
আপনার একটি শেয়ার আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা
প্রারম্ভিক এবং ব্যাক্তিগত জীবন
তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতে বরিশাল জেলার অন্তর্গত চরবাড়িয়া ইউনিয়নের লামছড়ি গ্রামে এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। যা ছিলো বরিশাল শহর থেকে ৭/৮ কিলোমিটার দূরে। বাংলা ১৩০৭ সনের ৩রা পৌষ (১৯০০ সালের ১৭ই ডিসেম্বর ) এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে আরজ আলী মাতুব্বর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম এন্তাজ আলী মাতুব্বর। তার মা অত্যন্ত পরহেজগার ছিলেন। পরিবারে তারা ছিলেন পাঁচ ভাইবোন। আরজ আলী মাতুব্বরের প্রকৃত নাম ছিলো ‘আরজ আলী’। আঞ্চলিক ভূস্বামী হওয়ার সুবাদে তিনি ‘মাতুব্বর’ নাম ধারণ করেন। মাত্র চার বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে পরিবারটি দেনার দায়ে বসতবাটি ও জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়।
তিনি নিজ গ্রামের মুন্সি আবদুল করিমের মক্তবে সীতানাথ বসাকের কাছে ‘আদর্শলিপি’ পড়তেন। দরিদ্রতার কারণে মক্তব ছাড়তে হলেও পরে এক সহৃদয় ব্যক্তির সহায়তায় তিনি স্কুলের প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। সাথে সাথে তিনি নিজের ঐকান্তিক চেষ্টায় লেখাপড়া শিখতে থাকেন।
পৈতৃক পেশা কৃষিকাজ দিয়েই তার কর্মজীবনের শুরু। কৃষিকাজের অবসরে জমি জরিপের কাজ করে তিনি আমিনি পেশার সূক্ষ্ম গাণিতিক ও জ্যামিতিক নিয়ম সম্পর্কে অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেন।
আর্থিক সঙ্কটের কারণে, মাতুব্বর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কোর্স বা ডিগ্রী লাভ করতে পারেন নি। কৃষিকাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি জমি জরিপ বা আমিনের কাজ শিখে নেন। এরপর জমি জরিপের কাজকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। কৃষি ক্ষেতের জন্য এভাবে কিছু পুঁজি জমা করেন। নিজের শ্রম, মেধা, বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে তিনি আর্থিক অবস্থার উন্নতি করেন এবং জমিদার ও মহাজনদের কাছে বন্ধককৃত জমিজমা উদ্ধার করেন
আরজ আলী মাতুব্বর ২৯ অগ্রহায়ণ ১৩২৯ সালে লালমন্নেছাকে বিয়ে করেন। বিয়ের সময় কনের বয়স ছিল ২১ বছর। তাদের তিন মেয়ে :এশারন নেছা, ছলেমান নেছা এবং ফয়জন্নেছা; একছেলে: আব্দুল মালেক। পরে তিনি পাশের গ্রামের আব্দুল করিম মৃধার মেয়ে সুফিয়াকে বিয়ে করেন। এই সংসারে তাদের চারটি মেয়ে : হাজেরা খাতুন, মনোয়ারা খাতুন, নূরজাহান বেগম ও বায়াম্মা বেগম; দুই ছেলে : আবদুল খালেক ও আবদুল বারেক। তিনি দশ সন্তানের জনক ছিলেন।
মুক্তচিন্তা ও জ্ঞানচর্চা
মানুষ ও জীবন সম্পর্কে প্রশ্ন জাগলে তিনি এই বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। লাইব্রেরি ছিল তাঁর জীবনের প্রধান আনন্দক্ষেত্র। বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি থেকে বই এনে পড়েছেন এবং একপর্যায়ে নিজের অর্জিত সম্পদ দিয়ে ‘আরজ মঞ্জিল পাবলিক লাইব্রেরি’ প্রতিষ্ঠা করেন। লাইব্রেরি নির্মাণের খরচ কমানোর জন্য তিনি নিজেও কাজ করেছেন।
আরজ আলী বলেছিলেন, ‘বিদ্যাশিক্ষার ডিগ্রী আছে, কিন্তু জ্ঞানের কোনো ডিগ্রী নেই। জ্ঞান ডিগ্রীবিহীন ও সীমাহীন। সেই অসীম জ্ঞানার্জনের মাধ্যম স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, তা হচ্ছে লাইব্রেরি।’
তার লেখায় অনেক প্রশ্ন রেখে গেছেন। যেমন:
১। আমি কে?
২। জীবন কি শরীরী বা অপার্থিব?
৩। মন এবং আত্মা কি একই জিনিস?
৪। জীবনের সাথে শরীর বা মনের সম্পর্ক কি?
৫। আমরা কি জীবনকে চিহ্নিত করতে পারি?
৬। আমি কি মুক্ত?
৭। মরণোত্তর আত্মা শরীর বিহীন জ্ঞান ধারণ করে?
৮। কিভাবে শরীররে আত্মা প্রবেশ করে ও বের হয়?
সমাজ ও দর্শন নিয়ে চিন্তাধারা
আরজ আলী মাতুব্বরের চিন্তাগুলোর মধ্যে নারীর অধিকার, বিবাহ, সন্তানের বৈধতা ইত্যাদি বিষয় উঠে এসেছে। তিনি ধর্ম, সমাজ এবং জীবনের নানা অসংগতির উপর প্রশ্ন উত্থাপন করেন। তাঁর প্রশ্ন এবং চিন্তাধারা সমাজের রক্ষণশীল শ্রেণির কাছে ভীতিকর ছিল।
সক্রেটিসের মতো তিনিও বিশ্বাস করতেন, ‘An unquestioned life is not worth living.’ তাঁর চিন্তাধারা সামাজিক কর্তৃত্ব এবং মতাদর্শিক আধিপত্যকে অস্বীকার করবার এক ধারাবাহিক লড়াই ছিল।
পাকিস্তান সরকার আমলে তার লেখালেখির জন্য তিনি সমালোচিত ও অভিযুক্ত হয়েছিলেন। সেসময় তার লেখা-লেখি নিষিদ্ধ ছিল।
প্রকাশিত গ্রন্থ
আরজ আলীর রচিত পাণ্ডুলিপির সংখ্যা মোট ১৫টি। এর মধ্যে তার জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়েছিলো ৪টি। এই বইগুলো হলো- ‘সত্যের সন্ধান’ (১৯৭৩), ‘সৃষ্টি রহস্য’ (১৯৭৭), ‘অনুমান’ (১৯৮৩), ও ‘স্মরণিকা’ (১৯৮৮)। আরজ আলী মাতুব্বর তার প্রথম বইয়ের প্রচ্ছদও আঁকেন। বইটি লিখেছিলেন ১৯৫২ সালে। প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালে ‘সত্যের সন্ধানে’ শিরোনামে। মরণোত্তর কতিপয় কিছু অপ্রকাশিত পান্ডুলিপি আরজ আলী মাতুব্বরের রচনাবলী শিরোনামে প্রকাশিত হয়।
সম্মাননা
বাংলা একাডেমীর আজীবন সদস্য পদ
হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার
উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর বরণীয় মনীষী সম্মাননা
আপনার মন্তব্য এবং একটি শেয়ার আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা ❤️
লেখা লেখকের ফেসবুক প্রফাইল থেকে নেয়া , Facebook profile link : Selim Jahan
বিস্তারিত তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া

তারেক মাসুদ: সিনেমার ফেরিওয়ালা
bdfashion archive
বাংলার বাঘ: শেরেবাংলা এ.কে. ফজলুল হক
bdfashion archive
চন্দ্রাবতী: বাংলা সাহিত্যের প্রথম নারী কবি
rajon ahmed
জীবন্ত কিংবদন্তি বাউল শাহ আবদুল করিম: ভাটি বাংলার মাটির মানুষ
bdfashion archive
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন । Zainul Abedin
bdfashion archive