BARISHAL
division
.
‘ধান-নদী-খাল এই তিনে বরিশাল’—এই প্রবাদ যেন এখনও জীবন্ত হয়ে থাকে কীর্তনখোলা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে থাকা এই শহরের প্রতিটি নিঃশ্বাসে। বরিশালের পুরোনো নাম চন্দ্রদ্বীপ; একসময় যা ‘প্রাচ্যের ভেনিস’ নামে খ্যাত ছিল। বাংলার শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত এই অঞ্চলকে এক সময় ডাকা হতো ‘এগ্রিকালচারাল ম্যানচেস্টার’ নামেও।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত এই বরিশাল বিভাগ, যেখানে নদী যেমন জীবন, তেমনি রূপকথার মতো সৌন্দর্য। দেশের ব্র্যান্ডিং আইকন হিসেবে পরিচিত ‘সাগরকন্যা’ কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতও এই বিভাগের পটুয়াখালী জেলায় অবস্থিত।
প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের মতো এখানকার হস্ত ও কারুশিল্পেও রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য। ঝালকাঠির গনিমিয়ার গামছা আজও সারা দেশে খ্যাত তার স্বকীয়তার জন্য। পটুয়াখালীর মদনপুরের মৃৎশিল্প, ঝালকাঠি ও বরগুনার হোগলশিল্প কিংবা পিরোজপুরের শোলাশিল্প—সব মিলিয়ে বরিশাল বিভাগের প্রতিটি জেলার রয়েছে নিজস্ব সাংস্কৃতিক রঙ, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বয়ে চলেছে গর্বের মতো।
বরিশাল বিভাগের
জেলা সমূহ
–
বরিশাল বিভাগে বর্তমানে মোট ৬ টি জেলা রয়েছে। এই জেলাগুলোর প্রতিটির রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য, যা বরিশাল বিভাগের সামগ্রিক বৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করে। জেলাগুলো হলো:
বরিশাল জেলা
পটুয়াখালী জেলা
ভোলা জেলা
পিরোজপুর জেলা
বরগুনা জেলা
ঝালকাঠি জেলা
বরিশাল বিভাগের
উল্লেখযোগ্য হস্ত ও কারুশিল্প
–
শোলাশিল্প
মাটির সরা চিত্র
নারিকেলের মালা (খোল)
মৃৎ শিল্প
বাঁশ শিল্প
শীতল পাটি
গামছা
হোগল শিল্প
বরিশাল বিভাগের
ঐতিহ্যময় হস্ত ও কারুশিল্প মানচিত্র
–
বরিশাল বিভাগের প্রতিটি জেলার ঐতিহ্যময় হস্ত ও কারুশিল্পকে মানচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই প্রচেষ্টার মূল লক্ষ্য হলো বরিশালের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পের বৈচিত্র্য ও অনন্যতা সবার সামনে তুলে ধরা। মানচিত্রটি তৈরি করতে এবং সঠিক তথ্য নিশ্চিত করতে সবার সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি।
তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ত্রুটি বা অসম্পূর্ণতা থাকলে তা সঠিকভাবে সংশোধনের জন্য আপনাদের মূল্যবান মতামত ও সহযোগিতা কাম্য। মানচিত্রটি আরও সমৃদ্ধ করতে যেকোনো নতুন তথ্য, সংশোধনী বা সংযোজন যুক্ত করা যেতে পারে।
আপনারা যে কোনো ধরনের পরামর্শ, সংশোধনী বা তথ্য প্রদান করলে এই মানচিত্রটি আরও নির্ভুল ও তথ্যবহুল হয়ে উঠবে। এতে কেবলমাত্র মানচিত্রটির পূর্ণতা নিশ্চিত হবে না, আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও আরও স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হবে। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বরিশাল বিভাগের হস্ত ও কারুশিল্পের গৌরবময় ইতিহাস এবং ঐতিহ্য আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
ঐতিহ্যময় হস্ত ও কারুশিল্প পূর্ণাঙ্গ মানচিত্র দেখতে ক্লিক করুন
বরিশাল বিভাগের
হস্ত ও কারুশিল্পের
বিস্তারিত
.
আড়াই হাত থেকে বারো হাত: গামছা -র ফ্যাশন বিবর্তন,
SHOLA CRAFT IN BANGLADESH
শোলাশিল্প | বাংলার অন্যতম লোকজ শিল্প
এক সময়ের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা শোলাকে মেধা, দক্ষতা আর পরিশ্রম দিয়ে শিল্পে পরিণত করছেন শিল্পীরা। যা আজ ঐতিহ্য, সামাজিক বিবর্তন কিংবা লোক সংস্কৃতিতে, লোকশিল্পে অত্যন্ত গুরুদায়িত্ব পালন করে আসছে এই শোলার শিল্পকর্ম। এ শোলার শিল্পকর্ম সনাতন ধর্মাবলম্বীরাই বেশি ব্যবহার করে আসছে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন পূজা-পার্বণে, বিয়ের অনুষ্ঠানে বর-কনের জন্য তৈরি শোলার মুকুট বা টোপর এবং মালার তৈরি করে আসছে ঐতিহ্যগত দিক দিয়ে। বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে শোলার শিল্পকর্ম তৈরি হয়। এ পেশায় নিয়োজিত কারুশিল্পীরা মালাকার বা শোলারী নামে পরিচিত। ধর্মীয় পরিচয়ের দিক থেকে তারা শিবের উপাসক।
Sora Chitro
সরাশিল্প: বাংলার প্রাচীন মৃৎশিল্পের এক ঐতিহ্যবাহী দৃষ্টান্ত
বাংলার সরাশিল্প বাংলার প্রাচীনতম এবং ঐতিহ্যমণ্ডিত এক শিল্পধারা, যা মূলত মৃৎশিল্পের একটি অংশ। এই শিল্প বাংলার মাটির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত, যেমনটি দেখা যায় বাংলার গ্রামীণ জীবন ও সংস্কৃতির সঙ্গে সরার সংযোগে। গ্রামীণ জীবনের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি সরা বাংলার লোকশিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হয়ে উঠেছে।
সরা বলতে আমরা সাধারণত মাটির তৈরি এক ধরনের পাত্র বা ঢাকনাকে বুঝি। মাটির তৈরি গোলাকার, অগভীর এবং প্রসারিত পাত্রকে স্থানীয় ভাষায় সরা বলা হয়। সরা থালার চেয়ে ছোটো এবং শান্কির চেয়ে কম গভীরতা সম্পন্ন। হাঁড়ি বা কলসির খোলা মুখ ঢাকার জন্য সরা ব্যবহার করা হয়। সরার উপরিতলে যে ছবি আঁকা হয় তাকে বলে সরাচিত্র।
সরাচিত্র রীতিগত ভাবে লোকশিল্পের অন্তর্গত। সরাকে অঞ্চলভেদে লক্ষ্মীও বলা হয়ে থাকে। বরিশালের খলিশাকোটা অঞ্চলের কুম্ভকার এবং পাল সম্প্রদায়ের লোকেরা সরা তৈরি করেন।
STORY OF coconut shell
নারিকেলের মালা: বর্জ্য থেকে বর্তমানের গল্প
প্রকৃতি আমাদের কাছে এমন একটি ভাণ্ডার, যেখান থেকে আমরা শুধু জীবনধারণের উপকরণই পাই না, বরং সৃজনশীলতার অফুরন্ত অনুপ্রেরণাও পাই। আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা সেই সাধারণ জিনিসগুলো, যেগুলো আমরা প্রায়ই অবহেলায় ফেলে দিই, সেগুলোই কখনো কখনো নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়। এরই একটি জ্বলন্ত উদাহরণ হলো পরিত্যাক্ত নারিকেলের মালা—যা একসময় বর্জ্য হিসেবে গণ্য হতো, আজ তা কারিগরদের হাতে রূপান্তরিত হচ্ছে পরিবেশবান্ধব ও নান্দনিক হস্তশিল্পে। এই গল্প শুধু শিল্পের নয়, বরং প্রকৃতির প্রতি দায়িত্বশীলতা, সৃজনশীলতা এবং মানুষের জীবনে নতুন আশারও।
নারিকেল আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর জল আমাদের তৃষ্ণা মেটায়, শাঁস আমাদের খাবারে স্বাদ যোগ করে, আর তেল আমাদের রান্নাঘর থেকে শুরু করে ত্বকের যত্নে কাজে লাগে। কিন্তু নারিকেলের মালা? ইংরেজি নাম কোকোনাট শেল (coconut shell)। নারিকেলের বাই প্রোডাক্টস (By products)। অনেক দেশে ইন্ডিয়ান নাট নামেও পরিচিত।
clay art
কাদা মাটি থেকে শিল্প: মৃৎশিল্প বাংলাদেশের এক প্রাচীন ঐতিহ্য
বাংলাদেশের মৃৎশিল্প একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিল্প, যা মাটির তৈরি জিনিসপত্রকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন শিল্প এবং হাজার বছরের বেশি পুরোনো। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মৃৎশিল্প একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, যেখানে কুমার সম্প্রদায় এ শিল্পের প্রধান ধারক হিসেবে পরিচিত।
মৃৎশিল্পের ইতিহাস মূলত গ্রামীণ জীবনের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত, কারণ একসময় এটি গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় পণ্য তৈরির প্রধান উৎস ছিল। তবে আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশ এবং প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম, ও স্টিলের পণ্যের ব্যবহার বাড়ায় মৃৎশিল্পের জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে কমে এসেছে।
ফলে অনেক কুমার পরিবার তাদের পৈতৃক পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যুক্ত হচ্ছেন। তবুও মৃৎশিল্প বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি মূল্যবান অংশ হিসেবে রয়ে গেছে, এবং এর পুনর্জাগরণের সম্ভাবনাও রয়েছে। বাংলাদেশের মৃৎশিল্পের পণ্যসমূহ তার ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক সম্পদকে বহন করে, যা আজও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সমাদৃত।
পটুয়াখালী জেলার মদনপুর ও ঝালকাঠি জেলা ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প সাথে জড়িত। তারা তৈরি করেন হাঁড়ি, কলসি, ঘড়া, ঘাগড়া, সানকি, প্রদীপ, পাঁজাল বা ধুপতি, গ্লাস, বদনা, ঝাঁঝর, চাড়ি, মটকি, পিঠার সাজ, সরা, ঢাকন, বাটি, ফুলের টব, পুতুল, মাটির ব্যাংক, রঙ্গীন ঘোড়া, নানা রঙ্গের পুতুল, নানা ধরণের পাখী, সুন্দর ফুলের টবসহ ফুলগাছ, ফুলদানী, নৌকা ইত্যাদি।
আপনার একটি শেয়ারে জানবে বিশ্ব, আমাদের দেশ কতটা সমৃদ্ধ
bamboo craft in bangladesh
ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্প
নিজস্ব শিল্প-সংস্কৃতির প্রতীক
অঙ্কে তৈলাক্ত বাঁশের ধাঁধা নয়, জীবন অঙ্কের ধাঁধায় বাধা পড়ে আছে শিল্পীদের জীবনযাত্রা। আর বিভিন্ন সংকটে ধীরে ধীরে চাপা পড়ছে এ শিল্পের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারা। যেমন যান্ত্রিক যুগে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের অনুভূতি, তেমনি আমাদের শিল্প ও শিল্পকর্ম। দিন যতই যাচ্ছে সময়ের সাথে সাথে এ পুরনো ঐতিহ্য গুলো আজ বিলুপ্তির পথে। এমনি এক শিল্প, ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্প। যা আমাদের জনজীবন থেকে দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ছোট-বড় অনেক হস্তজাত বা কুটিরশিল্প। এর ভিতর যে কয়েকটি প্রাকৃতিক উপাদান লোকজীবনের সঙ্গে মিশে আছে, বাঁশ-বেত তাদের অন্যতম। সাধারণত গ্রামের লোকেরা এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত এবং বেশির ভাগ তারাই এসব ব্যবহার করে। বাংলাদেশের লোকজীবনের খুব কম দিকই আছে যেখানে বাঁশ ও বেতের তৈরি সামগ্রী ব্যবহারিত হয় না। বাঁশের তৈরি এই শিল্প দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ছাড়াও ক্ষুদ্র ও নৃ-গোষ্ঠীদের জীবনাচরণ ও অনুভূতির প্রতীক।
পটুয়াখালীর বাউফলের দাসপাড়া, বগা, নওমালা, কাছিপাড়া ও মদনপুরা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম বিগত কয়েক দশক ধরে বাঁশ শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত।
SHITAL PATI
শীতল পাটি একই সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প ও লোকশিল্প।
শীতল পাটি প্রাকৃতিক গাছ থেকে তৈরি এক ধরনের মেঝেতে পাতা আসন। মুলত এটি এক ধরণের মাদুর যেখানে আবহমান গ্রাম বাংলার প্রকৃতি, রূপ এবং সৌন্দর্যকে কারুকাজের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়। শীতল পাটি কে নকঁশি পাটিও বলা হয়ে থাকে। নকঁশি পাটি মূলত সিলেটের ঐতিহ্যবাহী একটি শিল্প। সিলেটের বালাগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলা মূলত এ শিল্পের আদি স্থান। যা মুরতা নামে একধরনের ঝোপজাতীয় গাছের বেত দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে। এসব পাটি বুননের কাজে যারা জড়িত থাকেন তাদের মূলত ‘পাটিয়াল’ বা ‘পাটিকর’ নামে আখ্যায়িত করা হয়।
একটা সময় ছিল যখন গ্রামের বাড়িতে অতিথি আসলে বসতে দেয়া হতো এসব পাটিতে। গৃহকর্তার বসার জন্য থাকতো বিশেষ ধরনের পাটি। শীতলপাটির বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে গরমে ঠান্ডা অনুভূত হয়। এটাই হয়তো শীতল পাটির নামের উৎস। প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি হওয়ার কারণে এই পাটি একেবারেই স্বাস্থ্যসম্মত।
ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার হাইলাকাঠি ও সাংগর গ্রাম “দক্ষিণাঞ্চলের পাটি গ্রাম” হিসাবে পরিচিত। এছাড়া রাজাপুর সদর, নলছিটির তিমিরকাঠি, কামদেবপুর প্রভৃতি জায়গায় শীতলপাটি তৈরি হয়। এখন শীতল পাটি দিয়ে বিভিন্ন রকম খেলনা, ম্যাট ও কলমদানিসহ এ রকম অনেক জিনিস তৈরি হচ্ছে।
gamcha-in-fashion
আড়াই হাত থেকে বারো হাত: গামছা -র ফ্যাশন বিবর্তন
গামছার নাম শুনলেই অনেকের মনে আসে তাচ্ছিল্যের ভাব। যেন এ এক অতি সাধারণ বস্তু, যার আলাদা করে কোনো মর্যাদা নেই। কিন্তু গভীরভাবে ভাবলে বোঝা যায়, গামছা কেবল একটি কাপড় নয়; এটি বাঙালির জীবনের অঙ্গ। ঠিক যেমন পরিবারের কোনো আত্মীয়—ভায়রা—সম্পর্কে উপেক্ষিত হয়, তেমনই গামছা, তার বহুমুখী ব্যবহার সত্ত্বেও, আমাদের পোশাক সংস্কৃতিতে তাচ্ছিল্যের একটি জায়গায় থেকে গেছে। অথচ এই গামছার টানা-পোড়েনে বোনা রয়েছে ইতিহাস, ঐতিহ্য, এবং আবেগ।
তবু গামছার প্রতি আমাদের অবহেলা কম নয়। উপহারের তালিকায় এর নাম ওঠে না, আলনায় পড়ে থাকে অনাদরে। শিবরাম চক্রবর্তীর গল্প মনে পড়ে—সাহিত্যিক শিবরাম চক্রবর্তী নাকি একবার গামছা পরে জল তুলছিলেন, এক ভদ্রমহিলা তাচ্ছিল্য করে বললেন, ‘আপনি এত বড় বংশের ছেলে, আপনার বাবা এত বড় লোক, আপনি কিনা একটা গামছা পরে এভাবে জল তুলছেন? . . .
ঝালকাঠির গনিমিয়ার গামছা জেলার তাঁত শিল্পকে ঐতিহ্যের সাথে সারা দেশে তুলে ধরেছে। প্রায় দেড়শ’ বছর ধরে ঝালকাঠিতে গামছা তৈরির কাজ চলছে।
Narrowleaf cattail Plant
হোগলাপাতা: বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও পরিবেশবান্ধব শিল্প
নদীর কিনারে, খালের ধারে, ঝিলের কোলে সবুজের মাঝে লুকিয়ে আছে এক অদ্ভুত জিনিস—হোগলা পাতা। দেখতে অনেটা মেরুদন্ডহীন তলোয়ারের মত। হোগলা নামটা শুনলেই গ্রামবাংলার ছবি চোখে ভেসে ওঠে, তাই না? হোগলা শুধু একটা জলজ গাছ নয়, এ যেন গ্রামের নারীদের হাতে গড়া এক জাদুকাঠি। যা গ্রামবাংলার সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত এবং প্রচীনকাল থেকে চলে আসা একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্পের প্রতীক।
হোগলা পাতা সহজে পচনশীল হওয়ায় পরিবেশ দূষণের কোনো আশঙ্কা নেই। জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই পরিবেশ নিয়ে বিশ্বব্যাপী যখন আলোচনায় তুঙ্গে তখন হোগলা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। অল্প পানিতে বছরে কয়েকবার ফলন দেওয়া এই উদ্ভিদ পরিবেশবান্ধব পণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে সক্ষম।
ঝালকাঠি, বরগুনা জেলার শিল্পিরা হোগলাপাতা দিয়ে বিছানা, দড়ি, ফ্লোরম্যাট, টেবিল, রান্নার সামগ্রী রাখার ঝুড়ি, লন্ড্রি বাসকেট, পেপার, ট্রে, ফলের ঝুড়ি, শোপিসসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রফতানি করছেন ।
Content & Graphic by fayze hassan x BFA
powered by bangladesh fashion archive
any query please contact : 01818424133
আরও পড়ুন -
-
লালনের ছেউড়িয়া থেকে গ্রামবাংলার মেলা—বাংলাদেশের একতারা শিল্প
-
পাটশিল্পের পুনর্জাগরণ: গ্রামীণ কারুশিল্প থেকে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিং
-
বাংলাদেশের পাটশিল্প: ঐতিহ্য, বর্তমান অবস্থা ও সোনালি আঁশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
-
রাজশাহী সিল্ক: প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে আসা ঐতিহ্য
-
কোমর তাঁত: পার্বত্য অঞ্চলের গাঁথা ইতিহাস ও সংস্কৃতি