সরার বিভিন্ন নাম
সরার বিভিন্ন নাম এবং ব্যবহারভেদেও পার্থক্য রয়েছে, যেমন: ঢাকনাসরা, ফুলসরা, ধূপসরা, মুপিসরা, তেলনিসরা, আমসরা, এয়োসরা, আঁতুরসরা, গাজীর সরা, লক্ষ্মীসরা ইত্যাদি। সব সরাই চিত্রিত নয়, তবে অঙ্কিত বা চিত্রিত সরা বাংলার মৃৎশিল্পের ঐতিহ্যে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
ধর্মীয় প্রতীক
সরা এক সময় শুধুমাত্র লোকজীবনের প্রয়োজন পূরণের জন্য ব্যবহৃত হলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি ধর্মীয় প্রতীক হিসেবেও স্থান করে নিয়েছে। হিন্দু-মুসলমান উভয় ধর্মের লোকই সরা ব্যবহার করতেন। মুসলমানদের সরায় কাবা শরিফের ছবি এবং বিভিন্ন সংখ্যা বা ধর্মীয় বাক্য লেখা থাকত। গনকী সরা নামে পরিচিত একটি ধরনের সরায় বাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কালিমা লেখা থাকত, যা বাড়ির চারপাশে ঝুলিয়ে দেওয়া হতো।
সনাতন ধর্মে লক্ষ্মীর সরার বিশেষ গুরুত্ব ছিল। একসময় প্রত্যেক হিন্দু গৃহস্থ বাড়ির দরজায় লক্ষ্মীর সরা শোভা পেত, যা ব্যবসায়িক মঙ্গল কামনায়ও ব্যবহৃত হতো। লক্ষ্মীর সরা বাংলার সুপ্রাচীন চিত্রকলার নিদর্শন বহন করে। তখনকার দিনে ফটোগ্রাফি ছিল না, তাই শিল্পীরা পোড়ামাটির সরার উপর প্রাকৃতিক রঙ ব্যবহার করে লক্ষ্মীর পটচিত্র আঁকতেন। শারদ পূর্ণিমা উপলক্ষে হিন্দু অব্রাহ্মণরা লক্ষ্মীর পট বসিয়ে পূজা করতেন।
সরা শুধুমাত্র ধর্মীয় দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি বাংলার লোকশিল্পের প্রাচীন ও ঐতিহ্যমণ্ডিত একটি শিল্পরূপ। যদিও সরাশিল্প বর্তমানে প্রায় বিলুপ্তির পথে, কিছু এলাকায় এখনো এটি তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশে চার ধরনের লক্ষ্মীর সরা পাওয়া যায়—ঢাকাই সরা, ফরিদপুরী সরা, সুরেশ্বরী সরা এবং গণকী সরা।
মানিকগঞ্জের লক্ষ্মীসরা
মানিকগঞ্জেও ‘জয়া-বিজয়া সরা’ নামে এক বিশেষ ধরনের লক্ষ্মীর সরার দেখা মেলে। এখানকার বেতিলা-মিতরা অঞ্চলের কুম্ভকারেরা তা তৈরি করেন। রং দেখেই নিশ্চিত হওয়া যায় এটি সেখানকার সরা। এর একটিতে থাকে দেবী লক্ষ্মী (হলুদ) এবং অন্যটিতে দেবী সরস্বতী (সাদা)। ঢাকার দোহারে একে বলা হয় ‘লক্ষ্মী-সরস্বতী সরা’।
নকশা ও বৈশিষ্ট্য: মানিকগঞ্জের লক্ষ্মীসরাগুলোতে প্রায়ই সরল এবং মসৃণ নকশা দেখা যায়। এ অঞ্চলের লক্ষ্মীসরা ছোট এবং নকশার ক্ষেত্রে কিছুটা সরলতার শৈলী অনুসরণ করে। সরার উপরে লক্ষ্মীর চিত্রসহ কিছু সাধারণ মোটিফ ব্যবহার করা হয়, যেমন ধানের শীষ এবং অন্যান্য শুভ প্রতীক। মানিকগঞ্জের লক্ষ্মীসরাতে সাধারণত লাল এবং সাদা রঙের ব্যবহার বেশি দেখা যায়। লাল রঙকে শুদ্ধতার এবং শক্তির প্রতীক হিসেবে ধরা হয়, যা লক্ষ্মী দেবীর সাথে জড়িত।
ফরিদপুরের লক্ষ্মীসরা:
ফরিদপুরী’ বা ‘সুরেশ্বরী সরা’ বলেই বেশি পরিচিত।
নকশা ও বৈশিষ্ট্য: ফরিদপুরের লক্ষ্মীসরাতে অনেক বেশি জটিল নকশা দেখা যায়। সরার গায়ে সূক্ষ্ম এবং বিস্তারিত চিত্রকর্ম করা হয়, যাতে দেবী লক্ষ্মী এবং সরস্বতীর আরও বেশি শৈল্পিক উপস্থাপনা থাকে। এছাড়াও, ফরিদপুরের লক্ষ্মীসরা আকারে কিছুটা বড় হয় এবং এতে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতীক ব্যবহার করা হয়।
রং: ফরিদপুরের লক্ষ্মীসরাতে রংয়ের ক্ষেত্রে আরও বৈচিত্র্য দেখা যায়। লাল, সাদা, হলুদ, কমলা এবং সোনালী রং ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে, ফরিদপুরের সরার রঙিন চিত্রকর্মগুলো ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে আরও রঙিন এবং জাঁকজমকপূর্ণ করে তোলে।




আপনার একটি শেয়ার আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা
উইকিপিডিয়া,
canvasmagazine.com.bd
artisan.gov.bd
আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম লিংক

লালনের ছেউড়িয়া থেকে গ্রামবাংলার মেলা—বাংলাদেশের একতারা শিল্প
fayze hassan
পাটশিল্পের পুনর্জাগরণ: গ্রামীণ কারুশিল্প থেকে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিং
fayze hassan
বাংলাদেশের পাটশিল্প: ঐতিহ্য, বর্তমান অবস্থা ও সোনালি আঁশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
bdfashion archive
রাজশাহী সিল্ক: প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে আসা ঐতিহ্য
fayze hassan
তারেক মাসুদ: সিনেমার ফেরিওয়ালা
bdfashion archive
কোমর তাঁত: পার্বত্য অঞ্চলের গাঁথা ইতিহাস ও সংস্কৃতি
fayze hassanআরও পড়ুন -
-
লালনের ছেউড়িয়া থেকে গ্রামবাংলার মেলা—বাংলাদেশের একতারা শিল্প
-
পাটশিল্পের পুনর্জাগরণ: গ্রামীণ কারুশিল্প থেকে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিং
-
বাংলাদেশের পাটশিল্প: ঐতিহ্য, বর্তমান অবস্থা ও সোনালি আঁশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
-
রাজশাহী সিল্ক: প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে আসা ঐতিহ্য
-
কোমর তাঁত: পার্বত্য অঞ্চলের গাঁথা ইতিহাস ও সংস্কৃতি