আপনার একটি শেয়ারে জানবে বিশ্ব, আমাদের দেশ কতটা সমৃদ্ধ
ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী পিয়ের বোর্দোর ধারা
রিকশা চিত্রকলার পণ্যায়ন বোর্দোর সাংস্কৃতিক মূলধন ধারণাকে কার্যকরভাবে চিত্রিত করে। ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী পিয়ের বোর্দোর মতে, সাংস্কৃতিক মূলধন বলতে সেই অ-অর্থনৈতিক সম্পদগুলিকে বোঝায় যা সামাজিক স্তরের পরিবর্তন বা গতিশীলতাকে সক্ষম করে। এর মধ্যে শিক্ষা, বুদ্ধিমত্তা, শৈলী এবং রুচি অন্তর্ভুক্ত। বোর্দোর ধারণায়, সাংস্কৃতিক মূলধন তিনটি রূপে বিভক্ত:
১. অবিচ্ছিন্ন (Embodied): ব্যক্তির মধ্যে নিহিত জ্ঞান, দক্ষতা, এবং শিক্ষা।
২. বস্তুগত (Objectified): সংস্কৃতিগত পণ্য, যেমন শিল্পকলা, সাহিত্য, এবং অন্যান্য বস্তু যা সাংস্কৃতিক মূল্য বহন করে।
৩. প্রতিষ্ঠানিক (Institutionalized): প্রত্যয়নপত্র বা যোগ্যতার স্বীকৃতি, যা সামাজিক সম্মান প্রদান করে।
রিকশা চিত্রকলা যখন শুধু গণমানুষের হাতের তৈরি শিল্প ছিল, তখন এটি প্রধানত অবিচ্ছিন্ন মূলধনের অংশ হিসেবে গণ্য করা হতো। কিন্তু যখন এটি বস্তুগত রূপে পণ্যায়িত হতে শুরু করল, তখন তা উচ্চবিত্ত সমাজে অবস্থান করে সাংস্কৃতিক মূলধনের প্রতীক হয়ে ওঠে। এই শিল্পকর্মগুলো বাড়ির দেয়ালে বা ফ্যাশন পণ্যের অংশ হিসেবে প্রদর্শিত হয়, যা এলিটদের রুচি এবং সামাজিক অবস্থান প্রকাশ করে।
এই প্রক্রিয়ায়, রিকশা আর্ট কেবল এক ধরনের গণমানুষের অভিব্যক্তি থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়নি, বরং তা এলিট শ্রেণীর সামাজিক মর্যাদা ও অবস্থান জোরদার করার একটি উপায় হয়ে উঠেছে, যা বোর্দোর তত্ত্বের নিখুঁত উদাহরণ।
এই শিল্পের প্রকৃত মালিক কে?
একদম সঠিক, এই বিশ্লেষণ রিকশা শিল্পের পণ্যায়ন এবং সাংস্কৃতিক মূলধনের বিকাশকে চিত্রিত করে। যখন রিকশা চিত্রকলার কাজ মূলত নিম্নবিত্ত মানুষের দ্বারা তৈরি করা হত, তখন এটি উচ্চবিত্তদের চোখে অবমাননীয় ও নিম্নমানের হিসেবে বিবেচিত হত। কিন্তু যখন ফ্যাশন ডিজাইনার এবং উচ্চমানের দোকানগুলি, যেমন আড়ং এবং যাত্রা, রিকশা চিত্রকলাকে তাদের সংগ্রহে অন্তর্ভুক্ত করতে শুরু করল, তখন এই শিল্পকর্মের প্রতি আকাঙ্ক্ষা ও বৈধতার দাবি হঠাৎ করে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
এই পরিবর্তনটি সাংস্কৃতিক উৎপাদনের জগতের প্রভাবশালী ক্ষমতার গতিশীলতাকে প্রতিফলিত করে। এটি দেখায় যে কীভাবে উচ্চবিত্ত শ্রেণীর রুচি এবং পছন্দগুলি প্রতিষ্ঠা করে, কোন ধরনের শিল্প “শিল্প” হিসেবে গণ্য হবে। এই প্রক্রিয়ায়, রিকশা চিত্রকলার অধিগ্রহণ কেবল সাংস্কৃতিক বৈধতার একটি চিহ্ন নয়, বরং এটি সামাজিক শ্রেণীবিভাজনকে পুনর্বলিত করার একটি ক্লাসিক উদাহরণ।
এখন যে শিল্পকর্ম একসময় উপেক্ষা অথবা উপহাস করা হত, তা আজ উচ্চবিত্তদের দ্বারা উদযাপিত হয়। কিন্তু এই পরিবর্তন শুধুমাত্র শিল্পটির অর্থ ও মূল প্রেক্ষাপটকে পরিবর্তন করে না, বরং যারা এটি তৈরি করেছে, তাদের বর্জনকেও বাড়িয়ে দেয়। এই পরিস্থিতি রিকশা শিল্পের প্রাকৃতিক উৎপত্তি এবং তার ঐতিহ্যকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করে, যখন এটি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক মুনাফার উদ্দেশ্যে পণ্যায়িত হয়।
এভাবে, রিকশা চিত্রকলার এই ট্রান্সফরমেশন আমাদের সামনে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে ধরে: আসলে এই শিল্পের প্রকৃত মালিক কে? এবং যারা এটি তৈরি করেছে, তাদের সাংস্কৃতিক অবদান কিভাবে মূল্যায়িত হবে?
রিকশা আর্টের মর্ডান ফর্ম
এশিয়ান আর্ট বিয়েনাল থেকে তোলা। আর্টিস্ট এর নাম জানা নেই। কারো জানা থাকলে কমেন্ট করে জানানোর অনুরোধ করা হলো।








লিখেছেন : মোহাইমিনুল আল মাহীন
ছবিগ্রহন: বিপুল হোসেন
আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম লিংক

আড়াই হাত থেকে বারো হাত: গামছা -র ফ্যাশন বিবর্তন
fayze hassan
হোগলাপাতা: বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও পরিবেশবান্ধব শিল্প
fayze hassan
নারিকেলের মালা: বর্জ্য থেকে বর্তমানের গল্প
fayze hassan
নকশী পিঠা এক প্রকার লোকশিল্প
fayze hassan
নকশি পাখা: বাতাসে লুকানো ঐতিহ্যের গল্প
fayze hassan