শিক্ষাজীবন
ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পলিমার কেমিস্ট্রি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। দেশে ফিরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। কিছু সময় পরেই লেখালেখি এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য তিনি শিক্ষকতা থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
লেখক হিসেবে জনপ্রিয়তা
হুমায়ূন আহমেদ ১৯৭২ সালে প্রকাশিত “নন্দিত নরকে” উপন্যাসের মাধ্যমে সাহিত্য জগতে প্রবেশ করেন, যা বাংলা সাহিত্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এরপর তিনি একের পর এক জনপ্রিয় উপন্যাস রচনা করেন, যেমন “শঙ্খনীল কারাগার,” “মধ্যাহ্ন,” “জোছনা ও জননীর গল্প” ইত্যাদি। তাঁর গল্পগুলো সহজ ভাষায় রচিত, এবং মজার, আবেগময় ও জীবনঘনিষ্ঠ ছিল, যা সাধারণ পাঠকদের হৃদয়ে গভীরভাবে স্থায়ী হতে পেরেছে। এছাড়াও মাতাল হাওয়া, লীলাবতী, কবি, এবং বাদশাহ নামদার সহ বহু বিখ্যাত উপন্যাস রচনা করেন।
সৃষ্ট চরিত্র
হুমায়ূন আহমেদ কয়েকটি অমর চরিত্র সৃষ্টি করেছেন যা বাংলা সাহিত্যে অমলিন হয়ে আছে। হিমু (একজন বোহেমিয়ান, উদাসীন তরুণ) এবং মিসির আলি (একজন যুক্তিবাদী অধ্যাপক ও রহস্য-সমাধানকারী) তাঁর লেখায় অন্যতম জনপ্রিয় দুটি চরিত্র। শুভ্র চরিত্রটি তরুণ প্রজন্মের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছিল তার সৎ ও কোমল মানসিকতার জন্য।
নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণ
হুমায়ূন আহমেদ টিভি নাটক রচনা ও পরিচালনা করে বাংলা নাটকে নতুন ধারা প্রবর্তন করেন। তাঁর নির্মিত নাটকগুলো, যেমন “এই সব দিনরাত্রি,” “বহুব্রীহি,” “কোথাও কেউ নেই,” ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
১৯৯৪ সালে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র আগুনের পরশমণি দিয়ে চলচ্চিত্র পরিচালনা শুরু করেন, যা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, শ্যামল ছায়া, এবং ঘেটু পুত্র কমলা। শ্যামল ছায়া এবং ঘেটু পুত্র কমলা চলচ্চিত্র দুটি অস্কারের বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে মনোনয়নের জন্য বাংলাদেশ থেকে দাখিল করা হয়। তাঁর চলচ্চিত্রগুলো বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জীবন ও সমাজকে গভীরভাবে স্পর্শ করে।
ব্যক্তিগত জীবন
হুমায়ূন আহমেদ ব্যক্তিগত জীবনে দুইবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর প্রথম স্ত্রীর নাম গুলতেকিন খান, যাঁর সাথে তাঁর চার সন্তান—নুহাশ, নোভা, শীলা এবং শুভ। পরে মেহের আফরোজ শাওনকে বিয়ে করেন এবং তাঁদের দুই সন্তান—নিনিত ও নন্দিত।
শেষ জীবন ও মৃত্যু
হুমায়ূন আহমেদ তাঁর জীবনের শেষ কয়েকটি বছর ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১২ সালের ১৯ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। মৃত্যুর পর তাঁকে তাঁর প্রিয় নুহাশ পল্লীতে সমাহিত করা হয়, যেখানে তিনি জীবনের শেষ সময় কাটিয়েছেন।
আপনার একটি শেয়ার আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা
সাহিত্য পুরস্কার:
১৯৭৩ সালে বাংলা কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি লেখক শিবির পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান, যা বাংলা সাহিত্যে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য প্রদান করা হয়।
এছাড়া, তিনি বাংলাদেশ শিশু একাডেমি পুরস্কার এবং মাইকেল মধুসুদন পদক (১৯৮৭) অর্জন করেন।
১৯৯০ সালে তিনি হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার লাভ করেন।
শিল্পকলায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদক পান।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার:
১৯৯২ সালে তার লেখা শঙ্খনীল কারাগার চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৯৪ সালে আগুনের পরশমণি চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার ও শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
দারুচিনি দ্বীপ (২০০৭) চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
ঘেটুপুত্র কমলা (২০১২) চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার বিভাগে দুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
তার উপন্যাস অবলম্বনে মোরশেদুল ইসলাম নির্মিত অনিল বাগচীর একদিন (২০১৫) চলচ্চিত্রের জন্য তিনি ৪০তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে মরণোত্তর শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতার পুরস্কার লাভ করেন।
অন্য উল্লেখযোগ্য সম্মাননা:
১৯৯৪ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনন্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক প্রদান করে।
শ্রাবণ মেঘের দিন (১৯৯৯) চলচ্চিত্রের জন্য তিনি বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন, এবং এই চলচ্চিত্রটি সাইট অ্যান্ড সাউন্ড ম্যাগাজিনের সমালোচনায় সেরা দশ বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের তালিকায় নবম স্থান পায়।
আমার আছে জল (২০০৮) চলচ্চিত্রের জন্য তিনি মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক বিভাগে মনোনয়ন পান।
ঘেটুপুত্র কমলা চলচ্চিত্রের জন্য তিনি ১৫তম মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে সমালোচক পুরস্কার শাখায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালকের পুরস্কার লাভ করেন।
আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম লিংক

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন । Zainul Abedin
bdfashion archive
চিত্রশিল্পী সৌরভের ‘শাশ্বত অস্তিত্ব’
bdfashion archive
ভাস্কর শামীম সিকদার | SHAMIM SIKDER
mohammad asad
শিল্পী এস এম সুলতান | S M Sultan
fayze hassan
একজন ধ্রুব এষ | Dhruba Esh
fayze hassan