আজ মধু কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০০তম জন্মবার্ষিকী। ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোর জেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে অবস্থিত সাগরদাঁড়ি গ্রামে বাংলা সাহিত্যের আধুনিক কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত জন্মগ্রহণ করেন।
বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র, অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক হলেন মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত।বাংলা কাব্য সাহিত্যে আধুনিতকার সূচনায় সবচেয়ে বড় অবদান তার। ১৮৫৮ সালে ‘শর্মিষ্ঠা নাটক’ লিখে বাংলা ভাষায় সাহিত্যচর্চা শুরু করেন ও নাট্যান্দোলনে জড়িয়ে পড়েন তিনি। মধুসূদন রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হচ্ছে- মেঘনাদবধ কাব্য, নাটক ‘শর্মিষ্ঠা’ ও ‘পদ্মাবতী ,‘তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য’, ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ ‘দ্য কাপটিভ লেডি’, ‘দ্য এ্যাংলো সেক্সন এ্যান্ড দ্য হিন্দু’।
দ্বিশত জন্মবর্ষে মাইকেল মধুসূদন দত্ত
আপনার একটি শেয়ার আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা
কবির শৈশব এবং শিক্ষাজীবন
Early life of Michael Madhusudan Dutt
মধুসূদন দত্তের পিতা রাজনারায়ণ দত্ত এবং মায়ের নাম জাহ্নবী দেবী। পিতা কলকাতার একজন প্রতিষ্ঠিত উকিল ছিলেন আর তাই তাকে বেশির ভাগ সময়ই ব্যস্ত থাকতে হতো। তাই শৈশবে মায়ের কাছেই লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয় মধুসূদন দত্তের। মায়ের হাত ধরেই পরিচয় হয় রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণের সঙ্গে। এরপর এক ইমামের কাছ থেকে শেখেন বাংলা, আরবি, ফারসি। ১৩ বছর বয়সে সাগরদাঁড়ি থেকে কলকাতায় আসেন মধুসূদন।
কলকাতায় খিদিরপুর স্কুলে দুই বছর পড়ার পর ১৮৩৩ সালে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি বাংলা, সংস্কৃত ও ফারসি ভাষা শেখেন। হিন্দু কলেজে অধ্যয়নকালেই মধুসূদনের প্রতিভার বিকাশ ঘটে। ১৮৩৪ সালে মধুসূদন দত্ত কলেজের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ইংরেজি ‘নাট্য-বিষয়ক প্রস্তাব’ আবৃত্তি করে উপস্থিত সকলের মনে জায়গা করে নেন। কলেজের পরীক্ষায় তিনি বরাবর বৃত্তি পেতেন। এ সময় ‘নারীশিক্ষা’ বিষয়ে প্রবন্ধ রচনা করে তিনি স্বর্ণপদক লাভ করেন।
মধুসূদন বিলেতে গিয়ে ইংরেজিতে কাব্যচর্চা করার কথা ভেবেছিলেন। ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি টান থেকেই তিনি ফেব্রুয়ারি ৯, ১৮৪৩ সালে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন এবং সেই থেকেই তাঁর নামের পূর্বে ‘মাইকেল’ শব্দটি যুক্ত হয়। ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণে তার পিতা তাকে ত্যাজ্য করে এবং এক সময় অর্থ পাঠানো বন্ধ করে দেন। অগত্যা মধুসূদন ভাগ্যান্বেষণে ১৮৪৮ সালে মাদ্রাজ গমন করেন। সেখানে তিনি দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেন।
কবির কর্মজীবন
চরম দারিদ্র্যের মধ্যেও ইংরেজিতে সাহিত্য চর্চা চালিয়ে যান তিনি। ছদ্মনামে লিখেছেন পত্রিকায়ও। ‘হিন্দু ক্রনিকল’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করলেও অর্থাভাবে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। মাদ্রাজে থাকাকালীন সাহিত্যিক হিসেবে মধুসূদনের নাম ছড়িয়ে পড়ে। মাদ্রাজে বসেই তিনি হিব্রু, ফরাসি, জার্মান, ইটালিয়ান, তামিল ও তেলেগু ভাষা শিক্ষা করেন।
মধুসূদন দত্ত মনে করতেন যে, বিলেতে গেলেই বড়ো মানের কবি হওয়া সম্ভব। আর তাই তিনি হিন্দু কলেজের ছাত্র থাকা সময় থেকেই স্বপ্ন দেখতেন বিলেত যাওয়ার। তিনি বিখ্যাত ইংরেজি কবি হতে চেয়েছিলেন, আর তাই শুরুর দিকে ইংরেজিতেই সাহিত্যচর্চা করতেন। যদিও ইংরেজিতে তিনি প্রবন্ধ লিখতেন বেশি। কিন্তু তাঁর বন্ধুবান্ধবরা তাঁকে বাংলায় সাহিত্যচর্চা করতে অনুরোধ জানান এবং তিনি নিজেও ভেতর থেকে এরূপ একটি তাগিদ অনুভব করেন। এই তাগিদ থেকেই তিনি বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনা শুরু করেন। মাতৃভাষায় সাহিত্য চর্চা করেই তিনি সফল হয়েছিলেন সঙ্গে বাংলা সাহিত্যকেও নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়।
১৮৬০ সালে মাইকেল মধুসূদন দত্ত গ্রিক পুরাণ থেকে কাহিনী নিয়ে রচনা করেন ‘পদ্মাবতী’ নাটক। এ ‘পদ্মাবতী’ নাটকেই মধুসূদন দত্ত প্রথম ও পরীক্ষামূলকভাবে ইংরেজি কাব্যের অনুকরণে অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার বরেন।
বাংলা কাব্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দের ব্যবহারে সফলতা তাঁকে ভীষণভাবে উৎসাহিত করে। ১৮৬০ সালেই অমিত্রাক্ষর ছন্দে মাইকেল মধুসূদন দত্ত পুনরায় রচনা করেন ‘তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য’। ১৮৬১ সালে আরেক মহাকাব্য ‘রামায়ণ‘ অবলম্বনে একই ছন্দে মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচনা করেন তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি মহাকাব্য ‘মেঘনাদবধ কাব্য’। মহাকাব্য ছাড়াও তিনি গীতিকাব্য, সনেট, পত্রকাব্য, নাটক, প্রহসন ইত্যাদি রচনা করেছেন।
মধুসূদনের শেষ জীবন
Death of Michael Madhusudan Dutt
অমিতব্যয়ী স্বভাবের জন্য তিনি ঋণগ্রস্তও হয়ে পড়েন। আইন ব্যবসায়ে তিনি তেমন সাফল্য লাভ করতে পারেননি। মধুসূদনের শেষ জীবন চরম দুঃখ ও দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। জীবনের শেষ দুই বছর কবির নিদারুণ দুর্দশায় সহায়তার কেউ হাত প্রসারিত করেনি। এই অসহায় এবং অর্থাভাব অবস্থায় কবিপত্নী হেনরিয়েটা মৃত্যু চার দিনের মাথায় ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন বেলা ২টায় ঘুমিয়ে পড়লেন চিরদিনের জন্যে
কবিতা তাকে যশ দিয়েছিল; অন্ন ও প্রতিষ্ঠা দেয়নি।
তথ্যসূত্র : barta24.com
.banglanews24.com
bd-journal.com
en.wikipedia.org