Rajshahi silk Sericulture রাজশাহী সিল্ক রেশমকীট তুঁত চাষ x bfa x fxyz

রাজশাহী সিল্ক: প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে আসা ঐতিহ্য

একটি মাত্র রাজশাহী সিল্ক শাড়ি তৈরি করতে প্রায় ৫০০০টি রেশমগুটি প্রয়োজন হয়। সময়মতো গুটির ভেতরের পোকাকে মেরে না ফেললে পূর্ণ পোকা বা প্রজাপতি গুটি কেটে বেরিয়ে আসে, ফলে একটানা দীর্ঘ সুতা নষ্ট হয়ে যায়।

Rajshahi silk

রাজশাহী সিল্ক

মসলিন ও জামদানির মতোই রাজশাহী রেশম বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও গর্বের প্রতীক। রাজশাহী শহর ঐতিহাসিকভাবেই রেশম উৎপাদনের কেন্দ্র, যার জন্য শহরটি “Silk City” বা রেশম নগরী নামেও খ্যাত। তথ্যঅনুযায়ী আজ থেকে ৩০০ বছর আগে থেকেই ‘রাজশাহী সিল্ক’ নামেই এই সিল্ক কাপড় বিদেশে রপ্তানি হতো। যার জন্য রাজশাহী জেলার ব্রান্ডিং -এ শুরুতেই চলে আসে রাজশাহী সিল্কের নাম। রাজশাহী সিল্কের খ্যাতি এবং নিজস্বতা এতটাই যে ২০২১ সালে রাজশাহী সিল্ক ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে।

রেশমকীটের ছোট্ট গুটি থেকে ঝলমলে বস্ত্র হয়ে ওঠার এই রূপান্তর যেন এক জাদুর স্পর্শ। রাজশাহী রেশম কেবল একটুকরো কাপড় নয়; এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের ইতিহাসের পরত আর সংস্কৃতির গৌরব।

সিল্ক উৎপাদন প্রক্রিয়া
ও কারিগরি বৈশিষ্ট্য

রাজশাহী সিল্ক মূলত রেশমকীটের (পলু পোকা) উৎপাদিত সুক্ষ্ম তন্তু থেকে প্রস্তুত করা হয়। রেশমকীট পালন, তুঁত চাষ এবং সূতা প্রস্তুতের পুরো প্রক্রিয়াকেই রেশম চাষ (Sericulture) বলা হয়। এই প্রক্রিয়া শুরু হয় তুঁতগাছের পাতা দিয়ে – শুঁয়োপোকার একমাত্র খাদ্য হলো তাজা তুঁতপাতা। রেশমকীটগুলোকে দিনে চারবার তুঁতপাতা খেতে দিতে হয়, এবং বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের জন্য কচি পাতা থেকে তুলনামূলক শক্ত পাতা সরবরাহ করা হয়। প্রায় ২৫-৩০ দিন পাতা খেয়ে পোকাগুলো পূর্ণবয়স্ক হলে এদের লালা নিঃসরিত হয়ে চারদিকে গুটি (কোকুন) তৈরি হয়। প্রতিটি পোকা নিজের শরীরকে ঘিরে একটানা প্রায় ১০০০ মিটার দীর্ঘ সূতায় গুটিবদ্ধ হয়। নির্দিষ্ট সময় পর গুটিগুলো গরম পানিতে ডুবিয়ে পোকাকে মেরে ফেলা হয় – এতে গুটির রেশম তন্তুর সাথে লেগে থাকা সেরিসিন নামক আঠালো প্রোটিন নরম হয় এবং সূতাগুলো সহজে বিচ্ছিন্ন করা যায়। এরপর প্রতিটি রেশমগুটি থেকে সূতা পাকিয়ে নেওয়া হয় এবং সেই সূতা দিয়ে সিল্ক কাপড় বোনা হয়। এভাবে একটি মাত্র রাজশাহী সিল্ক শাড়ি তৈরি করতে প্রায় ৫০০০টি রেশমগুটি প্রয়োজন হয়। সময়মতো গুটির ভেতরের পোকাকে মেরে না ফেললে পূর্ণ পোকা বা প্রজাপতি গুটি কেটে বেরিয়ে আসে, ফলে একটানা দীর্ঘ সুতা নষ্ট হয়ে যায়।

তুঁতপাতা

শুঁয়োপোকার একমাত্র খাদ্য হলো তাজা তুঁতপাতা। তুঁত যার ইংরেজি  Mulberry। এর ফল রসাল এবং সুস্বাদু হলেও বাংলাদেশে তুঁত কখনো ফলের জন্য চাষ করা হয় না। তবে আফগানিস্তান, উত্তর ও দক্ষিণ ভারত প্রভৃতি স্থানে তুঁত চাষ করা হয় ফলের জন্য।  ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেকগুলো ফল মিলে একটি ফল তৈরি করে, এটি বেরি জাতীয় ফল। কাঁচা ফলের রং সবুজ, কিন্তু পাকলে টকটকে লাল ও সম্পূর্ণ পাকলে কালচে হয়ে যায়। তুতেঁর লালচে কালো ফল খুবই রসালো, নরম, মিষ্টি টক ও সুস্বাদু। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য পাকা তুঁত ফল উপকারী। এ ছাড়া পাকা ফলের টক-মিষ্টি রস বায়ু ও পিত্তনাশক, দাহনাশক, কফনাশক ও জ্বরনাশক। তুঁত গাছের ছাল ও শিকড়ের রস কৃমিনাশক।

শুঁয়োপোকা / রেশমকীট

পাতা খেয়ে এভাবে গুঁটি তৈরি করে রেশম পোকা

উল্লেখ্য, তুঁত রেশমের সূতা সবচেয়ে নমনীয় ও মসৃণ হওয়ায় তা রাজশাহী সিল্ক শাড়ির জন্য আদর্শ এবং এর কদরও সবচেয়ে বেশি। রাজশাহী সিল্ক সূতার সূক্ষ্মতা কাপড়ে এক অনন্য বৈশিষ্ট্য যোগ করে, যা রাজশাহী সিল্ক শাড়িকে আকর্ষণীয়, হালকা ও আরামদায়ক পরিধেয় বস্ত্র হিসেবে খ্যাতি দিয়েছে।

কোথা থেকে শুরু হয়েছিল রাজশাহী রেশমের এই বর্ণিল পথচলা? কীভাবে পরম যত্নে তৈরি হয় এর সূক্ষ্ম সুতো আর মোলায়েম কাপড়? আর কেনই বা এই রেশমকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এত গর্ব আর আবেগ? চলুন, রাজশাহী রেশমের ইতিহাস, তৈরির নৈপুণ্য ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বের গল্পগুলো জানতে এগিয়ে যাই।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও
উৎপত্তি

সিল্কের উদ্ভব মূলত প্রাচীন চীনে হলেও ভারতীয় উপমহাদেশে এবং বিশেষত বাংলায় এর চাষ ও বস্ত্র উৎপাদনের ইতিহাস শত শত বছরের পুরনো। রেকর্ড অনুযায়ী ত্রয়োদশ শতাব্দীর দিকে বাংলায় রেশম উৎপাদনের শুরু হয়, তখন এ অঞ্চল থেকে উৎপাদিত মসৃণ সিল্ক “বেঙ্গল সিল্ক” বা “গঙ্গার রেশম” নামে পরিচিত ছিল। মুগল যুগ ও ঔপনিবেশিক আমলে বাংলার রেশম আন্তর্জাতিক বাজারে আলাদা পরিচিতি পায়। ইউরোপীয় বণিকরা ১৭শ শতকে ভাগীরথী নদীর তীরে কাশিমবাজারে কুঠি স্থাপন করে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের রেশম সূতা ও কাপড় সংগ্রহ করে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি করতেন। তাঁদের মাধ্যমেই এই উৎকৃষ্ট সিল্ক “বেঙ্গল সিল্ক” নামে পরিচিতি পায়, আর পরে অঞ্চলভেদে বিশেষ করে রাজশাহী ও মুর্শিদাবাদের সিল্ক আলাদা সুনাম অর্জন করে “রাজশাহী সিল্ক”“মুর্শিদাবাদ সিল্ক” নামে খ্যাত হয়।
১৮শ শতাব্দীর শুরুর দিকে নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ বাংলায় বিশাল রাজশাহী জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন, যার অন্তর্ভুক্ত বিস্তৃত অঞ্চলে তুঁত চাষ ও রেশম চাষ ব্যাপক হারে হতো। সেই সময় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পুরো অঞ্চলটিকে রাজশাহী জেলা হিসেবে গণ্য করত এবং এ অঞ্চলে উৎপাদিত সমস্ত রেশম দেশ-বিদেশে “রাজশাহী সিল্ক” নামেই পরিচিতি পায়। ঐতিহাসিকদের মতে, আঠারো শতকে রাজশাহী অঞ্চলের রেশম সূতা ও বস্ত্রের কীর্তি ছিল সুবিদিত; উদাহরণস্বরূপ, ১৯০৯ সালের হিসাব অনুযায়ী শুধুমাত্র রাজশাহী জেলাতেই প্রায় ৪ লাখ পাউন্ড রেশম সূতা উৎপাদিত হতো। এই বর্ণাঢ্য ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় রাজশাহীকে আজও বাংলাদেশের রেশমশিল্পের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে দেখা হয়।

রাজশাহী অঞ্চলের ভূমিকা
ও শিল্পের বিকাশ
.

ঐতিহাসিকভাবে রাজশাহী শহর ছিল উত্তর বঙ্গের রেশম ব্যবসার স্নায়ুকেন্দ্র। ওলন্দাজরা (ডাচ) ১৭২৫-১৭৫০ সালের মধ্যে রাজশাহীর রামপুর-বোয়ালিয়ায় প্রথম স্থায়ী সিল্ক কারখানা স্থাপন করে, যা বড়কুঠি নামে পরিচিত। পরবর্তীতে ১৭৭০-এর দশকে পার্শ্ববর্তী সরদহ এলাকায় দ্বিতীয় সিল্ক কারখানা স্থাপিত হয়, যেটি পরে ইংরেজদের অধীনে চলে যায়। ব্রিটিশ আমলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও রাজশাহীর রেশমপট্টি এলাকায় ছোট ছোট দেশীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন এবং ইউরোপীয় বাণিজ্যিক সংস্থার সাথে অংশীদার হয়ে রেশম সুতা ও পণ্যের ব্যবসা পরিচালনা করতেন। রাজশাহী নগরীর একটি মহল্লা এখনো রেশমপট্টি নামে পরিচিত, যা এ অঞ্চলের রেশম-বাণিজ্য ঐতিহ্যের স্মারক।

উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে রেশম উৎপাদনে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেয়া হয়। ১৮৯৮ সালে রাজশাহীতে একটি রেশম প্রশিক্ষণ স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে বৈজ্ঞানিক উপায়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ কারিগর তৈরি করা হতো। পরবর্তীতে পাকিস্তান আমলে রাজশাহীতে রেশমশিল্প পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা শুরু হয়। ১৯৬২ সালে এখানে একটি রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এবং নগরীর সুলতানাবাদ এলাকায় প্রায় ১৫.৫ বিঘা জমির ওপর একটি সরকারি সিল্ক কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ সরকার রেশমশিল্প সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ রেশম বোর্ড গঠন করে, এবং ২০১৩ সালে গবেষণা ইনস্টিটিউট ও সিল্ক ফাউন্ডেশনকে একত্রিত করে রাজশাহী ভিত্তিক বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়।

রাজশাহী অঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটি তুঁত গাছ চাষ এবং রেশম পোকা পালনের জন্য বিশেষ উপযোগী হওয়ায়, বাংলাদেশের মোট রেশম উৎপাদনের সিংহভাগই এই অঞ্চল থেকে আসে। এ শিল্পের সাথে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১ লক্ষ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন। একসময় রাজশাহীর সাপুরা শিল্পাঞ্চল প্রচুর সিল্ক মিল ও কর্মচাঞ্চল্যে ভরপুর ছিল, যা রাজশাহীকে আবার “Silk City” নামে গৌরবান্বিত করেছিল। তবে বিশ্বব্যাংকের চাপে ১৯৯০-এর দশকে সুতার আমদানিতে শুল্ক হ্রাসের ফলে (১৫০% থেকে মাত্র ৭.৫% করা হয়) চীনা সস্তা সুতায় দেশি রেশমশিল্প মারাত্মক ধাক্কা খায়। অনেক চাষি তুঁত চাষ ও রেশম পোকা পালন ছেড়ে দেন, বহু কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী রাষ্ট্রায়ত্ত সিল্ক কারখানাটিও ক্রমাগত লোকসানের বোঝা নিয়ে অবশেষে ৩০ নভেম্বর ২০০২ সালে বন্ধ হয়ে যায়।

রেশমকীট পালন

রেশমকীট পালন, তুঁত চাষ এবং সূতা প্রস্তুতের পুরো প্রক্রিয়াকেই রেশম চাষ (Sericulture) বলা হয়। এই প্রক্রিয়া শুরু হয় তুঁতগাছের পাতা দিয়ে – শুঁয়োপোকার একমাত্র খাদ্য হলো তাজা তুঁতপাতা। রেশমকীটগুলোকে দিনে চারবার তুঁতপাতা খেতে দিতে হয়, এবং বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের জন্য কচি পাতা থেকে তুলনামূলক শক্ত পাতা সরবরাহ করা হয়।

Rajshahi silk Sericulture রাজশাহী সিল্ক রেশমকীট তুঁত চাষ x bfa x fxyz (104)
Rajshahi silk Sericulture রাজশাহী সিল্ক রেশমকীট তুঁত চাষ x bfa x fxyz (104)
Rajshahi silk Sericulture রাজশাহী সিল্ক রেশমকীট তুঁত চাষ x bfa x fxyz (104)


আধুনিক অবস্থা ও চ্যালেঞ্জ

আশার কথা হলো, সরকার ও বিভিন্ন সংস্থার নজর আবার রেশমশিল্পের উন্নয়নে পড়েছে। ভৌগোলিক নির্দেশক হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর রাজশাহী সিল্ক একটি ব্র্যান্ড মর্যাদা লাভ করেছে, যা এর বাজারমূল্য ও কদর বাড়িয়েছে। বাংলাদেশের রেশম উন্নয়ন বোর্ড রাজশাহীতে থেকে এই শিল্পের পুনর্জাগরণ ও সম্প্রসারণে কাজ করে যাচ্ছে। রাজশাহীর সিল্ক কারখানা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলো আবার কার্যকর করে তোলা হচ্ছে এবং উদ্যোক্তারা নতুন উদ্যমে এই খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। সঠিক উদ্যোগ ও আধুনিক গবেষণা-প্রযুক্তির সমন্বয়ে রাজশাহী সিল্ক শিল্প তার হারানো গৌরব ফিরে পেতে পারে বলে অনেকেই আশাবাদী। রাজশাহীর রেশম শাড়ির ঐতিহ্য ও অভিজাত সৌন্দর্য টিকিয়ে রাখতে পারলে তা কেবল অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে না, দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যও সমৃদ্ধ করবে।

রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী সিল্ক কারখানা

দীর্ঘ বিরতির পর রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী সিল্ক কারখানাটি ২০১৮ সালে পুনরায় চালু করা হয়। তবে বর্তমানে এই কারখানা সীমিত পরিসরে উৎপাদন করছে – যেখানে বন্ধ হওয়ার আগে ৬৩টি লুমে বছরে ১,১৬,০০০ গজ রেশম কাপড় তৈরি হতো, সেখানে এখন মাত্র ২০টি লুম চালু রয়েছে এবং বছরে প্রায় ৬,০০০ গজ কাপড় উৎপাদন হয়। অনেক অভিজ্ঞ কারিগর ও শ্রমিক কর্মসংস্থানের অভাবে অন্য পেশায় চলে গিয়েছিলেন, যদিও পুরোনো অনেক কারিগররা কারখানা ফের চালু হওয়ার পর স্বল্প মজুরিতে হলেও কাজে ফিরে এসেছেন। রাজশাহীতে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত খাঁটি হাত-বোনা সিল্ক কাপড় বিক্রি করা হয়, তবে প্রচারের অভাবে সেখানে ক্রেতা তুলনামূলক কম আসে। এর বিপরীতে রাজশাহীর বিসিক শিল্পনগরীর সপুরা সিল্ক মিলসের শোরুমে সারাবছর ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যায়, যেখানে স্থানীয়দের পাশাপাশি দূরদূরান্তের ক্রেতারাও রাজশাহীর প্রসিদ্ধ সিল্কের পণ্য কিনতে আসেন। আসলে রাজশাহী এসে সিল্ক না কিনলে ভ্রমণই সম্পূর্ণ হয় না – এক কথায় “রাজশাহী এসে সিল্ক না নিলে বেড়ানোই সার্থক হয় না”, এমনটাই অভিমত অনেক ভ্রমণপ্রেমীর।

অপার সম্ভাবনা

তবে আজকের দিনে রাজশাহী সিল্ক শিল্পকে টিকিয়ে রাখার পথে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বর্তমানে “রাজশাহী সিল্ক” নামে বাজারে যে সব শাড়ি-বস্ত্র বিক্রি হয় তার বড় অংশেরই সূতা আসে বিদেশ থেকে। সস্তা আমদানি করা সুতা ব্যবহারের ফলে আসল দেশীয় রেশমচাষ মার খেয়েছে এবং ঘরে তৈরি খাঁটি রেশম সূতার অভাব দেখা দিয়েছে। দেশে বছরে প্রায় ৪০০-৪৫০ টন সিল্ক সূতার চাহিদা থাকলেও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয় মাত্র প্রায় ৪০ টন। চীন যেখানে বছরে ৯ বার এবং ভারত ৬ বার রেশমগুটি থেকে সূতা আহরণ করতে সক্ষম, বাংলাদেশে আবহাওয়াগত কারণে এখনো বছরে মাত্র ৪ বার (তার মধ্যে দুইবার ফলন ভালো হয়) সূতা উৎপাদন করা যায়। তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এম. মনজুর হোসেনের নেতৃত্বে একদল গবেষক প্রমাণ করেছেন যে সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করলে বছরে ৩০ বার পর্যন্ত রেশমগুটি থেকে সুতা আহরণ করা সম্ভব। দেশের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত সূতা রপ্তানির সম্ভাবনাও রয়েছে, কিন্তু উদ্যোগের অভাবে সেই গবেষণা-ভিত্তিক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ঝুলে রয়েছে – অর্থাৎ রেশমের অপার সম্ভাবনাটি এখনো পূর্ণভাবে কাজে লাগানো হয়নি। রেশমচাষীদের অনেকেই এখনো তুঁত চাষকে প্রধান আয়ের হিসেবে গ্রহণ করতে দ্বিধা করেন, কারণ অন্যান্য কৃষিপণ্য থেকে তারা দ্রুত ও বেশি আয় নিশ্চিত করতে পারেন

GI product in Bangladesh

বাংলাদেশের জিআই পণ্যসমূহ – সমৃদ্ধময় বাংলাদেশ

বিশ্বায়নের এই যুগে দেশের খ্যাতি ও সুনামকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার জন্য এখন জোরেসোরে দেশকে ব্রান্ডিং করতে হবে নিজ নিজ উদ্যগে। এই ব্রান্ডিংয়ের মানে হচ্ছে দেশের সমৃদ্ধময় দিকগুলো বিশ্বের কাছে তুলে ধরা। ব্রান্ডিংয়ের সুফল হচ্ছে, দেশের ইতিবাচক ব্র্যান্ডিং খাড়া করতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে দেশের জনশক্তি, পর্যটন, দেশে তৈরি পণ্য, বিনিয়োগ ও অন্যান্য সেবাও মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে এবং গ্রহণযোগ্যতা পাবে।

টানা-পোড়েনের-তাঁত-তত্ত্ব-weaving-life-tat-tati-x-bfa-x-fxyz

আরও পড়ুন

টানা-পোড়েনের তাঁত তত্ত্ব

‘টানা’ আর ‘পোড়েন’-এর মাঝে ভারসাম্য রাখতে রাখতে তাঁতীদের জীবন কেটে যায় নিজস্ব টানা-পোড়েনে, যার ভারসাম্য রক্ষা তাঁত-এ সুতা বোনার চেয়েও বহুগুণ কঠিন।

September 6, 2025
jute industry-jute handicraft of Bangladesh-পাটশিল্পের পুনর্জাগরণ-পাট কারুশিল্প- x bfa x fxyz

পাটশিল্পের পুনর্জাগরণ: গ্রামীণ কারুশিল্প থেকে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিং

fayze hassan
পাটশিল্প এখন শুধু অতীতের ঐতিহ্য নয়; বরং ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির নতুন ক্যানভাস—যেখানে ঐতিহ্য, উদ্ভাবন আর টেকসই…
September 6, 2025
August 31, 2025
Jute industry of Bangladesh বাংলাদেশের পাটশিল্প x bfa x fxyz V2

বাংলাদেশের পাটশিল্প: ঐতিহ্য, বর্তমান অবস্থা ও সোনালি আঁশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

bdfashion archive
‘সোনালি আঁশের সোনার দেশ/পাট পণ্যের বাংলাদেশ’ -এ স্লোগানে ২০১৭ সালে দেশে প্রথমবারের মতো পালিত হয়…
August 31, 2025

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Instagram did not return a 200.
Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Your share and comment are an inspiration to us

X (Twitter)
Post on X
Pinterest
fb-share-icon
Instagram
FbMessenger
Copy link
URL has been copied successfully!