১৯৯৩ সালের ২৫শে মার্চ। হিন্দি কেয়ামত সে কেয়ামত তক ছবির কপিরাইট বৈধভাবে কিনে আনন্দমেলা সিনেমা লিমিটেড পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানকে দিয়ে তৈরী করে কেয়ামত থেকে কেয়ামত। সেসময়কার জনপ্রিয় মডেল আনন্দবিচিত্রা সুন্দরী মৌসুমীর সাথে অভিনয় করেন অপেক্ষাকৃত স্বল্প পরিচিত ইমন অর্থ্যাত সালমান শাহ ।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সর্বকালের আলোচিত ও সুদর্শন নায়ক সালমান শাহ। সালমান শাহের আসল নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। বাবা কমরউদ্দি চৌধুরী ও মা নীলা চৌধুরী। দুই ভাইয়ের মধ্যে সালমানই বড়
টিভিতে সালমান, মানে ইমনের পদচারনা অনেক আগে থেকেই। ডঃ ইনামুল হক চৌঃ রচিত ১৯৮৪ সালের নাটক “সৈকতে সারস” -এ তাকে প্রথম দেখা যায়। তারপর ৮৫-৮৬ সালের দিকে হানিফ সংকেতের গ্রন্থনায় কথার কথা নামে একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান প্রচারিত হত। এর একটি পর্বে ‘নামটি ছিল তার অপূর্ব’ নামের একটি গানের মিউজিক ভিডিও পরিবেশিত হয়। হানিফের সংকেতের স্বকন্ঠে গাওয়া এই গান এবং মিউজিক ভিডিও দুটোই অনুষ্ঠানের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত। একজন সম্ভাবনাময় সদ্য তরুন তার পরিবারের নানারকমের ঝামেলার কারনে মাদকাসক্ত হয়ে মারা যায়, এই ছিল গানটার থিম। গানের প্রধান চরিত্র অপূর্বর ভূমিকায় অভিনয়ের মাধ্যমেই সালমান শাহ মিডিয়াতে প্রথম আলোচিত হন। তখন অবশ্য তিনি ইমন নামেই পরিচিত ছিলেন। মিউজিক ভিডিওটি জনপ্রিয়তা পেলেও নিয়মিত টিভিতে না আসার কারনে দর্শক আস্তে আস্তে ইমনকে ভুলে যায়। আরও কয়েক বছর পর অবশ্য তিনি আব্দুল্লাহ আল মামুনের প্রযোজনায় পাথর সময় নাটকে একটি ছোট চরিত্রে এবং কয়েকটি বিজ্ঞাপনচিত্রেও কাজ করেছিলেন।
১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিটি দর্শক দেখল আর মন্ত্রমুগ্ধের মত আবিষ্কার করল এক নবাগত নায়কের অসাধারণ অভিনয়শৈলী। চলচ্চিত্রপ্রেমিরা হলমুখী হলো, পরিচালকরা আস্বস্ত হলেন, সুদিন ফিরে এসেছিল বাংলা চলচ্চিত্রের। এরপর থেকে বাংলা চলচ্চিত্রে উপহার দিতে থাকলেন একে একে দুর্দান্ত ২৭টি ছবি। তাঁর অভিনীত ৯৫ ভাগ চলচ্চিত্র সুপারহিট এবং ব্যবসা সফল হয়। ঠিক যেন রূপকথার রাজপুত্তুর। এলেন, অভিনয়ের যাদু দেখালেন, আবার সবার মন জয় করে কাউকে কিচ্ছুটি না বলে না ফেরার দেশে চলেও গেলেন। হাজার হাজার ভক্তদের কাঁদিয়ে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর থামিয়ে দিলেন তার জীবনরথ।
সাতাশ বছর পরেও যে রহস্য আজও অজানা। সেই গল্পের নায়কের মৃত্যুবার্ষিকীতে
শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি
বাংলাদেশি বাংলা ছবির প্রায় ৫০ বছরের ইতিহাসে সেই প্রাচীন আমলে রহমান এবং নায়করাজ রাজ্জাকের পর সালমানই একমাত্র নায়ক যিনি সর্বমহলে তার গ্রহনযোগ্যতা তৈরী করতে এবং তরুনদের স্টাইল আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছিলেন। বাংলা ছবির নায়কদের মধ্যে সালমান ছাড়া অন্য কারো ফ্যাশন, স্টাইল লোকে তার আগে বা পরে কখনোই অনুসরন করেনি।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
তথ্যসূত্র :
somewhereinblog.net
banglainsider.com
উইকিপিডিয়া