ক্যালভিন ক্লেইন ফ্যাশন-অনুরাগী সবারই পছন্দের, প্রিয় একটি নাম। এই ব্র্যান্ডের পেছনে যিনি কারিগর, তার নামেই এর পরিচয়। ক্যালভিন রিচার্ড ক্লেইন। ১৯৪২ সালের ১৯ নভেম্বর আমেরিকার ব্রংক্স, নিউইয়র্কে জন্ম এই বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনারের। ফ্যাশন, নিজের জীবন এবং বিবিধ বিষয় নিয়ে ‘দ্য টকস’ এ প্রকাশিত একটি খোলামেলা আলাপেরই ভাষান্তর পাঠকের জন্য।
01
মিস্টার ক্লেইন, আপনি কি মনে করেন যে ফ্যাশনের সত্যিকারের একটা আবিষ্কার বা নতুনত্ব সৃষ্টি এখনো সম্ভব?
আমার কাছে ফ্যাশন বলতে বোঝায় এমন কিছুকে যার প্রকাশক্ষমতা রয়েছে। এটা এক ধরনের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, আর এটা সব সময়ই নতুন। এর বদলও আসে, তবে এতে আসলে উদ্ভাবন বলতে তেমন কিছু নেই। সব কিছুই কোনো না কোনোভাবে হয়ে গেছে। অনেক ডিজাইনাররাই ভিন্টেজ ক্লোদিং দিয়ে শুরু করেন। তবে গত দুয়েক দশকে ফ্যাশনের দুনিয়া বিশালভাবে বদলে গেছে বলে আমার মনে হয়।
02
কিভাবে?
জারা, এইচ অ্যান্ড এম, ইউনিক্লোতে এমন সব কাপড়চাপড় আছে যা ১৫ বছর আগে আমাদের ছিল না। আর সেগুলো কিন্তু দারুণ সব ডিজাইনে এবং চমৎকার দামে পাওয়া যায়। পয়সা উসুল যাকে বলে আর কী!
03
এটাকে ইতিবাচক বলতে চান?
হ্যা, এটা কিন্তু খুবই পজিটিভ ডেভ্লপমেন্ট বলব আমি! ভালো কাপড় পাচ্ছে, ভালো দামেও পাচ্ছে, আবার পুরো জিনিসটার ভারিক্কিও পাচ্ছে মানুষজন। হয়তো এটা ‘অরিজিনাল ডিজাইন’ না, কিন্তু এগুলোয় কিন্তু প্রয়োজনীয় সবই আছে আর স্টাইলও বেশ ভালোই। আর দোকানপাটে নিত্যনতুন ভালো প্রোডাক্ট পাঠাচ্ছে তারা। আমি বলব এখানেই ইউরোপ কিন্তু আমেরিকাকে টেক্কা দিয়ে দিচ্ছে, কারণ রিটেইল এন্ডে আমরা ধরা খেয়ে যাচ্ছি। আপনি যদি ডিজাইনার লেভেলের কাপড়চোপড় কিনতে সক্ষম হন, তাহলে তো বেশ! তবে আমি মনে করি যে সব ধরনের দামেই আপনার ভালো পোশাক কিনতে পারাটা জরুরি। এই পরিবর্তনটা বিশাল আর আমি একে অবশ্যই ইতিবাচক বলব।
04
জারা, এইচঅ্যান্ডএম-এর মতো বেশ কিছু স্টোর নিয়ে আমরা এক ধরনের অভিযোগ শুনি যে তারা যে কোনো কিছু জনপ্রিয় হলেই ঝটপট সেগুলো কপি করে ফেলে। আপনার ক্যারিয়ারেও আপনি এটা ফেস করেছেন, আপনার কাজ প্রচুর কপি করা হয়েছে। আপনি এর পরোয়া করেন?
আমার কাছে তো এটা সম্মানের মতো ব্যাপার, বাড়তি পাওয়া। আমি অনেক ফটোগ্রাফারের সাথে কাজ করেছি যারা অ্যাড ক্যাম্পেইনের কাজ করেন। এমন হতে পারে যে একজন ফটোগ্রাফার আরেকজনের কাজে অনুপ্রাণিত হলেন, সেভাবে কাজ করলেন। এসব তো হতেই পারে। জীবনের সব রাস্তাতেই কমবেশি এমন ঘটে। কিছু কাপড়ের দাম কম হবে আবার কিছু হবে বেশি, এসব জীবনেরই অংশ। আমরা এমন একটা দুনিয়ায় এখন বাস করছি যেখানে মানিয়ে নেওয়াটা সবচে’ দরকারি। তবে হ্যা, আসল ডিজাইনের কাপড় আর কপি জিনিস কিন্তু এক না। কখনোই না।
05
একটা সময় ক্যালভিন ক্লেইনের সব ছিল আপনার। ২০০৩ এ সব বদলে গেল। এই সবকিছু ছেড়ে দেওয়া, প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দেওয়া কঠিন ছিল না?
আমার মনে আছে, আমার প্রথম সুগন্ধীটির (পারফিউম) নাম দিয়েছিলাম ’অবসেশন কারণ আমার নিজের কাজ নিয়ে আমার সেরকম অবসেশনটা ছিল, পারফেশন নিয়ে আমার আইডিয়া কেমন তার একটা বোঝাপড়া ছিল ওই নামে। ব্যবসার প্রতিটা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে আমি কাজ করতাম, মাথা খাটাতাম যাতে করে সবাইকে সেরা জিনিসটা অফার করতে পারি। ব্যবসা যখন বেশ এগিয়ে গেছে দিনকে দিন, আমি নিজেকে জিজ্ঞাসা করেছি, ‘আমি কি বাকিজীবন এটাই করে যেতে চাই?’ আমি জানতাম, একেবারেই না। প্রোডাক্ট তৈরির জন্য বা সে কাজে আমার আসলে যা করার ছিল তার সবটাই আমার করা হয়ে গেছে। আর একই কাজ বার বার করতে থাকা তো খুব একটা মজার কাজ না।
06
তারপর কি আপনি এসবের প্রভাব এড়াতে ব্র্যান্ডটা থেকে একটা দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন? কম দিনের তো কথা না! মাথাটাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার মতো ব্যাপার, এতো বছর ধরে একটা জিনিস চালিয়ে গেছেন…
তা পরিবর্তনটা যে বিশাল ছিল এটা তো বলতেই হবে। আমি এর আগে মুভ অন করার চিন্তা করেছি কয়েক বছর। এমন নাটকীয় একটা পরিবর্তনের জন্য আপনি আসলে কখনোই পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে উঠতে পারবেন না। তবে আমার কাজগুলো দিনদিন বেশি স্ট্রেসফুল আর পানসে হয়ে যাচ্ছিল। আমার কাজ যদি হতো একটা ডিজাইন রুমে কাজ করা আর কালেকশন নিয়ে মাতামাতি করা, সেটা আজীবন করতেও আমার কোনো চাপ ছিল ন। কিন্তু একটা ডিজাইন স্টুডিওতে রং আর কাপড় নিয়ে কাজ করার চেয়ে একটা সাকসেসফুল বিজনেস চালিয়ে যাওয়া, ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে একটা ব্র্যান্ডকে দুনিয়াজোড়া নামযশের পরিচয় মিলিয়ে দেওয়াটা তো আরও কঠিন একটা কাজ। একবার ব্যবসা ছেড়েটেড়ে দেওয়ার পর আমি বুঝতে পারলাম যে আমার ব্যাপারগুলোকে ছেড়ে দিতে হবে। এর পরে আর কেউ আসলে কী করবে তাতে আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, তবে এটা বুঝতাম যে আমি যা করেছি সেগুলো আর কেউ করতে যাচ্ছে না। কেউ কিন্তু করেওনি!
Calvin Richard Klein
এক নজরে
ক্যালভিন ক্লাইন
পুরো নাম: ক্যালভিন রিচার্ড ক্লাইন
ব্রান্ড নাম: ক্যালভিন ক্লাইন
জন্ম: নভেম্বর ১৯, ১৯৪২
জন্মস্থান: নিউ ইয়র্ক শহরের দ্য ব্রংক্স
লিও ক্লাইনের পুত্র হিসেবে একটি ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রথম স্ত্রী: জেইন সেন্টার
দ্বীতিয় স্ত্রী: কেলি রেক্টর
সমকামী প্রেম: যৌন চলচ্চিত্র তারকা নিকোলাস গ্রুবারের
07
এরপরে কি আপনার কোম্পানির কাজটাজ কখনো ফলো করেছেন? যাই হোক এটি তো এখনো আপনার নামটাই বহন করে…
খুব একটা মনোযোগ দিইনি ইচ্ছে করেই। কোম্পানি কী কী ড্রেস বানাচ্ছে সেটা দেখার জন্য আমি দোকানপাটে যাইনি, সত্যি বলতে কে আসলে কী বানাচ্ছে আমি সেটাও দেখতে যাইনি। আর সত্যি বলতে ব্যাপারটা তেমন কঠিনও ছিল না, এই যে ব্যাপারগুলো ’লেট গো’ করা। পুরো ব্যাপারটা ছিল এক ধরনের অ্যাডজাস্টমেন্টের মতো। মাঝেমধ্যে এই প্রসেসটা খুবই ভালো লেগেছে, আবার মাঝেমধ্যে যাদের সাথে কাজটাজ করতাম তাদের মিস করতাম।
08
আপনি চলে যাওয়ার পর ফ্রান্সিসকো কস্তা এবং ইতালো জুকেল্লি আপনার কাজ শুরু করেন। তারাও কাজ ছেড়েছেন বেশিদিন হয়নি। ক্যালভিন ক্লেইনের এই পরম্পরা কে বয়ে নিয়ে চলবেন তা কি ভেবেছেন, বা এটা নিয়ে আপনার অনুভূতির জায়গাটা কেমন?
অবশেষে এরকম একটা আঁচ দেওয়া হয়েছে যে তাদের একজন ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর প্রয়োজন যে কী না গ্লোবালি পণ্যগুলোর পরিস্থিতি দেখভাল করবে। আমার মতে এটা খুবই পজিটিভ একটা সিদ্ধান্ত। আপনার আলাদা প্রাইজ পয়েন্ট থাকতে পারে, ভিন্ন ভিন্ন প্রোডাক্ট লাইনও থাকতে পারে, কিন্তু তারপরেও কিন্তু এখানে একটা ইউনিক দৃষ্টিকোণ থাকা জরুরি। আর আমার মনে হয় সেটা করা সম্ভব। আমি নিজে সেটা করেছি। আর সেটা এখনও সম্ভব। এ জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হবে, এফোর্ট দিতে হবে, প্রত্যেকটা ডিটেইল নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে, প্রত্যেকটা জিনিস যতটা সম্ভব সেরা বানানোর চেষ্টা করতে হবে। আর সব সময় সবকিছু আপনার নাগালে থাকবে না, তখনও এগিয়ে যাওয়ার আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে হবে। রাস্তায় চলতে গেলে খানাখন্দে টক্কর তো খাবেনই কমবেশি। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে একটা গ্লোবাল বিজনেস গড়ে তুলতে কিন্তু অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।
আমি সব সময় সামনের দিকের কথা ভাবার চেষ্টা করি, এক্সপেরিমেন্টাল কাজ করতে চাই, এমনকি এরকম কিছুও করে দেখতে চাই যা হয়তো কাজ করবে না, তাও একটু দেখি আর কী!
ক্যালভিন ক্লেইন
09
রালফ লোরেন, ডনা কারান, আর আপনি- এই তিনজন মিলে কিন্তু এমন রকম গ্লোবাল ব্র্যান্ড তৈরি করতে পেরেছেন যা আসলে পুরোটাই অল-আমেরিকান স্টাইল সিগনেচার। কেবল ধারেকাছে মাইকেল কর্স ছাড়া কিন্তু গত দুই দশকে আর কোনো ডিজাইনার এই ব্যাপারটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। আপনি ব্যাপারটাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
আমার মেয়ে তো এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রির মানুষ। সে ঠাট্টা করে বলে যে এটা আমরা পেরেছি স্রেফ আমরা তিনজনই জিউয়িশ বলে, হাহা! আর এই ব্যাপারটা নাকি আমাদের ডিএনএ’র মধ্যেই আছে!মডেলদের ক্ষেত্রে যদি আপনি হিসেব করেন, তখন এমন দেখবেন যে খুব খরার মতো সময় যাচ্ছে, কিচ্ছুটি হচ্ছে না, কেউ উৎসাহ দিচ্ছে না, তারপর হঠাৎ করে এমন কিছু নতুন ফেইস আসছে যা একেবারে বাজার মাত করে দেয়। ডিজাইনারদের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা এমনই বলে আমার মনে হয়। আমার মনে হচ্ছে এটা করা সম্ভব- কিন্তু কেউ করছে না। সময়ের সাথে সাথে আমার দেখতে হবে যে ব্যাপারটা কোন দিকে গড়ায়।
10
সামান্য সময়ের জন্য মনে হয়েছিল অ্যালেকজান্ডার ওয়াংয়ের সে রকম একটা সম্ভাবনা থাকলেও থাকতে পারে। তবে শেষমেশ যে হয়নি, সেটার কারণ আপনার কী মনে হয়? টাইমিং?
আমি কিন্তু আসলে তার সক্ষমতা নিয়ে জানি না। ইন ফ্যাক্ট কে আসলে কী করতে পারে তা নিয়ে আমার আসলে ধারণা নেই। তবে সময় কখনোই ভুল নয় বলে আমি মনে করি। আর এটাই ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির দুর্দান্ত একটা ব্যাপার, সব সময়ই নিজেকে প্রকাশ করার পুরোপুরি সুযোগ এখানে থাকে, বড় হওয়ার সুযোগ থাকে, ব্যবসার সুযোগ থাকে, নতুন কিছু করার স্কোপ থাকে। এটা কখনোই সহজ কিছু না, তবে করা সম্ভব।
আপনার একটি শেয়ার আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা
11
একটা ফ্যাশন হাউজের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টরের কি এখনো নিজে একজন ডিজাইনার হওয়া বাধ্যতামূলক, নাকি হাল জমানার চাহিদায় মোটামুটি ঠিকঠাক নির্দেশনা দেওয়া আর ব্র্যান্ডটাকে যথাযথভাবে উপস্থাপনা করাই যথেষ্ট?
একটা ফ্যাশন হাউজের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর নিজে ডিজাইনের কাজটায় একেবারেই নেই, এটা আমি ভাবতেই পারি না। একটা ডিজাইন স্টুডিওর প্রতিটা কাজের সাথে তো আপনার সম্পৃক্ত থাকতে হয়। এই রকম প্রোডাক্ট ক্যাটাগরির দেখভালের ডিজাইনার নন, এমন একজন মানুষের চিন্তা করাটা খুবই মুশকিল হয়ে যায়। হ্যা, এ ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ব্যক্তিটি ডিজাইনার হলেই ভালো হবে বলে আমি মনে করি। তবে তার অবশ্যই আধুনিকভাবে ভাবতে হবে আর অজস্র প্রোডাক্টের দায়দায়িত্ব নেওয়া, উন্নয়ন করা এবং সর্বোপরি দেখভাল করার নেতৃত্বগুণ থাকতে হবে।
12
কিন্তু কোনো একটা স্ট্রাগলিং ব্র্যান্ডের জন্য কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় এইট ডিজিট ফলোয়ারওয়ালা কেউ হলে ব্যাপারটা বেশ প্রলুব্ধ করার মতো…
আমি আসলেই জানি না যে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপারটা ব্যবসার ক্ষেত্রে সত্যিকারার্থে কতটুকু বর্তায়। আমি যখন সুগন্ধীর ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ শুরু করলাম, তখন বিজনেসে কোনো ডিজাইনারের যদি একটা ফ্রেগরেন্স থাকত, সেটাই ছিল বিশাল ব্যাপার। কিন্তু আমরা এমন একটা ফ্রেগরেন্স বিজনেস করতে পেরেছি যেটার ব্যবসা ছিল বিলিয়ন ডলারের মতো! ওই সময়টাতেও সেলিব্রিটিরা ছিলেন, ফিল্মস্টাররা বা মিউজিশিয়ানরা ছিলেন যাদের ব্র্যান্ডেড ফ্রেগরেন্স ছিল বা থাকতে পারতো, কিন্তু সেগুলো শেষতক অতদূর গড়ায়নি। হয়তো ভালো কয়েক বছর, এইটুকুই, কিন্তু লম্বা দিকে যেতে পারেনি। স্রেফ তাদের অনেক ফলোয়ার রয়েছে, তার মানেই কিন্তু এটা না যে এতেই সব হয়ে যাবে! অনেক মানুষ রয়েছে যারা একটা ৩ হাজার ডলার দামের ব্যাগ এফোর্ড করতে পারে আর ভাবতে পারে যে তারা আসলে কিম কারডাশিয়ান হয়ে গিয়েছে! তবে এটাই কিন্তু সবটা না। স্রেফ আপনার হাতে অনেক টাকাকড়ি আছে আর আপনি দামী কাপড়চোপড় কিনতে পারেন, তার মানেই কিন্তু এটা না যে আপনার টেস্টটাও খাসা।
11
আপনার কনজিউমারদের ক্ষেত্রে টেস্টের ব্যাপারটা কি খুব জরুরি ছিল?
আমার এটা ভালো লাগত যে আমি যেটাই বানাই না কেন কেউ সেটা কিনবে, পরবে। সত্যি বলতে এর কোনো গ্যারান্টি কিন্তু নেই। আমরা অনেক সময়ই রিস্ক নিয়েছি, আর একবার যখন কাপড়টা বানানো শেষ, তারপর যে কেনার কিনবে। সবাই কিন্তু দেখতে শুনতে একজন রানওয়ে মডেলের মতো হবে না। আমি শুধু সত্যিকারের নারীদের জন্য পোশাক বানাতে চেয়েছি। ফ্যাশন ম্যাগাজিন নিয়ে আমি খুব বাড়তি কিছু ভাবিনি। এডিটোরিয়াল দিয়ে আমার ব্র্যান্ডকে জনপ্রিয় করার জন্যও ছুটিনি। আমি আসল কাজটা ঠিকঠাক করতে চেয়েছি। আর এ জন্যই আমি বিজ্ঞাপনের পেছনে এতটা ছুটেছি। ফ্যাশন ম্যাগাজিনের চেয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েই আমি আরও ভালোভাবে কমিউনিকেট করার রাস্তাটা বেছে নিয়েছিলাম।
12
আজকাল এমনটা মনে হয় যে অনেক ব্র্যান্ডই বিজ্ঞাপন করে শুধু এডিটোরিয়ালে নিজেদের জায়গা করে নেওয়ার জন্য? আপনি সত্যিই ভিন্ন কারণে বিজ্ঞাপন করতেন?
আমি আসলেই কোনো পরোয়া করতাম না (হাসতে হাসতে)! বরং আমি এমনটাই শুনেছি যে ছবি, বা যে ইমেজগুলো আমরা তৈরি করে চলেছি, ওগুলো দিয়ে আমরা ফ্যাশন ম্যাগাজিনের এডিটোরিয়ালের চেয়েও বেশি মনোযোগ কাড়তে পারব। অজস্র ম্যাগাজিন আর খবরের কাগজ রয়েছে, সেগুলো নিজেদের হাজারটা সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। মানুষ ত্যক্ত হয়ে যাচ্ছে। মানুষজন জিনিসপত্র দ্রুত দেখতে চায়, অনলাইনে দেখতে চায়। আর এ জন্যই সোশ্যাল মিডিয়া এখন এতটা গুরুত্বপূর্ণ…
আমার জন্য কোনটা ঠিকঠাক তা আমি সব সময়ই অনুভব করেছি এবং আমার পুরো ক্যারিয়ার ধরেই সেটা অর্জনের চেষ্টা করে গেছি। আমি এভাবেই বাঁচি, এভাবেই কাজ করি। আমি যা কিছু করেছি, আমার যা কিছু রয়েছে, সবটাই আমার পছন্দনীয়তারই একটা বিস্তৃত অংশ।
ক্যালভিন ক্লেইন
13
আপনি এখনো ব্যবসায় থাকলে প্রিন্ট মিডিয়াম বেছে নিতেন নাকি অনলাইনের দিকে যেতেন?
আমি সব সময় সামনের দিকের কথা ভাবার চেষ্টা করি, এক্সপেরিমেন্টাল কাজ করতে চাই, এমনকি এরকম কিছুও করে দেখতে চাই যা হয়তো কাজ করবে না, তাও একটু দেখি আর কী! আমার মনে হয় আমি এখন কাজ করলে সেটাই করে যেতাম যা আগেও করতাম। আমি সেভাবেই মডেল বেছে নিতাম যাদেরকে আমি পারটিকুলারলি আমার তৈরি করা কোনো জিনিসকে তুলে ধরবার জন্য যথাযথ মনে করতাম। আমি সারপ্রাইজ পছন্দ করি, নতুন রাস্তা পছন্দ করি! এখন অনলাইন এসে পড়েছে, নতুন কিছু এসেছে। আপনার এটা ঠিক করতে হবে যে আপনি কোথায় হাজির হয়ে উঠতে চান, আপনার অডিয়েন্স কারা। আর সেই হিসেবে টেলিভিশন বা প্রিন্ট মিডিয়ার থেকে অনলাইনের খুব একটা তফাত আমার কাছে নেই। তবে অবশ্যই অনলাইনের মেসেজের ব্যাপারটা জরুরি।
14
ক্যালভিন ক্লেইনের মেসেজটা এমন যেন সেটা সব সময়ই আপনার জানা ছিল…
আমি মিডিয়া বায়িংয়ের কাজটা সব সময় নিজেই করতাম কারণ আমার জানা ছিল আমার দৌড়টা কার বা কাদের সাথে। আমার এক ধরনের অনুভূতি সব সময় কাজ করতো যে তারা টিভিতে কোন প্রোগ্রামটা দেখতে পারেন বা কোন ম্যাগাজিনটা পড়তে পারেন। আমি এটা বলছি না যে আমি সবই করতাম, তবে সব কিছুর সাথেই কোনো না কোনোভাবে থাকতাম। ক্যাম্পেইনের সময় আমি ফটোগ্রাফারদের সাথে কাজ করতাম, স্টাইলিস্টদের সাথে কাজ করতাম। আমি নিজেরই একটা ক্রিয়েটিভ এজেন্সি চালাতাম যেটা এখন একটা মাঝারি গোছের বিজ্ঞাপনী সংস্থা হয়ে গেছে। আমার জন্য কোনটা ঠিকঠাক তা আমি সব সময়ই অনুভব করেছি এবং আমার পুরো ক্যারিয়ার ধরেই সেটা অর্জনের চেষ্টা করে গেছি। আমি এভাবেই বাঁচি, এভাবেই কাজ করি। আমি যা কিছু করেছি, আমার যা কিছু রয়েছে, সবটাই আমার পছন্দনীয়তারই একটা বিস্তৃত অংশ।
আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম লিংক