জামদানি নকশার উৎস

জামদানি নকশার উৎস

JAMDANI | source of the design

কারও কারও মতে, জামদানির নকশায় ইরান, ইরাক ও তুর্কি কার্পেট ও লৌকিক নকশার ছাপ রয়েছে। কারও কারও মতে, জামদানির নকশা একান্তভাবে বাংলার তাঁতিদের সৃজনশীলতা পরিচায়ক। কারণ হিসেবে তাঁরা উল্লেখ করেন, জামদানির নকশায় রয়েছে বাংলাদেশের পরিবেশ, প্রকৃতি, জীবজগৎ ও বৃক্ষলতাযুক্ত নকশার প্রাধান্য।

জামদানি নকশার উৎস

জামদানির আভিজাত্যই বলি আর অহংকারই বলি, সেটা হচ্ছে তার নকশায়। জামদানি শাড়ির নকশার উৎস নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কারও কারও মতে, জামদানির নকশায় ইরান, ইরাক ও তুর্কি কার্পেট ও লৌকিক নকশার ছাপ রয়েছে। কারও কারও মতে, জামদানির নকশা একান্তভাবে বাংলার তাঁতিদের সৃজনশীলতা পরিচায়ক। কারণ হিসেবে তাঁরা উল্লেখ করেন, জামদানির নকশায় রয়েছে বাংলাদেশের পরিবেশ, প্রকৃতি, জীবজগৎ ও বৃক্ষলতাযুক্ত নকশার প্রাধান্য।

‘জামদানী’ গ্রন্থের লেখক, বিশিষ্ট লোকগবেষক মোহাম্মদ সাইদুর বলেন- “  দেশকালগতভাবে একক কোনো প্রভাব থেকে জামদানি নকশার উদ্ভব হয়নি। বরং এতে কালে কালে এসে মিশেছে বিভিন্ন উপজাতীয় প্রভাব, হিন্দু-বৌদ্ধ প্রভাব, মুসলিম প্রভাব, ব্রিটিশ প্রভাব, পাকিস্তানি ও বর্তমানে বাংলাদেশি প্রভাব।” – সূত্র – প্রথম আলো

জামদানির তাঁতিরা  তাঁদের চারদিকে যা দেখতেন , তা–ই নকশার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতেন।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায় . . .

আশফুল : হচ্ছে মূলত দুটি রাজহাঁসের মাথার ফুলের আকৃতির নকশা (রূপগঞ্জের স্থানীয় উচ্চারণে হাঁস হয়ে গেছে আশ)

ঝুমকাপাড় : হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট কানের দুলের নকশার প্রতিকৃতি

আমের মৌর : হচ্ছে আমের মুকুল

নিশান : হচ্ছে তিনকোনা পতাকা

পুঁইলতা : হচ্ছে পুঁই শাকের ডগা

সুপারি টাংকি : হচ্ছে সুপারির ছড়া। এভাবে তাঁতিদের দেখা চারপাশের বিভিন্ন বিষয় ফুটে উঠেছে  জামদানি নকশায়।

সাম্প্রতিক সময়ে ঐতিহ্যবাহী জামদানি নকশাকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়াস চলছে।

JAMDANI | source of the design | জামদানি নকশার উৎস

জামদানি শাড়ির নামকরণ

সাধারণত, জামদানি শাড়ির নামকরণ করা হয়  শাড়ির পাড়ের নকশার  নামে।  মূলত পাড় ও জমিন—এই দুই ভাগে জামদানির নকশাকে ভাগ করা হয়। পাড় ও জমিনের নকশার রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন নাম। যেকোনো পাড়ের নকশার একটি মূল মোটিফ থাকে। এই মোটিফকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে একটি শাড়ির পাড়ের নকশা। আর একটি মোটিফের সঙ্গে থাকে একাধিক আনুষাঙ্গিক ছোট নকশা।

জমিনের নকশার ক্ষেত্রে তিনটি আদি ধরন রয়েছে। এগুলো হচ্ছে জাল, বুটি/ছিডা ও তেরছি। এ ছাড়া ‘ঢেউ’ আকৃতির কিছু নকশা তৈরি করা হয় জমিনে। যেকোনো নকশাকে জলের ঢেউয়ের মতো করে তৈরি করলেই সেটি ‘ঢেউ’ নামে পরিচিতি পায়।

আঁচলের নকশার ক্ষেত্রে পাড়ের নকশা আঁচলের নকশা হিসেবে বোনা  হয়। আধুনিক শাড়িগুলোতে এর ভিন্নতা থাকে ।  পাড়, জমিন ও আঁচল—এই তিন নকশা নিয়েই জামদানি শাড়ি ।

JAMDANI | source of the design | জামদানি নকশার উৎস
JAMDANI | source of the design

নকশা অনুযায়ী বিভিন্ন জামদানি বিভিন্ন নামে পরিচিত

যেমন পান্না হাজার, দুবলি জাল, বুটিদার, তেরছা, জালার, ডুরিয়া, চারকোণা, ময়ূর প্যাঁচ, কলমিলতা, পুঁইলতা, কচুপাতা, কাটিহার, কলকা পাড়, আঙুরলতা, সন্দেশ পাড়, প্রজাপতি পাড়, দুর্বা পাড়, শাপলাফুল, বাঘনলি, জুঁইবুটি, শাল পাড়, চন্দ্র পাড়, চন্দ্রহার, হংস, ঝুমকা, কাউয়ার ঠ্যাঙা পাড়, চালতা পাড়, ইঞ্চি পাড় ও বিলাই আড়াকুল নকশা, কচুপাতা পাড়, বাড়গাট পাড়, করলাপাড়, গিলা পাড়, কলসফুল, মুরালি জাল, কচি পাড়, মিহিন পাড়, কাঁকড়া পাড়, শামুকবুটি, প্রজাপতি বুটি, বেলপাতা পাড়, জবাফুল, বাদুড় পাখি পাড় ইত্যাদি। বর্তমানে শাড়ির জমিনে গোলাপফুল, জুঁইফুল, পদ্মফুল, কলারফানা, আদারফানা, সাবুদানা ইত্যাদি নকশা করা হয়।

বিশদভাবে বলতে গেলে

তেরছা জামদানি : জামদানি নকশায় ছোট ছোট ফুলগুলি যদি তেরছাভাবে সারিবদ্ধ থাকে তাকে তেরছা জামদানি বলে। এ নকশা শুধু যে ফুল দিয়েই হবে তা নয়, ময়ূর বা লতাপাতা দিয়েও হতে পারে।

জালার নকশা : ফুল, লতার বুটি জাল বুননের মতো সমস্ত জমিনে থাকলে তাকে জালার নকশা বলা হয়।

বুটিদার :  সাধারণত ছোট ছোট ফুলের নকশা দেখা যায়, যখন পুরো জমিন জুড়ে ফুল বা ফুলের ছড়ার নকশা করা হয় তখন তাকে বুটিদার জামদানী বলে।

ঝালর : যখন ফুলের নকশা জালের মত পুরো জমিনে ছড়ানো  থাকে তখন তাকে ঝালর জামদানি বলে।

পান্না হাজার : পান্না হাজার হচ্ছে যখন নকশার ফুলগুলো জোরা দেয়া থাকে অলংকারের মনির মত।

ফুলওয়ার : যখন পুরো জমিনে টানা ফুলের নকশা সারিবদ্ধ করা থাকে তখন তাকে ফুলওয়ার বলে।

তোরাদার : তোরাদার জামদানি হচ্ছে বড় আকারের বাস্তবানুগ ফুলের নকশার জামদানি ।

কলকাপাড় : তেমনি পাড়ে কলকির নকশা থাকলে তা হবে কলকাপাড়।

ডুরিয়া জামদানি : ডোরাকাটা নকশায় সমৃদ্ধ থাকে।

বেলওয়ারি নামে চাকচিক্যপূর্ণ সোনারুপার জরিতে জড়ানো জামদানি মুগল আমলে তৈরি হতো। এ ধরনের জামদানি সাধারণত হেরেমের মহিলাদের জন্য বিশেষভাবে বোনা হতো।

JAMDANI | source of the design | জামদানি নকশার উৎস
JAMDANI | source of the design

জামদানি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে :

jamdani জামদানি
exhibition by Sourav Chowdhury titled Eternal Existence
Jamdani জামদানি x bfa x fxyz
শিক্ষার্থীদের নকশায় পোশাকের ঐতিহ্য
International Weavers Festival 2016
jamdani motif preservation
how to recognize jamdani
jamdani markteplace
জামদানি শাড়ি বিভিন্ন ধরণ
jamdani tate bosar dua


Read More | International Journal

THE TRADITIONAL EPIC ART OF BANGLADESH (INTANGIBLE CULTURAL
HERITAGE OF HUMANITY) _Md.Wahid Mahmud Khan


তথ্যসূত্র :

prothomalo.com/ঢাকাই-জামদানির-রঙিন-ভুবন

bbc.com/bengali

bn.wikipedia.org

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

আপনার একটি শেয়ার আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা

X (Twitter)
Post on X
Pinterest
fb-share-icon
Instagram
FbMessenger
Copy link
URL has been copied successfully!