শিল্পী মাসুমা খানের জন্ম ১৯৫০/৫১ সালে (হতে পারে), পুরনো ঢাকার ওয়ারিতে। তিনি বড় হয়েছেন এই দেশের খ্যাতিমান লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিদের মধ্যেখানে। মা রাজিয়া মাহবুব ছিলেন কীর্তিমান লেখক। তিনিই আসলে শিল্পী। মাসুমা খান তাঁর গড়া শিল্পকর্ম। শারীরিক ত্রুটি নিয়েই মেয়েকে শিল্পী হিসেবে গড়েছেন। মাসুমার ভেতরও সেই শক্তিটা ছিল। মাসুমা খান চারুকলা ইনস্টিটিউট (বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন ১৯৭২ সালে। তারপর ছবি এঁকেছেন নিয়মিত।
শিল্পী মাসুমা খান
কর্মজীবন
আলিয়স ফ্রসেজ-এ শিশু-কিশোরদের ছবি আঁকা শিখিয়েছেন ২০ বছর। পরে ধানমন্ডি ও বনানীতে শিশু-কিশোরদের ছবি আঁকা শেখাতেন। তাঁর ছবি সম্পর্কে বরেণ্য সাংবাদিক সন্তোষ গুপ্তের দুটি লাইন ‘বাংলাদেশের প্রকৃতির প্রতি আকর্ষণই মাসুমার ছবির রঙে সবুজের প্রাধান্য। বাংলাদেশের প্রকৃতিতে যে বিশাল শান্তি ও কোমল কারুণ্য রয়েছে, শিল্পী তাকে সচেতনভাবে রূপগ্রাহ করার প্রয়াস পেয়েছে।’
ফটো জার্নালিস্ট মোহাম্মদ আসাদ এর ডায়েরি থেকে
চারুকলার ৫০ বছর পূর্তি উৎসবে ১৯৯৮ সালে মাসুমা খানের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা। শারীরিক ত্রুটি সত্বেও চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে সফল ভাবে পাশ করে শিল্পী হয়েছেন শুনে অবাক হয়েছি। তাঁর সহপাঠীদের মুখে শুনেছি তার সুনাম। আলাপ করে জানা গেল ওয়ারিতে তাদের বাড়ি। ওয়ারী মেইন রাস্তা থেকে বলদা গার্ডেনের ডান পাশের গলি দিয়ে ঢোকলে হাতের বাম পাশের প্রথম বাড়িটিই তাদের।
২০০১ সালে একদিন গিয়ে হাজির হলাম তাদের গাছ-গাছালির মধ্যে খানে পুরনো বাড়িটিতে। অনেক কিছু খাওয়ালেন, গল্প হলো অনেক। প্যাস্টেলে এঁকে দিলেন একটু ছবি। মাঝে ২০১১ সালে তাঁর ছবি তুলেছি আলিয়স ফ্রসেজে গিয়ে।
গত বছরের শেষের দিকে হঠাৎ মনে হয়েছে আরে মাসুমা আপার একটু খবর নেই। গিয়ে দেখি সেই পুরনো বাড়ি এখন মনোরম ফ্ল্যাট। সময় গড়িয়ে গেল। খোঁজ করতে গিয়ে দুঃসংবাদ পেলাম। এ বছর ১৩ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মাসুমা খানেই ছবিটি ১৯৯৮ সালে তোলা।
শিল্পী মাসুমা খান
আলোকচিত্রটি ১৯৯৮ সালে তোলা
আলোকচিত্রী : মোহাম্মদ আসাদ
২০১১ সালে আলিয়স ফ্রসেজে মাসুমা খান
আলোকচিত্রী : মোহাম্মদ আসাদ
শ্রদ্ধাঞ্জলি
শিল্পী মাসুমা খান
facebook থেকে নেয়া :
মন্তব্য করেন |
খুব মনে পড়ে মাসুমা আপাকে।
বাচ্চাদের পেইন্টিং শেখাতে গভীর আগ্রহ নেশা ছিল তার।
প্রায়ই আমাকে একটা ছোট্র কাজে অনুরোধ করতেন তা হলো তার পেইন্টিং কর্মশালার প্রেস রিলিজ বহুল প্রচারিত বিভিন্ন দৈনিকে প্রচারের ব্যবস্হা করার জন্য।
গভীর সমবেদনা এই গুনি শিল্পির জন্য।
শিল্পী মাসুমা খান ও ওনার মা লেখক রাজিয়া খাতুন-এর সাথে খুবই আন্তরিক সম্পর্ক ছিল। অনেক কাহীনি, ইতিহাস জমা আছে….
মেয়েকে ড্রইং শিখাতে গিয়ে নিজেই মাসুমা আপা’র ছাত্র বনে গিয়েছিলাম ২০০৭-২০০৯৷ মাসুমা আপা আর রাজিয়া খালাম্মার সাথে অনেক সুন্দর কিছু বিকাল কাটানোর স্মৃতি আছে আমার৷ একদিন গল্প করবো৷ মাসুমা আপা সারাজীবন অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে বেঁচে থাকবেন আমার এবং আমাদের জগতে৷