার মন্তব্য এবং একটি শেয়ার আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা ❤️

বাংলার বাঘ: শেরেবাংলা এ.কে. ফজলুল হক
bdfashion archive
চন্দ্রাবতী: বাংলা সাহিত্যের প্রথম নারী কবি
rajon ahmed
জীবন্ত কিংবদন্তি বাউল শাহ আবদুল করিম: ভাটি বাংলার মাটির মানুষ
bdfashion archive
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন । Zainul Abedin
bdfashion archive
কবিতায় আগুন জ্বালিয়ে রাখা এক কবি: হেলাল হাফিজ
bdfashion archive
হাসন রাজা: আধ্যাত্মিক চেতনার বাউল কবি
bdfashion archiveলোকে বলে বলেরে, ঘর বাড়ি ভালা নাই আমারকি ঘর বানাইমু আমি, শূন্যের-ই মাঝারভালা কইরা ঘর…