Nakshi Shika নকশি শিকা x bfa x fxyz

নকশি শিকা: হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের গল্প

রান্নাঘরের আড়া থেকে ঝুলিয়ে রাখা হতো এই শিকা, যাতে খাবারদাবার আর সংসারের ছোটখাটো জিনিস সযত্নে সংরক্ষণ করা যেত।

নকশি শিকার ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং বাঙালি সংস্কৃতির এক অনন্য অংশ।

Nakshi Shika
.

বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার মানুষের অন্তর্লীন ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির সাক্ষী এক ছোট্ট বস্তু— শিকা। পাটের তৈরি এই শিল্পকর্ম, এক সময় ছিল গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে এক নিত্যব্যবহৃত উপাদান। রান্নাঘরের আড়া থেকে ঝুলিয়ে রাখা হতো এই শিকা, যাতে খাবারদাবার আর সংসারের ছোটখাটো জিনিস সযত্নে সংরক্ষণ করা যেত। তবে শিকার বিশেষত্ব শুধু এর কার্যকারিতা নয়, বরং এর অলংকরণ, কারুকার্য আর বহুমাত্রিকতার মধ্যেই আমাদের কাছে পরিচত হয় নকশি শিকা নামে। এটি আমাদের গ্রামীণ নারীদের সৃজনশীলতা এবং কারুশিল্পের প্রতি ভালোবাসার এক প্রতীক।

রাজশাহী, পাটের প্রধান উৎপাদনকেন্দ্র হিসেবে রাজশাহী অঞ্চলের কারিগররা নকশি শিকার ক্ষেত্রে বিখ্যাত। এখানকার শিকার নকশার সূক্ষ্মতা এবং ঐতিহ্যের ধারক। এছাড়া নাটোর, টাঙ্গাইল, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়া, যশোর অঞ্চলের কারিগররা দৃষ্টিনন্দন নকশি শিকা তৈরি করে।

বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চলের নারীদের হাত ধরে তৈরি নকশি শিকার শুধু একটি শিল্পকর্ম নয়, বরং এটি একটি ঐতিহ্যের ধারক। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন সচেতন উদ্যোগ। পাটের ব্যবহার বাড়ানোর মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা করা সম্ভব। পাশাপাশি, এ শিল্পের প্রচারণা এবং ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করলে নকশি শিকার আবারও ফিরে আসতে পারে প্রতিটি ঘরে। এই শিল্পকে সংরক্ষণ করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

নকশি শিকার উৎপত্তি

নকশি শিকার ইতিহাস খুঁজলে জানা যায়, এটি মূলত বাংলার গ্রামীণ নারীদের হাতে তৈরি শিল্প। পাট ছিল এ শিল্পের প্রধান উপাদান। গ্রামের মেয়েরা নিজেদের অবসর সময়ে পাট দিয়ে তৈরি করতেন শিকা, আর এতে কারুকার্য যোগ করে একে রূপ দিতেন শিল্পে। পুঁতি, কড়ি, ঝিনুক, পোড়ামাটির বল—এসব দিয়ে শিকায় যোগ করা হতো সৌন্দর্যের মাত্রা।

শিকার ব্যবহার

শিকার প্রধানত গৃহস্থালি কাজের জন্য তৈরি করা হতো। রান্নাঘরে ঝুলিয়ে রাখা শিকায় রাখা হতো ভাত, তরকারি, মুড়ি, এমনকি হাঁড়ি-পাতিল। এটি খাবারকে পিঁপড়ে, বিড়াল বা অন্যান্য প্রাণীর হাত থেকে রক্ষা করত। পাশাপাশি, এটি ছিল একটি দৃষ্টিনন্দন উপাদান, যা ঘরের শোভা বাড়াত।

লোকশিল্প থেকে বাণিজ্যে

এক সময় নকশি শিকা শুধুমাত্র ঘরোয়া পরিবেশেই সীমাবদ্ধ ছিল। নারীরা এটি নিজেদের ঘরের প্রয়োজনেই তৈরি করতেন। তবে কালের বিবর্তনে এবং কারুশিল্পের গুরুত্ব বাড়ার সাথে সাথে নকশি শিকার বাণিজ্যিক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

Nakshi Shika নকশি শিকা x bfa x fxyz - Copy

হারিয়ে যাওয়া শিকার আধুনিকায়ন
.

যদিও নকশি শিকার ঐতিহ্যের প্রতীক, কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় এটি আজ বিলুপ্তির পথে। গ্রামাঞ্চলের অনেক নতুন প্রজন্ম হয়তো শিকা কী তা জানেও না। আধুনিক বাসনপত্রের আধিক্যে শিকার ব্যবহার কমে এসেছে। তবে কুটির শিল্প হিসেবে নকশি শিকার গুরুত্ব এখনো বিদ্যমান। বিদেশে এর রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় এটি নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে।

বর্তমান সময়ে নকশি শিকার নতুন আঙ্গিকে ফিরে এসেছে। এটি এখন শুধুমাত্র পাট দিয়ে নয়, বিভিন্ন রঙিন সুতা এবং সুতার মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে। এই আধুনিক শিকার ব্যবহার করা হচ্ছে বাড়ির সাজসজ্জায়। বিশেষত বারান্দার সৌন্দর্য বাড়াতে শিকার দিয়ে টব ঝুলিয়ে গাছ লাগানোর প্রবণতা বেড়েছে। এটি ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার মেলবন্ধন ঘটিয়েছে এবং শিকার শিল্পে বৈচিত্র্য এনেছে।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

আপনার একটি শেয়ার আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা

X (Twitter)
Post on X
Pinterest
fb-share-icon
Instagram
FbMessenger
Copy link
URL has been copied successfully!