ঈদ, মুসলিম জাতির প্রধানতম ধর্মীয় উৎসব। কেননা, মুসলমানদের জীবনে সবচেয়ে বড় উৎসবের দিন হচ্ছে ঈদের দিন। ঈদ উৎসব অন্য ১০টি উৎসবের মতো নয়, এটি ইবাদতকেন্দ্রিক উৎসব।
এদিনে সবাই ভেদাভেদ ভুলে সৌহার্দ, ভ্রাতৃত্ব ও সাম্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। কারণ, ঈদ মানেই আনন্দ আর খুশির দিন। দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনা রোজা পর পালিত হয় ঈদুল ফিতর। সব ভেদা ভেদ ও পরিচয় ভুলে এই দিন মানুষ কেবল আনন্দে এক অপরকে বুকে জড়াবে। আনন্দ ভাগাভাগি করে নিবে নির্বিশেষে। ঈদের আনন্দ হোক সার্বজনীন। যেমনটা কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন,
‘আজ ভুলে যা সব হানাহানি, হাত মেলা হাতে’।
ঈদ শুরু হয়ে যায় চাঁদ রাত থেকেই। চাঁদ রাতে এলাকার মোরে মোরে কাজী নজরুল ইসলামের একটি বিখ্যাত গান ‘ও মন রমজানেরই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ/ও তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন; আসমানি তাকিদ/তোর সোনাদানা বালাখানা সব রাহেলিল্লাহ/দে জাকাত মুর্দা মুসলিমে আজ ভাঙাইতে নিদ।’ শুনতে পাওয়া যায় তখন যেন আনন্দটা দ্বীগুন হয়ে যায়। শুরু হয় পটকা, আতশবাজি। জানান দেয় যে কাল ঈদ।
মুসলিম জাতির প্রধানতম ধর্মীয় উৎসব
Eid Mubarak
ঈদ শব্দটি আরবি, এর বাংলা অর্থ খুশি, আনন্দ, আনন্দোৎসব ইত্যাদি। আর ফিতর অর্থ রোজা ভাঙা, খাওয়া ইত্যাদি। তা হলে ঈদুল ফিতরের অর্থ দাঁড়ায় রোজা শেষ হওয়ার আনন্দ। মুসলিম উম্মাহ বছরে দুটি ঈদ পালন করে থাকে আর তা হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। একটি আসে পবিত্র মাহে রমজানে রোজা পালনের মাধ্যমে আর অপরটি আসে হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর মহান কোরবানির স্মৃতিরূপে পশু কোরবানির মাধ্যমে।
ঈদের ইবাদতে শরিয়ত
মুসলমানের জন্য ঈদ একটি মহা-ইবাদতও। ঈদের ইবাদতে শরিয়ত নির্দেশিত কিছু বিধিবিধান রয়েছে। ঈদুল ফিতরের শরিয়তের দিক হলো, ঈদের নামাজের আগে রোজার ফিতরা ও ফিদিয়া আদায় করা, ঈদগাহে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা, খুতবা শোনা এবং উচ্চৈঃস্বরে তাকবির পাঠ করা।
ঈদের ফিতরা আদায়
ঈদের আগে প্রত্যেক মুসলমান নর-নারী, শিশু এমনকি সদ্য জন্মলাভকারী শিশুর জন্যও নির্ধারিত ফিতরা আদায় করা জরুরি। ফিতরার টাকা দিয়ে গরিব, অসহায় দুস্থরা অন্যদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ করে থাকে। এ ফিতরা ঈদের নামাজের আগেই আদায় করা উচিত। কেননা গরিব রোজাদার যেন ফিতরার অর্থ দিয়ে ঈদের খুশিতে অংশগ্রহণ করতে পারে। ফিতরা দেওয়া কারো ওপর কোনো প্রকার অনুগ্রহ নয়। এটা আমাদের জন্য ইবাদতের অংশ।
ঈদের নামাজ
ঈদের নামাজের মাধ্যমেই ঈদের প্রকৃত আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ঈদের সব প্রস্তুতি মূলত আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্যে শোকরানা স্বরূপ দুই রাকাত নামাজ পড়ার মাধ্যমে। মসজিদে এই দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়। ঈদের নামাজে আজান ও আকামত নেই। দুই রাকাত নামাজে সর্বমোট ১২টি তাকবির দিতে হয়। প্রথম রাকাতে সুরা-কারাত শুরু করার আগে ৭টি তাকবির অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলতে হয়, তারপর যথারীতি ১ম রাকাত পুরা করে দ্বিতীয় রাকাতের শুরুতে ৫টি তাকবির দিয়ে যথারীতি নামাজ শেষ করে সমসাময়িক বিষয়ের ওপর খুতবা প্রদান করতে হয়। খুতবা শেষ হলে ইজতেমায়ি দোয়া করে সবাই মোলাকাত করতে থাকে। ঈদ আনন্দে সবাই বুকে বুকে মিলে একাকার হয়ে যায়।
আসুন, ঈদের উৎসবকে রঙিন করতে গরিব ও অসহায়দের দিকে সাম্যের হাত বাড়িয়ে দিই। খোঁজ নেই আমার, আপনার, সবার পাড়া প্রতিবেশীর। গরিব অসহায়দের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিই।
লেখাটি অনেকাংশ প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার “ঈদের আনন্দে উদ্ভাসিত হোক প্রতিটি হৃদয়” থেকে নেয়া হয়েছে।মুল লেখক মাহমুদ আহমদ।