পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর: বাংলা শিক্ষার মহান স্থপতি

অসাধারণ বিদ্যাবত্তা ও পাণ্ডিত্যের জন্য শিক্ষকেরা তাকে “বিদ্যাসাগর” উপাধিতে ভূষিত করেন।

২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে 
বিবিসি বাংলা কর্তৃক পরিচালিত
জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ
২০ জন বাঙালির মধ্যে
অষ্টম স্থান লাভ করেন।

পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০-১৮৯১) উনিশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি সমাজসংস্কারক, শিক্ষাবিদ এবং লেখক হিসেবে পরিচিত। যিনি তাঁর জীবনকে মানুষের সেবায় উৎসর্গ করেছিলেন। শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার, নারীশিক্ষা এবং বিধবা বিবাহের প্রচলনের মাধ্যমে তিনি বাঙালি সমাজকে এক নতুন পথে পরিচালিত করেছিলেন। তাঁর অবদান বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতিকে আমূল বদলে দিয়েছিল এবং তিনি আজও স্মরণীয় হয়ে আছেন তাঁর অসাধারণ জীবন ও কর্মের জন্য।

শৈশব ও শিক্ষাজীবন

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জন্মগ্রহণ করেন ২৬ সেপ্টেম্বর ১৮২০ সালে পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে। তাঁর পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন সাধারণ আর্থিক অবস্থার মানুষ। ছোটবেলা থেকেই বিদ্যাসাগর ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও শিক্ষার প্রতি আগ্রহী। তিনি গ্রাম্য পাঠশালায় তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন এবং পরে কলকাতায় সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হন। বিদ্যাসাগর অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁর অসাধারণ প্রতিভার জন্য পরিচিত হন এবং সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি মাত্র ২১ বছর বয়সে ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি লাভ করেন, যা তাঁর অসাধারণ পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতি।

বিদ্যাসাগর’ উপাধি প্রদান নিয়ে একটি জনপ্রিয় গল্প প্রচলিত আছে। বলা হয়ে থাকে, ঈশ্বরচন্দ্র খুবই মেধাবী ছাত্র ছিলেন এবং অত্যন্ত দ্রুত গতিতে যে কোন কিছু শিখতে পারতেন। এমনটাই যে বইয়ের কোন এক পাতা একবার পড়া হয়ে গেলে সেই পৃষ্টা ছিড়ে ফেলে দিতেন। (যদিও এই গল্পটি অনেকটা কিংবদন্তি হিসেবেই প্রচলিত। )

যখন তিনি সংস্কৃত কলেজে পড়াশোনা করছিলেন, তখন তার অসাধারণ বিদ্যাবত্তা ও পাণ্ডিত্যের জন্য শিক্ষকেরা তাকে “বিদ্যাসাগর” উপাধিতে ভূষিত করেন। “বিদ্যাসাগর” শব্দের অর্থ হল “বিদ্যার সমুদ্র,” এবং এই উপাধি তার জ্ঞান ও শিক্ষার গভীরতাকে নির্দেশ করে।

সাহিত্য ও লেখনী

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পুরুষ। তাঁর রচিত পাঠ্যপুস্তকগুলো আজও প্রাসঙ্গিক। বিদ্যাসাগরের লেখা ‘বর্ণপরিচয়’ এবং ‘বিদ্যাসাগরের গল্প’ বাংলা সাহিত্যের এক অমর সৃষ্টি। এছাড়া তিনি সংস্কৃত থেকে বাংলা ভাষায় বহু গ্রন্থ অনুবাদ করেন, যার মধ্যে কালিদাসের ‘শকুন্তলা’ অন্যতম।


শেষ জীবন

বিদ্যাসাগরের শেষ জীবন ছিল অত্যন্ত সরল ও বিনয়ী। তিনি সাদাসিধা জীবনযাপন করতেন এবং সমাজের নিম্নবিত্তদের সাহায্য করার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকতেন। তাঁর জীবনের শেষ সময়ে তিনি নিজ গ্রামে ফিরে যান এবং সেখানেই ১৮৯১ সালের ২৯ জুলাই পরলোকগমন করেন।




ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বিখ্যাত কিছু উক্তি:

“মানুষের প্রকৃত পরিচয় তার বিদ্যা বা জ্ঞান নয়, বরং তার চরিত্র।”

“নারী জাতি পুরুষের সমানাধিকার দাবী করে, তাদের শিক্ষার অধিকারও সমান হওয়া উচিত।”

“সত্যকে আড়াল করা উচিত নয়, সত্য প্রকাশের জন্য যা-ই করতে হোক না কেন, তা করতে হবে।”

“যদি তুমি শিক্ষা লাভ করো, তবে সেই শিক্ষা সমাজের কল্যাণে ব্যবহার করো।”

“জ্ঞানই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ, যা কখনোই হারানো যায় না।”

Ishwar Chandra Bandyopadhyay




ছবিসূত্র: প্রিমিয়ার টু প্রেস: সব্যসাচি হাজরা

তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে


আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম লিংক


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

আপনার একটি শেয়ার আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা

X (Twitter)
Post on X
Pinterest
fb-share-icon
Instagram
FbMessenger
Copy link
URL has been copied successfully!