নামকরণ ও উৎপত্তি
মাদার গানের মূল উপজীব্য হল শাহ মাদার নামক পীরের গুণগান। মাদার অনুসারীদের বিশ্বাস, মাদার পীর একজন মারেফতি পীর, যার আধ্যাত্মিক ক্ষমতার কাহিনী লোকমুখে প্রচলিত। কথিত আছে, বেহেস্ত থেকে হারুত-মারুত নামক ফেরেশতাদের পৃথিবীতে আসার পর তাদের মানবীয় দুর্বলতার ফলেই মাদার পীরের জন্ম। যদিও এই কাহিনীর ঐতিহাসিক প্রমাণ মেলে না, এটি মাদার গানের আধ্যাত্মিক দিকটিকে আরও গভীর করেছে।
এ গানের উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশের নাটোর জেলার চলনবিল অঞ্চলে এছাড়া দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, কুষ্টিয়া, নেত্রকোনাসহ আরও কয়েকটি অঞ্চলে এ গান মাদারের বাঁশ তোলা বা মাদার বাঁশের জারি নামে প্রচলিত।
মাদার গানের সঙ্গীতধারা ও কাব্যরীতি
গ্রামবাংলার মানুষেরা রোগমুক্তি এবং অমঙ্গল থেকে রক্ষা পেতে মাদার পীরের কাছে মানত করেন। এই মানতের অংশ হিসেবে মাদার গানের আয়োজন করা হয়।
মাদার গানের অনুষ্ঠানে প্রধান বয়াতি একটি বাঁশঝাড় থেকে এক কোপে বাঁশ কাটেন। এরপর সেটিকে নদীতে স্নান করিয়ে লাল কাপড়ে মুড়িয়ে গৃহস্থ বাড়ির নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপন করেন। এই বাঁশ মাদার পীরের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং এটি ভূমি স্পর্শ করতে দেওয়া হয় না। এরপর মাদার পীরের বন্দনা করে পালাগানের আয়োজন করা হয়।
মাদার গানের পালাগানগুলোতে মাদার পীর, তার শিষ্য জুমল শাহ এবং আরও অনেক চরিত্র থাকে। এছাড়া থাকেন কয়েকজন দোহার-বায়েন। সবাই গোল হয়ে একটি পাটিতে বসেন যাদের চারপাশে ঘুরে ঘুরে মাদার পীর ও জুমল শাহ গান গাইতে থাকেন।
এবং নাচে যারা অংশ নেয় তারা চোখ ঝলসানো সাজগোজ করে থাকে। চুমকী বসানো শাড়ী বা ঘাগরা, জরির ওড়না, মুখে-হাতে রং মেখে এরা নাচে অংশ নেয়। মাদার পীরের পোশাক থাকে দরবেশের মতো। মাথায় তাজ, পরনে লম্বা আলখাল্লা, গলায় তসবি, আর হাতে থাকে একটি লাঠি। পা থাকে পাদুকাহীন, কখনও বা বেড়ি পড়ানো। জুমল শাহ ও অন্যান্য দোহার-বায়েনরা সাধারণ পোশাক ধুতি বা লুঙ্গি পরিধান করে। হারমোনিয়াম, ঢোল, কাসর, মন্দিরা বাজিয়ে এরা গান ও অভিনয়ে অংশ নেয়।
উল্লেখযোগ্য পালাগানের মধ্যে রয়েছে মাদারের জন্ম খণ্ড, কুলসুম বিবির পালা, মাদারের ওরসনামা, বড় পীরের পালা, জুমলের জন্মকাহিনী, হাশর-নাশর ইত্যাদি।
“জুমলের জন্মকাহিনী” মাদার গানের একটি জনপ্রিয় পালা। এতে মাদার পীরের শিষ্য জুমল শাহের জীবনকাহিনী বর্ণনা করা হয়। তার আত্মত্যাগ এবং আধ্যাত্মিক অভিযানের গল্প দর্শকদের মধ্যে এক গভীর অনুভূতির জন্ম দেয়।
মাদার গানের সুর ও তাল অত্যন্ত মরমী এবং হৃদয়গ্রাহী। এতে সাধারণত ঢোল, করতাল, হারমোনিয়াম ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয়। গানের ভাষা সহজ ও প্রাঞ্জল, যাতে আধ্যাত্মিক বার্তা সহজেই সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায়।
প্রতীক ও ধর্মীয় প্রাসঙ্গিকতা
মাদার গানের বাঁশ এবং লাল কাপড় আধ্যাত্মিকতার প্রতীক হিসাবে উপস্থাপন করা হয়। বাঁশ মাদার পীরের শক্তির প্রতীক, এবং লাল কাপড় তার মর্যাদা ও আধ্যাত্মিকতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই প্রতীকগুলোর মাধ্যমে ধর্মীয় বিশ্বাস এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মেলবন্ধন ঘটেছে।



আপনার একটি শেয়ার এবং মন্তব্য আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা ❤️
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

মাদার পীরের গান: নাটোরের চলনবিল থেকে যার উৎপত্তি
fayze hassan
অগ্রহায়ণের নবান্ন: বাংলার কৃষি ঐতিহ্যের মহোৎসব
bdfashion archive
আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস | International Museum Day
bdfashion archive
গ্রাফিতি | GRAFFITI
bdfashion archive
ভাগ্যের চিরকুট দিবে টিয়া পাখি | Parrot astrology
bdfashion archive