ektara craft বাংলাদেশের একতারা শিল্প x bfa x fyxz x AI

লালনের ছেউড়িয়া থেকে গ্রামবাংলার মেলা—বাংলাদেশের একতারা শিল্প

মাত্র একটি তার থাকে বলে এই বাদ্যযন্ত্রের নাম হয়েছে ‘একতারা’। হাতের তর্জনী দিয়ে সেই তার টিপে টিপেই বাজানো হয় একতারা। এক হাতে বাঁশের ফালি

একতারা

বাউলিয়ানা, লোকগান আর গ্রামীণ কারুশিল্পের চিরন্তন প্রতীক

রাত গভীর হচ্ছে। ছেউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে আবার গভীর রজনীর সাধন সঙ্গীত শুরু হবে। দূর কোনো বাড়ির আঙিনা থেকে ভেসে আসে একতারার টংটং আওয়াজ, সাথে অস্পষ্ট কয়েকটি মিলনসারি কণ্ঠ। সেই সুরে হয়তো এ দেশের মাটিরই কথা বলা হচ্ছে। একতারা হাতেই বাউল সাধক বলেছিলেন, “একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল”

কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ার লালন শাহের আখড়া কাল্পনিক ছবি AI x bfa x fxyz

কুষ্টিয়ার আধ্যাত্মিকতার মূর্ছনা

এক বসন্তসন্ধ্যায় কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ার লালন শাহের আখড়ার চত্বরে ধোঁয়াটে আলো-আঁধারির মধ্যে বাউলরা গোল হয়ে বসে আছেন। কারো হাতে একতারা, কারো হাতে খঞ্জনি; তন্ময় হয়ে গেয়ে চলেছেন লালনের গান। মাটির গন্ধ মাখা একতারের টংটং সুর যেন নিশুতি গ্রাম্য বাতাসে আধ্যাত্মিকতার মূর্ছনা ছড়িয়ে দিচ্ছে। বাউল সাধকদের সহজ সরল প্রাণের গান এই একতারার সুরে মিশে এক অপার্থিব আবেশ সৃষ্টি করেছে – মাত্র একটি তারের বাজনায় তারা সুরের যেই বৈচিত্র্য ফুটিয়ে তোলেন, তা সত্যিই বিস্ময়কর। যুগের পর যুগ ধরে এভাবেই একতারা হয়ে উঠেছে বাংলার লোকগানের প্রাণ এবং বাউল সাধনার অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাউলরা তাঁদের লম্বা জটা চুল, সাদা-গেরুয়া মোটা কাপড়ের পোশাক আর হাতে একতারা নিয়ে গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুরে বেড়ান – এটাই তাঁদের চেনার সহজ উপায়। একতারা শুধু একটি বাদ্যযন্ত্র নয়, যেন একতার সুরে অন্তরাত্মার সাথে একতার সংযোগ; তাই বাউলের সাধনায় একতারা ধ্রুব সঙ্গী হয়ে আছে শত শত বছর ধরে।

একতারা সঙ্গীতের প্রতীক হয়ে বাংলার মাটিতে ঠিক কতকাল ধরে রয়েছে তার সুনির্দিষ্ট ইতিহাস মেলে না। তবে লোকবিশ্বাস, প্রায় এক হাজার বছর ধরেই বাংলার গ্রাম্য সংস্কৃতিতে এর চল রয়েছে। অনেকে বলেন, উনিশ শতকে ফকির লালন শাহ তাঁর অন্তরে উদয় হওয়া আধ্যাত্মিক বাণীগুলো ভক্তদের শোনানোর সময় কথার মাঝে তাল লয়ে মাধুর্য আনার জন্য নিজেই একতারা সৃষ্টি করেছিলেন। কথাটি ইতিহাস হতে না পারলেও এর থেকে বোঝা যায় বাউল সাধনায় একতারা কতটা গভীরভাবে জড়িত। প্রাচীনকালে একতারা ‘একতন্ত্রী বীণা’ নামে পরিচিত ছিল বলেও জানা যায়।

২০০৫ সালে 
ইউনেস্কো বাউল গানকে 
বিশ্বের মৌখিক এবং দৃশ্যমান ঐতিহ্যসমূহের মাঝে
অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করে।

একতারা লোকবাদ্যযন্ত্রটি কি ভাবে তৈরি করা হয়?

আমাদের নিজস্ব আবহে, নিজস্ব উপকরণ দিয়ে তৈরি এই অকৃত্রিম লোকবাদ্যযন্ত্রটি বাংলার নিজস্ব উদ্ভাবন – এর গঠনেই লুকিয়ে আছে সেই প্রমাণ। একতারা তৈরিতে যে জিনিসগুলো লাগে তার সবই বাংলার মাঠ-ঘাট-গ্রাম থেকে পাওয়া যায়।

একতারা লোকবাদ্যযন্ত্রটি তৈরি করতে শুকনো লাউ বা বেল বা নারকেলের খোলের তৈরি গোল পেটি (যাকে স্থানীয় ভাষায় “বস / বেইজ” বলা হয়), একটি বিশেষ মোটা সরু বাঁশ, পশুর চামড়া, আর একটা মাত্র তার। সাধারণত ৩ ফুট লম্বা মোটা বাঁশের এক প্রান্তে গিঁট রেখে অন্য প্রান্ত দু’ফালি করে কাঁটা হয়, যাকে চিমটা আকৃতি দেওয়া হয়; সেই দুটি ফালি বাঁশ পেটির দুই পাশে শক্ত করে বাঁধা হয়। পেটির সামনের মুখটা চামড়া দিয়ে মুড়ে মজবুত ঝিল্লি বানানো হয়, তারপর তারের এক প্রান্ত চামড়ার নিচে বা ওপরে বিশেষ করে আটকিয়ে তারটি বাঁশের মাথায় লাগানো কাঠের কানায় গিয়ে বাঁধা হয়। এই কাঠের পেগ বা “কান” ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তারটাকে টান বা ঢিলা করে সুর ঠিক করা যায়। মাত্র একটি তার থাকে বলে এই বাদ্যযন্ত্রের নাম হয়েছে ‘একতারা’। হাতের তর্জনী দিয়ে সেই তার টিপে টিপেই বাজানো হয় একতারা। এক হাতে বাঁশের ফালি ধরা আর অন্য হাতের আঙুলের ঝঙ্কারে একতারায় উঠে মাদকীয় সুর, যে সুর বাউলের কানে মুখে লেগে থাকে সর্বক্ষণ।

একতারার বিভিন্ন নাম ও ধরন

বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে একতারার চল থাকলেও স্থানভেদে এর রয়েছে নানা নাম ও ধরন। Sylhet অঞ্চলে বড় লাউয়ের খোল দিয়ে তৈরি একতারাকে আদর করে “লাউ” নামেই ডাকে তারা। এই “লাউ” নিয়ে সেখানে জনপ্রিয় একটি লোকগীতি আছে: “সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী” – যেখানে প্রিয় লাউ বা একতারা বানিয়ে দেওয়ার কথা বলে মরমি ভাব প্রকাশ করা হয়েছে। রংপুরে আবার একতারাকে “বসমতি” নামেও চেনে, কারণ সেখানে বাদ্যযন্ত্রটির গোল পেটি বা বস-এর কদর বেশি। কোথাও একতারার ছোট সংস্করণকে “গোপীযন্ত্র” বলা হয়, যার পেছনে চামড়ার ঢাকনা থাকে এবং তার বাঁধার আলাদা ব্যবস্থা থাকে। ছোট আকারের একতারা যেগুলো ভিক্ষুক-কিংবা বৈরাগীরা বাজান, সেগুলোকে মৃদু শব্দের জন্য “থুনথুনি” বলা হয় স্থানভেদে। নাম যা-ই হোক, একতারা সকল ভৌগোলিক সীমানা পেরিয়ে পুরো বাংলার লোকসংস্কৃতিতে একই সুরের মাধুর্য ছড়িয়েছে।

rickshaw art x Aroj Ali Baul From Netrokona,Durgapur x bfa x fxyz

একজন আরজ আলী বাউল

ছেউড়িয়ার সেই আখড়াবাড়ির উৎসব থেকে শুরু করে ময়মনসিংহ-নেত্রকোনার গ্রামীণ মেলা – বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র লোকগানের আসরে একতারা একটা আবশ্যিক উপস্থিতি। নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বিজয়পুরের সাদামাটির পাহাড়ের কাছে যদি কোনো দিন যান, দেখতে পাবেন সেখানকার পর্যটনকেন্দ্রে ষাটোর্ধ্ব এক বাউল শিল্পী হাতে একতারা আর আরেক হাতে খঞ্জনি নিয়ে গান গেয়ে যাচ্ছেন। চুপচাপ ঘুরতে আসা শত শত লোক তাঁর সুরে মুগ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে, কেউ সার্থক সুরে খুশি হয়ে দশ-পাঁচ টাকা বকশিশও দিয়ে যান। আর এভাবেই দিনশেষে যা পান, তাই দিয়েই চলে শিল্পীর সংসার। এই শিল্পীর নাম আরজ আলী বাউল – যিনি জন্মের পর থেকেই বড় অভাগা, মা-বাবা হারিয়ে নিঃসঙ্গ জীবন শুরু করেছিলেন, কিন্তু ভাবনার বড় জগৎ ছিল এই গান। তাই ভিক্ষা না চেয়ে আল্লাহর দেওয়া সুরেলা কণ্ঠ বিক্রি করেই কাটছে তাঁর জীবন। পর্যটকদের গান শোনানোই এখন তাঁর পেশা।

সম্প্রতি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির বাস্তবায়নে ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউতে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-এ আয়োজিত কনসার্টে গান গেয়ে সবাইকে মাতিয়েছেন তিনি। জীবনে প্রথমবার এত বড় মঞ্চে গান গেয়ে তিনি যেন নিজের স্বপ্ন পূরণ করলেন। এই অসাধারণ যাত্রায় আরজ আলীর পাশে বড় ভূমিকা পালন করেছেন শিল্পী রাকিব হাসান। তিনিই এই গ্রাম্য বাউলকে রাজধানীর মঞ্চে পরিচিত করেছেন। ঢাকায় একসঙ্গে গানের চর্চা, আড্ডা, আর কথার ঝড়ের মধ্য দিয়ে তাদের বন্ধন আরও গভীর হয়েছে। অবশেষে একই মঞ্চে দর্শক মাতানো তাদের এই যাত্রাকে যেন এক কাল্পনিক গল্পের মতো করে তুলেছে। এই কনসার্টে আরজ আলীর উপস্থিতি কেবল সঙ্গীতের কারণেই নয়, তার অনন্য পোশাকের জন্যও আলোচনায় ছিল। তিনি পরেছিলেন রিকশা আর্টের অনুপ্রেরণায় তৈরি একটি রঙিন জ্যাকেট এবং রিকশা পেইন্ট স্টাইলে ডিজাইন করা কালো চশমা। এই “আল্টা ফিউশন” পোশাক ছিল ঐতিহ্য ও আধুনিকতার এক নিখুঁত সমন্বয়। কনসার্টের সমাপ্তিতে আরজ আলীর আবেগ তার কথায় ফুটে উঠল। তিনি বললেন, “সকলের প্রতি আমার সালাম। ভালো থাকবেন। আবার দেখা হবে।” তার কণ্ঠে ছিল কৃতজ্ঞতা ও আনন্দের মিশ্রণ।



লালনের আখড়া

যদি কখন ছেউড়িয়ার লালন-মেলার বাজারে ঢুঁ মারেন, দেখবেন নানা রঙের, নানা আকারের একতারা ঝুলছে দোকানে দোকানে। লালনের আখড়াবাড়ির গেটের বাইরে সব সময়ই এই একতারা, ডুগি, ঢোল, কোমরঘন্টার দোকান বসে থাকে, তবে বিশেষত লালনস্মরণ উৎসবের দুই সময়ে (দোলপূর্ণিমা ও সুফি সাধকের তিরোধান দিবস) এখানে উপচে পড়া ভিড় হয় ক্রেতা-বিক্রেতার। পুরো এলাকা জুড়ে প্রায় ১০০টিরও বেশি দোকান নিয়ে একতারা-কেন্দ্রিক এক আখড়াবাড়ি বাজার গড়ে উঠেছে। আশেপাশের চেউড়িয়া, মণ্ডলপাড়া, জয়নাবাদ গ্রামের শত শত কারিগর মাসব্যাপী সেই মেলার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকেন। বর্তমানে কুমারখালী উপজেলার এই কয়েকটি গ্রামে প্রায় ৫০টি ক্ষুদ্র ওয়ার্কশপে প্রতিদিন চার-পাঁচ হাজার পর্যন্ত লোকবাদ্যযন্ত্র বানানো হয়, যা ২৫০টিরও বেশি পরিবারের জীবিকার উৎস।

একতারা শুধু বাউল সাধকদের গানের সঙ্গী নয়, এটি আসলে এক ধরনের হস্তশিল্পও। বাঁশের দণ্ড, শুকনো লাউয়ের খোল, পশুর চামড়া আর সুতো—এই প্রাকৃতিক উপকরণের মিশ্রণে গড়ে ওঠে প্রতিটি একতারা। গ্রামীণ কারিগরের হাতের ছোঁয়ায় এর কাঠামো যেমন তৈরি হয়, তেমনি শৈল্পিক নকশা, খোদাই কিংবা রঙের স্পর্শে প্রতিটি একতারা হয়ে ওঠে অনন্য শিল্পকর্ম। আগে যেটি ছিল মূলত সংগীতের যন্ত্র, এখন অনেক একতারা তৈরি হচ্ছে ডেকোরেটিভ আইটেম কিংবা স্মারক উপহার হিসেবে। এভাবে একতারা শিল্প কেবল লোকসংগীতের ঐতিহ্যকেই টিকিয়ে রাখছে না, বরং বাংলাদেশের হস্তশিল্প ও ক্রাফটের বৈচিত্র্যের সাথেও নিজস্ব অবস্থান তৈরি করেছে।

আগামীর কানেও পৌঁছাতে চাই

কিন্তু দুঃখের বিষয়, শহুরে আলোঝলমল দুনিয়ায় এই এক তারের সুর আজ কিছুটা চাপা পড়ে যাচ্ছে। যে একতারা হাতে নিয়ে লালন বলে গিয়েছিলেন “একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল”, আজকের প্রজন্মের কাছে সেই একতারা কি দেশের কথা বলতে পারছে? ডিজিটাল বিনোদনের জোয়ারে গ্রামবাংলার জারি-সারি-বাউল গানগুলো হিমশিম খাচ্ছে, আর একতারা ধীরে ধীরে ইলেকট্রিক গিটারের জোরে বেসুরা হয়ে পড়ছে যেন, ফলে একতারা-নির্ভর বাউলিয়া ধারা যেমন হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা, তেমনি হারিয়ে গেলে গ্রামীণ সংস্কৃতির হৃদস্পন্দনটাই থেমে যাবে – এমন উদ্বেগও অনেকের কণ্ঠে শোনা যায়। আসলে জীবিকা ও অর্থের টানাপোড়েনেও নতুন প্রজন্ম এই পেশা নিতে আগ্রহী হয় না; বাউল গান গেয়ে পেট চালানো আজকের দিনে কঠিন কাজ, কারণ দর্শক-শ্রোতাই যে কমে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। তবু আশার কথা হলো, হারিয়ে যাওয়ার আগে এই ঐতিহ্যকে আগলে রাখতে নানা পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। এখন শহরেও ছোটখাটো লোকসংগীতের উৎসব বা বাউল ফেস্ট দেখা যায়, যেখানে তরুণদের ভিড় বাড়ছে। লোকসঙ্গীত উৎসবগুলোতেও বয়স্ক বাউলদের পাশে তরুণ শিল্পীরা একতারা হাতে মঞ্চে উঠছেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক সংগঠন লোকগীতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে সম্মেলন, কর্মশালা করছে। এমনকি প্রযুক্তির মাধ্যমেও গ্রামীণ সুর বাঁচানোর চেষ্টা চলছে – ইউটিউব, ফেসবুকে অনেকেই বাউল গানের চ্যানেল খুলছেন, যাতে শহরের তরুণরা সহজেই এই সুরের সঙ্গে পরিচিত হতে পারে। ঢাকার আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ গ্যালারিতে সম্প্রতি আয়োজিত “হারমনি অফ হিলিং” নামের প্রদর্শনীতে দেশের ষাট রকমের লোকবাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে এই একতারার নতুন ডিজাইন, পুরনো ঐতিহ্য – সবকিছুই তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই, একতারা-দোতারার সুর যেন আগামীর কানেও পৌঁছে, আমাদের শিকড়ের মর্ম যেন ভুলে না যায় তরুণ সমাজ।

প্রদর্শনীতে একতারা

বাংলার লোকসংগীতের ধারক ও বাহক এই বাদ্যযন্ত্রগুলো—একতারা, ঝাঁঝরা, মন্দিরা কিংবা তবলা—কেবল সঙ্গীতচর্চার মাধ্যম নয়, বরং আমাদের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের জীবন্ত প্রতীক। ছবিতে প্রদর্শিত লাল রঙের একতারা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য; এটি দীর্ঘদিন ধরে বাউল ও ফকির সম্প্রদায়ের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। এ ধরনের বাদ্যযন্ত্র যখন সংরক্ষিত হয়ে প্রদর্শনীতে জায়গা পায়, তখন তা শুধু সংগীতের ঐতিহ্যই নয়, বরং গ্রামীণ জীবনের দর্শন, আনন্দ ও বেদনার গল্পও তুলে ধরে।

শক্তির প্রতীক এবং সংস্কৃতির ধারক

এই ছবিটি বাংলাদেশের গণজাগরণ মঞ্চ আন্দোলনের একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তের দলিল। ২০১৩ সালে শাহবাগে চলমান এ আন্দোলনে সাংস্কৃতিক কর্মীরা গান, কবিতা আর বাদ্যযন্ত্র দিয়ে মানুষকে উজ্জীবিত রেখেছিলেন। সেই সময় একতারা হাতে শিল্পীরা লালনের গান কিংবা প্রতিবাদী সুর ছড়িয়ে দিতেন ভিড়ের মধ্যে। ঢোল আর একতারার তালে মঞ্চে ও মঞ্চের বাইরে দাঁড়ানো মানুষের কণ্ঠ মিলতো এক সুরে। এই দৃশ্য প্রমাণ করে, একতারা শুধু একটি বাদ্যযন্ত্র নয়—বাংলাদেশের গণআন্দোলনের ইতিহাসে এটি হয়ে উঠেছিল শক্তির প্রতীক এবং সংস্কৃতির ধারক।

রাত গভীর হচ্ছে। ছেউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে আবার গভীর রজনীর সাধন সঙ্গীত শুরু হবে। দূর কোনো বাড়ির আঙিনা থেকে ভেসে আসে একতারার টংটং আওয়াজ, সাথে অস্পষ্ট কয়েকটি মিলনসারি কণ্ঠ। সেই সুরে হয়তো এ দেশের মাটিরই কথা বলা হচ্ছে। একতারা হাতেই বাউল সাধক বলেছিলেন, “একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল”। একতারা সত্যিই দেশ-কাল-সমাজের কথা বলে, মানুষের মনের কথা বলে। লোকজীবনের আনন্দ-বেদনা-আধ্যাত্মিকতা একতারা বিন্দুতে গাথা এক সুরের মালায় ফুটে ওঠে। এই এক তারের সুর যদি একদিন থেমে যায়, তবে আমাদের একটি প্রজন্ম তাদের শিকড়ের সুর হারাবে। তাই একতারার সুরকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে – বাঁচিয়ে রাখতে হবে বাউলিয়া গান, আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য। সমাজের সহায়তা, আধুনিক উদ্ভাবনের ছোঁয়া এবং তরুণদের আগ্রহ – এই সবকিছুর সমন্বয়ে একতারা শিল্প আরও সমৃদ্ধ হয়ে নতুন যুগেও লোকসঙ্গীতের প্রাণ হিসেবে বেঁচে থাকবে, গ্রামবাংলার আকাশে মিশে থাকবে একতারার সেই চিরন্তন মাধুর্য।

এমন সমাজ কবে গো সৃজন হবে।
যেদিন হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান
জাতি গোত্র নাহি রবে।

মনের মানুষের খোঁজে: লালন ফকিরের জীবন ও ভাবনা

লালন সাঁইজী বিশ্বাস করতেন সব মানুষের মধ্যেই বাস করে এক ‘মনের মানুষ’। আর সেই মনের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায় আত্মসাধনার মাধ্যমে। দেহের ভেতরেই সেই মনের মানুষ বা যাকে তিনি ‘অচিন পাখি’ বলেছেন।


বিস্তারিত লিংকে –




September 6, 2025
jute industry-jute handicraft of Bangladesh-পাটশিল্পের পুনর্জাগরণ-পাট কারুশিল্প- x bfa x fxyz

পাটশিল্পের পুনর্জাগরণ: গ্রামীণ কারুশিল্প থেকে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিং

fayze hassan
পাটশিল্প এখন শুধু অতীতের ঐতিহ্য নয়; বরং ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির নতুন ক্যানভাস—যেখানে ঐতিহ্য, উদ্ভাবন আর টেকসই…
September 6, 2025
August 31, 2025
Jute industry of Bangladesh বাংলাদেশের পাটশিল্প x bfa x fxyz V2

বাংলাদেশের পাটশিল্প: ঐতিহ্য, বর্তমান অবস্থা ও সোনালি আঁশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

bdfashion archive
‘সোনালি আঁশের সোনার দেশ/পাট পণ্যের বাংলাদেশ’ -এ স্লোগানে ২০১৭ সালে দেশে প্রথমবারের মতো পালিত হয়…
August 31, 2025

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Instagram did not return a 200.
Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Your share and comment are an inspiration to us

X (Twitter)
Post on X
Pinterest
fb-share-icon
Instagram
FbMessenger
Copy link
URL has been copied successfully!