নকশি শিকার উৎপত্তি
নকশি শিকার ইতিহাস খুঁজলে জানা যায়, এটি মূলত বাংলার গ্রামীণ নারীদের হাতে তৈরি শিল্প। পাট ছিল এ শিল্পের প্রধান উপাদান। গ্রামের মেয়েরা নিজেদের অবসর সময়ে পাট দিয়ে তৈরি করতেন শিকা, আর এতে কারুকার্য যোগ করে একে রূপ দিতেন শিল্পে। পুঁতি, কড়ি, ঝিনুক, পোড়ামাটির বল—এসব দিয়ে শিকায় যোগ করা হতো সৌন্দর্যের মাত্রা।
শিকার নানা আঞ্চলিক নাম রয়েছে— উল্টাবেড়ী, ফুলটুংগী, রসুন দানা, আংটিবেড়, ফুলমালা, ডালিম বেড়, ফুলচাং, গানজা, আউলাকেশি, কাউয়ার ঠ্যাং, জালি, জিলাপি ইত্যাদি। প্রতিটি নাম আর অলংকরণ বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের সংস্কৃতি আর বৈচিত্র্যের পরিচয় বহন করে।
শিকার ব্যবহার
শিকার প্রধানত গৃহস্থালি কাজের জন্য তৈরি করা হতো। রান্নাঘরে ঝুলিয়ে রাখা শিকায় রাখা হতো ভাত, তরকারি, মুড়ি, এমনকি হাঁড়ি-পাতিল। এটি খাবারকে পিঁপড়ে, বিড়াল বা অন্যান্য প্রাণীর হাত থেকে রক্ষা করত। পাশাপাশি, এটি ছিল একটি দৃষ্টিনন্দন উপাদান, যা ঘরের শোভা বাড়াত।
নকশি শিকার বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল এর গিট্টুর বৈচিত্রতা। মাউরা গিরা, রসুন গিরা, পাগড়ি গিরা, ঝুঁটি গিরা—এসব গিট্টু ব্যবহার করে তৈরি হতো নানা ধরনের শিকা। এছাড়া অলংকরণে ব্যবহৃত হতো রঙ-বেরঙের সুতা, কড়ি, পোড়া মাটির বল ইত্যাদি। কোনো কোনো শিকায় আবার দেখা যেত অষ্টদলপদ্ম বা কদমফুলের নকশা।
লোকশিল্প থেকে বাণিজ্যে
এক সময় নকশি শিকা শুধুমাত্র ঘরোয়া পরিবেশেই সীমাবদ্ধ ছিল। নারীরা এটি নিজেদের ঘরের প্রয়োজনেই তৈরি করতেন। তবে কালের বিবর্তনে এবং কারুশিল্পের গুরুত্ব বাড়ার সাথে সাথে নকশি শিকার বাণিজ্যিক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
আপনার একটি শেয়ার এবং মন্তব্য আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা ❤️

হোগলাপাতা: বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও পরিবেশবান্ধব শিল্প
fayze hassan
নারিকেলের মালা: বর্জ্য থেকে বর্তমানের গল্প
fayze hassan
নকশী পিঠা এক প্রকার লোকশিল্প
fayze hassan
নকশি পাখা: বাতাসে লুকানো ঐতিহ্যের গল্প
fayze hassan
মণিপুরী নৃ-গোষ্ঠীর জীবন ও তাঁতশিল্পের গল্প
fayze hassan