Helal Hafiz কবি হেলাল হাফিজ x bfa x fxyz web

কবিতায় আগুন জ্বালিয়ে রাখা এক কবি: হেলাল হাফিজ

ব্যক্তিজীবনে খুব শান্ত আর অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষ হলেও তিনি ছিলেন প্রবলভাবে রাজনীতি সচেতন, কিন্তু চরিত্রে ছিলেন বোহেমিয়ান। বিয়ে করেননি কোনদিন।

প্রেম ও দ্রোহের কবি হেলাল হাফিজ মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে(১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ) শাহবাগের সুপার হোম হোস্টেল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

Helal
Hafiz

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের সময় তার লেখা কবিতার দুইটি লাইন ‘এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়; এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়,’ রাজনৈতিক স্লোগানে পরিণত হয় এবং এখনো পর্যন্ত এটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশিবার ব্যবহৃত রাজনৈতিক স্লোগান। যদিও হেলাল হাফিজের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮৬ সালে। যা এ পর্যন্ত ৩৩ বারেরও বেশি মুদ্রিত হয়েছে। হেলাল হাফিজ নিজে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, কবিতাটি ওই সময় কোনো পত্রিকা প্রকাশ করার সাহস পায়নি। কিন্তু কবিতার প্রথম দুটি লাইন আহমদ ছফা এবং কবি হুমায়ুন কবির ১৯৬৯ সালে একরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়াল লিখন করে দিয়েছিলেন।এরপর ছাত্রাবস্থাতেই কবি হিসেবে তারকা খ্যাতি পেয়ে যান হেলাল হাফিজ।

তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতা একাত্তর’ ২০১২ সালে প্রকাশিত হয়। তারপর ২০১৯ সরন্থ ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’ প্রকাশিত হয়। তার কবিতায় প্রেম, দ্রোহ এবং রাজনৈতিক চেতনার সমন্বয় দেখা যায়, যা তাকে সমসাময়িক কবিদের মধ্যে বিশেষভাবে আলাদা করেছে। ব্যক্তিজীবনে খুব শান্ত আর অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষ হলেও তিনি ছিলেন প্রবলভাবে রাজনীতি সচেতন, কিন্তু চরিত্রে ছিলেন বোহেমিয়ান। বিয়ে করেননি কোনদিন। জীবনের বড় একটি সময় কাটিয়েছেন তোপখানা রোড আর সেগুনবাগিচার আবাসিক হোটেলে, রোজ খেতে যেতেন জাতীয় প্রেসক্লাবে।



EKUSHEY PADAK

মরণোত্তর সম্মান: একুশে পদক এবং আমাদের সময়মতো স্বীকৃতির অভ্যাস

কবি হেলাল হাফিজ, যার শব্দের জাদু আমাদের হৃদয়ে অবিনশ্বর স্মৃতি হয়ে থাকবে, ২০২৫ সালে মরণোত্তর একুশে পদক পেয়েছেন। এটি নিঃসন্দেহে তাঁর শিল্প ও সাহিত্যজগতে অবদানের এক গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—এই সম্মান কি তাঁর জীবদ্দশায় দেওয়া সম্ভব ছিল না?

হেলাল হাফিজ গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ইহলোক ত্যাগ করেন। তাঁর মতো একজন প্রতিভাবান কবি, যিনি জীবনভর আমাদের সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন, নিজের হাতে এই পুরস্কার গ্রহণ করার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এটি আমাদের পুরস্কারপ্রদান প্রক্রিয়া নিয়ে গভীর আত্মমূল্যায়নের দাবি জানায়।

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

হেলাল হাফিজ ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর জেলার খোরশেদ আলী তালুকদার ও কোকিলা বেগমের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নেত্রকোণা দত্ত হাইস্কুল থেকে ১৯৬৫ সালে এসএসসি এবং নেত্রকোণা কলেজ থেকে ১৯৬৭ সালে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। শিক্ষাজীবনেই তার সাহিত্য প্রতিভা বিকশিত হতে থাকে।

সাহিত্য কর্ম

১৯৮৬ সালে প্রকাশিত তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং এ পর্যন্ত ৩৩ বারেরও বেশি মুদ্রিত হয়েছে। এই গ্রন্থের ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতার লাইন— “এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়”—বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনে স্লোগান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

পুরস্কার ও স্বীকৃতি

তার সাহিত্যিক অবদানের জন্য তিনি ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়াও তিনি আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কারসহ বিভিন্ন সম্মাননা লাভ করেছেন।

ব্যক্তিগত জীবন ও মৃত্যু

ব্যক্তিগত জীবনে হেলাল হাফিজ বিয়ে করেননি। তিনি ঢাকার তোপখানা রোড ও সেগুনবাগিচার আবাসিক হোটেলে বসবাস করতেন এবং নিয়মিত জাতীয় প্রেসক্লাবে যেতেন। তার জীবনযাপন ছিল বোহেমিয়ান ধাঁচের, যা তার লেখায়ও প্রতিফলিত হয়েছে।

Helal Hafiz কবি হেলাল হাফিজ x bfa x fxyz

আপনার মন্তব্য এবং একটি শেয়ার আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা ❤️


তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা, প্রথম আলো, উইকিপিডিয়া




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Instagram did not return a 200.
Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Your share and comment are an inspiration to us

X (Twitter)
Post on X
Pinterest
fb-share-icon
Instagram
FbMessenger
Copy link
URL has been copied successfully!