Jibanananda Das

কবি জীবনানন্দ দাশ | Jibanananda Das

কবি জীবনানন্দ দাশ ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক। মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন খুবই লাজুক। আত্মভোলা ধরনের। অসম্ভব পড়ুয়া। ভালোবাসতেন একাকিত্ব, নিঃসঙ্গতা।

Jibanananda
Das

জীবনানন্দ দাশ বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক। তাকে বাংলা কবিতায় আধুনিকতার পথিকৃৎ বলা হয়। তার লেখা কবিতায় প্রকৃতির মায়াবী সৌন্দর্য, নিঃসঙ্গতা, মৃত্যু, প্রেম ও বেদনার ভাব স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। যদিও তার কবিতা প্রথম জীবনে সমালোচিত হয়েছিল, মৃত্যুর পর তিনি বাঙালি সাহিত্যিকদের কাছে কিংবদন্তী হয়ে ওঠেন। মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন খুবই লাজুক। আত্মভোলা ধরনের। অসম্ভব পড়ুয়া। ভালোবাসতেন একাকিত্ব, নিঃসঙ্গতা।

জীবনানন্দ ছিলেন পিতামাতার জ্যেষ্ঠ সন্তান; তার ডাকনাম ছিল মিলু। তার পিতামহ সর্বানন্দ দাশগুপ্ত  কম বয়সে স্কুলে ভর্তি হওয়ার বিরোধী ছিলেন বলে, বাড়িতে মায়ের কাছেই জীবনানন্দের বাল্যশিক্ষার সূত্রপাত। মাতা  কুসুমকুমারী দাশ ছিল একজন বিখ্যাত কবি। তার সুপরিচিত কবিতা আদর্শ ছেলে (আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/কথায় না বড় হয়ে কাজে বড়ো হবে) আজও শিশুশ্রেণির পাঠ্য। তার পিতা সত্যানন্দ দাশগুপ্ত ছিলেন একজন বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সমাজ সংস্কারক।

শিক্ষাজীবন

তারপর তিনি বরিশালের ব্রজমোহন স্কুলে ভর্তি হন। ১৯১৫ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন জীবনানন্দ দাশ। ১৯১৭ সালে ব্রজমোহন কলেজ থেকে আইএ প্রথম বিভাগে এবং ১৯১৯ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ বিএ পাস করেন। ১৯২১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেন। ১৯২২ সালে কলকাতা সিটি কলেজে ইংরেজি ভাষা সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। জীবনানন্দ দাস ১৯৩৫ সালে বরিশালের ব্রজমোহন কলেজে যোগদান করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের কিছু আগে তিনি স্বপরিবারে কলকাতায় চলে যান।

কর্মজীবন

অধ্যাপনার কাজে তার কর্মজীবনের সূচনা ও সমাপ্তি। এমএ পাসের পর কলকাতায় কলেজের বোর্ডিংয়ে থাকার প্রয়োজন হলে তিনি আইন পড়া শুরু করেন। এ সময় তিনি ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার ব্রাহ্মসমাজ পরিচালিত সিটি কলেজে টিউটর হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯২৮-এ সরস্বতী পূজা নিয়ে গোলযোগ শুরু হলে অন্যান্য কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে তাকেও ছাঁটাই করে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

Celebrating
125th
birthday of
Jibanananda Das

কবি জীবনানন্দ দাশ’র ১২৫তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা

কবিজীবন

তার কবিজীবন শুরু হয় ১৯১৯ সালে যখন তার প্রথম কবিতা ‘ব্রহ্মবাদী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তবে তার সার্থকতা আসে ১৯২৫ সালে যখন ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থ বাংলা কবিতায় এক নতুন ধারা সৃষ্টি করে, যেখানে মানবিক অনুভূতি আর প্রকৃতির মিশ্রণে এক গভীর বেদনাভরা কাব্যিক জগৎ তৈরি হয়।

জীবনানন্দের কবিতায় প্রকৃতির নিস্তব্ধ সৌন্দর্য, গ্রামীণ বাংলার পরিবেশ ও মেঘ-বৃষ্টির রূপকথা অন্যতম বিষয়বস্তু। তার কবিতায় যেমন নির্জন প্রকৃতির মুগ্ধতা পাওয়া যায়, তেমনি নিঃসঙ্গতার এক গভীর অনুভূতিও থাকে। তিনি প্রকৃতিকে তার কবিতার প্রধান চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, যেখানে মানুষ আর প্রকৃতি একত্রিত হয়।

তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলো হচ্ছে ধূসর পান্ডুলিপি (১৯৩৬ খ্রি:), বনলতা সেন (১৯৪২ খ্রি:), মহাপৃথিবী (১৯৪৪ খ্রি:), সাতটি তারার তিমির (১৯৪৮ খ্রি:), রূপসী বাংলা (১৯৫৭ খ্রি:), বেলা অবেলা  কার বেলা (১৯৬১ খ্রি:)। এছাড়াও বহু অগ্রন্থিত কবিতা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে মাল্যবান (১৯৭৩ খ্রি.), সুতীর্থ (১৯৭৭ খ্রি.) জলপাইহাটি (১৯৮৫ খ্রি.) জীবন প্রণালী (অপ্রকাশিত), রাসমতির উপাখ্যান (অপ্রকাশিত) ইত্যাদি। তার রচিত গল্পের সংখ্যা প্রায় দুই শতাধিক।

Jibanananda Das
70th
Death Anniversary

কবি জীবনানন্দ দাশের ৭০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

কবি
জীবনানন্দ দাশের
মৃত্যু

কবি জীবনানন্দ দাশ ১৯৫৪ সালের এক বিকালে কোলকাতায় ট্রামের ধাক্কায় গুরুতরভাবে আহত হন। জলখাবার “জুয়েল হাউজের” সামনে দিয়ে রাস্তা অতিক্রম করছিলেন জীবনানন্দ দাশ। শুধু অন্যমনস্ক নয়, কী এক গভীর চিন্তায় নিমগ্ন ছিলেন কবি। কবির সাথে প্রচন্ড এক ধাক্কা ট্রাম থামানো হয়। ততক্ষনে কবির দেহ ক্যাচারের ভিতর ঢুকে গেছে। কেটে, ছিঁড়ে থেঁতলে গেছে এখানে সেখানে। চুরমার হয়ে গেছে বুকের পাঁজরা, ডান দিকের কটা আর উরুর হাড়। ভেঙ্গে গিয়েছিল কণ্ঠা, ঊরু এবং পাঁজরের হাড়। গুরুতর ভাবে আহত জীবনানন্দের চিৎকার শুনে ছুটে এসে নিকটস্থ চায়ের দোকানের মালিক এবং অন্যান্যরা তাঁকে উদ্ধার করে। তাঁকে ভর্তি করা হয় শম্ভূনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে।

জীবনানন্দের অবস্থা ক্রমশঃ জটিল হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন কবি। চিকিৎসক ও সেবিকাদের সকল প্রচেষ্টা বিফলে দিয়ে ৮ দিন পর ২২শে অক্টোবর, রাত্রি ১১ টা ৩৫ মিনিটে কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।

জীবনানন্দ সমালোচকরা অনেকেই বলেন জীবনানন্দ আত্মহত্যা করেছেন। মৃত্যুচিন্তা কবির মাথায় দানা বেঁধেছিল। কলকাতার ইতিহাসে জীবনানন্দই একমাত্র ব্যক্তি যিনি ট্রাম দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।


আপনার একটি শেয়ার আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা


কবি
জীবনানন্দ দাশের
স্বীকৃতি

জীবদ্দশায় অসাধারণ কবি হিসেবে পরিচিতি থাকলেও তিনি খ্যাতি অর্জন করে উঠতে পারেননি। এর জন্য তার প্রচারবিমুখতাও দায়ী; তিনি ছিলেন বিবরবাসী মানুষ। তবে মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই তিনি বাংলা ভাষায় আধুনিক কবিতার পথিকৃতদের একজন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।

নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলন ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে পরিবর্ধিত সিগনেট সংস্করণ বনলতা সেন কাব্যগ্রন্থটি বাংলা ১৩৫৯-এর শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ বিবেচনায় পুরস্কৃত করা হয়। কবির মৃত্যুর পর ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে ফেব্রুয়ারি মাসে জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৫৪) সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করে।

এক নজরে
কবি
জীবনানন্দ দাশ
.

জন্ম ও মৃত্যু জন্ম
১৭ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৯ বরিশাল,বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি,ব্রিটিশ ভারত(বর্তমান বাংলাদেশ)
মৃত্যু: ২২ অক্টোবর ১৯৫৪ (বয়স ৫৫) কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।


শিক্ষাজীবন
• ১৯০৮খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে আট বছরের জীবনানন্দকেব্রজমোহন বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয়।
• ১৯১৫খ্রিষ্টাব্দে ব্রজমোহন বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন (বর্তমানে মাধ্যমিক বা এসএসসি) পরীক্ষায়উত্তীর্ণ হন।
• দু’বছর পর ব্রজমোহন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট (উচ্চ মাধ্যমিক) পরীক্ষায় পূর্বের ফলাফলের পুনরাবৃত্তি ঘটান; অতঃপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার উদ্দেশ্যে বরিশাল ত্যাগ করেন।
• ১৯১৯খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স সহ বিএ ডিগ্রিলাভ করেন।
• ১৯২১খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে দ্বিতীয় শ্রেণিতে এম. এ. ডিগ্রি লাভকরেন।
• এরপরতিনি আইন বিষয়ে পড়া শুরু করেন, কিন্তু অচিরেই তা পরিত্যাগ করেন।


কবি জীবনানন্দ দাশের পরিবার

পিতা-সত্যানন্দ দাশ
মাতা-কুসুমকুমারী দাশ (কবি)
দাম্পত্য সঙ্গী-লাবণ্য গুপ্ত
সন্তান-(২জন)কন্যা মঞ্জুশ্রী দাশ এবং পুত্র সমরানন্দ দাশ

কাব্য

• ঝরা পালক (১৯২৭)
• ধূসর পাণ্ডুলিপি (১৯৩৬)
• বনলতা সেন (১৯৪২)
• মহাপৃথিবী (১৯৪৪)
• সাতটি তারার তিমির (১৯৪৮)
• জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৫৪)
• রূপসী বাংলা (১৯৫৭)
• বেলা অবেলা কালবেলা (১৯৬১)
• মহাপৃথিবী (১৯৬৯)

বোধ” (১৯৩৬)
অবসরের গান (১৯৩৬)
ক্যাম্পে (১৯৩৬)
আকাশলীনা (১৯৪৮)
বনলতা সেন (১৯৫২)
বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি (১৯৫৭)

উপন্যাস সমূহ

• মাল্যবান
• সতীর্থ
• চারজন
• পূর্ণিমা
• কল্যাণী
• নিরুপম যাত্রা
• জলপাইহাটি
• বাঁশমতির উপাখ্যান

জীবনানন্দ দাশের
প্রবন্ধ সংগ্রহ
সাহিত্য পত্রিকা

• ব্রাহ্মবাদী
• কল্লোল
• কালি-কলম
• পরিচয়
• শনিবারের চিঠি
• কবিতা প্রগতি

কবি জীবনানন্দ দাশ এর কবিতা

আমি যদি হতাম

আমি যদি হতাম বনহংস,
বনহংসী হতে যদি তুমি;
কোনো এক দিগন্তের জলসিঁড়ি নদীর ধারে
ধানক্ষেতের কাছে
ছিপছিপে শরের ভিতর
এক নিরালা নীড়ে;
.
তাহলে আজ এই ফাল্পুনের রাতে
ঝাউয়ের শাখার পেছনে চাঁদ উঠতে দেখে
আমরা নিম্নভূমির জলের গন্ধ ছেড়ে
আকাশের রুপালি শস্যের ভিতর গা ভাসিয়ে দিতাম-
.
তোমার পাখনায় আমার পালক, আমার পাখনায় তোমার রক্তের স্পন্দন-
নীল আকাশে খইক্ষেতের সোনালি ফুলের মতো অজস্র তারা,
শিরীষ বনের সবুজ রোমশ নীড়ে
সোনার ডিমের মতো
ফাল্গুনের চাঁদ।
হয়তো গুলির শব্দঃ
আমাদের তির্যক গতিস্রোত,
আমাদের পাখায় পিস্টনের উল্লাস,
আমাদের কন্ঠে উত্তর হাওয়ার গান!

কবি জীবনানন্দ দাশ কে নিয়ে ফ্যাশন হাউজ নিত্যউপহার এর পোশাক ডিজাইন।
পাওয়া যাবে Nitya Upahar এর শো রুমে এবং অনলাইনে অর্ডার করা যাবে।


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম


তথ্যসূত্র :

উইকিপিডিয়া

dailyinqilab.com

bangla.bdnews24.com

somewhereinblog.net


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

আপনার একটি শেয়ার আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা

X (Twitter)
Post on X
Pinterest
fb-share-icon
Instagram
FbMessenger
Copy link
URL has been copied successfully!
Skip to content