মথুরাপুর দেউল

ইতিহাস ও শিল্পকুশলতার জীবন্ত সাক্ষী।


মথুরাপুর দেউল

Mathurapur Deul

বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার মথুরাপুর গ্রামে অবস্থিত মথুরাপুর দেউল একটি প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। এই দেউল বা মঠ ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত বলে ধারণা করা হয়, যদিও কেউ কেউ এটিকে সপ্তদশ শতকের স্থাপনা বলে মনে করেন। ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার উত্তরে এবং মধুখালী সদর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে গাজনা ইউনিয়নের পশ্চিম পাশে এই দেউলটি দাঁড়িয়ে আছে। চন্দনা নদীর তীরে অবস্থিত এই স্থাপনা ইতিহাস ও স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন।

Mathurapur Deul মথুরাপুর দেউল faridpur x baf x rajon 10

দেউল বলতে কি বুঝায়?

“দেউল” শব্দটি মূলত বাংলায় ব্যবহৃত একটি ঐতিহ্যবাহী শব্দ, যা প্রাচীন মন্দির বা স্থাপত্যকে নির্দেশ করে। এটি সংস্কৃত শব্দ “দেউলয়” (देवलय) থেকে এসেছে, যার অর্থ “দেবতার বাড়ি” বা মন্দির।

বাংলায়, দেউল বলতে বিশেষত প্রাচীন ইট বা পাথরের তৈরি সুউচ্চ মন্দিরকে বোঝানো হয়, যা সাধারণত দেব-দেবীর পূজার জন্য নির্মিত। তবে বাংলার স্থাপত্যশৈলীতে দেউলগুলো শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্বও করে।

মথুরাপুর দেউল এর ক্ষেত্রে, এটি বাংলার প্রাচীন মন্দির স্থাপত্যের একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন, যা নির্মাণশৈলীর দিক থেকে দেউল আর্কিটেকচারের বৈশিষ্ট্য বহন করে। এটি স্থানীয় ইতিহাস, ধর্মীয় প্রভাব এবং সংস্কৃতির মেলবন্ধনের একটি চমৎকার উদাহরণ।

মথুরাপুর দেউলের ঐতিহাসিক পটভূমি

মথুরাপুর দেউলের নির্মাণ নিয়ে দুটি জনপ্রিয় কাহিনি প্রচলিত আছে। একটি মতে, বাংলার সেনাপতি সংগ্রাম সিং এই দেউল নির্মাণ করেছিলেন। ১৬৩৬ সালে ভূষণার জমিদার সত্রাজিতের মৃত্যুর পর সংগ্রাম সিং এলাকার রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব পান। তিনি ক্ষমতাবান হয়ে উঠে মথুরাপুরে বসবাস শুরু করেন এবং এই দেউল নির্মাণ করেন। অন্য একটি মতে, সম্রাট আকবরের সেনাপতি মানসিং রাজা প্রতাপাদিত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ের স্মারক হিসেবে এটি নির্মাণ করেছিলেন। এই মতে, দেউলটি একটি বিজয়স্তম্ভ। তবে এই তথ্যের সত্যতা এখনো নিশ্চিত হয়নি।

স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য

মথুরাপুর দেউল একটি বারো কোণবিশিষ্ট স্থাপনা, যা এটিকে সমসাময়িক অন্যান্য ভবন থেকে আলাদা করে। উপর থেকে দেখলে এটি তারার মতো দেখায়। এর উচ্চতা প্রায় ২১.২ মিটার (৮০ ফুট), এবং এটি চুন-সুরকির মিশ্রণে তৈরি। দেউলের ভেতরে একটি ছোট কক্ষ রয়েছে এবং এতে দুটি প্রবেশপথ আছে—একটি দক্ষিণমুখী এবং অপরটি পশ্চিমমুখী।

সংরক্ষণ ও গুরুত্ব

মথুরাপুর দেউল বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একটি সুরক্ষিত সম্পদ। এটি শুধু একটি স্থাপত্য নয়, বাংলার সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ইতিহাসের প্রতীক। পর্যটক ও ইতিহাসপ্রেমীদের কাছে এটি একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য।

মথুরাপুর দেউল- তার স্থাপত্যের সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং অনন্য নির্মাণশৈলীর জন্য বাংলাদেশের একটি অমূল্য সম্পদ। এটি আমাদের অতীতের গৌরব ও শিল্পকুশলতার এক জীবন্ত সাক্ষী। এই দেউল পরিদর্শন করলে যেন ইতিহাসের পাতায় হেঁটে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা হয়।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Instagram did not return a 200.
Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Your share and comment are an inspiration to us

X (Twitter)
Post on X
Pinterest
fb-share-icon
Instagram
FbMessenger
Copy link
URL has been copied successfully!