জন্ম ও শিক্ষাজীবন
হেলাল হাফিজ ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর জেলার খোরশেদ আলী তালুকদার ও কোকিলা বেগমের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নেত্রকোণা দত্ত হাইস্কুল থেকে ১৯৬৫ সালে এসএসসি এবং নেত্রকোণা কলেজ থেকে ১৯৬৭ সালে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। শিক্ষাজীবনেই তার সাহিত্য প্রতিভা বিকশিত হতে থাকে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ক্র্যাকডাউনের রাতে অলৌকিকভাবে বেঁচে যান হেলাল হাফিজ। সে রাতে ফজলুল হক হলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় পড়ে সেখানেই থেকে যান। রাতে নিজের হল ইকবাল হলে (বর্তমানে জহুরুল হক) থাকার কথা ছিল। সেখানে থাকলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নৃশংস হত্যাযজ্ঞের শিকার হতেন। ২৭ মার্চ কারফিউ তুলে নেওয়ার পর ইকবাল হলে গিয়ে দেখেন চারদিকে ধ্বংসস্তূপ, লাশ আর লাশ। হলের গেট দিয়ে বেরুতেই কবি নির্মলেন্দু গুণের সঙ্গে দেখা। তাকে জীবিত দেখে উচ্ছ্বসিত আবেগে বুকে জড়িয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকলেন নির্মলেন্দু গুণ। ক্র্যাকডাউনে হেলাল হাফিজের কী পরিণতি ঘটেছে তা জানবার জন্য সে দিন আজিমপুর থেকে ছুটে এসেছিলেন কবি গুণ। পরে নদীর ওপারে কেরানীগঞ্জের দিকে আশ্রয়ের জন্য দুজনে বুড়িগঙ্গা পাড়ি দেন। (তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া )
সাহিত্য কর্ম
১৯৮৬ সালে প্রকাশিত তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং এ পর্যন্ত ৩৩ বারেরও বেশি মুদ্রিত হয়েছে। এই গ্রন্থের ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতার লাইন— “এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়”—বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনে স্লোগান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতা একাত্তর’ ২০১২ সালে প্রকাশিত হয়। তারপর ২০১৯ সরন্থ ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’ প্রকাশিত হয়। তার কবিতায় প্রেম, দ্রোহ এবং রাজনৈতিক চেতনার সমন্বয় দেখা যায়, যা তাকে সমসাময়িক কবিদের মধ্যে বিশেষভাবে আলাদা করেছে।
হেলাল হাফিজ সাংবাদিকতা পেশায়ও যুক্ত ছিলেন। তিনি দৈনিক পূর্বদেশ, দৈনিক দেশ এবং সর্বশেষ দৈনিক যুগান্তরে সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন। তার সাংবাদিকতা জীবনে তিনি সাহিত্যিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করেছেন, যা তার লেখায় প্রতিফলিত হয়েছে।
পুরস্কার ও স্বীকৃতি
তার সাহিত্যিক অবদানের জন্য তিনি ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়াও তিনি আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কারসহ বিভিন্ন সম্মাননা লাভ করেছেন।
ব্যক্তিগত জীবন ও মৃত্যু
ব্যক্তিগত জীবনে হেলাল হাফিজ বিয়ে করেননি। তিনি ঢাকার তোপখানা রোড ও সেগুনবাগিচার আবাসিক হোটেলে বসবাস করতেন এবং নিয়মিত জাতীয় প্রেসক্লাবে যেতেন। তার জীবনযাপন ছিল বোহেমিয়ান ধাঁচের, যা তার লেখায়ও প্রতিফলিত হয়েছে।
হেলাল হাফিজ ২০২৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর ৭৬ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে গ্লুকোমায় আক্রান্ত ছিলেন। ঢাকার শাহবাগের সুপার হোস্টেলে তিনি বাথরুমে পড়ে যান।
শাহবাগ থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দুপুরের দিকে হোস্টেলের একটি কমন ওয়াশরুমে যান কবি হেলাল হাফিজ। ওয়াশরুমে যাওয়ার অনেকক্ষণ পরেও তার কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে হোস্টেলের অন্য রুমের বাসিন্দারা বাথরুমের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। তখন তারা দেখেন কবি হেলাল হাফিজ ওয়াশরুমে পড়ে রয়েছেন এবং তার মাথা ফেটে রক্ত বের হচ্ছিল।
এরপর তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই তিনি মারা যান। হেলাল হাফিজ কিডনি জটিলতা, ডায়াবেটিস ও স্নায়ু রোগে ভুগছিলেন।
আপনার মন্তব্য এবং একটি শেয়ার আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা ❤️
তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা, প্রথম আলো, উইকিপিডিয়া
আরও পড়ুন

বাংলার বাঘ: শেরেবাংলা এ.কে. ফজলুল হক
bdfashion archive
চন্দ্রাবতী: বাংলা সাহিত্যের প্রথম নারী কবি
rajon ahmed
জীবন্ত কিংবদন্তি বাউল শাহ আবদুল করিম: ভাটি বাংলার মাটির মানুষ
bdfashion archive
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন । Zainul Abedin
bdfashion archive
কবিতায় আগুন জ্বালিয়ে রাখা এক কবি: হেলাল হাফিজ
bdfashion archive
হাসন রাজা: আধ্যাত্মিক চেতনার বাউল কবি
bdfashion archiveলোকে বলে বলেরে, ঘর বাড়ি ভালা নাই আমারকি ঘর বানাইমু আমি, শূন্যের-ই মাঝারভালা কইরা ঘর…
আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া লিংক