ফ্যাশনের একুশ, যাপনের জিজ্ঞাসা 21 february bangaldesh x bfa x fxyz

ফ্যাশনের একুশ, যাপনের জিজ্ঞাসা

মনে রাখবেন। ভুলে যাওয়ার জন্য রচনা হয়নি এই ইতিহাস।

সারা সপ্তাহের অফিসের চাপে মনেই ছিল না কখন একটু ফুরসত পাওয়া যাবে। অথচ আজকের পথচলা আর হয়তোবা ভবিষ্যতের অবিচ্ছেদ্য সফরের যিনি সঙ্গী, তার সাথে মিলিয়ে পাঞ্জাবী কেনার কথা। সদ্য কর্পোরেট দুনিয়ায় পা রাখা ছেলেটি বলে রেখেছিল, তুমি কিনে নিও তোমার শাড়ির সাথে মিলিয়ে। ওই সাদা-কালো রংয়ের মধ্যেই তো। কিন্তু সঙ্গী একেবারেই পারফেকশনিস্ট মানুষ। ট্যাগে সাঁটানো মাপে তার ভরসা বিলকুল নেই। একুশে ফেব্রুয়ারি -র মতো একটা দিনে খাপে খাপ পাঞ্জাবী না হলে একেবারেই চলবে না, ছবি নাকি ভালো আসবে না। অগত্যা তাড়াতাড়ি অফিস সেরে বেরোতে হয়েছে একটু বলেকয়ে। রাস্তায় যে জ্যাম, বাপরে বাপ!

একুশ মানেই অহংকার। বাঙালি জাতির নিজের মতো করে প্রকাশের রাস্তা এই সংখ্যার আত্মপ্রকাশে রচনা করা। আপনি কেতাবী, আঞ্চলিক, শুদ্ধ, অশুদ্ধ, হিপহপ, বনেদী কিংবা মহল্লার টংযাপনে যে ঢঙেই বলুন না কেন- সবটাই আমাদের বাংলা ভাষা। আর যার মাধ্যমে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করেন তাকে অর্জনের উপলক্ষ্য এই দিনটি। এই ভাষার জন্য রাজপথে গেছে স্পন্দিত প্রাণ। বাংলা ভাষা এখন কেবল আমাদের দেশেই সীমাবদ্ধ নয়, একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। একে ঘিরে আমাদের একদিনের পরনের ফ্যাশনে এক সময় যা ছিল শ্রদ্ধার নিবন্ধন, তা এখন দিনকে দিন বাণিজ্যিকায়নের চূড়ান্তে চলে যাচ্ছে। লেখার শুরুতে যে কিছু কাল্পনিক কিছু প্রাত্যহিকের মিশ্রণে বয়ান করা দৃশ্যকল্প, সেটি কিন্তু এরই বাই-প্রোডাক্ট।

একুশে ফেব্রুয়ারি শুরু হয় প্রভাতের প্রভাতফেরী দিয়ে। গলায় গান আর হাতে ফুলের মালা নিয়ে ধীর পায়ে স্মৃতির মিনারের দিকে এগিয়ে যায় মানুষ খালি পায়। এমন দৃশ্য আপনি সিনেমায় দেখতে পাবেন, বা ইউটিউবের ভিডিও কনটেন্টে দেখতে পাবেন। এখনকার দিনে এইদিন ঘর থেকে বেরিয়ে শহীদ মিনার গিয়ে আবার ঠিকঠাক দিন কাটিয়ে ফেরত আসার যে চ্যালেঞ্জ, তার ফাঁকে আসলে দিনটাকে মনের গহীনে যাপন করা বা শ্রদ্ধার ফুরসতই মেলে না। সাদা রঙের শাড়ি তাতে কালো পাড় কিংবা সাদা রঙের সালোয়ার, ওড়না আর কালো রঙের কামিজে, শাড়িতে নানা জলছাপে পোশাকে অবশ্য তার প্রকাশ ফুটেই ওঠে। আঁকিবুঁকি থাকে স্মৃতিসৌধ, শহীদমিনার, বিভিন্ন অক্ষর যেমন অ, আ, ই, ঈ সহ সব বর্ণমালা। ছেলেদের টি-শার্ট থেকে শুরু করে শার্ট, পাঙ্গাবি আর পাজামাতেও দেখা যায় এই সাদা আর কালোর আসা যাওয়া। টি-শার্টের ক্ষেত্রে বড় বড় বর্ণ কিংবা খোলা জানালার স্বাধীনতার প্রতীক দেখা যায়। এখানেই এখন প্রকাশিতার সবটুকু এটা বলা যায়।

তবে ছোট্ট যে শিশুটি, অথবা মা-বাবার সাথে আসা সদ্য কৈশোরে পা রাখা সন্তানটির পোশাকে যখন ফুটে ওঠে একুশ, আমাদের ভাষা, বর্ণমালা, শহীদ মিনার- সেটা তো সুন্দরই। সত্যি বলতে, একুশে ফেব্রুয়ারির জন্য পোশাকের আমাদের যে আয়োজন, তাতে সবাই সুন্দরভাবেই রেপ্রেজেন্টেড হয়ে ওঠেন। উপলক্ষ্য উদাযপনের তোড়ে বাণিজ্যিক হয়ে ওঠা দিনটির পেছনে যে ত্যাগ, সংগ্রাম, আন্দোলন জড়ানো- তার কতটুকুই আর জানবার বুঝবার ফুরসত মেলে। তার ওপরে এখন সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ। ছবিটা ঠিকঠাক উঠলো কী না, রিলসের ভিউ কয়টা, স্টোরি ক’জনে দেখলো সেটা ঠিকঠাক দেখা, পোস্টের রিচ কেমন হচ্ছে- ভেবে কুলিয়ে ওঠা যায় না।

একুশে ফেব্রুয়ারির ফ্যাশনে সাদা-কালোই ব্যাকরণ। তাতে ভর করেই নিত্যনতুন ডিজাইন ডানা মেলে চলেছে। পুরোনো কিছুকে নতুন করে অথবা নতুন কিছুতে ক্ল্যাসিক, এমনভাবেই পোশাকে দেখতে পাই আমরা দিনটিকে। বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজ থেকে শুরু করে সবখানেই এই দিনের জন্য এখন আলাদা করে পোশাক তৈরি করা হয় বটে। তবে সেই পোশাকটি পরনের সাথে সাথে দিনটিকেও মনের মধ্যে যাপন করা, পরবর্তী প্রজন্মকেও স্রেফ সাদা-কালোয় সুন্দর পোশাকটি কিনে দেওয়ার পাশাপাশি দিনটি সম্বন্ধে সঠিকভাবে জানানো, বোঝানোটাও খুব দরকার। গানেই রয়েছে রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারিকে ভোলা যায় না।

মনে রাখবেন।
ভুলে যাওয়ার জন্য রচনা হয়নি এই ইতিহাস।

পোশাকে একুশের প্রতিফলন

স্থান : কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার , ঢাকা | চিত্র : বাংলাদেশ ফ্যাশন আর্কাইভ অরিজিনাল

পৃথিবীর ইতিহাসে মাতৃভাষার জন্যে এরকমের আত্মত্যাগের  নজির আর নেই।
অমর একুশে দেয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার সম্মান ।
২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসঙ্ঘের সদস্যদেশসমূহে
যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।


আপনার একটি শেয়ার আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

আপনার একটি শেয়ার আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা

X (Twitter)
Post on X
Pinterest
fb-share-icon
Instagram
FbMessenger
Copy link