The Beauty of hand block print by bfa X fxyz web

The Beauty of hand block print

ব্লক প্রিন্টের মুগ্ধতায় | The Beauty of Block Print

ব্লক প্রিন্টিং এর বাজার নতুন করে পুনরুদ্ধার করার সময় আসছে । বিশ্ব ফ্যাশন বাজারে সাসটেইনেবল ফ্যাশন যে মুভমেন্ট শুরু হয়েছে তার সাথে আমরাও সামিল হতে পারি ব্লক প্রিন্টিং এর মাধ্যমে।

আজ থেকে ৪০০০ হাজার বছর আগে চায়নাতে মুলত কাঠের ব্লক প্রিন্ট এর প্রচলন শুরু হয়, এটি মুলত সিল্ক কাপড়ের উপরে অক্ষর ছাপানোর কাজে ব্যবহার করা হত। যদিও চীনারা তিন রঙের সমন্বয়ে ফুল, লতা, পাতা দিয়ে  মুদ্রণ শুরু করে ।

২২০ শতাব্দীর দিকে  হান সাম্রাজ্যের রাজত্বকালে ব্লক প্রিন্ট এর যাত্রা শুরু হয়। ইতিহাসবিদদের মতে, ইউরোপ থেকে শত শত বছর আগে এশিয়াতে ব্লক প্রিন্টের প্রচলন শুরু হয়।

দশম শতাব্দীর দিকে মিশরে ব্লক প্রিন্টের ব্যবহার দেখা যায়, আরবিতে একে বলা হতো “তারশ”। সে সময় কাপড় মোমে চুবিয়ে নানা রকম নকশা করা হতো। সেই কাপড় দিয়ে মমি সংরক্ষণ করা হতো। পরবর্তীতে  কাপড় ডিজাইন করার জন্য এই পদ্ধতি অনুসরণ করে- জাপান, ভারত, শ্রীলংকা, আফ্রিকা সহ বিভিন্ন দেশে ‘বাটিক’ নামে ছড়িয়ে পরে।

১২ শতাব্দীতে ভারত উপমহাদেশে  ব্লক প্রিন্টিং এর জন্য নিদিষ্ট কিছু সেন্টার  তৈরি  হলো, যেমন- সাউথ,ইস্টার্ন, ওয়েস্টার্ন  উপকূলে ব্লকের টেক্সটাইল  মিলগুলো তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া গুজরাট , রাজস্থান, অন্ধ্রপ্রদেশে ব্লকের জন্য  বিখ্যাত সব টেক্সটাইল মিল রয়েছে ।

১৬ এবং ১৭ শতাব্দীতে ব্লক শিল্পের জনপ্রিয়তা দারুনভাবে বেড়ে গিয়েছিলো। সেই সময়টা ছিল মোগলদের যুগ। মোগল অধ্যুষিত সময়ে সম্রাট শাহজাহান সৃষ্টিশীল এবং সৃজনশীল  কাজকে দারুনভাবে প্রধ্যান্য দিত। এর প্রমান তাজমহলের বিভিন্ন  জায়গায় পাওয়া যায় । তাজমহলের বিভিন্ন অংশে ব্লক প্রিন্টিং এর ছোঁয়া ছিল।

১৭৬০ সালে যখন জাপানে ব্লক প্রিন্টের প্রসার ঘটে তখন তিন রঙের মুদ্রনে সীমিত থাকে নি, বহু রঙের মুদ্রণে এটির ব্যবহার হতে থাকে। সাধারণত বই ছাপার কাজে এর মুদ্রন ব্যবহার হয়েছিলো। জাপানে এই প্রক্রিয়াকে বলা হতো “নিশিকি”।

বর্তমানে ব্লক প্রিন্টিং এ জিওমেট্রিক  ডিজাইন এর ব্যবহার খুব দেখা যায়। মোগল যুগ থেকে এই জিওমেট্রিক ডিজাইনটা শুরু  হয়েছিলো। এছাড়া তখন থেকেই  বিভিন্ন  মোটিফ  যেমন ফুল, পাখি, পশু ইত্যাদি বিভিন্ন  ডিজাইন এর আবির্ভাব  হয় ব্লক প্রিন্টের ভিতর।

১৯ শতকে  ব্লক প্রিন্টিং শিল্পটা সারা বিশ্বে পরিচিতি পেতে শুরু  করে। কেননা ঐ সময় টাতে বৃটিশরা বিভিন্ন  দেশে বানিজ্য  করা শুরু  করে। ভারতে ব্লকের পোশাক নিয়ে তারা সারা বিশ্ব বানিজ্য করে। এবং তা ভারতের সৃষ্টিশীল এবং সৃজনশীল কাজ ধীরে ধীরে বিশ্বে ছড়িয়ে পরতে থাকে।

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের যাত্রা শুরু হয় ষাটের দশকে। তবে এই শিল্পের বিকাশ সত্তরের দশকের শেষ পর্যন্ত রপ্তানি খাত হিসেবে বিকশিত হতে থাকে। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানিমুখী শিল্প। ১৬ কোটি মানুষের বিশাল বাজার যা দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলো কাজ করে চলছে । শুরুর দিকে দেশীয় ফ্যাশনের বিশাল বাজার দখলে ছিল ব্লক প্রিন্টের । সেই দখলদারি পৌছে যায় ব্যাক্তি পর্যায়ে । বাসায় বাসায় নিজ উদ্দ্যগে চলতে থাকে প্রিন্টিং । নিজের করা একটা বিছানার চাদর কিংবা পছন্দমত নকশায় একটা শাড়ি দিয়ে বৈশাখ উৎযাপন যেনো ছড়িয়ে পরে শহর থেকে লোকালয়ে ।

১৬ কোটি মানুষের বিশাল বাজার যা দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলো নিজস্ব শিল্প বিকাশ কাজ করে যাচ্ছে

The Beauty of hand block print process V2 by bfa X fxyz post for web+

এখানে ব্লক প্রিন্টিং এর খুটিনাটি নিয়ে আলোচনা করা হল

ব্লক প্রিন্ট কি

ব্লক প্রিন্ট হলো কাঠের উপর খোদাই করা নকশা, যা দিয়ে কাপড়ের উপর রং দিয়ে প্রিন্ট করা হয়। নকশা করা ব্লক দিয়ে নিজের ইচ্ছা মতন ডিজাইন করে কাপড় ছাপানো যায় তা কোন ধরাবাধা গ্রামার মানতে হয় না । যদি নকশায় রিপিট মার্ক থাকে তবে রিপিট মার্ক ধরে ধরে প্রিন্ট করলে পুরো কাপড় জুড়ে আলাদার একটা নকশা তৈরী হয় সেটাই হলো ব্লক প্রিন্টের আসল সৈান্দর্য । আর মানানসই রঙ নির্বাচন করতে পারলে এক একটা কাপড় খন্ড হয়ে যায় মাস্টারপিছ ।

ব্লক প্রিন্টের নকশার নিজস্ব একটা ভাঙ্গা ভাঙ্গা ধরন আছে যা অন্যান্য প্রিন্টং থেকে আলাদা করে নিজস্বতা উপস্থাপন করতে পারে ।  

কোন জিনিষে ব্লক প্রিন্ট করা যায়?

যে কোন কাপড় খন্ডেই ব্লক প্রিন্ট করা যায় । নির্ভর করছে সেই কাপড় খন্ড দিয়ে পরবর্তিতে কি বাননো হবে । সিল্ক, মাসলিন, সুতি এব কাপড়ে খুব সহজেই টেকসই প্রিন্ট করা যায় যা দিয়ে শাড়ি, ড্রেস, বিছানার চাদর, বালিশের কাপড়, পর্দা তৈরী করা যেতে পারে । খেয়াল রাখতে হবে প্রিন্টং এর সময় পরিমানমত কেমিকাল এবং প্রিন্টিং এর পরে পর্যাপ্ত হিট আয়রন করে রং টা কাপা করতে হবে । তা হলে অনেক দিন পর্যন্ত ভালো থাকবে ।

ব্লকের ধরন

ব্লকের ধরন বলতে প্রিন্টিং এর সময় রঙের ব্যবহার । সাধারণত দুই ধরনের রঙ ব্যবহার করা হয় । একটা রাসায়নিক, আরেকটা ভেজিটেবল বা অরগানিক রঙ । ভেজিটেবল বা অর্গানিক রঙ তৈরী করা সময় সাপেক্ষ এবং ঝামেলার। রাসায়নিক রঙের যাবতীয় জিনিসপত্র খুব সহজে পাওয়া যায় এবং ঝামেলা কম লাগে ।

ব্লক প্রিন্ট করতে কি কি লাগবে

কাপড়ে ব্লক প্রিন্ট করার জন্য রাসায়নিক রঙের ক্ষেত্রে ভাল রাসায়নিক দ্রব্যের দরকার। এতে রঙ টেকসই হবে। এই রাসায়নিকের সঙ্গে পছন্দমত রং গুলিয়ে নিতে হয়। যা যা থাকবে –  এনকে, নিউট্রেক, এপিটন, এ৫৩, বাইন্ডার, গ্লিসারিন ইত্যাদি।

আর ডিজাইনের জন্য কাঠের নকশার ব্লক এবং রঙ লাগবে। আরও দরকার ,  রং গোলানোর ট্রে, কাপড় বিছিয়ে ব্লক করার জন্য টেবিল আর ব্লক করার আগে মূল কাপড়ের নিচে দেওয়ার জন্য ফোম অথবা মোটা কাপড়। ব্লক করার আগে বিষদ জেনে নিলে রঙ পাকা হবে । কারন, একেক কাপড়ে একেক পরিমান রাসায়নিক দ্রব্যের প্রয়োজন হয়।

রঙ তৈরি করা

বাজারে নানা রকম তৈরী করা রঙ পাওয়া যায়। চাইলে নিজেরাও পছন্দ অনুযায়ী রঙ তৈরি নিতে পারেন। সেইজন্য নীল, হলুদ, লাল, বেগুনী ও কালো এই পাঁচ রঙ কিনে নিচের নিয়ামানুযায়ী নতুন রঙ তৈরি করতে হবে।

কোন রঙ মিশালে নতুন কোন রঙ পাওয়া যাবে

হলুদ + লাল + নীল =   মেরুন

কালো + সাদা   = ছাই

নীল + লাল   = বেগুনী

কমলা + নীল  =  চকলেট

লাল + হলুদ বেশি =   বাদামী

লাল + বেগুনী   = লালচে বেগুনী

কালো + সবুজ  =  গাঢ় সবুজ

হলুদ ২ গুণ + লাল ১ গুণ =   কমলা

ব্লক প্রিন্ট করার নিয়ম

১. ব্লক প্রিন্ট করার আগে কাপড় ধুয়ে মাড় ছাড়িয়ে নেয়া জরুরী।

২. তারপর চট বিছিয়ে একটি মোটা পশমী কম্বল বা কাঁথা বিছিয়ে তার উপর সাদা কাপড়টি বিছিয়ে রাখতে হবে। যাতে প্রিন্ট করার সময় নীচের কাপড় থেকে রঙ উঠে না আসে ।

৩. টেবিলের একপাশে রঙের ট্রে রাখতে হবে। ট্রের মাঝে পুরাতন কম্বলের টুকরা / বা চটের টুকড়ো রাখতে হবে।

৪. এখন একটি পাত্রে রঙ এর সব উপাদান ঢেলে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর ব্রাশ দিয়ে ট্রের মাঝের কম্বলে ভালোভাবে ছড়িয়ে নিতে হবে।

৫. ট্রের কম্বলে চাপ দিয়ে কাঠের নকশা করা অংশে রঙ লাগাতে হবে।

৬. এরপর কাঠের ব্লক দিয়ে কাপড়ের উপর চেপে ধরলেই কাপড়ে নকশা হয়ে যাবে।

৭. কাপড়টি বাতাসে মেলে রঙ শুকাতে হবে । তারপর কাপড়টিকে উঠিয়ে ফেলতে হবে।

৮. অবশ্যই প্রিন্ট করা কাপড় খন্ড ভালো ভাবে রোদে শুকাতে কিংবা আয়রন দিয়ে হিট দিয়ে রঙ পাকা করতে হবে ।

ব্লক খোদাই কারিগরদের ভুমিকা

কাঠের টুকরো তে নকশা তুলতে বা খোদাই করতে দরকার  হয় দক্ষ  কারিগর । দক্ষ  কারিগর  ছাড়া  আসলে ব্লকের কোন কাজ ই সম্ভব  নয় । ব্লকের প্রিন্টিং এর জন্য প্রথম যাকে দরকার পরে সে হলো নকশা খোদাই শিল্পী । যে কিনা এক খন্ড কাঠ কে খুব সুন্দর  করে খোদাই করে নকশা তুলবে । খোদাই শিল্পী রা কাঠ টাকে খোদাই করার আগে প্রথম একটা কাগজে নকশা একে নেয় বা কার্বন পেপার দিয়ে সরাসরি কাঠের টুকড়ো তে নকশা এঁকে নেয় । তারপর তা কাঠ খোদাইয়ের টুলস দিয়ে খুব যত্ন সহকারে খোদাই করে নকশা তুলে থাকে । ব্লক প্রিন্টিং এর প্রধান কাজ এটাই । যারা থেকে গেছে আড়ালে । ব্লকের ডিজাইন  এবং ফিনিশিং  যদি ভাল না হয় সেক্ষেত্রে  প্রিন্টিং ও ভাল হয় না।

ব্লকের প্রিন্টিং এর জন্য প্রথম যাকে দরকার পরে সে হলো নকশা খোদাই শিল্পী । যে কিনা এক খন্ড কাঠ কে খুব সুন্দর  করে খোদাই করে নকশা তুলবে ।

ইন্ডিয়ান রা সাধারণ  শিশাম নামে একটা গাছে কাঠ ব্যবহার করে থাকে কিন্তু  বাংলাদেশের সাধারণ  আম গাছের কাঠ ব্যবহার করে থাকে। আম গাছের কাঠের ব্লক তুলনা মুলক দাম কিছু  টা কম পরে। প্রতিটি ব্লক সাধারণ  ১/৩ ইঞ্চি   গভীর হয়ে থাকে। এরপর  খোদাই কর্মী রা ব্লকের ডাইস গুলোকে সরিষা তেলে ডুবিয়ে রাখে । এতে কাঠ গুলো অনেক টাই নরম হয়। এবং পরবর্তী তে রঙ গুলো খুব ভাল ভাবে লেগে থাকে কাঠের গায়ে। ব্লকের কাঠ গুলো অনেক দিন পর্যন্ত ভাল থাকে এবং অনেক দিন ব্যবহার করা যায়।

ব্লকের কাপড়ের যত্ন-আত্তি

এটা স্বীকৃত যে ব্লক প্রিন্টের রঙ কিছু দিন পরে মলিন হয়ে যেতে থাকে । তবে এটাও ঠিক যে যত্নে রাখলে ব্লক প্রিন্টিং পোশাক গুলো বেশ আবেদন তৈরী করে । হালকা রঙের কাপড়ে হালকা প্যাস্টেল কালার গুলো ব্যাবহার করলে রঙের হেরফের হয় না। কিছুটা মুস্কিল হয় যখন ডিপ কালার কাপড়ে পাউডার পেষ্ট ব্যাবহার করে যখন উজ্জল রঙ এর প্রিন্ট করা হয় তখন ।

তবে আলাদা করে হালকা ক্ষারযুক্ত শ্যাস্পু বা সাবান ব্যবহার করলে পোশাকের মলিনতা একটু কম হয় । আর সরারসি সূর্যের আলোতে শুকাতে দিলে তো সব উজ্জল রঙ ফেড হয়ে যায় ।

আলমারিতেও ঝুলিয়ে রাখা যায়। কাপড়ে যাতে পোকা না ধরে সেইজন্য ন্যাপথেলিন ব্যবহার করতে পারেন।

বাজার সম্ভাবনা

বাজার সম্ভবনা ঠিক নয় । ব্লক প্রিন্টিং এর বাজার নতুন করে পুনরুদ্ধার করার সময় আসছে । বিশ্ব ফ্যাশন বাজারে সাসটেইনেবল ফ্যাশন যে মুভমেন্ট শুরু হয়েছে তার সাথে আমরাও সামিল হতে পারি ব্লক প্রিন্টিং এর মাধ্যমে। কম ক্যামিকাল ব্যাবহার করে পছন্দে নকশায় আমরা আমাদের পোশাক তৈরী করতে পারি । ব্লক গুলো বারবার ব্যাবহারের মাধ্যমে রিসোর্স গুলো পুনরায় ব্যাবহার করতে পারি ।

ব্লক প্রিন্ট এর আরও ছবি

ব্লক প্রিন্টের মুগ্ধতায় | THE BEAUTY OF BLOCK PRINT

https://www.pinterest.com/bdfashionarchive/art-and-craft-map-of-bangladesh/

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

আপনার একটি শেয়ার আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা

X (Twitter)
Post on X
Pinterest
fb-share-icon
Instagram
FbMessenger
Open chat
1
Scan the code
Hello
How can i help you?
Skip to content