প্রকৃতিকে ভালোবাসে বলেই মানুষ প্রকৃতির সংস্পর্শে আসতে চায়। প্রকৃতিও তার সৌন্দর্যের অপরূপ ভাণ্ডার মেলে ধরে কাছে টানে। এক লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার বর্গকিলোমিটারের এই ব দ্বীপে পরিচিত অপরিচিত দর্শনীয় স্থানের অভাব নেই। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক লীলা নিকেতন । এদেশে রয়েছে পাহাড়, সাগর, মাঠ, বিশাল নীল আকাশ– যা এক অপূর্ব সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে। পাহাড়, জলপ্রপাত, বনভূমি, নদী এদেশকে করে তুলেছে অপূর্ব রূপময়। বিশাল সৌন্দর্য ভান্ডার থেকে বাংলাদেশের সুন্দরবন | SUNDARBAN সম্পর্কে জানা যাক ।
সুন্দরবন | SUNDARBAN
সুন্দরবন হলো বাংলাদেশের ফুসফুস । পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন বা লবণাক্ত বনাঞ্চল। যা যৌথভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অবস্থিত। বৃক্ষ বিস্ময়’ বলা হয় সুন্দরবনকে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যে ভরপুর সুন্দরবন।
বাংলাদেশের উপকূল ধরে বিস্তৃত ২১°৩০´-২২°৩০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০০´-৮৯°৫৫´ পূর্ব দ্রাঘিমার মধ্যবর্তী স্থানে এ বনের অবস্থান। সুন্দরবন বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও বরগুনা অঞ্চল জুড়ে রয়েছে । ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার বাংলাদেশে ভিতরে। ৬২% রয়েছে বাংলাদেশে এবং বাকি অংশ ৩৮% রয়েছে ভারতের মধ্যে।
৬ ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।
সুন্দরবনের নামকরন
দ্বীপমালা সুন্দরবনের নামকরণ নিয়ে রয়েছে নানান মত। অনেকে মনে করেন, নামটির আক্ষরিক অর্থেই নিহিত রয়েছে তার পরিচয় । সুন্দরবন অর্থ সুন্দর জঙ্গল বা সুন্দর বনভূমি। সুন্দরবন নামের সম্ভাব্য আরেকটি উৎস মনে করা হয় সমুদ্রকে। সমুদ্রের তীরে বনের অবস্থান বলে ‘সমুদ্র বন’ থেকে কালক্রমে এর নাম হয়েছে সুন্দরবন- এমনটি ধারণা করেন অনেকে।
তবে অন্য এক জনশ্রুতিও আছে সুন্দরী গাছের পক্ষে। সাধারণভাবে গৃহীত ব্যাখ্যাটি হলো এখানকার প্রধান উদ্ভিদ সুন্দরী বৃক্ষের নাম থেকেই এ বনভূমির নামকরণ হয়েছে।
স্বীকৃতি
- সুন্দরবন ৬ ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।
- ১৯৯২ সালের ২১ মে সুন্দরবন রামসার স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ
রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থল হলো সুন্দরবন। সুন্দরবনে প্রায় ২৮৯ প্রজাতির স্থলজ প্রাণী বাস করে। রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়া সুন্দরবনের উল্লেখযোগ্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে রয়েছে চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, রেসাস বানর, বন বিড়াল, সজারু, উদ বিড়াল এবং বন্য শূকর।
সরীসৃপের প্রজাতির মধ্যে সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় সদস্য মোহনার কুমির। সাপের মধ্যে রাজগোখরা, অজগর, কেউটে এবং কয়েক প্রজাতির সামুদ্রিক সাপ উল্লেখযোগ্য।
এখানকার অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি হলো মৌমাছি । স্থানীয়ভাবে পরিচিত মৌয়ালদের পেশা মধু সংগ্রহ করা। তারা বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে বন থেকে মধু সংগ্রহ করে।
সুন্দরবনের প্রধান বনজ বৈচিত্রের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সুন্দরী, গেওয়া, গরান এবং কেওড়া । ১৯০৩ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের হিসেব মতে সর্বমোট ২৪৫টি শ্রেণী এবং ৩৩৪টি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে এখানে।
শিল্প
নিউজপ্রিন্ট, দেয়াশলাই, হার্ডবোর্ড, নৌকা, আসবাবপত্র সুন্দরবন থেকে আহরিত কাঁচামালের উপর নির্ভরশীল। এছাড়া রয়েছে ঘর ছাওয়ার পাতা, মধু, মৌচাকের মোম, মাছ, কাঁকড়া এবং শামুক-ঝিনুক।

সুন্দরবনে ঘোরাঘুরি
- করমজল
- হারবাড়িয়া
- কাছখালি
- কটকা
- কটকা বীচ
- জামতলা সৈকত
- মান্দারবাড়িয়া সৈকত
- হিরন পয়েন্ট
- এবং দুবলার চর।
সুন্দরবন কিভাবে যাবো
সুন্দরবনে একা ভ্রমনের সুযোগ নেই। এখানে ভ্রমণ করতে চাইলে ফরেস্ট অফিসার থেকে নির্ধারিত ফি দিয়ে অনুমতি নিতে হবে, সাথে নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে ঘুরতে যেতে হবে।
বাস এ গেলে ঢাকা থেকে সোহাগ পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ এবং ঈগল পরিবহণ করে খুলনায় পর্যন্ত। লঞ্চ এ গেলে ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে লঞ্চ নিয়মিত ছেড়ে যায় খুলনার উদ্দেশ্যে । আর ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকা থকে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেন সকালে এবং চিত্রা এক্সপ্রেস সন্ধ্যায় ছেড়ে যায় খুলনার উদ্দেশ্যে। খুলনার কাটাখালি নামক জায়াগায় নেমে সেখান থেকে বাস, সিএনজি করে মংলা যাওয়া যায়। মংলা হয়ে সুন্দরবন । মংলা থেকে লঞ্চে ৩ ঘণ্টার মত সময় লাগবে।
সোর্স-
জাতীয় পত্রিকা
আরও পড়ুন
মুঘল স্থাপত্যের মায়াবি ছোঁয়া: সুরা মসজিদ
তারা মসজিদ: পুরান ঢাকার ঝলমলে তারার ঐতিহ্য
তারা মসজিদStar Mosque পুরান ঢাকার আরমানিটোলার আবুল খয়রাত সড়কে দাঁড়িয়ে আছে এক ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য—তারা মসজিদ।…
কাপ্তাই লেক: বাংলাদেশের প্রকৃতির এক অপরূপ নিদর্শন
কাপ্তাই লেকKaptai Lake প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে মোড়ানো রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই লেক এমন একটি স্থান, যেখানে…
মথুরাপুর দেউল
বগা লেক: বাংলাদেশের প্রকৃতির অপরূপ রত্ন
সবুজ পাহাড়ের হ্রদের রহস্যময় ডাক আপনি কি প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্য আর দুঃসাহসিক অভিযানের স্বাদ নিতে…