জামদানির ইতিকথা
সেই কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র থেকে আজকের অধুনা কনের সাজ– জামদানি তার উল্লেখ ও অবস্থান দুটোই বেশ পাকাপোক্ত করে রেখেছে। আদি ঢাকায় জন্ম নেওয়া জামদানির অস্তিত্ব বংশ পরম্পরায় তাঁতীদের কয়েক পুরুষ ধরে বহমান। এই বিশেষ কাপড়ের সূক্ষ্ম বয়নকৌশল ও নকশা-নৈপুণ্যের জন্য জামদানি এক আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অতীতে ঢাকাই মসলিনের উপর যে নকশাদার বা বুটিদার কাপড় তৈরি করা হতো, সেটিকেই জামদানি বলা হয়। জামদানি নিয়ে আরো জানা যায়, আসল জামদানির নকশা জ্যামিতিক নয় বরং আদি জামদানি পুরোটাই ফুলেল প্যাটার্নে করা হতো। তবে সময়ের বিবর্তনে, আর কিছুটা কারিগরি সুক্ষ্মতার অভাবে জামদানি আজকের রূপ নিয়েছে।
দেশভাগের পর সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, নারায়ণগঞ্জে জামদানি শিল্পনগরী ও গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন ও বিসিকের নানামুখী উদ্যোগ– সব মিলিয়ে জামদানির যাত্রাটা বেশ রঙিন, ঠিক যেন রক্তাম্বরী-নীলাম্বরীর মতোই। ২০১৬ সালে এসে বিশ্বস্বীকৃতি পেয়েছে জামদানি। ঐতিহ্যবাহী নকশা ও বুননশিল্পের জন্য ইউনেস্কো একে জিআই পণ্য ঘোষণা করেছে। তবে জামদানির এত উন্নয়নের পরও তাঁতীদের প্রাপ্য পারিশ্রমিক না পাওয়ার দুষ্টচক্রটি এখনো বহাল। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থিত আছে একটি জামদানি পল্লী, যেখানে গেলে ব্র্যান্ডেড দোকানগুলোর চাইতে অনেক কম দামে ও ভালোভাবে দেখেশুনে জামদানি কেনা যায়।

জামদানি নামকরন
নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মতবাদ রয়েছে , তোফায়েল আহমদ (১৯৬৪)-এর মতে, জামদানি একটি ফরাসি শব্দ। জামা মানে কাপড় আর দানা মানে বুটি। যার অর্থ “বুটিদার কাপড়”। আরেকটি মত হলো, ফারসিতে জাম অর্থ এক ধরনের উৎকৃষ্ট মদ এবং দানি অর্থ পেয়ালা। আবার অন্যমতে জামাদনি ফরাসি শব্দ বলে সমর্থন করলেও অর্থ দাড়ায় ফুলদানি। অর্থাৎ ফরাসি শব্দ জাম-দার থেকে জামদানির উৎপত্তি।
নামকরন কিংবা ইতিহাসে নাই বা গেলাম। জামদানি, বাংলাদেশের নিজস্ব ঐতিহ্য। ঐতিহ্যবাহী নকশা ও বুননের কারণে ২০১৬ সালে জামদানিকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো।
ভালো জামদানি তৈরির জন্য ভালো সুতো, দক্ষ কারিগর, ঐতিহ্যবাহী নকশা যেমন দরকার তেমনি প্রয়োজন আর্দ্রতা। শীতলক্ষ্যা নদীপাড়ের আর্দ্র আবহাওয়া জামদানি তৈরির জন্য উপযোগী।
শীতলক্ষ্যার পানি, আবহাওয়া ও জলবায়ুর অদ্ভুত রসায়নই বিস্ময়কর কাপড় তৈরির মন্ত্র হিসেবে কাজ করেছে। এখানকার রোদের তেজে সুতায় আসে আলাদা ঔজ্জ্বল্য। আবহাওয়া এখানে তাঁতিদের মধ্যে তৈরি করেছে উদ্দীপনা, কর্মস্পৃহা। তাইতো অতীতের মসলিন এবং আজকের জামদানি শিল্প দুটোই শীতলক্ষ্যাকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে। ভোরবেলা সুতো প্রস্তুতের সবচেয়ে ভালো সময়। কেননা, এসময় বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকে। এ কারণে দেশের অন্য কোথাও জামদানি তৈরি সম্ভব হয় না।
জামদানি শাড়ি গ্যালারি
PICTURE OF JAMDANI SAREE










Copyright © All rights reserved 2024 | Bangladesh Fashion Archive































Copyright © All rights reserved 2024 | Bangladesh Fashion Archive
আপনার একটি শেয়ারে জানবে বিশ্ব, আমাদের দেশ কতটা সমৃদ্ধ

জামদানি সম্পর্কে বিস্তারিত
আলাদা আলাদা করে বর্ণনা দেয়া আছে। জানতে ক্লিক করুন –

JAMDANI | SOURCE OF THE DESIGN
কারও কারও মতে, জামদানির নকশায় ইরান, ইরাক ও তুর্কি কার্পেট ও লৌকিক নকশার ছাপ রয়েছে। কারও কারও মতে, জামদানির নকশা একান্তভাবে বাংলার তাঁতিদের সৃজনশীলতা পরিচায়ক।

জামদানি বুনন এর কৌশল ও প্রক্রিয়া
ওস্তাদ ভরনার সুতা মাকুর সাহায্যে সাগরেদ এর দিকে চালান দেয় এরপর ‘দোপ্তি ’ টেনে কান্ডুর দয়ে নিখুঁত ভাবে ঘুরিয়ে জামদানির মুল নকশা তোলা হয় ।

জামদানি তৈরিতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম
‘জামদানি’ হচ্ছে বিশেষ ভূগোল ও পরিবেশে শিল্প চর্চার বিশেষ একটি ধরণ যার মাধ্যমে একজন তাঁতি সুতা , রং , মাকু , কান্ডুর এবং তাঁত এর মাধ্যমে নৈপুণ্য শিল্প তৈরী করে ।

জামদানি তৈরির বিভিন্ন স্তর
‘এই শিল্প উৎপাদনের সাথে শুধু তাঁতিই নয়, জামদানি তৈরির প্রতিটি স্তরে যুক্ত আছে বিভিন্ন ঘরাণার মানুষ।

জামদানি শাড়ি বিভিন্ন ধরণ
কাউন্ট দিয়ে সুতার মান বোঝানো হয়ে থাকে । যে সুতার কাউন্ট যত বেশি, সেই সুতা তত চিকন হয়ে থাকে ।জামদানি শাড়ির সুতার কাউন্ট সাধারনত ৩২ থেকে ২৫০ কাউন্টের হয়ে থাকে ।

আসল জামদানি শাড়ি চেনার উপায়
জামদানি বুননে মুলত প্রতিটি নকশার সুতা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নকশা তোলা হয় । যার ফলে সুতার কোন অংশ বের হয়ে থাকে না। এ কারণে জামদানি নকশায় দুই দিকেই ফুটে উঠে ।

তাঁতে বসার দোয়া
এ কালের শ্রেষ্ঠ জামদানি ওস্তাদ হিসাবে স্বীকৃত হাজি কফিল উদ্দিন ভূঁইয়া ভাষ্যমতে, বালক বয়সে তাঁতে বসার আগে তিনি যে দোয়াটি পাঠ করতেন, তা হিন্দু দেবতা বিশ্বকর্মার উদ্দেশ্যে , দেবতা হিসাবে নয় বরং গুরু ধার্যে ।

জামদানি শাড়ি কাটা করা
জামদানি বানানোর সময় তাঁতিরা সুতাতে মাড় ব্যবহার করে। শাড়ি কয়েকবার পরার পর সেই মাড় গুলো নষ্ট হয়ে যায় বলে শাড়িটা নরম হয়ে যায়।

জামদানি হাট
তাতিঁরা হাত উচিয়ে যখন শাড়ি ধরেন তখনই জানান দেয় জামদানি শাড়ির অবস্থান কতটা উঁচুতে।

জামদানি নকশা সংরক্ষণ
ঐতিহ্যবাহী নকশা ও বুননের কারণে ২০১৬ সালে জামদানিকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো।
তথ্যসূত্র
prothomalo.com/ঢাকাই-জামদানির-রঙিন-ভুবন
bbc.com/bengali
bn.wikipedia.org

নকশি শিকা: হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের গল্প
fayze hassan
মাদার পীরের গান: নাটোরের চলনবিল থেকে যার উৎপত্তি
fayze hassan
ছন ও তালপাতার ঝুড়ি: এক হারিয়ে যাওয়া লোকজ শিল্পের গল্প
fayze hassan
ধর্মীয় আচার ও ভক্তির মহোৎসব: মাঘী পূর্ণিমার উদযাপন
bdfashion archive
Deepseek কীভাবে ব্যবহার করবেন: সহজ নির্দেশিকা
bdfashion archive