জামদানি বুননে একই সাথে দুজন তাঁতি কাজ করেন। যিনি মুল ব্যাক্তি তাকে ওস্তাদ বলে সম্বোধন করা হয় । মূল তাঁতির সাথে সহকারী হিসেবে যে থাকেন তাকে সাগরেদ বলা হয়। সে ওস্তাদের নির্দেশনা পালন করে থাকে।একজন সাগরেদ কাজ করতে করতে হাতের পরিপক্ক হলেই ওস্তাদে পরিনত হয়। তাই প্রত্যেকেই তার ওস্তাদ এবং তাঁতের সম্মানার্থে “ জামদানি তাঁতে বসার দোয়া “ পাঠ করে কাজ শুরু করে ।
এ কালের শ্রেষ্ঠ জামদানি ওস্তাদ হিসাবে স্বীকৃত হাজি কফিল উদ্দিন ভূঁইয়া ভাষ্যমতে, বালক বয়সে তাঁতে বসার আগে তিনি যে দোয়াটি পাঠ করতেন, তা হিন্দু দেবতা বিশ্বকর্মার উদ্দেশ্যে , দেবতা হিসাবে নয় বরং গুরু ধার্যে ।
জামদানি তাঁতে বসার দোয়া
বিশ্বকর্মা ধলেশ্বরী
ওস্তাদের চরন ধরি
যে কাম ওস্তাদে শিখায়
সে কাম শিক্ষা করি
মা লক্ষ্মী ভর কর
অলক্ষ্মী দূর কর ।
দোয়াটি শেষ হতো বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দিয়ে । আজ অবধি কিছু তাঁতি এই দোয়া পড়েই তাঁতে বসেন । জামদানি তাঁতিদের এই লোকাচার এবং রীতিনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়টি লক্ষ্য করা যায় ।

জামদানি নকশা বোনার বুলি
জামদানির আভিজাত্যই বলি আর অহংকারই বলি, সেটা হচ্ছে তার নকশায়। আর এক একটি নকশা ফুটিয়ে তুলতে যে অতুলনীয় পদ্ধতি আপনাকে ভাবনায় ফেলে দিবে । বলা হয় বিগত কাল থেকে জামদানি তাঁতিরা নকশাগুলোকে বুলির আকারে মুখস্থ করতেন । আর এই বুলির মধ্যেই নির্দেশনা থাকত এক একটা নকশার সুত্র । নকশা ভেদে বুলির পরিবর্তন হত ।
উদাহরণ স্বরূপ
পাঁচ খেও পিছা ধইরে
ছয় খেও জিগির রাইখে,
ঠেলা মুধ্যে আর এক পিছা
ডাইনে গারো এক খেও,
বাঁয়ে পিছা বারে এক খেও ।
Book Reference | Traditional Jamdani
জামদানি বোনার বুলি
হমান বোন
হইরে বারে
প্যাঁচে বারে
ঘাটাইল খেও
বাদে ঘাটে ।
এরকম অসংখ্য নকশার সুত্র একজন সাগরেত তার ওস্তাদের কাছ থেকে রপ্ত করে ।
