Begum Sufia Kamal কবি সুফিয়া কামাল

Sufia Kamal: Pioneering voice for women's empowerment and literary excellence

কবি সুফিয়া কামাল | জননী সাহসিকা

আজ জননী সাহসিকা কবি সুফিয়া কামাল এর চব্বিশতম প্রয়াণ দিবস। প্রয়াত হয়েছিলেন ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর। তাঁর নামের সঙ্গে প্রথম পরিচয় মা-নানীদের মুখে শুনে শুনে।

আজ জননী সাহসিকা কবি সুফিয়া কামাল এর ২৫তম প্রয়াণ দিবস। প্রয়াত হয়েছিলেন ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর। জন্ম তাঁর ১৯১১ সালের ২০শে জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদে জমিদার পরিবারে। তাঁর নামের সঙ্গে প্রথম পরিচয় মা-নানীদের মুখে শুনে শুনে। খুব সম্ভবত: মধ্য পঞ্চাশ দশকে বরিশালে একটি সাহিত্য সম্মেলন হয়েছিল। সেখানে প্রয়াত আব্বাসউদ্দীন আহমেদ, কবি গোলাম মোস্তফার সঙ্গে তিনিও এসেছিলেন।

এ সন্মেলনের একটি অধিবেশন বসেছিল বরিশাল জিলা স্কুলের মাঠে। এক দুপুরে দেখি সেখানে যাওযার জন্যে নানী, মা আর পাড়ার অন্যান্য খালা-চাচীদের মধ্যে সাজ সাজ রব। কারন সে অধিবেশনে বলবেন কবি সুফিয়া কামাল। মায়ের পোঁটলা হয়ে আমার সভাস্হানে গমন ও অধিষ্ঠান। মঞ্চে ফর্সা চশমা পরা আধা ঘোমটা টানা ছোট্ট-খাট্ট মানুষটিকে নিয়ে এতে হৈ চৈ এর কি আছে বুঝতে পারছিলাম না। আমার মনে আছে, তাঁর ঠোঁটের ওপরে বড় মাসটা দেখে আমার শিশুমন অবাক হয়েছিলো।

দ্বিতীয়বার তাঁর দেখা পেয়েছিলাম আরেক সাহিত্য সম্মেলনে- আমি তখন অষ্টম বা নবম শ্রেণীর ছাত্র। সাহিত্য সম্মেলন বসেছিলো অশ্বিনী কুমার টাউন হলে – আইয়ুবী আমলে যার নামকরণ করা হয়েছিল আইয়ুব খান টাউন হল (আদ্যাক্ষরের পরিবর্তন না ঘটিয়েই)। সবিনয়ে বলি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় দূর্দান্ত বিতর্ক করে শিরোপা জিতেছিলাম। প্রধান অতিথি কবি সুফিয়া কামালকে মুগ্ধ করতে পেরেছিলাম। বিতর্ক শেষে পুরস্কার প্রদানের পরে কাছে ডেকেছিলেন, চিবুক ধরে আদর করেছিলেন, প্রশংসাবাণী উচ্চারন করেছিলেন। মোহিত হয়েছিলাম।

বিসর্জনের বাজনা বাজে

লেখকের অন্য লেখা

বিসর্জনের বাজনা বাজে

তবু আশা জাগে, তবু ভালো লাগে’ – বিজয়ার শুভেচ্ছা যাচ্ছে এক মানুষের কাছ থেকে আরেক মানুষের কাছে, পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। ‘

তাঁর কবিতার সঙ্গে পরিচয় নবম শ্রেণীতে। ‘সাঁঝের মায়া’ বইটি হাতে এসেছিলো। পাঠ্য বইতেও তাঁর কবিতা ছিলো। কেমন নরম মায়াময় ছন্দের সোজা সরল অর্থের কবিতা তাঁর। পড়ে ভারী ভালো লাগত – উপভোগ করতাম কবি সুফিয়া কামালের কবিতা। নির্মেদ নিটোল তাঁর ভারী মায়াময় কবিতাগুলো আমাকে টানতে।

সারা ষাটের দশকে তাঁর প্রতিবাদী কণ্ঠ ও কলম প্রতিফলিত হয়েছে নানান ভাবে। বাংলা ভাষা আরবী হরফে লেখা, রবীন্দ্র সঙ্গীত নিষিদ্ধ করা থেকে শুরু করে পাকিস্তানী শাসকদের সব অপপ্রচেষ্টার বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার – অবস্হান নিতেন প্রথম কাতারেই। একবার আইয়ুব খান ঢাকায় এসে বুদ্ধিজীবিদের এক সভায় উর্দুতে মন্তব্য করেছিলেন যে, বাংলাদেশের জনগন হায়ওয়ান (পশু)। কবি সুফিয়া কামাল সঙ্গে সঙ্গে চোস্ত উর্দুতে খান সাহেবকে বলেছিলেন, ‘আপনি তো তা’হলে হায়ওয়ানদের ছদর (পশুদের রাষ্ট্রপ্রধান)’। তাঁর পিতৃগৃহে উর্দু বলার রেওয়াজ ছিল।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে কবি সুফিয়া কামালের অনন্য অবদানের কথা সর্বজনবিদিত। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে তিনি ছিলেন আপোষহীন। মুক্তিযুদ্ধের প্রথমদিকে যখন পাকিস্তানের স্বপক্ষে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবিদের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেয়া হয়েছিল, তাতে কবি সুফিয়া কামাল সই করেন নি। এমনই ছিল বাংলাদেশ ও বাঙ্গালীর প্রতি তাঁর অঙ্গীকার। ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটিতে তাঁর অনন্যসাধারন অবদানের কথা আমরা সবাই জানি।

আশির দশকের শেষদিকে প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর সঙ্গে একবার কবি সুফিয়া কামালের ধানমন্ডির বাড়ীতে গিয়েছিলাম। দৈনিক সংবাদের সাহিত্য সাময়িকীতে তখন আমার ‘কড়ি-কড়চা’ নিয়মিতভাবে বেরুচ্ছে। কবি সুফিয়া কামাল সে লেখার প্রশংসা করেছিলেন, বলেছিলেন যে, সে লেখা তিনি নিয়মিত পড়েন। আপ্লুত হয়েছিলাম, মনে আছে।

আজ কবি সুফিয়া কামালের প্রয়াণ দিবসে খুব করে মনে হচ্ছে যে আজকের বাংলাদেশে তাঁর মতো মানুষের বড় প্রয়োজন। জননী সাহসিকার দিক্-নির্দেশনা, চিন্তা-চেতনা ও কর্মযজ্ঞ থেকে আমাদের শেখার বহু কিছু রয়েছে।



Begum Sufia Kamal কবি সুফিয়া কামাল

Begum
Sufia
Kamal

সুফিয়া কামালের সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা

সুফিয়া কামাল (১৯১১-১৯৯৯) বাংলা সাহিত্যের একজন অগ্রগণ্য কবি, লেখক এবং সমাজসেবী। তিনি শুধু সাহিত্যিক নন, বাংলাদেশের নারী মুক্তি আন্দোলন এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের একজন অগ্রদূত হিসেবেও পরিচিত। তার জীবনের বিভিন্ন দিক এবং অবদানকে একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনায় তুলে ধরা হলো:

প্রারম্ভিক জীবন

সুফিয়া কামাল ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। সে সময়ে নারীদের শিক্ষার সুযোগ সীমিত ছিল, তবে তার মা তার প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে তার বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঘটান। তার বাবা ছিলেন সৈয়দ আবদুল বারী এবং মা সাবেরা বেগম।

সাহিত্যকর্ম

সুফিয়া কামালের সাহিত্যিক প্রতিভা খুব অল্প বয়সেই প্রকাশ পায়। ১৯২৩ সালে মাত্র বারো বছর বয়সে তার প্রথম কবিতা “বাসন্তী” সওগাত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তার উল্লেখযোগ্য রচনাগুলোর মধ্যে রয়েছে:

নারীর মুক্তি আন্দোলনে অবদান

সুফিয়া কামাল ছিলেন মুসলিম নারীজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ। তিনি ১৯৬৯ সালে বাংলাদেশের প্রথম মহিলা সংগঠন “মহিলা পরিষদ” প্রতিষ্ঠা করেন। নারীদের অধিকার রক্ষায় তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সুফিয়া কামাল সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান এবং স্বাধীনতার পক্ষে সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় এবং শরণার্থীদের জন্য কাজ করে তিনি সবার কাছে প্রেরণাদায়ী হয়ে ওঠেন।

সম্মাননা

সুফিয়া কামাল তার জীবদ্দশায় অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন, যেমন:
একুশে পদক (১৯৭৬)
স্বাধীনতা পদক (১৯৯৭)
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬২)

ব্যক্তিগত জীবন

১৯২৩ সালে তিনি সৈয়দ নেহাল হোসেনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৩২ সালে স্বামীর মৃত্যুর পরও তিনি সাহসিকতার সঙ্গে জীবন পরিচালনা করেন।

মৃত্যু ও উত্তরাধিকার

সুফিয়া কামাল ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী, যাকে এই সম্মানে ভূষিত করা হয়।
সুফিয়া কামালকে “জননী সাহসিকা” বলা হয়, কারণ তিনি মমতাময়ী মা এবং সংগ্রামী নারীর প্রতীক। তার সাহিত্য ও সামাজিক অবদান আজও আমাদের প্রেরণা জোগায়।


লেখা লেখকের ফেসবুক প্রফাইল থেকে নেয়া

facebook profile link : Selim Jahan


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

আপনার একটি শেয়ার আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা

X (Twitter)
Post on X
Pinterest
fb-share-icon
Instagram
FbMessenger
Copy link
URL has been copied successfully!
Skip to content