Firoza Begum (singer) সংগীতশিল্পী ফিরোজা বেগম

বাংলা সংগীতের প্রতীকীরূপ: সংগীতশিল্পী ফিরোজা বেগম

গানটি শুনে কবি কাজী নজরুল ইসলাম খুব প্রশংসা করেছিলেন। নজরুল ইসলাম তার গান শুনে বলেছিলেন, এই মেয়েটি একদিন ভালো গাইয়ে হবে। সেদিনের সেই মেয়েটিই

সম্ভ্রান্ত মুসলিম জমিদার পরিবারের মেয়ে ফিরোজা বেগমের গানের প্রতি ঝোঁক ছিলো ছোটবেলা থেকেই। ১৯৪০ এর দশকে তিনি সংগীত ভুবনে পদার্পণ করেন। কলকাতার এইচএমভির মহড়ায় কবি নজরুলের সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয় ফিরোজা বেগমের। সেখানকার অডিশনে ফিরোজা বেগম কবিকে তাঁর ‘যদি পরানে না জাগে আকুল পিয়াসা’ গানটি শুনিয়েছিলেন। গানটি শুনে কবি কাজী নজরুল ইসলাম খুব প্রশংসা করেছিলেন। নজরুল ইসলাম তার গান শুনে বলেছিলেন, এই মেয়েটি একদিন ভালো গাইয়ে হবে। সেদিনের সেই মেয়েটিই আজ উপমহাদেশের কিংবদন্তী নজরুল সংগীত শিল্পী, বাংলা সংগীতের প্রতীকীরূপ: সংগীতশিল্পী ফিরোজা বেগম।

নজরুল সংগীত নিয়ে প্রথম রেকর্ড বের হয় ১৯৪৯ সালে। কাজী নজরুল অসুস্থ হওয়ার পর নজরুলসংগীতের শুদ্ধ স্বরলিপি ও সুর সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন ফিরোজা বেগম।  নিরলস ও একাগ্র সাধনার মাধ্যমে তিনি আয়ত্ব করলেন অনবদ্য গায়কী যা অতি সহজেই নজরুল সঙ্গীত কে সাধারন মানুষের হৃদয়ে পোঁছে দিলো। অবহেলিত “নজরুলের আধুনিক গান” ও “নজরুল গীতি” প্রতিষ্ঠিত হলো নজরুল সঙ্গীতের মর্যাদায়। তিনি পরিচিত হলেন “বিদ্রোহী কবির বিদ্রোহী শিষ্যা” রূপে।

নজরুল গীতি ছাড়াও আধুনিক গান, গজল, কাওয়ালি, ভজন, হামদ ও নাথ গেয়েছেন।

ফিরোজা বেগম এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

FEROZA BEGUM – A Short Biography

ফিরোজা বেগম ১৯৩০ সালের ২৮ জুলাই ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের রাতইল ঘোনাপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের তৃতীয় কন্যারুপে জন্মগ্রহণ করেন। ফিরোজার শৈশব কেটেছে যশোরে, কৈশোরের কিছুদিন কেটেছে কোচবিহারে। পরে সপরিবারে তাঁরা চলে যান কলকাতায়। কলকাতার মানিকতলার একটি বাড়িতে তাঁরা বসবাস শুরু করেন। সে সময় বাড়িতে বিখ্যাত সব ওস্তাদের আনাগোনা ছিল। নয় ভাইবোনের সবাই ছিলেন সংগীতের সঙ্গে যুক্ত। সবার রেকর্ড বেরিয়েছিল এইচএমভি থেকে।

দেশের প্রখ্যাত সংগীত ব্যক্তিত্ব কমল দাশগুপ্ত এবং সংগীতশিল্পী ফিরোজা বেগম, এ দুই কিংবদন্তিতুল্য শিল্পী ছিলেন স্বামী-স্ত্রী। ১৯৫৬ সালে কমল দাশগুপ্তের সঙ্গে বিয়ে হয় ফিরোজা বেগমের। তখন কমল দাশগুপ্তর বয়স ছিল ৪৩ বছর। বিয়ের চার বছর পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে তাঁর নাম হয় কাজী কামাল উদ্দিন।

কমল দাশগুপ্ত ছিলেন তাঁর সময়ের অন্যতম সেরা সুরস্রষ্টা ও সংগীত পরিচালক। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের গানের বাইরে আধুনিক বাংলা গানের স্বর্ণযুগের ভিতটা রচিত হয়েছে তাঁর হাত ধরেই। কাজী নজরুল ইসলাম তার জীবদ্দশায় একজনমাত্র ব্যক্তিকে তার নিজের গান সুর করবার অনুমতি দিয়েছিলেন। তিনি হচ্ছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ কমলদাসগুপ্ত।

তাহসিন, হামিন ও শাফিন তাদের সন্তান। হামিন ও শাফিন – উভয়েই রকব্যান্ড দল মাইলসের সদস্য।

সংগীতশিল্পী ফিরোজা বেগমের মৃত্যু

২০১৪ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর তিনি সবাইকে অশ্রুসিক্ত করে চিরতরে বিদায় নিয়ে গেলেন এবং সেই সাথে নজরুল সঙ্গীতের এক স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায়ের অবসান হলো। নজরুলসংগীতকে মানুষের মনের আঙিনায় পৌঁছে দিতে ফিরোজা বেগম আজীবন সাধনা করে গেছেন

কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী ফিরোজা বেগমের প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি

Firoza Begum (singer) সংগীতশিল্পী ফিরোজা বেগম
fashion content writer
কাজী নজরুল ইসলাম মৃত্যু KAZI NAZRUL ISLAM die

ফিরোজা বেগমের গানের সাধনা

সুদীর্ঘ ৭৪ বছরের সঙ্গীত জীবনে- নজরুল গীতি ছাড়াও আধুনিক বাংলা গান, গজল, কাওয়ালি, ভজন, হামদ ও নাথ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পরিবেশন করতেন।

‘মোমের পুতুল’ ও ‘দূর দ্বীপবাসিনী’ গান দুটি সংগীতজীবনে তাঁকে বড় সাফল্য এনে দেয়। “আমার মনের সাগর কিনারে”, “কভু পাই কভু পাইনা”, “তুমি যদি চাহ মোরে”, “একটি হৃদয় গান গেয়ে যায়”, “তুম ভুলায়ে না গ্যয়ে”, “কিউ তুমসে মুঝকো প্যয়ার”, “ক্যব ত্যক ইয়ে পেরেশানী”, “ঠ্যাহরো ঠ্যাহরো জ্বারা” প্রচুর জনপ্রিয়তা লাভ করে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ৩৮০টির বেশি একক সংগীতানুষ্ঠান করেছিলেন তিনি, পেয়েছেন বহু পুরস্কার।

ফিরোজা বেগমের পুরষ্কার প্রাপ্তি

Award

  • ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশে সরকার ফিরোজা-বেগমকে “স্বাধীনতা পদক” পুরষ্কারে ভূষিত করেন।
  • ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে “বঙ্গসম্মান” পুরস্কার প্রদান করেন।
  • পশ্চিমবঙ্গ সরকার সঙ্গীতে আজীবন অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৩ সালে ফিরোজা-বেগমকে “মহাগুরু” উপাধিতে সম্মানিত করেন।
  • ২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ পুরস্কার (সঙ্গীতে) “বঙ্গ বিভূষণ” উপাধি অর্পণ করেন।
  • মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার,
  • নেতাজি সুভাষচন্দ্র পুরস্কার,
  • সত্যজিৎ রায় পুরস্কার,
  • নজরুল একাডমি পদক।
  • বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত ডি-লিট এওয়ার্ড
  • জাপানের বিখ্যাত রেকর্ডিং কোম্পানি CBS কতৃক “গোল্ডেন ডিস্ক” এওয়ার্ড

এক নজরে ফিরোজা বেগম

জন্ম : ১৯৩০ সালের ২৮ জুলাই ফরিদপুরে

মৃত্যুবরণ: ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪

বাবা এবং মা : খান বাহাদুর মোহাম্মদ ইসমাইল এবং বেগম কওকাবুন্নেসা

পরিচিতি : বাংলাদেশের প্রথিতযশা নজরুলসঙ্গীতশিল্পী

দাম্পত্য সঙ্গী : সুরকার, গায়ক ও গীতিকার কমল দাশগুপ্তে

সন্তান : তাহসিন, হামিন ও শাফীন

ওয়েবসাইট : www.ferozabegum.com

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


facebook page link :BFA


তথ্যসূত্র :

amarnazrul.com

prothomalo.com

boishakhionline.com

newagebd

banglanews24.com


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Instagram did not return a 200.
Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Your share and comment are an inspiration to us

X (Twitter)
Post on X
Pinterest
fb-share-icon
Instagram
FbMessenger
Copy link
URL has been copied successfully!